শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা

আরোগ্য হোমিও হল / ২১১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৭:০০ পূর্বাহ্ন

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা (Calcarea Fluorica ) 

রাসায়নিক ফর্মূলা CaF2

ভিন্ন নাম – ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড অব লাইম।

রাসায়নিক বিশ্লেষণ- ফরমুলা –  Ca F2

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকার  প্রস্তুত প্রণালী :

ইহা এক জাতীয় খনিজ পদার্থ এবং সহজেই পাওয়া যায়। স্ফটিকের মত ইহা পরিস্কার এবং নানা আকারে নানা বর্ণে ইহা দেখা যায়। বিশুদ্ধ ক্লোরাইড-অব-লাইম হইতে বিচূর্ণ পদ্ধতিতে প্রস্তুত হইয়া ইহা ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকার ক্রিয়া স্থান : ইহা দেহস্থ অণ্ডলালা (এলবুমেন) নামক পদার্থের সহিত মিলিত হইয়া কার্য্যকরী হইয়া থাকে। দেহস্থ অণ্ডলালার সহিত মিশ্রিত হইয়া ইহা স্থিতিস্থাপক তন্তু সমুঞ মাংস পেশীস্থ স্থিতিস্থাপক সুত্র অস্থির উপরিস্থ আবরণ, দন্তের এনামেল নামক পদার্থ, ত্বকের উপরিস্থ এপিডার্মিস (নুনছাল), সকল প্রকার সংযোজক টিসুকোষ নির্ম্মাণ করিয়া থাকে। সে জন্যই দন্ত ও অস্থির অপুষ্টতা, অস্থিতে অর্ব্বুদ, অস্থি পীড়ায় প্রস্তবৎ কঠিনতা, দন্তের শিথিলতা, দন্তক্ষয় প্রভৃতি বিভিন্ন পীড়া হইতে দৃষ্ট হয়। শিরা ও ধমরীর উপরও ইহা ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে এবং ইহার অভাবে শিরা ও ধমরীর স্ফীত হইয়া অর্শ, ধমনীর অর্বুদ, শিরা স্ফীতি প্রভৃতি পীড়া উৎপন্ন হয়। যখনই স্থিতিস্থাপক তন্তু সমূহের মধ্যে এই লাবণিক পদার্থের অভাব হয়, তখন যে তন্তুতে ইহার অভাব হইয়াছে, তাহাদের সংকোচন শক্তি নষ্ট হওয়া বশত : ইহারা ক্রমাগত স্ফীত হইয়া পুরাতন শিথিল ভাব ধারণ করে। যখন কোন রক্তবহা শিরা বা ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা অথবা কোন সংযোজক তন্তু কিংবা রসবহা সমূহে এই লবণের অভাব হয় তখন উহারা নিয়মিত কার্য্য করিতে পারে না এবং সেই স্থানের রস বা রক্তস্থ কঠিন পদার্থ অশোষিত হইতে না পারিয়া সেই সকল স্থানে একত্রিত হইয়া কঠিন হইয়া থাকে।

সে জন্যই যে কোন যন্ত্র যে কোন রোগ বশত:ই হোক না কেন, যদি প্রস্তরবৎ কঠিন হয় তাহা হইলে ইহার অভাব জনিত ক্রিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলিয়া জানিতে হইবে এবং উক্ত লক্ষণে এই ঔষধ কখনও বিফল হয় না।

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকার বিশেষত্ব : এই লবণের অভাব জনিত ক্রিয়ায় আমারা দ্বিবিধ লক্ষণ দেখিতে পাই (১) কোন স্থানে প্রস্তরবৎ কাঠিন্য এবং  (২) কোন কোন স্থানে শিথিলতা। একদিকে জরায়ুর শিথিলতা এবং তজ্জনিত রক্তস্রাব, ভ্যাদাল ব্যথা, জরায়ুর স্থানচ্যুতি ইত্যাদিতে যেমন ইহা অপরিহার্য্য, তেমনি যে কোন যন্ত্র যে কোন কারণেই হোক কাঠিন্য দেখা দিলেও ইহা অব্যর্থ। কঠিন ছানির চিকিৎসায় ইহা ব্যবহৃত হয়। চর্মরোগ আক্রান্ত স্থান ফাটা ফাটা হওয়া ইহার আর একটি বিশেষত্ব।

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকার পরিচায়ক লক্ষণাবলী :

১/ অত্যন্ত অবসাদগ্রস্ত ও সন্দিগন্ধচিত্ত, অর্থনাশ হইবার ভয়।

২/সদ্যোপ্রসূত শিশুর মস্তকের প্যারাইটাল অস্থিতে রক্তময় অর্বুদে (bolld tumor) ইহা অমোঘ: মস্তকের অস্থির যে কোনও স্থান ফুলিয়া রক্ত হইলে এবং অস্থিক্ষতের চতুস্পার্শ্ব কঠিন থাকিলে।

৩/ ইহা ছানির অতি উৎকৃষ্ট মহৌষধ, বিশেষত : যদি উহা কঠিন হয়।

৪/ চক্ষু কৃষ্ণবর্ণ মণ্ডলে দাগ।

৫/ দন্তের শিথিলতা প্রযুক্ত দন্তশূল এবং আহারকালীন উহার বৃদ্ধি। বেদনাহীন শিথিল বিলম্বে (ক্যাল্ক-ফস)।

৬/ দন্ত উঠিতে বিলম্ব (ক্যাল্ক-ফস)।

৭/শীঘ্র শীঘ্র দন্ত ক্ষয় হইয়া যায়।

৮/ স্ফোটক, ব্রণ, গ্রন্থি স্ফীতি ইত্যাদি প্রস্তরের ন্যায় কঠিন হইলে অব্যর্থ। প্রস্তরের ন্যায় কঠিন হইলে প্লীহা, যকৃৎ ইত্যাদিতে ও ইহা উৎকৃষ্ট।

৯/ যে কোন স্থানের অথবা যে কোন প্রকারের ক্ষত হউক না কেন, ক্ষতের চতুস্পার্শ্ব কঠিন ও অমসৃণ হইলে এবং উহা হইতে দুর্গন্ধযুক্ত গাঢ় হরিদ্রাবর্ণের পূঁজময় স্রাব নির্গত হইলে।

১০/ অন্ত্রবৃদ্ধি বা হার্নিয়ার ইহা অপেক্ষা ফলপ্রদ ঔষধ আর নাই।

১১/ অতিশয় কুন্থনজনিত গুহ্যদ্বার বিদারণ রোগ (fissure of the rectum) ইহার সর্বপ্রধান ঔষধ, যন্ত্রণা, টাটানি প্রভৃতিও এই ঔষধে আরোগ্য হয়।

১২/ স্রাবী, অস্রাবী সকল প্রকার অর্শের ইহাই শ্রেষ্ঠ ঔষধ। কোষ্ঠবন্ধ হইলে ইহা আরও উপযোগী।

১৩/ দুর্দমনীয় কোষ্ঠবন্ধ, মল অনেকক্ষণ ধরিয়া মলভাণ্ডে জমিয়া থাকিলেও বাহির হইতে চাহে না, অনেকক্ষণ ধরিয়া কুন্থন দিতে হয়।

১৪/ অণ্ডকোষে জল জমা এবং অণ্ডকোষের প্রস্তরবৎ কঠিনতা সহ যে কোন প্রকার অণ্ডকোষের পীড়া।

১৫/ অণ্ডকোষের শীর্ণতা সহ অবিরত প্রষ্টেকিক রস ও শুক্রক্ষরণ।

১৬/ সর্বপ্রকার জরায়ু-স্থানচ্যুতির (কেলি ফস, ক্যাল্ক-ফস, নেট্রাম মিউর) সর্বপ্রকার ঔষধ। প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা, মনে হয় যেন জরায়ু যোনিপথ দিয়া বাহির হইয়া যাইবে। জরায়ু কঠিন, নরম অথবা শিথিল যাহাই হউক না কেন ইহার ব্যবহার অপরিহার্য।

১৭/ জরায়ু কাঠিন্যজনিত কষ্টরজ: পীড়া অথবা জরায়ুর শিথিলতা প্রযুক্ত অতিরিক্ত রক্তস্রাব, গর্ভস্রাব, অপ্রচুর প্রসববেদনা, ভ্যাদাল বেদনা ইত্যাদি যাবতীয় পীড়া।

১৮/ গর্ভাবস্থায় মধ্যে সেবন করিতে দিলে জরায়ু বলাধান হইয়া সুপ্রসব হয়।

১৯/ ডিফথিরিয়া কৃত্রিম ঝিল্লি (false membrane) শ্বাসনালী পর্যন্ত ব্যাপ্ত হইয়া পড়িলে (ক্যাল্ক ফসসহ)।

২০/ দুর্দমনীয় কোষ্ঠবদ্ধ সহ উদরী পীড়া। উদর শক্ত এবং উদরের উপর শিরা সকল ভাসিয়া উঠিয়াছে দেখা যায়।

২১/ অজীর্ণ বমন “ফেরাম ফস” দ্বারা উপরকার না হইলে।

২২/ পুরাতন কটিবাত। সেক্রাম অস্থিতে বেদনা, ভারবোধ ও ক্লান্তি। সর্ব প্রকার বাতবেদনা ঠাণ্ডায় ও প্রথম সঞ্চালনে বৃদ্ধি, উত্তাপে ও অবিরত নড়াচড়া করিলে উপশম।

২৩/ সর্দি ও কাশিতে বহুল পরিমাণ গাঢ়, দুশ্ছেদ্য দলা দলা সবুজ বা হরিদ্রাবর্ণের দুর্গন্ধ স্রাব।

২৪/ ওজিনা পীড়ায় পূর্বোক্ত স্রাব সহ অস্থি ক্ষত।

২৫/ আলজিহ্বার বিবৃদ্ধিবশতঃ গলা সুড়সুড় করিয়া শুস্ক খকখকে কাশি।

২৬/ যে কোন স্থানে চর্ম ফাটা ফাটা হয়, তাহাতেই ইহা উপযোগী। পায়ের তলায় কড়া। চর্ম স্ফীত ও কঠিন।

২৭/ জিহ্বা ফাটা ফাটা। প্রদাহের পর জিহ্বাকাঠিন্য- বেদনা থাক বা নাই থাক।

২৮/ পুরাতন জ্বরে প্লীহা যকৃতের বিবৃদ্ধিসহ কাঠিন্য।

২৯/ রক্তাল্পতা (ক্যাল্ক-ফস)।

৩০/ উচ্চঃস্বরে পাঠ করিবার পর, অথবা অধিকক্ষণ উচ্চ হাস্যের পর স্বরভঙ্গ।

৩১/ সর্বপ্রকার লক্ষণ আর্দ্র বায়ূ ও আর্দ্র স্থানে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। উত্তাপে ও শুস্ক স্থানে পীড়া লক্ষণের হ্রাস। অস্থি ও বাতপীড়া-নড়া-চড়ায় পীড়া লক্ষণের উপশম, চুপ করিয়া থাকিলে বৃদ্ধি।

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকা বিশেষ বিশেষ পীড়ায় ব্যবহার : এই ঔষধটি নিন্ম লিখিত পীড়া সমূহে ব্যবহৃত হয়। যথা- মস্তকের অস্থি পীড়া, নবজাত শিশুর মাথার পাশের হাড়ে রক্তময় অর্ব্বুদ, চোখে ছানি, চক্ষুর পাতায় অঞ্জনি বা কাঠিন্য, অর্ব্বুদ, দাঁতের গোড়ার শিথিলতা ও দন্তমাড়ি হইতে রক্তস্রাব, দন্ত ক্ষত, যে কোন স্ফোটক বা ব্রণ হইলে তথায় প্রস্তরবৎ কাঠন্য (২০০X একমাত্রা), অন্ত্রবৃদ্ধি বা হার্নিয়া, অর্শ ও ভগন্দর (ক্ষতের চতুর্দিকে কাঠিন্য, তৎসহ গাঢ় পূঁজ স্রাব), উপদংশজ কঠিন বাগী, অণ্ড কোষের অতিশয় কাঠিন্য। জরায়ু স্থানচ্যুতি, জরায়ুর শিথিলতা, গর্ভস্রাব, স্তনগ্রন্থি প্রদাহ স্তন পাথরের ন্যায় শক্ত, পাথরের ন্যায় কঠিন অর্ব্বুদ, ডিপথিরিয়ার কৃত্রিম ঝিল্লী শ্বাসনালী পর্য্যন্ত বিস্তৃত। গলগণ্ড পাথরের ন্যায় কঠিন। কটিবাত (প্রথম সঞ্চালনে বেদনার বৃদ্ধি, কিন্ত অবিরাম সঞ্চালনে উপশম)। সন্ধি স্থান গুলিতে কটকট শব্দ ইত্যাদি রোগে এই ঔষধটি প্রায়ই অব্যর্থ। শিথিলতা ও প্রস্তরবৎ কাঠিন্য এই ঔষধের পরিচায়ক লক্ষণ। একদিকে জরায়ু প্রভৃতির জন্য রোগ, অন্য দিকে যে কোনও যন্ত্রের কাঠিন্য।

ক্যালকেরিয়া ফ্লোরিকার তুলনা : রক্তাল্পতা পীড়ায় ইহা ক্যাল্ক ফসের সহিত পর্য্যায়ক্রমে ব্যবহৃত হয়। ওজিনা পীড়ায় অস্থিক্ষতে ও পূঁজোৎপত্তিতে ইহার সহিত ক্যাল্ক ফসের প্রভেদটুকু নির্ণয় করা অবশ্যক। তুরুণ ক্রুপে ক্যাল্ক ফস এবং পুরাতন পীড়ায় ক্যাল ফ্লোর। ওজিনা পীড়ায় ক্যাক্ল ফসের সহিত অস্থির পূঁজ ও ক্ষতে ক্যাল্ক ফসসাইলিসিয়ার সহিত এবং অলস প্রকৃতির বাগী কাঠিন্য ও শিশুদের মস্তিস্কের খুলির স্ফীতিতে সাইলিসিয়া ক্যাল্ক ফ্লোরের সহিত তুলনা হয়।

অস্তি ও স্থিতিস্থপক তন্তুতে আঘাতের ফলে বেদনায় ক্যাক্ল ফ্লোর ও ফেরাম ফস একত্রে ব্যবহার করিতে হয় এবং উক্ত স্থানে শীতল প্রয়োগ আরাম বোধ হয়।

সেবন বিধি : প্রাপ্ত বয়স্কারা ৫টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার। অপ্রাপ্ত বয়স্করা ৩টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার কুসুম কুসম গরম পানির সহিত সেবন করতে হবে অথবা রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে সেনব করুন।

সমাপ্ত

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এ ওয়েব সাইটের মুল উদ্দেশ্যে হচ্ছে স্বাস্থ্য সম্পের্ক কিছু দান করা বা তুলে ধরা। সাধারণ মনুষের উপকার হবে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও ছাত্ররা উপকৃত হবেন। এ ওয়েব সাইটে থাকছে পুরুষ স্বাস্থ্য বা যৌনস্বাস্থ্য, গাইনি স্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, মাদার টিংচার, সিরাপ, বম্বিনেশন ঔষধ, বাইকেমিক ঔষধ, হোমিওপ্যাথিক বই, ইউনানি, হামদর্দ, হারবাল, ভেজষ, স্বাস্থ্য কথা ইত্যাদি। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev