শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২৩ অপরাহ্ন

ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ কী?

আরোগ্য হোমিও হল / ১৯৮ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩, ৫:২৯ অপরাহ্ন
ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ কী

ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ কী?

আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ কী, মাহিলাদের মাসিক কেন হয়, কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন, মাসিক নিয়মিত হওয়া জরুরি কেন এই বিষয়টি নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। তা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।

একজন মাহিলার স্বাভাবিক ভাবে এক মাসিকের প্রথম দিন থেকে আর এক মাসিকের প্রথম দিন পর্যন্ত যে সময় সেটাই হলো মাসিক বা ঋতুচক্র। সাধারণত ২৮ দিন পর পর মাসিক হয়ে থাকে। যদিও ২১ থেকে ৩৫ দিন অন্তর পর্যন্ত স্বাভাবিক ঋতু¯্রাব হিসেবে ধরা হয়। একবার মাসিক হলে দুই থেকে আট দিন সময় লাগে ও এক মাসিকে মোট রক্ত ক্ষরণ হয় পাঁচ থেকে ৮০ মিলি। এই তিনটি নিয়মের যেকোনো একটা অনিয়ম হলেই সেটা হচ্ছে অনিয়মিত মাসিক হিসেব ধরা হয়।

আরও পড়ুন – এইচ আর – ৪১ (অনিদ্রায় কার্যকর)

মাহিলাদের মাসিক কেন হয় ?

মাসিক হওয়ার মূল কারণ বলা যেতে পারে নারীদের গর্ভনিরোধ পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তেজনা পরিণত হওয়া অথবা গর্ভধারণের জন্য তৈরি হওয়া। নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে ঘটে মাসিকের সৃষ্টি হয় :

অবৈতনিক প্রজনন সিস্টেম : মহিলার যৌন অঙ্গে একটি অবৈতনিক প্রজনন সিস্টেম রয়েছে, যা মাসিক চক্র নামে পরিচিত। এই সিস্টেম অধীনেই মাসিকের প্রক্রিয়া ঘটে। প্রতি মাসে মহিলাদের গর্ভধারণ হওয়ার জন্য শরীরে গর্ভনিরোধক তথা অন্যান্য পদ্ধতিগুলি পরিচালিত হয়।

হরমোনাল পরিবর্তন : মাসিকের প্রক্রিয়ায় হরমোন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমপক্ষে দুটি হরমোন, অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরোন, শরীরে উৎপন্ন হয়ে মাসিকের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবর্তিত শরীরের হরমোনের প্রভাবে রক্তের প্রস্তর পদার্থ ক্ষীণ হয়ে মাসিক চক্র বা ঋতুচকের মাধ্যমে শরীর তার অতিশয় পদার্থবিশিষ্ট বিচ্ছিন্ন করে।

গর্ভধারণের অসম্ভাব্যতা : যদি মাসিক চক্রের মধ্যে তার গর্ভধারণ ঘটে তবেই শরীর গর্ভবতী স্থিতিতে হয়। একই ভাবে গর্ভবতী স্থিতিতে থাকলে মাসিক প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। আবার এই পদার্থগুলির কারণে শরীর একটি নির্দিষ্ট প্রকারের পদার্থবিশিষ্ট রক্ত শোষণ করে যা মাসিক চক্র বা ঋতু¯্রাব হিসাবে প্রদর্শিত হয়।
এগুলি মাসিক হওয়ার কারণ গুলির মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। মাসিকের প্রক্রিয়া প্রকাশ ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বাস্তবগত ও হরমোনাল পদার্থের সমন্বয়ে এই প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করে থাকে।

কোন কোন নারীর ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ কী?
ঘন ঘন মাসিকের বেশ কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো নিন্মে উল্লেখ করা হলো:

(ক) সাবালিকা হওয়ার প্রথম মাসিক ১ বা ২ বছর ডিম্বাশয়ের অপরিপক্বতার জন্য অনিয়মিত হয়ে থাকে। এ সমস্যার জন্য দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই।

(খ) কোন নরীর মেনোপজ হওয়ার আগের ৪-৫ বছর হরমোনের তারতম্যের জন্য মূলত অনিমিত মাসিক হয়ে থাকে তবে এটি খুব বড় সমস্যা না।

(গ) কিছু কিছু জন্মনিয়ত্রন পিল খাওয়ার সময় বা কপার-টি দেওয়া দেওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য অনিমিত মাসিক হয়ে থাকে।

(ঘ) বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় হরমোনের তারতম্যের কারণে অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে।

(ঙ) খুব বেশি শারীরিক ব্যায়াম করলে।

(চ) অতিরিক্ত টেনশন করলে।

(ছ) হঠাৎ খুব ওজন বেড়ে অথবা কমে গেলে।

(জ) হরমোনজনিত রোগ পিসিওএস হলে।

(ঝ) ঔই নারী থাইরয়েড আক্রান্ত থাকলে ।

(ঞ) স্ত্রী রোগ যেমন – জরায়ুর পলিপ, ফাইব্রয়েড টিউমার, জরায়ুর প্রদাহ ও এন্ডোমেট্রোসিস রোগ থাকলে।

উল্লেখিত এসব কারণে ঘন ঘন মাসিক হয়ে থাকে অর্থাৎ অনিয়মিত ভাবে মাসিক হয় । তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে এ সকল বিষয় সম্পর্কে।

আরও পড়ুন- কেন্ট ১২ (অনিয়মিত মাসিক রোগে কার্যকর)

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন :
কোন মাসে কয়েকদিন মাসিক এদিক ওদিক হলে ভয়ের ভয়ে কোন কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাবেন না। অথবা সাবলিকা হওয়ার কয়েক বছর পর মাসিক এদিক ওদিক হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার নেই এটা আপনা আপনি স্বাভাবিক নিয়মে ঠিক হয়ে যাবে।

নিচের এ সমস্যা গুলো হলে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে :

(১) যদি হঠাৎ করে মাসিক চক্র পরিবর্তন হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীর বয়স ৪৫ এর কম হতে হবে।

(২) ২১ দিনের চেয়ে কম সময়ে অথবা ৩৫ দিনের চেয়ে বেশি সময়ে মাসিক হলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

(৩) যদি আপনার মাসিক সাত দিনের চেয়ে বেশি থাকে অথবা তিন দিনের চেয়ে কম হলে।

(ঘ) সর্বনিম্ন মাসিক এবং সর্বোচ্চ মাসিক হওয়ার দিনের মধ্যে ২০ দিনের চেয়ে বেশি দূরত্ব হলে।

(ঙ) আপনার অনিয়মিত মাসিক কিন্তু আপনি বাচ্চা নিতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন- গাইনো কার্ড সিরাপ (শ্বেত প্রদর ও মাসিকের সম্যাসায় টনিক)

মাসিক নিয়মিত হওয়া জরুরি কেন?
মাসিক নিয়মিত হওয়া জরুরি এর কারণ হলো নিয়মিত মাসিক হওয়া শরীরের স্বাস্থ্য ও তাত্ত্বিক সমতা নিশ্চিত করতে সহযোগীতা করে। নিয়মিত মাসিক চক্র হলো শরীরের সুস্থতার একটি প্রতীক বলা যায়। অনিয়মিত মাসিক হলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে।

নিয়মিত মাসিক হলে যে উপকার গুলো পাবেন :
শরীরের স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সমতা : নিয়মিত মাসিক হলে শরীরের স্বাস্থ্যকে নিরাপদ রাখে এবং শরীরের সমতা বজায় রাখে। অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ একটাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার না পাওয়া।

জন্মনিরোধ : নিয়মিত মাসিক চক্র থাকা মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এটি একটি নারীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রণ ও বাচ্চা জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্বাস্থ্য সমৃদ্ধি : নিয়মিত মাসিক চক্র থাকা মাধ্যমে নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সমৃদ্ধ হয়। এটি হরমোনাল স্তর সমতুল্য রাখে এবং বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা ও সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে ও মানসিক চাপ কমায়।

গৃহস্থালী পরিচালনা : নিয়মিত মাসিক চক্র হওয়া নারীদের গৃহস্থালীকে উচ্চ মানসিক বিপথে রাখে না। গৃহস্থালী পরিচালনা, পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়মিত মাসিক চক্র অনুসারে সহজ হয়। এই কারণগুলির জন্য মাসিক নিয়মিত হওয়া জরুরি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও কঠিন পরিশ্রমের ফলে এটির নির্ভরযোগ্যতা বিবেচনা করা হয়। যদি আপনার কোন সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা মাসিক চক্রের সাথে সম্পর্কিত হয়, তবে সেটিকে চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন- এন – ১০ (অনিয়মিত সাসিকের ড্রপস)

ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারণ :
একজন নারীল ঘন ঘন মাসিক হওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে ও এর পেছনের শারীরিক ও মানসিক উভয়ই কারণ থাকতে পারে। নিম্নে কিছু কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:

হরমোনাল পরিবর্তন : মহিলাদের মাসিক চক্র হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত হয়ে থাকে। যেমন – বয়স্ক হওয়া, পাবার্টি হওয়া, প্রসব, পরিবার পরিকল্পনা, হরমোনাল সমস্যা ইত্যাদি হরমোন পরিবর্তনের কারণে মাসিকের পরিমাণ ও মেয়াদের পরিবর্তন হতে পারে।

আদর্শ ওজন : মেয়েদের আদর্শ ওজনের বেশি অথবা কম থাকলে মাসিকের পরিমাণ এবং মহিলার পরিবর্তন হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য না খাওয়া ও পর্যাপ্ত পুষ্টিমূলক খাবার না পাওয়া ফলে এ সমস্যার কারণ হতে পারে।

ক্ষয়রোগ : ক্ষয়রোগ যেমন – টিবিও, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি শারীরিক অবস্থাকে ধ্বংস করে এবং মাসিকের পরিমাণ ও মহিলার পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

নির্দিষ্ট ওষুধ : কিছু ওষুধ যেমন – প্রস্তুতিবদ্ধ গর্ভনিরোধক, হরমোনের চিকিৎসা অথবা অন্যান্য পারস্পরিক প্রভাবযুক্ত ওষুধ, মাসিকের পরিমাণ ও মেয়াদের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

শারীরিক ও মানসিক : শারীরিক ও মানসিক তনাব যেমন – চিন্তা, মানসিক চাপ ও স্ট্রেস মাসিকের পরিমাণ ও মেয়াদের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev