শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন

পিরিয়ডের বা মাসিকের ব্যথা

আরোগ্য হোমিও হল / ২৭১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৫:০৯ অপরাহ্ন
পিরিয়ডের বা মাসিকের ব্যথা

পিরিয়ডের বা মাসিকের ব্যথা
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মহিলাদের পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা, ব্যথা কোথায় হয়, ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হয়, ঘোরোয়া পদ্ধতি, বাধক থাকলে সন্তান ধারণে অক্ষম হবে নারী তা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা তেমন তীব্র বা জটিল রূপ ধারণ করে না। একারণে বাড়িতেই ঘোরোয়া ভাবে চিকিৎসা করা যায়। মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা হওয়াটা একটি কমন ঘটনা। এটি মাসিক চক্রের একটি স্বাভাবিক অংশ। বেশিরভাগ নারীই জীবনের কোনো এক সময়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা কোথায় হয় :
পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা সাধারণত পেট কামড়ানোর মতো ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণত কোমরে ও ঊরুতে ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার কখনো কখনো পেটের ব্যথাটি কিছুক্ষণ পরপর প্রচণ্ডভাবে কামড়ে ধরা বা খিঁচ ধরার মতো ব্যথা কমে ও বাড়ে। অন্যান্য সময়ে একটানা ভোঁতা ধরনের ব্যথা করে। এ ব্যথাটি একেক মাসিকের সময়ে একেক রকম হতে পারে। কোনো কোনো মাসে হয়তো সামান্য অস্বস্তিকর ব্যথা মতো অনুভব হয় অথবা একেবারেই কোনো ব্যথা হয় না। অন্যান্য মাসিকের সময়ে আবার প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। তবে কখনো কখনো মাসিক চলাকালীন বাইরেও তলপেটে এরকম ব্যথা হতে পারে।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  এইচ আর – ২১ (মাসিক সমস্যায় কার্যকর)

পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হয় :
সাধারণত মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময়েই ব্যথা শুরু হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ব্যথা শুরু হয়ে যায়। পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা সাধারণত ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেকের এরচেয়ে বেশি সময় ধরেও ব্যথা থাকতে পারে। সাধারণত মাসিকের যেই সময়ে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয় সেই সময়ে ব্যথার পরিমাণও সবচেয়ে বেড়ে যায়। কিশোরীদের ক্ষেত্রে জীবনের প্রথমবারের মতো মাসিক শুরু হওয়ার সময়ে প্রায়ই ব্যথা হয়ে থাকে।
মাসিকের ব্যথার পেছনে কোনো অন্তর্নিহিত রোগ না থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যথা কমতে থাকে। সন্তান জন্মদানের পরে অনেক নারীর পিরিয়ডের ব্যথা কমে যায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর পিরিয়ডের ব্যথা তেমন তীব্র বা জটিল রূপ ধারণ করে না। একারণে আনেক নারীরই বাড়িতেই চিকিৎসা করে। চিকিৎসার উপায়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

(ক) গরম সেঁক দিন : গবেষণায় দেখা গেছে, মাসিকের ব্যথা কমানোর প্রচলিত কিছু ঔষধের চেয়ে গরম সেঁক সমানভাবে কার্যকর। গরম সেঁক ঔষধের চেয়ে বেশি কার্যকর এবং আইবুপ্রোফেনের সমান কার্যকর। গরম সেঁকের আরেকটা সুবিধা হলো এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

(খ) যেভাবে সেঁক  : একটি ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ তোয়ালে অথবা মোটা গামছা দিয়ে মুড়িয়ে পেটের ওপর রাখতে পারেন। হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- সহনীয় পর্যায়ের তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  কেন্ট ০২ (শূলবেদনা রোগে কার্যকর)

(গ) হট ওয়াটার ব্যাগ : হট ওয়াটার ব্যাগের মুখ ভালোভাবে আটকানো আছে কি না দেখে নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাগ উল্টেপাল্টে দিতে হবে অথবা ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ এর পরিবর্তে ‘ইলেকট্রিক হিটিং প্যাড’ সহ অন্যান্য উপায়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে।

(ঘ) আদা সেবন করুন : আদা মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ের ব্যথায় ভুগেন, তারা মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই আদা খাওয়া শুরু করতে পারেন। আদা কুচি করে এমনি খেতে পারেন অথবা গরম পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। পিরিয়ডের প্রথম ৩ থেকে ৪ দিন দৈনিক তিনবেলা করে আদা কুচি খেতে পারেন।

(ঙ) শ্বাসের ব্যায়াম করুন : মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর একটি ভালো উপায় হলো শ্বাসের ব্যায়াম করা। যেভাবে শ্বাসের ব্যায়াম করবেন যেমন –
(১) বুকের ওপরে এক হাত আর পেটের ওপরে আরেক হাত রাখতে হবে।
(২) নাক দিয়ে বড় করে শ্বাস নিন। এমন ভাবে শ্বাস নিতে হবে যেন বাতাস বুকের গভীরে ঢোকে ও পেট ফুলে ওঠে। এভাবে শ্বাস নিলে পেটের ওপরের হাতটা ওপরের দিকে উঠে আসবে।

(৩) এরপর মুখ দিয়ে এমনভাবে শ্বাস ছাড়ুন যেন মনে হয় একটি মোমবাতি নেভানো হচ্ছে। শ্বাস ছাড়ার পর পেটে রাখা হাত আবার আগের জায়গায় ফেরত আসবে।

(চ) ব্যায়াম করুন : গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম কা কিংবা যে কোনো উপায়ে শরীর সচল রাখলে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা অনেকখানি কমতে পারে। এজন্য আপনাকে সপ্তাহে ৩ দিন বা তার বেশি ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা নিয়মিত শরীরচর্চা করতে পারেন। ভারী ব্যায়াম ছাড়াও সাঁতার কাটা, হাঁটা, সাইকেল চালানো ও ইয়োগার মতো হালকা ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। মাসিক বা পিরিয়েডের সময়ে ব্যথার কারণে ব্যায়াম করার ইচ্ছা যদি না থাকে। তবে সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে হাঁটাচলার মতো হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
(ছ) পেট ম্যাসাজ করুন : আপনার তলপেট ও এর আশে পাশে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করলে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

(জ) রিল্যাক্স করুন : আপনি মানসিক ভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুণ। যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন ব্যথা বা অস্বস্তির অনুভূতি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে হবে।

(ঝ) কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন : কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করার মাধ্যমে পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা কমানো যায়। এটি আপনাকে রিল্যাক্স করতেও সাহায্য করে।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  গাইনো কার্ড ট্যাবলেট (শ্বেত প্রদর ও মাসিকের সম্যাসায় টনিক)

কখন চিকিৎসকের কাছে আপনি যাবেন :
মাসিক বা পিরিয়ডের সময়ে অসহনীয় ব্যথা হলে অথবা পিরিয়ডের স্বাভাবিক প্যাটার্নে পরিবর্তন (যেমন- অনিয়মিত মাসিক অথবা মাসিকেকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত) হলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিন মাস ধরে ব্যথানাশক ঔষধ অথবা উপযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরেও যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তা হলে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সেই চিকিৎসক আপনাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার পেছনে কোনো কারণ লুকিয়ে থাকলে সেটি বেরিয়ে আসবে।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  কেন্ট ৪৫ (বাধক বেদনায় কার্যকর) 

এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে :
(১) প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা।
(২) পেলভিক আলট্রাসাউন্ড।
(৩) ল্যাপারোস্কোপি।
(৪) হিস্টেরোস্কোপি।
(৫) পিরিয়ড বা সাসিকের ব্যথার চিকিৎসা।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  র‌্যাক্স নং- ৩০ (মাসিক বন্ধ হওয়া)

(ক) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি : ‘কম্বাইন্ড ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল’ বা জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি একটি জনপ্রিয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। তবে এটি পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার চিকিৎসাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এসব পিল বা বড়িতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টোজেন নামক হরমোন থাকে।
(ক) প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক কেমিক্যালের নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।
(খ) জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ পাতলা করতে সাহায্য করে।
(গ) প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জরায়ুর দেয়ালের সংকোচন জোরালো করতে সাহায্য করে।
(ঘ) প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নিঃসরণ কমে আসায় জরায়ুর দেয়ালের সংকোচন কমে গেলে ব্যথার তীব্রতা কমে আসে।
অন্যদিকে জরায়ুর আস্তরণের পুরুত্ব কমে যাওয়ায় মাসিক আ পিরিয়ডের সময়ে জরায়ুর দেয়াল আগের মতো আর জোরালো সংকোচনের প্রয়োজন হয় না। ফলে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটা কমে আসে। এর পাশাপাশি রক্তক্ষরণের পরিমাণও অনেকটা কমে যায়। এভাবে জন্মনিরোধক পিল পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  র‌্যাক্স নং -১১১ (মাসিক এর সমস্যা)

অন্তর্নিহিত রোগের চিকিৎসা : 
অন্তর্নিহিত কোনো রোগের কারণে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন হতে পারে। যেমন – ‘পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ’ এর চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। আবার ফাইব্রয়েড হলে চিকিৎসায় সমাধান না হলে অকে সময় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা ও প্রজনন ক্ষমতা :
মাসিক চক্রের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা হলে সেটি নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতায় কোনো প্রভাব পড়ে না। তবে পিরিয়ড বা মাসিক ব্যথার পেছনে যদি কোনো অন্তর্নিহিত রোগ থাকে তবে সেটি প্রজনন ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যেমন- মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথার কারণ হতে পারে ‘এন্ডোমেট্রিয়োসিস’ ও ‘পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ’ এর মতো রোগ। এসব রোগে জরায়ু, ডিম্বনালী ও ডিম্বাশয়ে জ্বালাপোড়া করতে পারে। চিকিৎসা না করালে এসব অঙ্গে ক্ষত সৃষ্টি হয়। আবার অনেক ক্ষত সেরে ওঠার সময়ে মাংস বেড়ে যেতে পারে। ডিম্বনালীর ভেতরের মাংস বেড়ে গেলে শুক্রাণুর চলাচলে প্রচÐ বাধা সৃষ্টি করে। তখন ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যা সন্তান ধারণে উপর প্রভাব পড়ে । এসব রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরমর্শ গ্রহণ করা উচিত। দীর্ঘদিন ধরে পিরিয়ড বা মাসিক ব্যথার চিকিৎসা নেওয়ার পরেও যদি লক্ষণের উন্নতি না হয় তাহলে দেরি না করে দ্রুত গাইনী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুণ।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার কারণ কি?
প্রজননের সাথে সম্পর্কিত হরমোনগুলোর মাত্রা একটি নির্ধারিত সময়ে হঠাৎ করে কমে গেলে পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হয়। এসময় হরমোনগুলোর প্রভাবে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণটি খসে গেলে মাসিকের রক্তের সাথে বের হয়ে আসে। এই আস্তরণ খসিয়ে ঠিকমতো বাহির করে দেওয়ার জন্য জরায়ুর দেয়াল জোরালো ভাবে সংকুচিত হয়।

এ সংকোচনের কারণে জরায়ুর গায়ে থাকা রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়। এর ফলে সাময়িক ভাবে জরায়ুতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকে। অক্সিজেনের অভাবে জরায়ু থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়ে যায়। এসব পদার্থের প্রভাবে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা শুরু হয়। ব্যথার সূত্রপাত ঘটানো ও রাসায়নিকের পাশাপাশি শরীর থেকে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক আরেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জরায়ুর দেয়ালের সংকোচন আরও জোরালো করে। এর ফলে ব্যথার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  মাসে দুইবার মাসিক হওয়ার কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

জেনে রাখা ভালো :
আপনার বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণে জরায়ুতে সংকোচন হয়ে থাকে। জরায়ুতে সার্বক্ষণিক মৃদু সংকোচন হতেই থাকে। এসব সংকোচন সাধারণত এতটাই মৃদু হয় যে বেশিরভাগ নারীই এসব সংকোচন বুঝতে পারে না। তবে বিভিন্ন কারণে সংকোচনের মাত্রায় ভিন্নতা হতে পারে। এমন ভিন্নতার পেছনে প্রজননের সাথে সম্পর্কিত হরমোনগুলোর মাত্রার ওঠানামা ও গর্ভাবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় কাজ করে। কিন্তু মাসিক চলাকালীন জরায়ু থেকে মাসিকের রক্তসহ অন্যান্য দুষিত পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্য জরায়ুর দেয়াল খুব জোরালো ভাবে সংকুচিত হয়। এতে জরায়ুর দেয়াল বেশি আঁটসাঁট অথবা টাইট হয়ে আসে। ফলে মহিলারা ব্যথা অনুভব করেন।

উল্লেখ্য, কোনো কোনো মহিলার ক্ষেত্রে পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথা অন্যদের তুলনায় কেন বেশি হতে পারে। তবে এটা হয় কেন. এই বিষয়টি এখনও অজানা। তবে ধারণা করা হয়, কারও কারও ক্ষেত্রে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন বেড়ে যাওয়ায় সংকোচনের তীব্রতা আনেক বেড়ে যায়। এর ফলে ব্যথার মাত্রাও বেড়ে যায়।

যেসব কারণে পিরিয়ড বা মাসিক ব্যথা হয় :
কোনো কোনো রোগের কারণে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা হতে পারে। তবে এসব কারণে পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার ঘটনা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। তবে যেসব রোগের কারণে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা হয় সেগুলোর নিন্মে দেওয়া হলো যেমন –

(১) এন্ডোমেট্রিয়োসিস : এই রোগে জরায়ুর বাইরে হয় (যেমন- ডিম্বনালী অথবা ডিম্বাশয়ে) জরায়ুর ভেতরে আস্তরণের মতো টিস্যু তৈরি হয়। মাসিকের সময়ে জরায়ুর বাইরে প্রতিস্থাপিত এসব টিস্যুও খসে যাওয়ার সময়ে তীব্র ব্যথা হতে পারে। ব্যথার পাশাপাশি মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।

(২) ফাইব্রয়েড : এগুলো জরায়ুর পেশিস্তরে বেড়ে ওঠা এটি এক ধরনের টিউমার যা জরায়ুর ভেতরে বা এর চারিদিকে সৃষ্টি হয়। তবে এসব টিউমার ক্যান্সারে রূপ নেয় না। ফাইব্রয়েডের কারণে মাসিক বা পিরিয়ডের সময়ে তলপেট ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।

(৩) পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ : পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি স্ত্রী-প্রজননতন্ত্রের একটি রোগ। এতে জরায়ু, ডিম্বনালী ও ডিম্বাশয়ে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সাধারণত ইনফেকশনের ফলে এসব অঙ্গে গুরুতর প্রদাহ অথবা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়।

(৪) এডেনোমায়োসিস : এই রোগ সাধারণত জরায়ুর ভেতরের আস্তরণের মতো কিছু টিস্যু অথবা কোষ জরায়ুর দেয়ালেও বেড়ে উঠে। মাসিক বা পিরিয়ডের সময়ে জরায়ুর দেয়ালে গড়ে ওঠা ঔইসব কোষ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু এই রক্ত বাইরে বের হওয়ার কোনো উপায় থাকার কারণে মাসিকের সময়ে প্রচন্ড পেট ব্যথা হয়। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হতে পারে। ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে এসব রোগের কারণে পিরিয়ড বা মাসিকের সময় ব্যথা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

ঔষধ সর্ম্পকে আরও পড়ুন –  বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধ

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কারণেও মাসিককালীন ব্যথা :
ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস অথবা আইইউডি (ওটউ) একটি জনপ্রিয় ও দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। একে কপার-টি বলা হয়। এটি তামা ও প্লাস্টিকের তৈরি ছোটো একটি বস্তু। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এটি জরায়ুতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। কখনো কখনো এই পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে পিরিয়ডের ব্যথা হতে পারে। আইইউডি জরায়ুতে প্রবেশ করানোর প্রথম কয়েক মাস এমন ব্যথা হতে পারে। আইইউডির ব্যবহারের কারণে পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার সাথে সম্পর্কিত কোনো রোগের কারণে মাসিকের স্বাভাবিক ধরন অথবা সময়ে পরিবর্তন হতে পারে। যেমন- পিরিয়ড বা মাসিক ব্যথা আগের তুলনায় অনেক তীব্র হওয়া অথবা অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশিদিন ধরে মাসিক স্থায়ী হতে পারে।

এছাড়াও নিচের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে যেমন-
(ক) অনিয়মিত মাসিক হয়।
(খ) দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
(গ) যোনিপথে ঘন ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়।
(ঘ) যৌন সহবাসের সময়ে ব্যথা করে।
মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev