শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র

আরোগ্য হোমিও হল / ২২২ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:০৫ অপরাহ্ন
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র
আরোগ্য হোমিও হলে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আজ ডেঙ্গুর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা কররো। চলেন কথা না বাড়িয়ে মুল আলোচনায় ফিরে যায়। বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর দাপট বেশি দেখা যায়। এডিস এজিপটাই ও এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির স্ত্রী-মশা এই রোগের প্রধান বাহক হিসাবে কাজ করে। এই রোগে সবচেয়ে বড় ঝুকি আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যরাও দ্রুত আক্রান্ত হয়।

ডেঙ্গু বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, ইমপালস হাসপাতালের নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন অধ্যাপক ডা: জাহির আল-আমিন।
রোগের লক্ষণ : লক্ষণ ও রোগতত্ত্বের ভিত্তিতে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগে বিভক্ত। যথা-

ক/ সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর।

খ/ রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর :

১/ হঠাৎ তীব্র জ্বর আসে, যা সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

২/ জ্বরের সময় পুরো গায়ে কিংবা গায়ের কিছু অংশবিশেষে লাল লাল ফুসকুড়ি তৈরি হয়।

৩/ তীব্র মাথাব্যথা করে।

৪/ চোখের পেছনে ব্যথা করে।

৫/ মাংসপেশি, অস্থিসন্ধি কিংবা কোমরে ব্যথা থাকে।

৬/ বিরল ক্ষেত্রে জ্বরের পর্যায়ে রোগীর দেহের নানা জায়গায় রক্তক্ষরণ হয়।

রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর :

ক/ এই ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের মতোই। তবে জ্বর শেষে পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর দেহের চামড়ার নিচ, চোখ, নাক, মুখ, যোনিপথ, বমি, প্রস্রাব-পায়খানা অথবা কাশির সঙ্গে স্বল্প থেকে তীব্র রক্তক্ষরণ হতে পারে।

খ/ রোগীর রক্তনালি থেকে প্লাজমা লিকেজ হওয়ার কারণে বুকে ও পেটে পানি জমতে পারে।

গ/ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যাওয়া সম্ভবনা থাকে। সাধারণত জ্বর শেষ হওয়ার পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত রোগীর এসব লক্ষণ দেখা দেয় বলে ওই সময়কালকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ওই রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্রাইসিস পিরিয়ড তথা সংকটকাল বলা হয়ে থাকে।

ক/ ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় : মানবদেহে ডেঙ্গুজ্বরের উপস্থিতির জটিলতা ও নিরূপণকল্পে ল্যাবরেটিরি পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

ক/ জ্বরের কারণ তথা ভাইরাসের উপস্থিতি নিরূপণকল্পে পরীক্ষা :

১/ রোগীররক্তে ভাইরসের দেহস্থ ঘঝ অ্যান্টিজেন নামক দেহানুর উপস্থিতি।

২/ ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগীর রক্তে উৎপন্ন অ্যান্টিবডির উপস্থিতি।

৩/ আক্রান্ত রোগীর কোষকলা কিংবা রক্তে ওই জীবাণু কিংবা এর দেহাংশ তথা অ্যন্টিজেনের উপস্থিতি।

৪/ কিংবা চঈজ পরীক্ষার মাধ্যমে ওই জীবাণুর নিউক্লিক এসিডের বিন্যাস নির্ণয় করা, এক বা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীরদেহে এ রোগের জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
খ/ রোগ নির্ণয়ে সহায়ক পরীক্ষা :

১/ কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ।

২/ রক্তের হেমাটোক্রিট।

৩/ সিরাম এসজিপিটি ও এসজিওটি পরীক্ষার মাধ্যমে অনুচক্রিকা ও শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যায় ও হেমাটোক্রিটের মাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া দেখে রোগীরদেহে এই রোগের উপস্থিতি ও এর গতিবিধি, জটিলতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

গ/ এ ছাড়া এ রোগে সৃষ্ট রোগীর দেহে নানা জটিলতা নিরূপণকল্পে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে নিম্নলিখিত এক বা একাধিক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে যেমন –

১/ লিভার ফাংশন টেস্ট।

২/ রেনাল ফাংশন টেস্ট।

৩/ সিরাম ইলেকট্রোলাইট

৪/ চেস্ট এক্স-রে।

৫/ ইসিজি।

৬/ পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি।

৭/ আর্টারিয়ার ব্লাডগ্যাস অ্যানালাইসিস।

৮/ ব্লাড গ্লুকোজ।

৯/ সিরাম ডি-ডাইমার।

১০/ সিরাম এফডিপি।

১১/ সিরাম ক্যালসিয়াম।

১৩/ ডেঙ্গুর রোগীর ক্ষেত্রে এসব কিছুই এক বা একাধিক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে ।

ঘ/ মনে রাখতে হবে : আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, টনসিলাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ল্যাপ্টোস্পাইরোসিস, মেনিনজাইটিস, চিকুনগুনিয়া জ্বর, টাইফাস বা সান্নিপাতিক জ্বর প্রভৃতি রোগ একই উপসর্গ নিয়ে মানবশরীরে দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনে একই রূপে ভিন্ন ব্যাধির সম্ভাবনা দূরীকণকল্পে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে নানা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা : এ রোগের চিকিৎসা মূলত লক্ষণ ভিত্তিক। কারণ এ রোগের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো আবিস্কার হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়িতে রেখে এ রোগের নিম্নলিখিত চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

১/এ রোগের চিকিৎসায় পান করতে হবে পানিসহ প্রচুর তরল জাতীয় খাবার। তরল খাবার হিসাবে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ প্রভৃতি। অন্ততপক্ষে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার তরল খাবার খেতে হবে । এ রোগের চিকিৎসায় তরল খাবার হিসাবে কোল্ড ড্রিংকস পরিহার করতে হবে।

২/ শারীরিক বিশ্রাম নিতে হবে।

৩/ জ্বরের জন্য হোমিওপ্যাথিক ইউপেটেরা পার্ফো-এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ প্যারা সিটা মল ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

৪/ প্রয়োজনে জ্বরের সময় দ্রুত রোগীর মাপমাত্রা স্বাভাবিক আনার লক্ষ্যে রোগীর মাথায় ঠান্ডা জলপট্টি কিংবা সারা দেহ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দেওয়া যেতে পারে।

৪/ বমির জন্য ইপিকার্ক এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ বমি নাশক ওষুধ দেয়া যেতে পারে।

৫/ মনে রাখতে হবে প্রয়োজনে রোগী জটিল পর্যায়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির করতে হবে। এ অবস্থায় প্রধানত রোগীর শিরাপথে প্রয়োজনীয় স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

৬/ অতিরিক্ত রক্তক্ষণ হলে প্রয়োজনে রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়া যেতে পারে। তীব্র রক্তক্ষরণের সময় রোগীর রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা যখন প্রতি কিউবিক মিলি.-এ ১০ হাজারের কম অথবা রক্তপাত হলে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে প্রতি কিউবিক মিলিলিটারে ৫০ হাজার বা তার কম হলেও রোগীর শিরা পথে অনুচক্রিকা তথা প্ল্যাটিলেট ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হতে পারে।

৭/ রোরীর জটিল পর্যায়ে রোগীর এক বা একাধিক অঙ্গ যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন এসব রোগীকে প্রয়োজনে আইসিসিইউতে রেখে নিবিড় চিকিৎসা দেওয়া হয়।

৮/ বাড়িতে যথাযথ চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে
রোগী মুখে খাদ্য ও পানীয় খেতে না পারলে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

৯/ তীব্র পেট ব্যথা, তীব্র বমি করে।

১০/ হাত-পা ক্রমাগতভাবে ঠান্ডা ও নিস্তেজ হয়ে আসলে।

১১/ রোগীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হলে।

১২ তীব্র অবসাদ কিংবা রোগীর আচরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে।

১৩/ মহিলাদের মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হলে।

১৪/ ৬ ঘণ্টা ধরে আক্রান্ত রোগীর প্রস্রাব না হলে।

১৫/ রোগীর হাত-পা নীল হয়ে আসলে।

ডেঙ্গু রোগের জটিলতা : সাধারণ কিংবা রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর বিরল ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক কিংবা দীর্ঘমেয়াদী আক্রান্ত ব্যক্তির এক বা একাধিক অঙ্গ নানা জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম’ বলা হয়। ডেঙ্গুজ্বরের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশিতে রয়েছে –

ক/ নবজাতক শিশু।

খ/ প্রৌঢ় ব্যক্তি।

গ/ স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যাক্তি।

ঘ/ গর্ভবতী মা।

ঙ/ ঋতুবর্তী নারী।

চ/ পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

ছ/ থ্যালাসেমিয়াসহ অন্যান্য রক্তরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

জ/ হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

ঝ/ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগী, দীর্ঘমেয়াদে যকৃত ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

ঞ/ এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি।

ট/ দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড ও ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারকরী ব্যাক্তি।

ঠ/ রোগের নানা জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি এমন ব্যক্তি।
মনে রাখবেন :

১/ আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

২/ প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।

৩/ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে।

৪/ মশারির ভেতর থাকুন, যাতে আপনার থেকে মশার মাধ্যমে অন্যজন আক্রান্ত না হয়।

৫/ ফুলের টবসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি নিয়মিত অপসারণ করতে হবে । অন্তত সাপ্তাহে একবার সেটা করুণ।

৬/ ডেঙ্গুজ্বরের মূল চিকিৎসা প্রচুর তরল বা পানি পান করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া।

৭/ দিনের বেলায় ঘুমাতে হলে মশারি বা মশা নিরোধকের ব্যবস্থা করুন।

৮/ এমন কোন পোশাক পরবেন না, যাতে আপনার হাত-পা আলগা থাকে।


আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এ ওয়েব সাইটের মুল উদ্দেশ্যে হচ্ছে স্বাস্থ্য সম্পের্ক কিছু দান করা বা তুলে ধরা। সাধারণ মনুষের উপকার হবে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও ছাত্ররা উপকৃত হবেন। এ ওয়েব সাইটে থাকছে পুরুষ স্বাস্থ্য বা যৌনস্বাস্থ্য, গাইনি স্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, মাদার টিংচার, সিরাপ, বম্বিনেশন ঔষধ, বাইকেমিক ঔষধ, হোমিওপ্যাথিক বই, ইউনানি, হামদর্দ, হারবাল, ভেজষ, স্বাস্থ্য কথা ইত্যাদি। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev