সাত বছরেই কিশোরীর ঋতুস্রাব
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মেয়েদের সাত বছরেই ঋতুস্রাব হওয়ার করাণ কী, এর কারণ কী? তা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
সাত বছরেই ঋতুমতী বা ঋতুস্রাব! দেশে বর্তমানে আগাম বয়ঃসন্ধির ঘটনা খুব বেশি হচ্ছে। অল্প বয়সে ঋতুস্রাব হবার কারণ কী? পরবর্তীতে কোনও ক্ষতি কারক রোগ শরীরে দানা বাঁধবে না তো? মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট গাইনোকলজিস্ট ডা: সৌপ্তিক গঙ্গোপাধ্যায়-এর মতামত জানালেন মৌমিতা চক্রবর্তী। বাড়ির কিশোরী কন্যার জীবনে এ প্রথম ঋতুস্রাবের দিনটি তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিশোরী সাধারণত এই বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে পরিচিত করাতে প্রস্তুত থাকতে হয়। শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ভাবেও নানা পরিবর্তন হয় এই শারীরিক প্রক্রিয়ার মধ্যে। কিন্তু যদি সঠিক বয়স ও সময়ের আগেই পিরিয়ড শুরু হলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন? একজন মেয়েদের ঋতুস্রাবের সঠিক সময়ে সঠিক বয়স ১০-১৪ বছর। কিন্তু অনেক সময় কিশোরী মহিলা ৭ বছর পেরতে না পেরতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রথম ঋতুস্রাব মাসিক। কন্যাসন্তানের সঙ্গে যে বয়সে একজন মা মাসিক বা ঋতুকাল নিয়ে কথা বলার কথা ভেবে রাখেন, তার বহু আগেই এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে মাকে। বহু মা-ই সমস্যায় পড়েছে। ছুটছেন ডাক্তারের কাছে। ৮-১০ বছর বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব হলে চিকিৎসকের পরিভাষায় একে প্রিকশাস পিউবার্টি (Precocious Puberty) বলে। এই পরিস্থিতির কারণ অনেক ভাবে বর্ননা করা যায়। কয়েক বছর আগেও এই ঘটনা বিরল ছিল। গত কয়েক বছরের মধ্যে যা বহুগুণে বেড়ে গেছে।
সাত বছরেই ঋতুস্রাব হওয়ার ওবেসিটি অন্যতম কারণ :
ওবেসিটি এক্ষেত্রে একটা অন্যতম কারণ। কিশোরীর জীবনযাপন ঠিক নেই যেমন – বাইরের ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ার ফলে শরীরে মেদ জমছে। ওবেসিটির কারণে শরীরে ফ্যাট সেলের মাত্রা বেড়ে ‘লেপটিন’ নামক হরমোনটির পরিমাণ শরীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়ে ডিম্বাশয়ে পৌঁছতে লেপটিন হরমোন সাহায্য করে। সুতরাং যদি ৭-৮ বছর বয়সে ওবেসিটির জন্য শরীরে ফ্যাট অথবা অ্যাডিপোস সেল বেশি থাকলেই সঠিক সময়ের আগে মেয়েদের বয়ঃসন্ধির দেখে দিচ্ছে।
এছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে :
বয়ঃসন্ধির পরিবর্তন গুলো ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোনের কারণে হয়ে ধাতে। সাধারণত এই হরমোনটি ডিম্বাশয় থেকে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সে নির্গত হয়, এছাড়ও মস্তিষ্কের নানা অসুখের কারণে অনেকেরই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সময়ের আগেই শরীরে বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রিকশাস পিউবার্টি হচ্ছে। তবে ৮০-৯০% ক্ষেত্রে সেই ভাবে কোনও কারণ পাওয়া যায়নি। কিশোরীর ৮ থেকে ১০ বছরে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই মেয়ের সেই প্রবণতা থাকে। ১০-২০% ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর কারণ যেমন – মেনিনজাইটিস, ব্রেন টিউমার, ব্রেনে রেডিয়েশন ও ইনফেকশন, মস্তিষ্কে আঘাত অথবা শিশুবেলায় খিঁচুনি প্রভৃতির মতো লক্ষণ থাকলে আগাম মাসিক বা ঋতস্রাব শুরু হয়। আবার ওভারিতে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অথবা সিস্ট থাকলে ইস্ট্রোজেন হরমোন খুব বেশি পরিমাণে নির্গত হলেও অনেক সময়ের পূর্বে ঋতুস্রাব হয়। কোনও অসুখে চিকিৎসার জন্য ইস্ট্রোজেন হরমোনের ট্যাবলেট দেওয়া হলেও ৮ থেকে ১০ বছরেই মাসিক শুরু হবার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। মায়ের যদি সঠিক সময়ে মাসিক শুরু হয়, মেয়ের কম বয়সেই মাসিক শুরু হলে সাধারণত তার জন্য উপরিউক্ত কারণসমূহ দায়ী।
সময়ের আগে হলে ত্রিশের পর কী চিন্তার বিষয়?
কোন মেয়ের ৩০ বছর বয়সের পর কতটা সুস্থ থাকবে তা নির্ভর করবে কার কত বছর বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব বা মাসিক শুরু হয়েছে তার উপর। যেমন- অনেকেরই অল্পবয়সেই অস্টিওস্পোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকের ইউটেরাসে টিউমার হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার অনেকের ডায়াবেটিস, কার্ডিওলজিক্যাল ডিজিজ ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব অথবা খুব কম বয়সে মেনোপজের সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তার ওজনও বাড়তে থাকে।
কীভাবে সতর্ক হবেন?
সর্বপ্রথম সেটা জরুরি, সেটা হলো ছোট বেলা থেকেই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন ঠিক রাখা। যেমন – সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে বসে থাকা, মনে অতিরিক্ত চাপ, ঘরে বসে পড়াশোনা, খেলাধুলা কম, ওজন বৃদ্ধি যেগুলিতে প্রায় অধিকাংশ শিশুরাই আজকাল অভ্যস্ত। আপনার শিশুকে এই সব বিষয়গুলো থেকে দূরে রাখতে হবে। কন্যাকে বেশি মানসিক ভাবে শান্ত রাখতে হবে। বেশি চাপ, চিন্তাচাপ অল্প বয়স থেকেই চাপিয়ে দেবেন না। তার খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন। তাকে সকলের সঙ্গে মিশতে দিন। এছাড়াও তার অতীতের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখতে হবে। কোন সময় প্রবল জ্বর, খিঁচুনি, চোখের সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তি, হিস্ট্রি থাকলে অবশ্যই ভাবতে হবে । প্রয়োজনে আল্ট্রাসাউন্ড ও মস্তিষ্কের এমআরআই তার জন্য খুব জরুরি। এছাড়াও ইস্ট্রোজেনের মাত্রা-সহ মস্তিষ্কের হরমোন, থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করা উচিত। আপনার শরীরে এই হরমোনের পরিমাণের কিছু তারতম্য হলেও ঋতুস্রাব সঠিক বয়সের পূর্বে হয়ে যায়।
কিশোরীর বিশেষ যত্নকরুন :
আমি সব মায়েদেরই বলব, হঠাৎ করেই বয়সের আগেই সন্তানের মাসিক বা ঋতুস্রাব শুরু হলে দুশ্চিন্তা না করে সন্তানকে সাহস বা ভরসা দিতে হবে । প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ হল ঋতুস্রাব বা মাসিক চলাকালীন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটার বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। নিয়ম করে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার ও বদল করা শেখাতে হবে। ভ্যাজাইনা শুকনো ও পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। অতিরিক্ত রক্তপাত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।