মাসে দুইবার মাসিক হওয়ার কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মেয়েদের মাসে দুইবার মাসিক হওয়ার কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে আজকে আলোচনা, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
প্রতি মাসে একবার মাসিক হওয়া মহিলাদের খুবই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক বিষয়টি তখনই অস্বাভাবিক হয়ে যায় যখন মাসিক একেবারে বন্ধ হয়ে যায় বা একই মাসে দুইবার মাসিক হয়। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা এক মাসে দুইবার মাসিক হলে সেই নারীর মনে দুশ্চিন্তা করা খুবই স্বাভাবিক। মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ভাবেন হয়তো গর্ভবতী হয়েছেন। আবার যদি অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যে সব নারী দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না তাদের জন্যই এই আর্টিকেলের মধ্যে দিয়ে সমাধান জানার চেষ্টা করব। আমরা জানার চেষ্টা করব এক মাসে দুইবার মাসিক হওয়ার কারণ কী?।
যদি আপনি লক্ষ্য করেন, অনিয়মিত ভাবে মাসিক হচ্ছে তাহলে প্রথম দিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন না। এমন ঘটনা শুধুমাত্র আপনার সাথে ঘটে না, এটা অনেকের সাথেই ঘটে, এর পিছনে নির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন কারণে অনিয়মিত মাসিক হচ্ছে ।
প্রথমত, শরীরের যদি হরমোনাল কোন প্রবলেম থেকে থাকে তাহলে অনিয়মিত মাসিক হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিক্ষার পর আসল কারণ জানা গেলে চিকিসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। যদি হরমোনাল কোন প্রবলেম থাকে তাহলে ওষুধের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে।
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে অনেকেই সমাধান খুঁজে না পেয়ে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন। আমরা আসল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি না। বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকেন। যার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোন সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব। সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার না হওয়া পর্যন্ত কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয় কারণ এতে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনার ঝুকি থাকে।
মানে রাখবেন বাড়িতে বসে বসে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে আপনারা যদি আরও বেশি পরামর্শ পেতে চান তাহলে বেশ কিছু গাইনি বিশেষজ্ঞের ফেসবুক পেজ এবং তাদের ভিডিও ফলো-আপ করতে পারেন যেখানে তারা নিয়মিত নানান বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে নিয়মিত গাইনি চিকিৎসকরা আসেন এবং নানান বিষয়ে দর্শকদের সাথে আলোচনা করেন। এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে চোখ রাখলে আপনারা বুঝতে পারবেন কিভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়, কিম্ব কি ভাবে এর সমাধান করতে হবে।
এক মাসে দুইবার মাসিক হওয়া কখনোই শুভ নয়। আর এটি কখনোই হতে দেওয়া উচিত নয় এ ধরণের সমস্যা হলে গাইনি চিকিৎসকা বলে থাকেন। এক মাসে দুইবার মাসিক হলে তবে তার হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়গুলো শরীরের জন্য ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমবার এমন লক্ষ্য করলে সাথে সাথে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত কারণ একটু দেরি করলেই শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাবার সম্ভবানা বেশি থাকে। অনেকে হয়তো বা প্রথমদিকে এই বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দেন না, কিন্তু মনে রাখবেন পরবর্তীতে অনেক বড় সমস্যায় পড়তে পারেন । আপনারা যদি সরাসরি কোন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এই বিষয়গুলো বলতে না পারেন তাহলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।
মাসে দুইবার মাসিক সমাধানে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ :
এ্যাব্রোমা আগষ্টা (Abroma Augusta) Q : ঋতু স্রাব অনিয়মিত, সময়ের বহুপূর্বে প্রকাশ পায়, রজঃ অতি অল্পদিন বা অনেক দিন ধরে চলে, ঋতুর ২/১ দিন আগে তলপেটে ভীষণ ব্যখ্যা করে, রক্তের রঙ কালো ও চাপচাপ।
অরাম মিউর ন্যাট (Aurum Mur Nat) 6X : জরায়ুর সকল প্রকার রোগে অত্যান্ত কার্যকরী।
এমিল নাইট্রেট (Amyl Nit) : ঋতু বিলম্বিত অথবা একেবারে বন্ধ বা মাত্র এক-আধ দিন স্থায়ী।
এলেট্রিস্ ফ্যারিনোসা (Aletris Farinosa) Q : অসময়ে প্রচুর পরিমানে রজঃস্রাব হয় তার সাথে পেটে ভীষণ ব্যাথা, রক্ত কালো ও চাপ চাপ।
ক্যালকেলিয়া ফস (Calcarea Phos) : বালিকাদের খুব তাড়াতাড়ি ঋতুস্রাব হয়, এমন কি ১৫ দিন অন্তর ঋতু হয় আর বয়স্কদের অনেক দেরিতে হয়।
সাইক্ল্যামেন (Cyclamen) : ঋতু খুব শীঘ্র শীঘ্র ও পরিমানে অধিক হয়, তার সাথে কোমর থেকে তলপেট পর্যন্ত খুব যন্ত্রণা, রক্ত ঘোলাটে, কালো ও চাপ চাপ।
ফেরাম মিউর (Ferrum Mur) : রজঃস্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ, তার সাথে রক্তহীনতা।
গসিপিয়াম (Gossypium) Q : ঋতুস্রাব বন্ধ, মনে হচ্ছে যেন ঋতু শুরু হবে কিন্তু তা হয় না। স্রাবের রক্ত জলের মত ও ফ্যাকাসে, কমরে ও তলপেটে অত্যন্ত ব্যাথা করে। সকালে খাবার আগে গা-বমি বমি ভাব ও বমির ইচ্ছা, ঋতুকালীন পেটের ওপরের দিকে অসচ্ছন্দতা বোধ, খাবারে অরুচি, ক্ষুদামন্দা, বাম ডিম্বকোষে হুলফোটানো যন্ত্রণা ও জ্বালা, চোখের ওপর মাথায় যন্ত্রনা।
হেলোনিয়াস ডায়োইকা(Helonas Droica) : অত্যন্ত অধিক দুর্গন্ধ যুক্ত শ্বেত প্রদা বা সাদাস্রাব, স্রাব হাজাকারক, যোনিতে অসহ্য চুলকানি ও ফোস্কার মতো উদ্ভেদ। প্রত্যেক ঋতু¯্রাবকালে অত্যাধিক রক্তস্রাব।
জোনোসিয়া অশোকা (Janosia Ashoka) Q : ঋতু প্রায়ই অনিয়মিত এবং অনেক দেরিতে হয়, ব্যাথা,ঋতু শুরু হবার আগে ওভারিতে ব্যাথা করে, রজঃ লোপ, রজঃ রোধ।
সিনিসিও আউরিয়াস (Senecio Aureus) Q : ঋতু বন্ধ হয়ে কাশি, কাশির সাথে রক্ত, রক্তস্রাব আরম্ভ হলেই কাশির উপশম হয়। বাধক বেদনা, ঋতুবন্ধ, অতিরজঃ, অনিয়মিত সময়ে ঋতু প্রকাশ, ঋতুর আগে মুখ, গলা, মুত্রথলির যন্ত্রণা করে।
পালসেটিলা (Pulsatilla) : ঋতুস্রাব যথাসময়ে না হয়ে অনেক দেরিতে হয়, যদিও ঋতু¯্রাব হয় তা পরিমাণে অনেক অল্প হয়ে থাকে (দিনে বেশি ও রাতে কম স্রাব)। ভয়ানক খামচানি ব্যখ্যা, কোমরে ব্যাথা ও মাথা ব্যাথা।
পালসেটিলা (Pulsatilla) Q : ঋতুস্রাব থেমে থেমে হয়, ব্যাথা ও ঠিক থেমে থেমে হয়, রোগিনী দেখতে খুব মোটাসোটা, রোগিনী খোলা বাতাসে থাকতে চায় কিন্তু তাতে আবার শীত শীত বোধ করে, ঋতুস্রাব রঙের কালচে ও চাপচাপ, কখনও বা জলের মতো বর্ণহীন।
ফসফরাস (Phos phorus) : ঋতুস্রাব পরিমানে অধিক ও অধিকদিন স্থায়ী, স্রাবের রং ফিকে লাল মাছ ধোয়া জলের মতো বা ঋতু সম্পূর্ণ বন্ধ অথবা ঋতুবন্ধ হয়ে নাক,মুখ ও প্রস্রাবদ্বার দিয়ে রক্তস্রাব।
ট্রিলিয়াম পেন্ডুলাম (Trillium Pendulum) : মাসিক রজঃস্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ হয় না কিন্ত অনেকদিন থাকে।
জ্যান্থোক্সিলাম (Xanthoxylum) : ঋতুস্রাব ২/৩ মাস বন্ধ থাকে পরে একবার প্রকাশিত হয়, সেই সময় পেটে ভয়ানক যন্ত্রণা করে।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।