রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ন

সিজার ও জরায়ু সমস্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য

আরোগ্য হোমিও হল / ৩৬৬ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩, ৬:২১ অপরাহ্ন
সিজার ও জরায়ু সমস্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য

সিজার ও জরায়ু সমস্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য

গর্ভবতী ও সন্তান নিতে আগ্রহী নারীরা নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো শরীরের যত্ন  নিলে ঝুঁকি এড়ানো যায় । সিজার নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে নানান প্রশ্ন ও কৌতুহল। এ বিষয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন বিস্তারিত জানিয়েছেন ।

প্রশ্ন : প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয় কেন? এটা কি কোনো রোগ?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : আপনি অনেক ক্ষেত্রে মনে করছি, পানি বেশি খাচ্ছি। তবে আমাদের চিন্তা করার দরকার, বর্তমানে পরিবেশটা কেমন। আপনি কতটুকু ঘামাচ্ছেন। আপনি সব ধরনের সুস্থতা থাকার পরেও ইউরিনের রঙ ভিন্ন হতে পারে। যদি ডিহাইড্রেশন থাকে। ইউরিনে কনসালটেন্ট বের হয়। অনেক ক্ষেত্রে অরেঞ্জ জুস খেলে, কালারফুল খাবার(জুস) খেলে প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। আয়রন জাতীয় খাবার, ড্রাগন ফুড খেলেও হতে পারে। এর মানে হলুদ রঙটা খাবারের কারণেও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সিরাপ খেলেও ইউরিনের রঙ পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিন্তু এসব কারণে হয়নি, আপনার এমনটা মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান পরামর্শ করুণ। আপনার লিভারে কিংবা কিডনিতে কোন সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখার দরকার।

প্রশ্ন : জরায়ুমুখে চুলকালে সমাধান কী
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : অনেকের জরায়ুমুখ চুলকায়। ইচিং হয়। হয়তো বা ইতোমধ্যে চিকিৎসা করিয়েছেন। তারপরেও কোন সমাধান হচ্ছে না। এ ধরণের সমস্যা হলে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই চিকিৎসা নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা যে অবস্থায় থাকেন না কেন দু’জনকেই চিকিৎসার আওতায় নেওয়া উচিত ।

প্রশ্ন : জরায়ুমুখে ব্যাকটেরিয়া হলে বড় কোনো সমস্যা কি?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : জরায়ু মুখে এমনিতে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। সে গুলো আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। তবে যেগুলো প্যাথলজিক্যাল ব্যাকটেরিয়া, সেগুলো কিছু সমস্যা করে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রশ্ন: পরপর দুইবার অ্যাবরশন হয়েছে, পরীক্ষা-নিরিক্ষায় সব রিপোর্টে ভালো। এখন আবার কি প্রেগন্যান্সি হওয়া যাবে?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : পরপর দুইবার অ্যাবরশন বিশেষ করে এটা সাধারণত বয়সের উপর নির্ভর করে। এটাকে আমরা প্রেগনেন্সি লস বলে থাকি। যখন সে কনস্ট্রাকশন ফ্রি থাকবে, স্বামী-স্ত্রী উভয়কে অনেক গুলো পরীক্ষা করাতে হয়। এছাড়াও তাদের পরিবারে কোনো কঠিন রোগের ইতিহাস আছে কিনা? অথবা তার জরায়ুতে সমস্যা আছে কিনা, তা দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম তিন মাসে নষ্ট হচ্ছে, নাকি মাযের তিন মাসে নষ্ট হয়েছে। বাচ্চার হার্টবিট আসছিলো কিনা। অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চার নিজের দোষেই এমনটা হতে পারে। এখনও আমরা খুঁজে বের করতে পারি না এ বিষয়টি। যদি আপনার সবকিছু ভালো থাকার পরও এমন হয়, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেবেন। প্রেগনেন্সিতে মিস পিরিয়ড হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। এজন্য আপনি প্রেগনেন্সি কনসিভ করার আগে থেকেই একজন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন।

প্রশ্ন : ৪০ বছর বয়সে সন্তান নিতে চাই, কোন সমস্যা আছে কিনা?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : বিশেষ করে আমরা জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। এর পাশাপাশি জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণতও করতে চাই। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের যে স্লোগানটা রয়েছে, দু’টি সন্তানই যথেষ্ট। একটি হলে আরও ভালো। দেখা যাচ্ছে, একজন মায়ের ৪০ বছর আগে দু’টি সন্তান হয়ে গেছে। তাহলে তো আর প্রয়োজন নেই সন্তানের। কিন্তু বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তার সন্তানের প্রয়োজন হয়ে থাকে। মায়ের বয়সের সাথে সাথে কিছু জেনেটিক অসুস্থতায় বাচ্চারও হওয়ার আশংকা থাকে। এক্ষেত্রে বলতে চাই, প্রথমত আপনার যদি বাচ্চার প্রয়োজন হয়, বাচ্চা নেবেন। তবে বাচ্চার গঠনগত বা জেনেটিক সমস্যা থাকলে, সে ক্ষেত্রে বাচ্চা যেন পারিবারিক ভাবে, সামাজিক ভাবে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন বিষয়টা হলো, আমি কি ভাবে জানবো আমার বাচ্চার জেনেটিক কোন সমস্যা হয়েছে। কিংবা কোন অসুস্থ বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে কিনা। ৪০ বছর বয়সে আপনারা বাচ্চা নিতে পারবেন। তবে এ ধরনের সমস্যা গুলো কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে মায়ের পেটে থাকার প্রথম তিন মাসে চিহ্নিত করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে জিওগ্রাফিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশনে এ ধরনের সমস্যাগুলো আমরা পরীক্ষা করে থাকি।

প্রশ্ন: বাচ্চার গঠন ঠিক আছে কিনা, সেটা জানতে কি কি পরীক্ষা করতে হবে?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : এক্ষেত্রে বাচ্চা হবার পরে তো কোন পরীক্ষা করে লাভ নেই। এজন্য সাধারণত আমরা ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে পারি। আমরা আগে এক্সপ্লাইনিং করাবো। স্ক্রিনিং টেস্ট যদি কনফার্ম হয়, তখন অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাব। এক্ষেত্রে বাচ্চার কোনো বড় ধরনের অসুবিধা থাকলে সেটা দেখার সুযোগ থাকে। ২২-২৪ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয় ।

প্রশ্ন: প্রেগনেন্সি থাকা অবস্থায় পেটে চাপ অনুভব করলে কি করণীয়?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : আপার জরায়ুতে যখনই বাচ্চাটা বসে,তখনই জরায়ুতে মাঝে মধ্যে ফ্রেন্ডলিজ কনস্ট্রাকশন হয়। এটা হলে যে সবাই অনুভব করবে, তা ঠিক নয়। অনেকেই অনুভব করে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। যদি ব্যথা না হয়। এজন্য আমরা বলবো রেস্ট নিতে। একটু সর্তক থাকতে হবে। তবে এটার ক্ষেত্রে প্রস্রাবে ইনফেকশন, পায়খানা না হওয়ার জন্যও হতে পারে।

প্রশ্ন : সিজার কয়বার করা নিরাপদ
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : যদি আপনার সুস্থ বাচ্চা থাকে। তাহলে দু’টি বাচ্চা সিজারে নিলেই যথেষ্ট । বাচ্চা ছেলে না মেয়ে হোক, কিন্তু সন্তানের সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। হয়তো বা আপনার বাচ্চার সমস্যা রয়েছে অথবা আপনার এটা দ্বিতীয় বিবাহ। অথবা অটিস্টিক বাচ্চা। এসব কারণে যদি বাচ্চার প্রয়োজন হয়, তবে তিন থেকে পাঁচবার সিজার করা যায়। কিন্ত প্রতিবার সিজারের সাথে সাথে ঝুঁকিও বাড়ে। সিজার করলে সাধারণত কী হয়, একটা জায়গা কেটে বাচ্চাটাকে বের করা হয়। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বাচ্চাটা যখন আসবে, জরায়ু যখন বড় হতে থাকবে, কাটা জায়গাটাতে টান পড়ে। তাই উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জরায়ু ফেটে যায়। এক্ষেত্রে বাচ্চার জীবন যায়, মায়ের জীবনের ঝুঁকিতে পড়ে। যদি একবার সিজার হয়, পরবর্তী সিজারে ডেলিভারিতে আশঙ্কা বাড়ে। প্রথম বাচ্চা সিজারে ডেলিভারি হওয়ার পর, পরেরটাতে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। মায়ের সিজারের ক্ষেত্রে রক্ত নিতে হয়। আবার রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ে। মাদের সব থেকে বড় বিপদ হচ্ছে, গর্ভফুল। জরায়ুর মুখের দিকে বাচ্চা থাকে। আর জরায়ুতে ফুল থাকে।সিজারের সময় দেখা যায়, কাটা জায়গাটায় ফুলটা বসে। মুহূর্তের মধ্যে অনেক রক্ত বের হয় মায়ের। তখন মাকে বাঁচানো অনেক বেশি কঠিন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই মায়ের আইসিইউ নেওয়ার প্রয়োজন হয়। অনেকেই আর ফিরে আসেন না আইসিইউ থেকে। এজন্য আপনাদের বলব, প্রয়োজন হলেও বাচ্চা নিবেন।

প্রশ্ন: বয়স ২৫ বছর। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ডান পা অবশ হয়ে যায়। কি করণীয়?
ডা: দীনা লায়লা হোসেন : এটা অনেকক্ষেত্রে সাধারণত আপনার ওজনের ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় এক পাশে চাপ দিয়ে থাকার কারণেও এমনটা হতে পারে। আপনি এক পায়ের উপর দাঁড়ান কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন জানা থাকলে সুবিধা বেশি হতো। তার পরেও সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন নিউরোসার্জনকে দেখাতে পারেন। সূত্র: ডক্টর টিভি।

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যতœবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন :  এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev