যৌনতায় অনীহার কারণ ও এর প্রতিকার
আরোগ্য হোমিও হল এ আপনাকে স্বাগতম। আশা করছি আপনি ভালো আছেন। আজ আমরা আলোচনা করবো যৌনতায় অনীহার কারণ কী ও এর প্রতিকার কী? তবে এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা না বড়িয়ে সরাসরি যাচ্ছি মূল আলোচনায়।
দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌনতা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ যৌনতার অনিহার কারন ও উপভোগের উপায় যে কোনো দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌন মিলন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত পুরুষরা তাদের যৌন জীবন নিয়ে সুখী হলেও তারা তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়েও সুখী হন। কিন্তু কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে ব্যক্তিগত শিডিউল মিলাতে না পারায় অনেকের দাম্পত্য সম্পর্কে যৌনজীবন নিয়ে হতাশায় ভোগেন।
বিবাহিত যুগল নানাবিধ কারনে সন্ধ্যার পর স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বালিশে মাথা গুজছেন অথবা টিভির রিমোর্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক-ই বৈবাহিক সম্পর্কের মূল নিয়ামক। এই বিষয়টি অবহেলা করলে অনৈতিক, পরকীয়া এমনকি সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি পযর্ন্ত হতে পারে। তবে যারা একটি স্বাস্থ্যকর, সক্রিয় যৌন জীবন যাপন করতে সক্ষম তারা কোনো জাদুকর-জাদুকরী নন। বিজ্ঞানসম্মত কারণেই তারা এমন স্বাস্থ্যকর সক্রিয় যৌন জীবন যাপনে সক্ষম হন।
দাম্পত্য জীবনে যৌনতা অনিহার পথে যেসব সমস্যা দায়ী :
(ক) সম্পর্কে একগুয়েমী :
আপনি যখন লম্বা সময়ের সম্পর্কে থাকেন তখন আপনার জীবনযাপন এক প্রকার রুটিন মাপিক চলে। মানব মস্তিস্কে ডিপোমিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কৃত হয় যা মস্তিস্কের আনন্দ সম্ভোগ সেলের অনুভুতি গুলোকে বহন করে। ডোপামিন মানুষের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, চোখের মনিকে প্রসারিত করে। নতুন প্রেমে পরা জুটির স্বর্গীয় অনুভুতি হয়, তার জন্য দায়ী এই ডোপামিন।
ডিপোমিন সর্বদা একই প্রকার অনুভুতি সঞ্চালন করতে করতে যখন নতুন কোন সম্পর্কের ভিন্নতা পায় তখন অতিমাত্রায় সংবেদশীল হয় ।
আপনি আমি চাইলেই সঙ্গী পরিবর্তন করতে পারবো না। তাই ডিপোমিনের প্রভাব কে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সম্পর্কে অন্যান্য পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন – সময় পেলে কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, , মিলনের সময় এবং স্থান পরিবর্তন করা (এমনকি রান্নাঘর কিংবা টয়লেটে মাঝে মাঝে মিলন করা যেতে পারে)। মিলনে আসন পরিবর্তন করা ইত্যাদি।
(খ) আপনার অনেক কাজ জমে আছে, খুব ক্লান্ত :
সব যুগল সারাদিনের লম্বা সময় এবং অনেক কাজের মধ্যে এসে রোমান্টিক একটি রাতের জন্য মনে আর জোর খুজে পাননা। এবার আপনার পরিবর্তনের সময় এসেছে। আপনাকে দেখতে হবে কোন বিষয়টি জরুরী। যৌন মিলন মানসিক এবং শাররীক সুস্থ্যতার জন্য একটি প্রয়োজনীয় নিয়ামক। তাই সব সময় রাতের জন্য অপেক্ষা না করে সকাল কিংবা দুপুরে স্বামী-স্ত্রী এর জন্য কিছুটা সময় বের করে নিন। সারা দিন কাজের ফাকেঁ স্ত্রীর কাছে ফোন করতে পারেন। মানসিক ভাবে পজেটিভ চিন্তা করতে পারেন। যা মিলনকালে আপনাকে সচল করতে সাহায্য করবে।
(গ) কে এই ব্যক্তি – যার সাথে আমি সংসার করছি :
আপনি যদি কিছুদিন ধরে আপনার সঙ্গীর সাথে শাররীক মিলন করছেন না তাহলে তার আগ্রহ হয়তো বা তার কাছে জোরপূর্বক চাওয়া মনে হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর যৌন জীবনের জন্য সরাসরি যৌন মিলন শুরু না করে আগে ইশারা ইঙ্গিতে মাধ্যমে চাওয়ার কথা জানাতে পারেন। স্বামী-স্ত্রী সাথে যদি মধুর স্মৃতি বিজড়িত সময় না থাকে তাহলে যৌন চিন্তা ভাবনা ততটা শক্তিশালী হয়না। এজন্য সপ্তাহ শেষে রোমাঞ্চকর কিছু প্ল্যান করতে পারেন। যেমন – সিনেমা দেখা, বাহিরে খেতে যাওয়া ইত্যাদি। গতানুগতিক কিছু না করে – অচেনা গ্রামে ঘুরে আসা কিংবা কোন বাচ্চাসুলভ পাগলামী করতে পারেন। কোন এক কৃষকের ঘরে অতিথি হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে পারেন। বাড়ী ফিরে আসার সময় তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে আসেতে পারেন। যে সকল পুরুষ তাদের স্ত্রীদের ঘরের কাজ করে দেয় এবং বন্ধুসুলভ ব্যবহার করে সে সকল যুগল মিলনকালে বেশি আনন্দ পেয়ে থাকে।
(ঘ) আপনি আপনার শরীরের গঠন পছন্দ করেন না। যে কোন বিষয়ে সম্মুক্ষীন হবার মন মানসিকতা রাখুন। সব মানুষই কোন না কোন অপুর্নতা নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। নিজের কোন বিষয়টি আপনার ভাল লাগে তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন। বিধাতা যা দান করেছেন তাই নিয়ে সুখী হবার চেষ্টা করুন। তবে যে সকল বিষয়গুলো নিজের হাতে তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। যদি মনে করেন আপনার ওজন কিছুটা বেশি তাহলে জিম করেন। নিজের নেগেটিভ দিকগুলো না দেখে “যার সাথে বসবাস করছেন” তার ভাল দিক গুলো তুলে ধরুণ ও সুনাম করুন। তার যে সকল বিষয় আপনাকে মহিত করে তা নিয়ে আলোচনা করুণ। দেখবেন সেও আপনার মাঝের সুন্দর দিকগুলো বলে আপনাকে উৎসাহীত করবে।
(ঙ) যৌনমিলন যন্ত্রনাদায়ক :
অনেক সময় মানসিক ভাবে আপনি মিলনে আগ্রহী নন। এবং আপনার শরীর ও মন সায় দিচ্ছেনা। তাই মিলন অনেক কারনে যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে। মাসিক বা ঋজচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হবার পর অর্থাৎ নারীর ৫০ থেকে ৫৬ বছর বয়সের পর মাসিক বা ঋজচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই বয়সের পর যোনী স্বাভাবিক আদ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তার ফলে যৌন মিলনকালে যন্ত্রনা হতে পারে। অনেক দিনের সংসার তাই হয়তো বা চুপ করে যন্ত্রনা সয্য করছে। এ ছাড়াও নানাবিধ কারনে যৌন মিলনে যন্ত্রনা হতে পারে। তাই এ সকল বিষয় গুলো সঙ্গীর সাথে সরাসরি আলোচনা করাই ভালো।
(চ) এখনো আপনি যৌনমিলনের প্রতি আগ্রহী নন :
স্ত্রীর যোন মিলনে অনীহা শুধুমাত্র বয়স বৃদ্ধির কারনে নাও হতে পারে। এর সাথে অন্যান্য অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন – দুশ্চিন্তা, ভয়, হরমোনাল অসামঞ্জস্যতাও যৌন অনীহারও কারন হতে পারে।
পুরুষের ক্ষেত্রে কম বয়সে লিঙ্গোত্থান সমস্যা যেমন – ডায়াবেটিস এবং হার্ট ডিজিজ এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। এছাড়াও কিছু ঔষধ, যেমন – দুশ্চিন্তামুক্তির ঔষধ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ঔষধ, যৌনমিলনের অনীহা সৃষ্টি করতে পারে। ধুমপান ও মদ্যপান আপনার যৌনশক্তিকে হ্রাস করে দিতে পারে। অনেক লম্বা সময় সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেল চালনায় যৌনক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাইকের সিটে নারী কিংবা পুরুষের পুডিনডাল শিরা ও ধমনী” তে রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়ার ফলে সে অঞ্চলের ক্রমশঃ কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। সঠিক সময়ে ঘুমানো অনেক অংশে সহযোগীতা করতে পারে।
যারা স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত সহবাস করেন গবেষণায় তাদের জীবনের ৬টি বিজ্ঞানসম্মত গোপন বিষয় বেরিয়ে এসেছে তা নিন্মে আলোচনা করা হলো :
১/ যারা বেশি যৌন মিলন বা সহবাস করেন তারা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কারো ব্যক্তিত্ব যৌনতাসহ তার জীবনের প্রতিটি দিক প্রভাবিত করে। জার্নাল অফ রিসার্চ ইন পার্সোনালিটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নব বিবাহিত দম্পতির নারী সদস্যটি তার স্বামীর সঙ্গে সহজেই একমত পোষণ করতে পারেন অথবা অপরকে সন্তুষ্ট করার মতো প্রবণতা সম্পন্ন হন, সে সব দম্পতি অন্য দম্পতির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে যৌনতা উপভোগ করেন।
গবেষণায় ৫টি বড় বৈশিষ্ট্যর ওপর নজর দেওয়া হয়- সুবুদ্ধি, নমনীয়তা, অকপটতা, আবেগময়তা এবং বহির্মুখীনতা।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, বেশির ভাগ সময় পুরুষরাই প্রথমে যৌনতার উদ্যোগ নিয়ে নারীরাই চুড়ান্ত ভাবে নির্ধারণ করে থাকেন তারা যৌনতায় লিপ্ত হবেন কি হবেন না।
২/ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান : ছোট্ট একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সামান্য কয়েক ঘন্টা বেশি ঘুমানোর ফলে কলেজ-বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি যৌনাকাঙ্খা তৈরি হয়।
৩/ যৌন মিলনের সময় তারা : ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটি বলেন। আবেগগত ঘনিষ্ঠতা সত্যিকার অর্থেই শারীরিক ঘনিষ্ঠতাকেও উস্কে দিতে পারে। জার্নাল অফ সেক্স রিসার্চ হতে জানা যায়, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যৌন জীবনে সন্তুষ্ট পুরষদের ৭৫% আর সন্তুষ্ট নারীদের ৭৪% সঙ্গী বা সঙ্গীনি যৌন মিলনের সময় ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটি বলেছেন। একই নারী-পুরুষরা বলেছেন, খোশ মেজাজ এবং যৌন উত্তেজক আলাপ-আলোচনাও যৌন সন্তুষ্টি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
৫/ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান : গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যৌন মিলনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে দম্পতিরা যৌনতাকে আরও বেশি উপভোগ্য করে। এ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে কামসূত্রের দ্বারস্থ হয়ে পড়েন তারা।
৫/ নিয়মিত শরীর চর্চা করেন : নিয়মিত শরীরচর্চা করলে যৌন মিলনের সময় ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শারীরিক তৎপরতা যৌন আকাঙ্খা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে পুরষদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা গেছে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে – যে পুরষরা বেশি শরীরচর্চা করেন তাদের লিঙ্গোত্থানে কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
৬/ দাম্পত্য সম্পর্কের দায়িত্ব হিসেবেই শুধু যৌনমিলন করেন না : যৌনতা মূলত আনন্দদায়ক বা উপভোগ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এটিকে দাম্পত্য জীবনে একটি গতানুগতিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা ঠিক না। কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, যখন দম্পতিরা যৌনতাকে দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত করেন তখন তারা এটিকে নিত্য দিনের গৃহস্থালি কাজের মতোই বিবেচনা করেন। যার ফলে একটা সময়ে যৌনতার আগ্রহ হরিয়ে ফেলেন। সুতরাং যৌনতাকে উপভোগ্য করে তুলতে আকাঙ্খাকে প্রধান্য দিতে হবে। যাতে একঘেয়েমি ধরে না যায় বা বিরক্তি উৎপাদিত না হয়।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।