নেট্রাম ফসফোরিকাম
(Natru Phosphoricum)
সাধারণ নাম – ফসফেট অব সোডা
রাসায়নিক বিশ্লেষণ ফরমুলা- Na2HPO4, 12H2O আপেক্ষিক গুরুত্ব -১.৫৫
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধ প্রস্তুত প্রাণালী – কার্বনেট অব সোডিয়ামের সহিত অর্থো ফসফোরিক এসিড মিশ্রিত করিয়া অথবা অস্থিকে ভস্মীভূত করিয়া ইহা প্রস্তুত করা হয়। ইহার দানা সকল বৃহৎ ও স্বচ্ছ। স্বচ্ছ দানা সমুহে শতকরা ১২ ভাগ জল শীতল জলে দ্রবীভূত হয়। পরিশ্রুত সুরাতে ইহা দ্রবণীয়, বিচুর্ণ পদ্ধিতিতে ইহার শক্তি প্রস্তুত হয়।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের বিশেষত্ব : নেট্রাম ফসের বিশেষত্ব এই যে ইহার প্রবল অম্লনাশক ক্ষমতা আছে। যে কোন পীড়ায় অম্ল লক্ষণ থাকুক না কেন ইহা বিশেষ উপযোগীতার সহিত ব্যবহৃত হয়। জিহ্বাতে হরিদ্রা বর্ণের প্রলেপ ইহার চরিত্রগত লক্ষণ। যে কোন স্থান হইতে রসের ন্যায় হরিদ্রবর্ণ স্রাব নিঃসৃত হইলে ইহা উপযোগী। ইহা কৃমিজনিত যাবতীয় উপসর্গেই ব্যবহৃত হয়। স্বপ্নদোষ, শুক্রতারল্য, প্রমেহ বাত প্রভৃতিতে অন্যান্য ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে একবার নেট্রাম ফসের কথা চিন্তা করা আবশ্যক।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের কার্যকারিতা: মন, মস্তক ও সস্তিস্ক, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, মুখমণ্ডল, মুখ, দন্ত, জিহ্বা, গলাভ্যন্তর, পাকস্থলী, উদর ও মল, মুত্রযন্ত্র, পুংজননেন্দ্রিয়, স্ত্রী জননেন্দ্রিয়, গর্ভলক্ষণ, বক্ষ, শ্বাসযন্ত্র, রক্তসঞ্চালন যন্ত্র, ঘাড় ও পৃষ্ঠ, হস্তপাদাদি, স্নায়ু ত্বক, টিসু, নিদ্রা, জ্বর ইত্যাদিতে ইহার কার্যকর।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের ক্রিয়াস্থল : নেট্রাম ফস রক্ত, পেশী, অস্থি, গ্রন্থি, স্নায়ু, মস্তিস্ক, উদর ফসুফস প্রভৃতি উপর কার্য করিয়া থাকে। মানব দেহে ল্যাকটিক এডিস নামক এক প্রকার পদার্থ বিদ্যমান থাকে। ল্যাকটিক এসিডের সহিত এই লাবণিক পদার্থ একত্র হইয়া উহাকে কার্ব্বনিক এসিড ও জল এই দুই ভাগে বিভক্ত করিয়া দেয়। ল্যাকটিক এসিডের উপর ও জল এই দুই ভাগে বিভক্ত করিয়া দেয়। ল্যাটিক এসিডের আধিক্য বশতঃ যে সকল রোগের সৃষ্টি হয়, নেট্রাম ফসের আভ্যন্তরীন প্রয়োগই সেখানে আরোগ্যও একমাত্র উপায়। নেট্রাম ফসের আভ্যন্তরীন প্রয়োগই সেখানে আরোগ্যর একমাত্র উপায়। নেট্রাম ফস পিত্তনালী মধ্যস্থ পিত্ত ও শ্লেম্মা সমুহ সহ কোলেষ্টারিনকে ঘনীভূত হইতে দেয়না, এজন্য কামলা, পিত্তশূল, পিত্তজনিত শিরঃপীড়া ও পিত্তভাব প্রুক্ত তৈলাক্ত পদার্থ যেবন জনিত অজীর্ণাদি পীড়া আরোগ্য হয়। অথবা উক্ত পীড়াদি হইতে পারে না। ইহা অম্লাধিক্যজনিত পীড়া সকলে উপকারী এজন্য তরুন ও পুরাতন গেঁটেবাত তরুণ ও পুরাতন সন্ধির রিউম্যাটিকজম নামক বাত ইত্যাদিও প্রধান ঔষধ।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের পরিচায়ত লক্ষণাবলী :
১/ মানসিক উদ্বেগ, খিটখিটে ও ইত্তেজিত প্রকৃতি। স্বরণশক্তির অল্পতা। রাত্রিকালে ভীতিজনক উৎকন্ঠা। রাত্রে নিদ্রাভঙ্গের পর গৃহের সামগ্রীকে মানুষ্য বলিয়া মনে করে।
২/প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গের পরই মস্তকের শিখরদেশে বেদনা এবং তৎসহ জিহ্বায় সরের ন্যায় হরিদ্রাবর্ণের ময়লা দ্বারা আবৃত হওয়া এই ঔষধের পরিচায়ক লক্ষণ।
৩/ জিহ্বার পশ্চাৎভাগের আর্দ্রতা সহ সরের ন্যা হরিদ্রাবর্ণের ময়লা দ্বারা আবৃত হওয়া এই ঔষধের পরিচায়ক লক্ষণ।
৪/ ইহার সর্বপ্রকার স্রাবই হরিদ্রাবর্ণের সরের ন্যায় এবং কোন স্থানে ক্ষত হইলে তাহার উপর যে মামড়ী পড়ে, তাহার বর্ণও সোনার ন্যায়।
৫/ এই ঔষধের অম্ল লক্ষণ একটি অতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য লক্ষণ এবং যে সমস্ত রোগের সহিত অম্লবমন, অম্লোদ্গার, মুখে জল উঠা, বুক জ্বালা, স্রাবে ও ঘর্মে অম্লগন্ধ ইত্যাদি অম্ললক্ষণ থাকে, তাহাতেই ইহা বিশেষ সাফল্যের সহিত ব্যবহৃত হয়।
৬/ টনসিরাইটিস, গলক্ষত, গলগণ্ড, গণ্ডমালা, রক্তহীনতা প্রভৃতি রোগের ৪র্থ ও৫ম লক্ষণে বর্ণিত লক্ষণের ন্যায় থাকিলে বিশেষ প্রয়োজনীয়। গল্ডমালা (Scrofula) ক্ষত হইবার পূর্বে ব্যবহৃত হয়।
৭/ সর্বপ্রকার কৃমির উপদ্রবে ইহাই প্রধান ঔষধ। বালকেরা রাত্রিকালে দাঁত কাটে। কৃমির জন্য অস্থির নিদ্রা। নাক খোঁটা ও চুলকান।
৮/ ৩য় (জিহ্বার বর্ণ) লক্ষণ সহ যে কোন প্রকার অজীর্ণ পীড়া। শিশুদিগের পেটকামড়ানি সহ অম্লগন্ধযুক্ত দাস্ত ও বমন। অম্ল অথবা কৃমিবশতঃ শিশুদের পেট কামড়ায়, কামড়ানি সহ সবুজ রংয়ের তরল বাহ্যে এবং ছানার ন্যায় জমাট দুগ্ধবমন। তৈলাক্ত দ্রব্য ও কাঁচা ফল ভক্ষণ সহ্য হয় না।
৯/ কৃমিজাত ওলাউঠার প্রধান ঔষধ। ভেদ বমনের অম্লগন্ধ এবং উহাতে অতিশয় কষ্ট।
১০/ কৃমিবশতঃ বালকদিগের শয্যামূত্র ( নেট্রাম মিউর, কেলি মিউর), মাত্রাশয়ের পক্ষাঘাতবশতঃ ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব (কেলি ফস সহ), মূত্রাশয়ে পেশীগুলির দুর্বলতাবশতঃ মূত্রবেগ ধারণে অসমর্থ (ফেরাম ফস সহ)।
১১/ প্রস্রাব বন্ধ থাকিলে, অথবা পুনঃপুনঃ প্রসাব ত্যাগেচ্ছোসহ প্রমেহ পীড়া। হরিদ্রাবর্ণের পুঁজস্রাব। অম্লধর্মাক্রান্ত প্রস্রাব। প্রস্রাবকালীন জ্বালা। পিত্তশিলা।
১২/ অম্ল ও অজীর্ণ লক্ষণসহ স্বপ্নদোষ। শুক্রতারল্য। অধিক দিনব্যাপী অপরিমত ইন্দ্রিয়সেবার ফলে হস্ত, পদ কোমন প্রভৃতি স্থানে দুর্বলতা ও বিধিধ কুফল।
১৩/ অনিয়মিত ঋতু – কাল পূর্ণ হইবার পূর্বে এবং দীর্ঘকাল স্থায়ী। স্রাবের বর্ণ ও গন্ধের জন্য ৪র্থ ও ৫ম লক্ষণ দ্রষ্টব্য। ঐ প্রকার স্রাবযুক্ত শ্বেতপ্রদর।
১৪/ যোনি বা জরায়ু হইতে অম্লধর্মাক্রান্ত স্রাবনিঃসরণ হওয়ার ফলে বন্ধ্যাত্ব।
১৫/ অম্ললক্ষণযুক্ত অজীর্ণ পীড়াসহ ক্ষয়কাশিতে ইহার প্রধান ঔষধ।
১৬/ সন্ধিবাত। হস্ত ও পদের দুর্বলতা ও ক্লান্তি। বাতজ্বর সহ অম্লগন্ধ ঘর্ম।
১৭/ অজীর্ণ ও অম্ললক্ষণসহ রেকাইটিস পীড়া (ক্যালকেরিয়া ফস সহ)।
১৮/ অম্ল ও কৃমিলক্ষণ সহ জ্বর।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের বৃদ্ধি-উপশম :
বৃদ্ধি : ইহার সমস্ত লক্ষণই সাময়িক। এক সময় এক এক প্রকার রোগের বৃদ্ধি হয়। বজ্রাঘাত কালে কোন কোন বেদনা এবং ঋতুকালীণ, সন্ধ্যাকালে ও ২/৩ টার সময় বাম দিকে শয়নে কোন কোন লক্ষণ বৃদ্ধি হয়। অধিকাংশ লক্ষণ প্রাতঃকালে, সন্ধ্যাকালে ও রাত্রিতে বৃদ্ধি পায়। নানা প্রকার গরম ঘরে, বিছানায় শয়নে, কৃমি জনিত গুহ্যদ্বারের চুলকানি বৃদ্ধি হয়। সহবাসে লক্ষণ বৃদ্ধি হয়। অম্লদ্রব্য, সির্কা, চর্বি, দুগ্ধ ফল ও ঠাণ্ডা খাদ্য পাকস্থলীর অবস্থা খারাপ হয়। স্থানে অপ্রবৃত্তি।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের উপশম : অনেক লক্ষণ আহারের পর উপশম বোধ করে।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের শক্তি : কৃমিজন্য 2X বা 3Xশক্তিই ব্যবহৃত হয়। ইহা ছাড়া ২০০X শক্তি পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। পুরাতন অম্ল ও অজীর্ণ পীড়ায় ১2X , 30X , তরুণ অম্লপীড়ায় ৩ী ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য 12X , 3X শুক্র তারল্যে 6X শিশুদের অম্লদান্ত ও অম্লবোধে 3X সদ্য প্রসূতি শিশুর চক্ষু প্রদাহে 12X স্ক্রুফুলা জনিত চক্ষ প্রদহে 200X তরুণ প্রমেহ পীড়ায় 6X পরতন প্রমেহ পীড়া 200X, চক্ষুর পিচুটিতে 6X । ছোট ছোট বালকদের কোষ্ঠবদ্ধে 1X চুর্ণ আহার্য বস্তুর সাথে মিশ্রিত করিয়া সেবন করাতে হয়। পুরাতন পীড়ায় উচ্চক্রম।
নেট্রাম ফসফোরিকাম যে সকল পীড়ায় ব্যবহার হয় : বালকদের অম্লপীড়া, চক্ষু উঠা, সদ্য প্রসূত শিশুর চক্ষু প্রদাহ, বহুমুত্র, বিসর্প, মর্ফিয়া সেবন অভ্যাস দুবীকরণ, ক্ষয়কাশ, রিউম্যাটিক বাত, টিউবার্কল পীড়া, অজীর্ণ, স্ত্রুফুলাজনিত গ্রন্থি স্ফীতি, টনসিলস্রাব, গলগণ্ড, শয্যামুত্র, কৃমি জনিত পীড়া, পচনশীল প্রদাহ, মৃগী, পুরাতন ও তরুণ প্রমেহ, উদরাময়, মুত্রস্থলীর প্রদাহ, স্তনগ্রন্থি পদ্রাহ, সুত্রবৎ লম্বা কৃমি, লম্লশূল, হাই উঠা, বন্ধ্যাত্ব, ধ্বজভঙ্গ, শুক্রতারল্য প্রভৃতি পীড়ায় ইহা ব্যবহৃত হয়। শুক্রতারল্যের ইহা প্রধান ঔষধ। শুক্রতারল্যের ঔষধ 6০x এর উপরে ব্যবহার করিতে হয়।
নেট্রাম ফসফোরিকাম ঔষধের সেবন বিধি : প্রাপ্ত বয়স্কারা ৫টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার। অপ্রাপ্ত বয়স্করা ৩টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার কুসুম কুসম গরম পানির সহিত সেবন করতে হবে অথবা রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে সেনব করুন।
সমাপ্ত
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এ ওয়েব সাইটের মুল উদ্দেশ্যে হচ্ছে স্বাস্থ্য সম্পের্ক কিছু দান করা বা তুলে ধরা। সাধারণ মনুষের উপকার হবে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও ছাত্ররা উপকৃত হবেন। এ ওয়েব সাইটে থাকছে পুরুষ স্বাস্থ্য বা যৌনস্বাস্থ্য, গাইনি স্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, মাদার টিংচার, সিরাপ, বম্বিনেশন ঔষধ, বাইকেমিক ঔষধ, হোমিওপ্যাথিক বই, ইউনানি, হামদর্দ, হারবাল, ভেজষ, স্বাস্থ্য কথা ইত্যাদি। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।