মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাবে হোমিওপ্যাথি ও বায়োকেমিক ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত¯্রাবে হোমিওপ্যাথি-বায়োকেমিক ঔষধ ও চিকিৎসা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
মাসিক বা ঋতুকালে প্রচুর পরিমাণে রজঃস্রাব নিঃসরণ হলে অথবা ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট কয়েকদিন অপেক্ষা অধিক সময় স্থায়ী হলে তাকে অতিরজঃ বা Menorrhagia বলা হয়।
অতিরিক্ত রজঃস্রাব (Menorrhagia) হবার কারণ :
(ক) জরায়ু বা যোনির গায়ে টিউমার হলে।
(খ) জরায়ু গ্রীবায় ক্যান্সার বা ঐ জাতীয় কঠিন রোগ থাকলে।
(গ) ডিম্বকোষ বা ডিম্বনালি প্রদাহ হলে।
(ঘ) জরায়ুর স্থানচ্যুতি হলে।
(ঙ) প্রথম রজঃস্রাবে বিলম্ব হলে।
(চ) হরমোনের গোলযোগ বা হরমোন ঠিকমতো নিঃসরণ না হওয়ার করণে।
(ছ) অতিরিক্ত সহবাস অথবা ঋতুকালেও সহবাস।
(জ) রোগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে।
(ঝ) ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, অন্যান্য কঠিন প্রকৃতির জ্বর, অতিরিক্ত পরিশ্রম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত আহার, অনিদ্রা ইত্যাদি।
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাবের লক্ষণ :
(১) মাসিক স্রাব প্রায় সাতদিনের বেশী থাকে এবং প্রচুর রক্ত স্রাবের জন্য রোগী দুর্বল হয়। আবার কোনো কোনো নারীর ৩/৪ দিনই থাকে তবে অতিরিক্ত স্রাব হয়।
(২) স্বাভাবিকের চেয়ে মাসিক ঋতুস্রাব বেশি হয়।
(৩) কখনো আবার ঋতু বন্ধ থাকে বেশ কিছু দিন, তারপর আবার বেশি পরিমাণে হতে থাকে।
(৪) আলস্য, দুর্বলতা, হাই তোলা, মনমরা ভাব, গা ম্যাজ ম্যাজ করা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
(৫) পেটে, পিঠে, কোমরে, তলপেটে বেদনা করে ।
(৬) ক্ষুধাহীনতা, রুচির অভাব, খাদ্যে কোন স্বাদ পায় না।
(৭) পেটের গোলযোগ, অম্ল, উদরাময়, কোষ্ঠকাঠিন্য।
(৮) হাত-পা ঠাণ্ডা, শীত শীত ভাব, মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে, চোখ-মুখ বসে যায়, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, কানে ভোঁ-ভোঁ শব্দ, জীর্ণশীর্ণ দেহ, ভয়ানক দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত রজঃস্রাবের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ও বায়োকেমিক ওষুধ :
ফসফরাস (Phosphorus) : ফসফরাসের রোগীর সর্বাঙ্গীন জ্বালাপোড়া অথচ গায়ে উত্তাপ নেই, কিন্তু জ্বালাপোড়া আছে। কম্পন, অবশতা, পক্ষাঘাত। ফসফরাসের রোগীর চোখের চারপাশে স্ফীতিভাব দেখা যায়। সমগ্র মুখমণ্ডল ফুলে যায়। অল্প কিছুক্ষণ ঘুম হলেও স্বস্তি বোধ করে।
সামান্য পরিমাণে আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। বধিরতা, মানুষের কথা শুনতে পায় না, নাক থেকে রক্তস্রাব হয়। ঋতুস্রাব বেশি দিন স্থায়ী হয়। মাসিকের পরিবর্তে অন্য দ্বার দিয়ে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। জরায়ুর ভিতরটা স্ফীত। ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে।
স্যাবাইনা (Sabina) : জয়েন্টে সন্ধি বাত জনিত স্ফীতি। পায়ের আঙ্গুলের স্ফীতি ভাব। অতি রজঃস্রাব। রক্তের খন্ডগুলো কালো বর্ণের।
প্রচুর রক্তস্রাব হয়, কিছুতেই বন্ধ হয় না। রক্ত উজ্জ্বল বর্ণ। গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা হয় ও কোমরে ব্যথা। গর্ভস্রাব, প্রসবের পরবর্তীতে অতিরিক্ত রক্তস্রাব। খুব যন্ত্রণা হয়, সেই যন্ত্রণা উরুদেশ পর্যন্ত নেমে আসে।
নাইট্রিক অ্যাসিড (Nitric acid) : উপদংশ দোষ, পারদের অপব্যবহার হেতু কুফলে কার্যকরী। আক্রান্ত স্থানে সূঁচ ফোটানো ব্যথা করে। শরীরের সকল দ্বার থেকে রক্তস্রাব বের হয়, সেই রক্ত উজ্জ্বল। গুহ্যদ্বারে আঁচিল ও উপমাংস। জরায়ুর মুখে আলসারের কারণে প্রচুর রক্তস্রাব। স্রাবের রক্ত কাদা জলের মতো, দুর্গন্ধযুক্ত। প্রস্রাবে ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে।
ক্রিয়োজোট (Kreosot) : অতিরিক্ত স্রাব, বিশ্রাম বা শয়নে বৃদ্ধি হয়। রোগীর চলাফেরায় স্রাব উপশম হয়। কানে কম শোনে অথচ কানের মধ্যে নানা ধরনের শব্দ অনুভব করে। সহবাসের পর রক্তস্রাব হয়। স্রাব হাজাকর ও জ্বালাকর। রক্তস্রাবে গন্ধ থাকে। মাসিকের আগে অথবা পরে সাদা স্রাব হয়। যোনিপথে ক্ষতিকর চুলকানি।
সিকেলি কর (Secale cor) : জরায়ুর সংকোচন শক্তি বৃদ্ধি করে, যাহার ফলে রক্তস্রাব নিবারণে সিকেলি করের যথেষ্ট ক্ষমতা। ক্ষীন, দুর্বল, শীর্ণ, পেশীতন্তুর শিথিলতা, শরীরের সমস্ত দ্বার থেকে রক্তস্রাব হয়। জীর্ণ ও বৃদ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে কার্যকর। ঋতুশূল, তৎসহ শীতলতা অথচ উত্তাপ অসহ্য। জরায়ুতে জ্বালাকর ব্যথা। বাদামি বর্ণের প্রদর স্রাব হয়। ঋতুস্রাব অনিয়মিত ও প্রচুর পরিমাণে হয়, ঋতুস্রাব কালো এবং জলের মতো। রক্ত অবিরত চুঁইয়ে পড়ে – এই অবস্থা পরবর্তী ঋতুকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
সিপিয়া (Sepia) : মনে হয় বস্তিপ্রদেশ থেকে সবকিছু বের হয়ে যাবে এরকম অনুভব হয়। এই জন্য রোগী উরুর উপর উরু রেখে চেপে বসতে চায় ও জরায়ুতে বেদনা। প্রস্রাবে অম্লগন্ধ, নিয়মিত সময়ের বহু পূর্বে প্রচুর ঋতুস্রাব হয়। দুর্গন্ধ যুক্ত প্রস্রাব। জরায়ুর স্থানচ্যুতি, মনে হয় যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ু বের হয়ে যাবে। ঋতুস্রাব অতি বিলম্বে হয়। ঋতুস্রাবের সময় চেপে ধরার মতো ব্যথা করে।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ যা কিনা লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায় :
অস্টিলেগো , চায়না, ক্রোকাস স্যাটাইভা, ক্যামোমিলা, ইপিকাক, ইরিজেরন, স্টিলিয়াম, প্লাটিনাম, সিমিসিফিউগা, মিলিফোলিয়াম, প্রভৃতি।
বায়োকেমিক মতে অতি রজঃস্রাবের সেরা ওষুধ
ফেরাম ফসফোরিকাম (Ferram phosphoricum) : উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্তস্রাব হলে ব্যবহার করা হয়।
নেট্রাম ফস (Natrum Phos) : অম্ল রোগ বা এসিডিটি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
সাইলেসিয়া (Silicea) : রজঃস্রাবের সাথে যদি পূঁজ বা পূঁজের মতো শ্লেষ্মা নির্গত তা হলে ব্যবহার করা হয়।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যতœবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।