শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

ফেরাম ফসফোরিকাম

আরোগ্য হোমিও হল / ১৭৯ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৪৮ পূর্বাহ্ন

ফেরাম ফসফোরিকাম (Ferrum Phosphoricum )

সাধারণ নাম – ফসফেট অব আয়রন

ভিন্ন নাম- ফেরিফসকাম, ফোরিক ফসফেট।

রাসায়নিক বিশ্লেষণ ফরমূলা- Fe3 (PO4)2 ফসফেট অব সোডিয়ামের সহিত সালফেট অব আযরোণ মিশ্রিত করিয়া ইহা প্রস্তুত করা হয়।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির ক্রিয়া স্থান :

রক্তের লাল কনিকার মধ্যে লৌহ বর্তমান আছে এবং ফেরাম ফসের ক্রিয়ার সহায্যে রক্তের কণা লোহিত বর্ণ ধারণ করে। ডেলটনের মতে ইহা চুলের মধ্যে সর্ব্বাধিক পরিমাণে দৃষ্ট হয়। লৌহের বা লৌহ হইতে প্রস্তুত লাবনিক পদার্থ সমূহেরই অক্সিজেন আকর্ষন করার ক্ষমতা আছে। রক্ত কণিকায় যে সকল লৌহমহ পদার্থ থাকে উহা নিঃশ্বাসপথে গৃহীত বায়ু হইতে অক্সিজেন গ্রহণ করে। ঐ অক্সিজেন লৌহ ও কেলি সালফের সম্মিলিত ক্ষমতা ও ক্রিয়া বলে দেহের সমস্ত কোষ মধ্যে সঞ্চারিত হয়। যদি কোন কারণে দেহের কোন পেশীসূত্র মধ্যে ঐ লৌহের স্বল্পতা ঘটে, তখনই যে সকল পেশী শিথিল হইয়া যায়। পেশীসমূহ শিথিল হইলে উক্ত ধমনী ও শিরা সকল স্ফীতি এবং শিথিল হয়। তাই ঐ সকল ধমনী মধ্যে এবং ঐ সকল স্থানে রক্ত জমা হইয়া থাকে। এই ভাবে রক্ত বেশী মাত্রায় জমা হইলে রক্তের চাপে ভেজে রক্ত ধমনী বা শিরার আবরণ প্রাচীর ফাটিয়া ফাটিয়া যায় এবং রক্তস্রাব হইয়া থাকে। এই রক্তধিক্যাবস্থাই উত্তেজনা জনিত প্রদাহের প্রথমাবস্থা এবং এই কারণেই ঠান্ডা লাগিয়া সর্দ্দি কাশি, ফুসফুস প্রদাহ প্রভৃতি ঘটিয়া থাকে। প্রথমাবস্থাতেই যদি ফেরাম ফস সূক্ষ্ণমাত্রায় ব্যবহার করা হয়, তবে শিথিল ধমনী এবং শিথিল পেশীসমূহের সংকোচন শক্তি বৃদ্ধি করিয়া তাহাদের আকৃতি ক্ষুদ্র করিয়া ফেলে এবং রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে এবং স্থানীয় রক্তধিক্য দুর করিয়া ফিস্ফ্যাটিক দ্বারা শরীর হইতে দুষিত পদার্থ নিঃসরণ করিয়া দেয়। অন্ত্রস্থ পেশীসমূহ মধ্যে এই পদার্থের অভাব হইলে পেশীর শিথিলতা বশতঃ রসাদি শোষিত না হওয়ায় উদরাময় জন্মে, আবার অন্ত্রের মধ্যে ঐ পদার্থের অভাব ঘটিলে অন্ত্রের কার্য্যকরী শক্তি নষ্ট হওয়ায় কোষ্ঠবদ্ধতাও জমিয়া থাকে।

ফেরাম শরীরের ও শরীরস্থ ধমনী বা অন্যান্য স্থানের পেশী সকলে বর্তমান থাকা হেতু তাহাদের দৃঢ়তা বর্তমান থাকে ও সংকোচনাবস্থা ঠিক থাকে। ইহার অভাবে পেশী সকল শিথিল ও দুর্বল হইয়া যায়।

পূর্বেই বলা হইয়াছে লৌহ মাত্রেরই অক্সিজেন আর্কষণ করার ক্ষমতা আছে। দেহস্থ লোহিত কণাসমূহের মধ্যে লৌহের অংশ আছে বিধায় রক্তস্থিত ফেরাম নিঃশ্বাস দ্বারা গৃহীত বায়ু হইতে অক্সিজেন গ্রহণ করিয়া উহা সারা দেহে পরিচালিত করে এবং জীবনীশক্তি সঞ্জীবিত রাখে। রক্তে যদি এই ফেরামের স্বল্পতা ঘটে তাহা হইলে নিশ্চয়ই লৌহযুক্ত কণিকা দ্রুত সঞ্চালিত হইবে। ফলে রক্ত সঞ্চালনে দ্রুততা জন্মে। রক্তের এই অস্বাভাবিক দ্রুত সঞ্চালনেই দেহে তাপের সৃষ্টি হয় এবং এই তাপই জ্বর নামে অভিহিত। জ্বরকালীন যে অস্থিরতা উপস্থিত হয়, তাহার করণও এই রক্তে লৌহংশের স্বল্পতা ও সেজন্য দেহে অক্সিজেনের অপ্রাচুর্য্য।

যখন শরীরে একটি লাবণিক পদার্থের অভাব হয় তখন প্রায় সেই সঙ্গে অন্য কোন লাবণিক পদাথের অভাব দেখা যায়। যেমন এই লৌহময় পদার্থের অভাব হেতু সাধারণ প্রদাহ উপস্থিত হয় ও তাহারই লক্ষণ উত্তাপ বৃদ্ধি জ্বর বলিয়া বোধ হয়। এই স্থানে প্রায়ই লৌহের অভাবে পর কেলি মিউরের অভাব লক্ষিত হয়। কেলি মিউর নামক পদার্থ রক্তমধ্যস্থ ফাইব্রিন নামক পদার্থকে রক্তমধ্যে দ্রবীভূত করিয়া রাখে। যে সময়ে উক্তরুপে লৌহময় নামক পদার্থের অভাবের পরই কেলি মিউরের অভাব হয়, তখন রক্তস্থ ফাইব্রিন নামক পদার্থ দ্রবীভূতাবস্থায় না থাকা হেতু অকার্য্যকরী হইয়া রক্ত স্রোত হইতে বাহির হইয়া আসিয়া থাকে। যখন উক্ত ফাইব্রিন নাম পদার্থ ফুসফুস দ্বার বাহির হইয়া আসে তখন কাশি উৎপন্ন হইয়া কফ নিঃসরিত হয়। ঐ ফাইব্রিন দ্বারা যখন ফুসফুসের সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কোষসমূহ উত্তেজিত ও প্রদাতি হয় তখনই আমরা উহাকে ফুসফুস প্রদাহ বলিয়া থাাকি। নাসিকা দ্বারা যখন বাহরি হয় তখন উহাকে আমরা সর্দ্দি বলিয়া থাকি।

চর্মের কৈশিক ধমনীসমূহের লৌহময় পদার্থের স্বল্পতা ঘটিলে চর্ম্মস্থ লোমকুপসমূহ বন্ধ হইয়া যায় এবং উক্ত লোমকুপ পথে যে সকল দুষিত পদার্থ বাহির হইতে উহা বাহির হইতে না পারিয়া পুনরায় রক্তস্রোতের সহিত মিলিত হয়। উক্ত দুষিত পদার্থ ও শারীরিক কোন ধাতব লবণের অভাব জনিত অন্যান্য জান্তব পদার্থদির অকার্য্যকারিতার জন্যই সর্দ্দি, ফুসফুস প্রদাহ প্লুরিসি প্রভৃতি পীড়া হইয়া থাকে।

আতএব মনে রাকিতে হইবে যে কোন প্রদাহিক জ্বর, টাইফয়েড টাইফস, ম্যালেরিয়া, পিত্তজ্বর হউক না কেন, এই ফেরাম ফস ও অন্যান্য যে কোন লাবণিক পদার্থের অভাব হইয়াছে বুঝিতে পারিলে ইহা প্রয়োগ করিলে উক্ত পীড়াদি অতি শীঘ্র আরোগ্য হয়। কোনও স্থানের রক্তধিক্য বশ:ত বা প্রদাহ বশত: বেদনা, উত্তপ্ত, স্ফীতি, লালবর্ণ, মাড়ীর দ্রুতগমন বা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হইলে ফেরাম ফস ব্যবহার্য্য। জ্বর বা প্রদাহের প্রথমাবস্থায় প্রদাহিত স্থানে যখন রসাদি সঞ্চিত না হয়, তখনই ইহা প্রধান ঔষধ।

এনিমিয়া, ক্লোরোসিস আদি রক্তস্বল্পতা পীড়ায় ফেরাম ফস ব্যবহারের যথাযথ পরিমাণে অক্সিজেন আকর্ষিত হইয়া পীড়া আরোগ্য হয়।

শিশুদের ক্ষুধামান্দা, দুর্বলতা, শিশু মেদামারা ও নিরোৎসহ হইলে ফেরাম ফস ব্যবহার শরীরে শুধু বলাধানই হয় না, ইহা দ্বারা শরীরের বর্ন্ধন ঘটে এবং পাকস্থরী সুস্থ ও পরিপাক ক্রিয়ার বৃদ্ধি হয়।

সর্বপ্রকার প্রদাহের প্রথমাবস্থায়ই ইহা ব্যবহৃত হয়, কিন্ত প্রদাহিত স্থানে রস বা পূঁজ সঞ্চিত হইলে আর ইহার আবশ্যক হয় না। যে সমস্ত বেদনা সঞ্চালনে বৃদ্ধি এবং ঠাণ্ডায় উপশ্রমপ্রাপ্ত হয়, তাহাতেই ইহার ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। চোখ-মুখ লালবর্ন মস্তকে রক্তধিক্য, মস্তক নোয়াইতে ও নাড়িতে কষ্ট বোধ, জ্বর নাড়ী দ্রুত ও পূর্ণ, দেহের উত্তাপ, চর্ম শুস্ক, তৃষ্ণা প্রভৃতি বর্তমান থাকিলে ইহা ব্যবহার্য্য।

একানাইট যেমন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মেরুদণ্ডস্বরুপ, বায়োকিমিক চিকিৎসায় দ্বাদশটি টিসু রিমেডির মধ্যে ফেরামও তেমন না । প্রদাহ, প্রদাহজনিত যাবতীয় পীড়ায় প্রথমাবস্থায়, রক্তধিক্য জন্য রক্তস্রাব ও বেদনায়, আঘাতজনিত বেদনাদিতে প্রথমাবস্থায়, আঘাতজনিত ক্ষত ও কালশিরা দাগ হইলে ইহা অব্যর্থ ঔষধ।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির বিশেষত্ব :

বিভিন্নস্থানে হইতে উজ্জ্বল লালবর্ণের রক্ত নিঃসৃত হওয়া ইহাতে নির্দিষ্ট। জ্বর, সর্দি, কাশি যাবতীয় পীড়ার প্রদাহিক অবস্থায় ইহাই একমাত্র মহৌষধ। যে কোন রোগের সহিত জ্বর থাকুক, তা যদি ঐ জ্বরে প্রবল তাত্রতাপ, দ্রুতনাড়ী, মাথাব্যাথা, রক্তবর্ণ মুখ, চোখ, অস্থিরতা, পিপাসা প্রভৃতি প্রাদাহিক লক্ষণ থাকে, তবে ইহা অব্যর্থ ঔষধ। চক্ষুপীড়া, স্ফোটক, কর্ণ পীড়া প্রভৃতি যে কোন রোগই হোক, আক্রান্তস্থান উত্তপ্ত লালবর্ণ ও দপদপানিযুক্ত হইলে ইহা নিম্ফল হয় না। খাদ্যদ্রব্য অজীর্ণবস্থায় বমনের অথবা মলের সহিত নির্গত হওয়া ইহার বিশেষত্ব।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির সাবধানতা :

জরুরী দরকার না হইলে রাত্রিকালে ইহা ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি কোন জরুরী কারণে রাত্রে ইহা প্রয়োগ করিতে হয়, তাহা হইলে কখনও 12X শক্তির নীচে প্রয়োগ করিতে নাই। উহাতে রাত্রিকালে অনিদ্রা উপস্তিত হইয়া রোগীর কষ্ট হইতে পারে।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির শারীরিক আকৃতি :

রক্তশূন্য, ফ্যাকাশে এবং দুর্বল ধাতুর রোগীর রক্তের স্বল্পতা সত্বেও যদি নিউমোনিয়া, শিরঃপীড়া, বাত ইত্যাদি পীড়ায় স্থানীয় রক্তধিক্য উৎপাদিত হয়, তাহা হইলে ফেরাম ফসই প্রকৃত ঔষধ। ইহাতে একোনাইটের ন্যায় প্রবল অস্থিরতা ও মৃত্যুভয় নাই, আবার জেলসিয়ামের ন্যায় অঘোর ও নিস্তেজতা ভাবও নাই। তাই ইহা একোনাইট ও জেলসিমিয়ামের মধ্যবর্তী অবস্থার লক্ষণে উপযোগী। কিন্ত সুসলারের বায়োকেমিক চিকিৎসায় একোনাইটজেলসিমিয়াম নাই, সেজন্য সর্বপ্রকার প্রদাহিক পীড়াতেই ফেরাম ফস ব্যবহৃত হয়। যে সব ক্ষেত্রে একোনাইট, বেলেডোনা ইত্যাদি ঔষধ হোমিওপ্যাতিক মতে ব্যবহৃত হয়, বায়োকেমিক চিকিৎসায় সে সব স্থানে ফেরাম ফস অব্যর্থ। সুতারাং দেখা যাইতেছে যে, ক্ষীণকায় ফ্যাকাশে ব্যাক্তিদের স্থানীয় কঞ্জেশানে ইহা যেরুপ ফলপ্রদ, হৃষ্টপুষ্ট, বলবান, রক্তধিক্য ধাতুর প্রাদাহিক পীড়াতেও ইহা তদ্রুপ ফলপ্রদ। ডা: ন্যাশের মতে রক্তস্রাব বলবান ব্যাক্তিরই হউক, আর ক্ষীণকায় রক্তহীন ব্যাক্তিরই হউক, ফেরাম ফস উপযোগী।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির পরিচায়ক লক্ষণাবলী :

১/ সর্বপ্রাকার পীড়ার প্রথমাবস্থায় যখন প্রদাহ বর্তমান থাকে, তখন ইহা আবশ্যকীয় ঔষধ।

যেমন – (ক) জ্বরের প্রথমাবস্থায় যখন উচ্চ গাত্রোত্তাপ, দ্রুত নাড়ী, ক্যারোটিভ ধমনীর উল্লফন প্রভৃতি থাকিলে এই ঔষধ বিশেষ সাফল্যের সহিত ব্যবহৃত হয়। (খ) পীড়াক্রান্ত স্থান উত্তপ্ত, লালবর্ণ ও দপদপানি বা টাটানি (সময়ে সময়ে জ্বলাও থাকে) – এই তিনটি লক্ষণ স্ফোটক, বেদনা ইত্যাদি যে কোন প্রদাহিক পীড়ায় দৃষ্ট হইবে, ফেরাম ফস তাহাতে নিশ্চিয়ই সুফল দেখাইবে। এই কয়েকটি লক্ষণ স্মরণ থাকিলে বিবিধ পীড়ার নাম শ্রবণ করিবার প্রয়োজন হইবে না। আরে বেদনাক্রান্ত স্থান নাড়িলে বা স্পর্শ করিলে অত্যান্ত যন্ত্রণা অনুভূত হয়, ঠাণ্ডা প্রয়োগে আরাম বোধ করে।

২/ হৃষ্টপুষ্ট বলবান ও রক্তাধিক্য ব্যক্তির পীড়ায় যেরুপ উপযোগী, ক্ষীণকায়, দুর্বল ও রক্তহীন ব্যাক্তিদিগের স্থানীয় রক্তাধিক্যতেও (Congestion) তদ্রুপ উপযোগী।

৩/ যে সমস্ত ব্যাক্তির চর্ম অতিশয় পাতলা ও স্বচ্ছ এবং যাহাদের চর্ম দিয়া রক্তভা দৃষ্ট হয়।

৪/ মস্তিস্কে রক্তের প্রধাবনবশতঃ দপদপানি শিরঃপীড়া। চক্ষু ও মুখমণ্ডলের আরক্ততা। অজীর্ণ ভুক্তদ্রব্য বমন, নাসিকা হইতে রক্তস্রাব, প্রলাপ বকা, উত্তেজিত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। মনে হয় যেন মাথায় হাতুড়ি মারিতেছে। চুলের গোড়াগুলিতে পর্যন্ত বেদনা। শীতল জলে মাথা ধুইলে আরাম- নড়াচড়া ও স্পর্শে বৃদ্ধি।

৫/ সর্বপ্রকার চক্ষুপীড়ায় প্রথমাবস্থায় যখন চক্ষু লালবর্ণ, উত্তপ্ত, বেদনাযুক্ত ও জ্বালাজনক হয়। মনে হয় যেন চক্ষুর মধ্যে বালু পড়িয়াছে। চক্ষুতে পূঁজ জন্মিবার পূর্বেই এই ঔষধ ব্যবহৃত হয়।

৬/ সর্বপ্রকার কর্নপীড়ায় ১ম সংখ্যক লক্ষণের (খ) এ বর্ণিত প্রদাহিক লক্ষণ থাকিলে অতি উৎকৃষ্ঠ। ঠাণ্ডা লাগা বশতঃ বেদনা। নড়াচড়ায় বেদনার বৃদ্ধি।

৭/ দন্তশূলে ১ম সংখ্যক লক্ষণে (খ) এ লিখিত লক্ষণ থাকিলে। উষ্ণ জলের কুল্লিতে বৃদ্দি- শীতল জলে উপশম। স্পর্শ ও চাপনে বৃদ্ধি।

৮/ প্রদাহবশতঃ জিহ্বা পরিস্কার ও রক্তবর্ণ।

৯/ মস্ককে রক্তধিক্যবশতঃ অনিদ্রা।

১০/ টনসিলাইটিসে যখন ২ম সংক্যক লক্ষণের (ক ও খ) এ বর্ণিত লক্ষণ থাকে তখন চমৎকার। টনসিলের বেদনা প্রথমে দক্ষিণে, পরে বামে যায।

১১/ নতুন ও পুরাতন উভয় প্রকার গলক্ষতের- জ্বর থাকুক, অথবা নাই থাকুক – গলা বেদনা থাকিলেই ইহার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। বক্তা ও গায়কদিগের গলক্ষত (Sore throat) ও স্বরভঙ্গ (hoarseness)।

১২/ যাহাদের ঠাণ্ডা সহ্য হয় না এবং সামান্যমাত্র ঠাণ্ডাতেই সর্দি হয় (ক্যাল্কে ফসসহ পর্য্যায়ক্রমে)।

১৩/ সর্বপ্রকার পাকস্থলীর পড়িায় যখন ভুক্তদ্রব্য অজীর্ণাবস্থায় মল ও বমির সহিত নির্গত হয়, তখন ইহা মহৌষধ। পাকস্থলীর প্রদাহে সামান্য মাত্র খাদ্য গ্রহণেও পাকস্থলীতে বেদনা, ভার ও টান বোধ হয়। ফেরাম ফসের জিহ্বা পরিস্কার। মাংস ও দুগ্ধে অনিচ্ছা – শীতল পানীয়ে প্রবল আগ্রহ।

১৪/ যে কোন পীড়ার সহিত, অথবা একক অজীর্ণ ভূক্তদ্রব্য বমন হইলেও ইহা একমাত্র ঔষধ। কৃমির উত্তেজনাবশথঃ ঐরুপ বমন হইলেও উপযোগী।

১৫/ গ্রীস্মকালীন উদরাময়ে কুন্থনবিহীন জলবৎ মল। ঠান্ডা লাগিয়া উদরাময়ে ইহা উল্লেখযোগ্য ঔষধ। উপরে চাপ দিলে যখন বেদনা অনুভূত হয়।

১৬/ দন্তোদ্গমকালীন উদরাময়ে জলবৎ তরল ভেদ সহ জ্বর, চক্ষু, ও মুখ রক্তবর্ণ, মস্তক এপাশ ওপাশ করিয়া চলা, নিদ্রাকালীন চমকান প্রভৃতি লক্ষণ বর্তমান থাকিলে।

১৭/ ওলাওঠায় পূর্ববর্ণিত উদরাময়ের লক্ষণ সহ অস্থিরতা ও জল পিপাসা থাকিলে। বিকালে চক্ষুতারকা সঙ্কুচিত, গোঙানি প্রভৃতি লক্ষণে কেলি ফস সহ পর্য্যায়ক্রমে।

১৮/ আমাশয়েও মলত্যাগকালীন কুন্থন থাকে না। বাহ্যে শ্লেম্মা ও রক্ত মিশ্রিত অথবা কেবল উজ্জ্বল লাল রক্ত। উদরে চাপ দিলে বেদনা বোধ হয়। এই সঙ্গে জ্বর ও অন্যান্য প্রদাহ লক্ষণ থাকিলে।

১৯/ সরলান্ত্রের জরায়ুর ও প্রসবদ্বারের প্রদাহ এবং অন্ত্রহ পেশী সমূহের শৈথিল্য বশঃ কোষ্ঠবদ্ধ।

২০/ মুত্রপথের পথরোধকারী পেশীসমূহের শৈথিল্যবশতঃ প্রস্রাব ধারণ করিবার ক্ষমতাহীনতা। অবিরত মুত্রত্যাগ প্রবৃত্তি।

২১/ মুত্রনারীর প্রদাহবশতঃ প্রস্রাব হইয়া যাওযা, প্রস্রাব বন্ধ হইয়া গিয়া মুত্রবিকার (Uraemia) হইলে নেট্রাম ফস সহ ব্যবহার্য।

২২/ গণেরিয়ার প্রথমাবস্থায় স্রাব না হইয়া যখন মুত্রনালী প্রদাহিত, আরক্ত, লালবর্ণ প্রস্রাব ও বেদনা থাকে, তখন অতি উত্তম। কখনও বা রক্তপ্রস্রাবও হয়।

২৩/ অর্শ, শ্বাসনালী ইত্যাদি যে কোন স্থান হইতেই হউক না কেন, উজ্জ্বল লালবর্ণ রক্তস্রাব নিঃস্রাব হইলে এবং ঐ রক্ত নির্গত হইবার অনতিবিলম্বে জমাট বাঁধিয়া গেলে ইহা অতি উৎকৃষ্ট।

২৪/ স্ত্রী-জননেন্দ্রিয়ের শৈম্মিক-ঝিল্লির শুস্কতাবশতঃ সহবাসকারীন কষ্ট ও তজ্জন্য অনিচ্ছা প্রকাশ।

২৫/ প্রস্রাবের পর ভাদালব্যথা (after pain), প্রসবন্তিক ক্ষতাদি ও গাত্রবেদনার জন্য অদ্বিতীয়। প্রসবের পর ব্যবহারে যাবতীয় কষ্টকর অবিষ্যৎ পীড়ার হাত হইতে নিস্কৃতি লাভ করা যায়।

২৬/ আঘাত ও আঘাতের ফলে সর্বপ্রকার পীড়ায় ফেরাম ফস অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

২৭/ উত্তপ্ত তৈল, জল অথবা যে কোন কারণেই হউক না কেন, দগ্ধ হইলে ফেরাম  ফসের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্য ব্যবহার বিহিত।

২৮/ বক্ত ও গায়কদিগের অতিরিক্ত স্বরযন্ত্র চালনাবশতঃ স্বরভঙ্গ। ঠাণ্ডা লাগিয়া, অথবা ঘর্মরোধজনিত স্বরভঙ্গ। গলাবেদনা ও গলার মধ্যে শুস্কতা অনুভূত হয়।

২৯/ সর্বপ্রকার সর্দির প্রথমাবস্থায় যখন জ্বর-জ্বরবোধ, মস্তক ভারবোধ, চক্ষু ছলছল করা প্রভৃতি প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায়।

৩০/ বক্ষঃসংক্রান্ত যাবতয়ীয় রোগে শ্বাসনালীর উত্তেজনাবশতঃ গলা সুড়সুড় করিয়া শুস্ক খুকখুকে কাশি। গয়ার উঠে না। সময় সময় কাশির চোটে বক্ষে বেদনা বোধ হয়। ঠাণ্ডা লাগিয়া কাশির উৎপত্তি। উন্মুক্ত বায়ুতে ও কাত্রিকালে কাশির বৃদ্ধি- গৃহমধ্যে থাকিলে উপশম। শ্লেম্মার সহিত উজ্বল লালবর্ণের রক্ত নিঃসৃত হইলে উত্তম।

৩১/ ঠাণ্ডা লাগিয়া ঘাড়ের পেশী সমূহ আড়ষ্ট ও বেদনাযুক্ত। বিভিন্ন সন্ধি ও পেশীরসমূহের বাতবেদনায় উপযোগী। বেদনা ১ম সংখ্যক লক্ষণের  (খ) এর বর্ণি

ত লক্ষণের সদৃশ। নড়াচড়ায় ও অধিক সঞ্চালনে বেদনা বৃদ্ধি- সামান্য সঞ্চালনে ও উত্তাপে উপশম।

৩২/ রক্তল্পতা রোগে ক্যাল্ক-ফসের পর বিশেষ উপযোগী। অজীর্ণাবস্থায় খাদ্যাদি মলের সহিত নির্গত হয়। মুখমণ্ডল রক্তশূন্য। মস্তক উত্তপ্ত, হস্ত পদ শীতল, সামান্য কারণেই ঠাণ্ডা লাগে।

৩৩/ দ্বিপ্রহর ১-২ টায জ্বর আসা ফেরামের বিশেষ লক্ষণ। অন্যান্য লক্ষণ ২য় সংখ্যক লক্ষণের (ক) এর বর্ণিত লক্ষণের ন্যায়।

৩৪/ সর্বপ্রকার পীড়াই সঞ্চালনে, চাপনে, স্পর্শে, আহারকালীন, শীতল বাযূতে, রাত্রিকালে এবং প্রত্যুষে বৃদ্ধি।

৩৫/ স্থিরভাবে থাকিলে ও ঠাণ্ডা প্রয়োগে যন্ত্রণার উশ্রম।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির উপশম – বৃদ্ধি : এই ঔষধের সকর লক্ষণ সঞ্চালনে, উত্তেজনায় এবং উত্তাপে বৃদ্ধি হয় এবং শীতলতায় ও মৃদু হয় এবং শীতলতায় ও মৃদু সঞ্চালনে উপশম হয়। নিন্মে আলোচনা করা হল-

বৃদ্ধি :

ক/ চাপ দিলে বা নড়াচায় বৃদ্ধি।

খ/ আহারকারীন কম্প বৃদ্ধি।

গ/ উত্তাপে এবং উত্তপ্ত পানীয়ে বৃদ্ধি।

ঘ/ বাইরের খোলা বাতাসে কাশি বৃদ্ধি।

ঙ/ হেরিং মাছ ও কেক খাইলে বৃদ্ধি।

চ/ রাত্রিকালে এবং ভোর ৪টা হইতে ৬টা পর্য্যন্ত বৃদ্ধি।

ছ/ আহার কালীন পীড়া বৃদ্ধি।

হ্রাস :

১/ শীতল বায়ু প্রবাহ সহ্য না হইলেও ঠাণ্ডা প্রয়োগে এবং স্থির হইয়া থাকিলে পীড়া হ্রাস।

২/ দাঁতের ব্যথা শীতলতায় উপশ্রম।

৩/ সমান্য সঞ্চালনে কাঁধের ব্যথা উপশম।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির শক্তি :  ইহার 3X বিচূর্ণ হইতে 200X বিচুর্ণ পর্য্যন্ত প্রয়োজন মত ব্যবহৃত হয়। তবে 3X বা 6X প্রভৃতি শক্তিতেই সমধিক উপকার করিয়া থাকে কতগুলি বিশেষ বিশেষ রোগের জন্য অভিজ্ঞতা লদ্ধ কয়েকটি বিশেষ শক্তি ব্যবহৃত হইয়া অত্যাশ্চর্য্য ফল প্রদান করে।

রাত্রিকালে বিশেষ প্রয়োজন না হইলে ১২X শক্তি নিন্মে ব্যবহার করা কর্তব্য নহে। রক্তহীনতা পীড়ায় 3X শক্তি বেশ সুফল প্রদন করে। দন্ত উত্তোলন হেতু ভীষণ রক্তস্রাব হইলে 3X বিচুর্ণ। ব্রঙ্কাইটিসেও 6X শক্তি, কাশিতে 12X, কাশিতে অনিচ্ছায় প্রস্রাব নির্গমন হইলে 3X শক্তি, হৃৎকম্প অবসন্নতা দুর্ব্বলতা ক্ষেত্রে 3X শক্তি পুনঃপুনঃ, তরুণ জ্বর প্রভৃতিতে 1X ,3X, 6X শক্তি, রক্তধিক্যজনিত অনিদ্রায় 30X শক্তি, তরুণ চক্ষু পীড়ায় 12X পুরাতন হইলে 24X, নিউর‌্যান্থেনিয়া জিনিত রক্তধিক্য, কোমরে বেদনা মুত্রস্থলীর উত্তেজনা, শ্বেতপ্রদর, মেমোরিয়ায় 4X হইতে 6X পুণঃ পুনঃ ব্যবহৃত হয়।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির মন্তব্য : রাত্রিকালে ফেরাম ফস ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা তাহাতে রোগীর নিদ্রার ব্যঘাত ঘটিয়া তাহার রোগ বৃদ্ধি হইতে পারে। একান্তই প্রয়োজন হইলে 12X, বা 30X শক্তির নীচে ব্যবহার করা উচিত নয়। যেখানে শিশু কেমন যেন মেদাটে হইয়া যাইতেছে, কিছুই খাইতে চায় না। ক্ষুধা নাই, গরহজম হয়, অজীর্ণ ভুক্তদ্রব্য বমন করিয়া ফেলে, ছেলে দিনদিন শীর্ণ, শিথিল ও দুর্বল হইযা যায়, তথায় ক্যালকেরিয়া ফস সহ ফেরাম ফস অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ঔষধ আর নাই।। অল্পদিন মধ্যেই সেই নির্জীব শিশু স্বাস্থ্যের ও সৌন্দর্য্যে নয়নান্দদায়ক হইয় উঠিবে।

ডা: কুপর বলেন, যে সকল লোকের ত্বক খুব স্বচ্ছত্বক নিন্মে রক্ত কণিকা সকল চকচকে দেখা যায় তাহাদের পক্ষে ইহা বিশেষ উপকারী। তাঁহার মতে যাহাদের দিনের বেলায় অনিচ্ছা সত্বেও মুত্রত্যাগ হয় এবং তাহার সহিত মুত্রস্থলীর সংকোচনকারী সুত্র সকলের একপ্রকার বেদনাহীন উত্তেজনা প্রায় নিন্মেক্ত ব্যবহারোপযোগী লক্ষণসমুহ দেখা যায়। যেমন- রক্তস্বল্পতা, রক্তস্রাব, প্রদাহ, দেহ ও মনের আলস্যভাব, কাজে অনিচ্ছা, স্নায়বিক অবসন্নতা (কেলি ফস), বাতজনিত পক্ষঘাত, দেহের ডানদিকে তরুণ প্রদাহিক রিউম্যাটিক বত, ডান চক্ষুর উপরে স্নায়ুশূল পীড়া (প্রাতে বৃদ্ধি) এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করিতে ফেরাম ফস 12X তল্য ঔষধ নাই।

ফেরাম ফসফোরিকাম ঔষধটির সেবন বিধি : প্রাপ্ত বয়স্কারা ৫টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার। অপ্রাপ্ত বয়স্করা ৩টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার কুসুম কুসম গরম পানির সহিত সেবন করতে হবে অথবা রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে সেনব করুন।

সমাপ্ত

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এ ওয়েব সাইটের মুল উদ্দেশ্যে হচ্ছে স্বাস্থ্য সম্পের্ক কিছু দান করা বা তুলে ধরা। সাধারণ মনুষের উপকার হবে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও ছাত্ররা উপকৃত হবেন। এ ওয়েব সাইটে থাকছে পুরুষ স্বাস্থ্য বা যৌনস্বাস্থ্য, গাইনি স্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, মাদার টিংচার, সিরাপ, বম্বিনেশন ঔষধ, বাইকেমিক ঔষধ, হোমিওপ্যাথিক বই, ইউনানি, হামদর্দ, হারবাল, ভেজষ, স্বাস্থ্য কথা ইত্যাদি। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev