যৌনাঙ্গ চুলকানির কারণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো যৌনাঙ্গ চুলকানির কারণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
মেয়েদের প্রতিদিন জীবন যাবনে কতই না সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় বলে শেষ করা যাবে না। ঘর থেকে শুরু করে নিজের শরীরের অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। আজকে মহিলাদের একটি অতি পরিচিত কিন্তু খুব বিব্রতকর একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। আর তা হলো যৌনাঙ্গে ইচিং বা চুলকানি। এটি মেয়েদের খুবই কমন একটি অসুখ। মেয়েরা ৫ বছর থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সের যে কোন সময় এই সমস্যায় পড়তে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে প্রত্যেক ৪ জন নারীর মধ্যে ৩ জন মহিলার জীবনের কোন না কোন সময় একবার হলেও এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই নারীদের এই অসুখটি গুরুত্বও কম নয়। চলুন আজ এই অসুখটি সম্পর্কে জানি।
যৌনাঙ্গ চুলকানির কারণ :
কোন অসুখ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের আগে আমাদের জানতে হবে অসুখটার কারণ কি? বা কেন হয়েছে। এ অসুখটা হওয়ার পেছনে কেনোনা কারণ আছে এট জানলে অসুখ মোকাবেলা সহজ হয়। যোনিতে অনেক কারণে চুলকানি হতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কারণ :
(১) ছত্রাকের আক্রমন : এটি যৌনাঙ্গের চুলকানি অথবা ইচিং হওয়ার অন্যতম কারণ। সাধারণত এই ছত্রাক সংক্রমণের কারণে যোনিতে চুলকানি হয়। এই ছত্রাক নরমালি মহিলাদের যৌনাঙ্গে পরজীবী হিসেবে থাকে। কিন্ত কিছু ল্যাকলোব্যাসিলাস নামে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই ছত্রাকের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায়, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকলে, হরমোনাল ইমব্যালেন্স থাকলেও খাদ্যাভাসের কারণে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, ফলে ঈস্ট গুলো তাদের জন্মের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এর কারণে যোনিতে ইনফেকশন হয়।
লক্ষণ বা উপসর্গ :
(ক) যোনি পথ দিয়ে ঘন, তরলের মতো সাদা¯্রাব নির্গমন হয়।
(খ) চুলকানি, ব্যথা ও প্রদাহ হয়।
(গ) যৌন মিলনের সময় ব্যথ্যা করে।
(২) ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের সংক্রমণ : ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের সংক্রমণের কারণে ভ্যাজাইনা বা যোনিতে চুলকানি হওয়ার অন্যতম কারণ। যোনিতে সব সময় নরমালি কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। যখন কোন কারণে এই ব্যাকটেরিয়া গুলোর অনেক বেশি বংশবিস্তার ঘটে তখন যোনিতে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ বা উপসর্গ :
(ক) গন্ধযুক্ত ও মাছের আশঁটে গন্ধযুক্ত তরল পদার্থ নির্গত হয় যোনি দিয়ে।
(খ) প্রচুর চুলকানি হয় ।
(গ) প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া করে।
(৩) .ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর আক্রমণ : এটি একটি প্যারাসাইট আক্রমণে যোনিতে চুলকানি হয়।
লক্ষণ বা উপসর্গ :
(ক) হলুদ, সবুজ রঙের ও খুব তীব্র বাজে দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব হয়।
(খ) তলপেটে ব্যথ্যা করে।
(গ) যোনিতে চুলকানি হয়।
(৪) জেনেটালিয়ামের সংক্রমণ : যৌনাঙ্গে উকুন, খোসপাচড়া ও মাইকোপ্লাজমা জেনেটালিয়াম এর সংক্রমণ হলে যোনিতে চুলকানি হয়।
(৫) কিছু সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ : সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস ইত্যাদির কারণে যৌনাঙ্গে ইচিং এর সৃষ্টির কারণে চুলকানি হতে পারে।
(৬) বিভিন্ন বিরক্তিকর পদার্থ যেমন : বিভিন্ন ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল, সুগন্ধিযুক্ত সাবান, রঙ ওয়ালা টিশ্যু, পেপার, ফেমিনিন হাইজেনিক স্প্রে, ডুশ ব্যবহার করলেও যোনিতে চুলকানি হতে পারে।
(৭) মেনোপোজের পর মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যাওয়ার ফলে যোনি শুকিয়ে যায়। ইহার ফলে বিভিন্ন পরজীবীর সংক্রমণ হয়। ইহার ফলে যোনিতে ইচিং হয়।
(৮) ডায়াবেটিস, রেনাল ডিজিজ, একজিমা ও রক্ত দুষিত হওয়া বা রক্তে কোন রোগ অথবা অন্যান্য কোন রোগ থাকলেও যৌনাঙ্গে চুলকানি হয়।
(৯) ঋতু¯্রাবের সময় , অস্বাস্থ্যকর প্যাড অথবা কাপড় ব্যবহার করলে।
(১০) যৌনকর্মীদের এই রোগগুলো বেশি হয়। তাই অবাধ যৌন মিলনের কারণে হয়ে থাকে।
(১১) যৌনাঙ্গ সবসময় গরম ও আর্দ্র থাকলে।
(১২) অপরিষ্কার থাকলে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
১/ মার্ক সল (Mercurius sol) : মার্ক সল ঔষধটি প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, ঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকে তার সঙ্গে যৌনাঙ্গ চুলকায়।
২/ সিপিয়া (Sepia) : যৌনাঙ্গে চুলকানির সাথে লিউকোরিয়া বা সাদা¯্রাব শ্যাম বর্ণ রোগীদের জন্য উপযোগী।
৩/ সালফার (Sulphur) : সালফার চুলকানির একটি শ্রেষ্ট ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সালফারের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো হলো সকাল ১১টার দিকে যৌনাঙ্গে ভীষন চুলকানি হয়।
৪/ লেপিস এলবা (Lapis alba) : লেপিস এলবা ঔষধটি হলো স্ত্রী যৌনাঙ্গের চুলকানিতে একটি কাযর্কর ঔষধ হিসেবে বিবেচিত। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো জ্বালাপোড়া, সূঁই ফোটানো-হুল ফোটানো ব্যথা, রাক্ষুসে ক্ষুধা, মিষ্টি খাবারের প্রতি ভীষণ ইচ্ছা ইত্যাদি।
এছাড়াও লক্ষণ অনুসারে Graphites (গ্রাফাইটিস) , মেজেরিয়াম (Mezereum) , হিপার সালফ (Hepar Sulph) , ক্রোটন টিগ (Croton Tig), বোরাক্স (Borax), ক্রিয়োজেটাম (Kreosotum) , আর্সেনিক (Arsenic) ইত্যাদি ঔষধ আসতে পারে। মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথিক সর্ম্পন্নটা লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। লক্ষণে সাথে মিলিয়েই তবেই ঔষধ প্রয়োগ করিবেন।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।