সাইলিসিয়া (Silicea)
ডা: আবু হোসেন সরকার
সংক্ষিপ্ত নাম – সিলিকা
রাসায়নিক বিশ্লেষণ – SiO2
প্রস্তুত প্রণালী : সিলিকা এবং কার্ব্বনেট অব সোডা একত্রে মিশ্রিত করিয়া উত্তাপে দ্রবীভূত করিয়া লইতে হয়। পরে উহা ছাঁকিয়া হাইড্রোক্লোরিক এসিড সহ অধ:পাতিত করিয়া লইতে হয়। ইহা দেখিতে শ্বতবর্ণ চূর্ণ পদার্থ, ইহার কোন স্বাদ ও গন্ধ নাই। দুগ্ধ শর্করার সহিত চূর্ণ প্রস্তুত নিয়মানুসারে চূর্ণ করিয়া লইতে হয়।
ক্রিয়াস্থল : বিভিন্ন জাতীয় শাক সজ্বী, লতাপাতা, গাছ গছড়ার মধ্যে বিশেষ করিয়া ঘাস, শষ্য ও তাল প্রভৃতিতে এই ধতব লবন প্রচুর পরিমালে দেখিতে পাওয়া যায়। তবুও মানুষ শরীরে ইহার পরিমাণ নিতান্ত সামান্য। রক্ত, মুত্র পিত্ত প্রভৃতি ইহা অতি অল্প পরিমাণে দেখা যায়। মানুষের ত্ত্বক চুল, নক প্রভৃতি স্থানে এই লাবণিক পদার্থের অস্তিস্ত্ব, অন্যান্য স্থান অপেক্ষা অধিক লক্ষিত হয়। মাংস, রক্ত, স্নায়ু, পিত্ত, মস্তিস্ক, মূত্র প্রভাৃতির উপর ইহার ক্রিয়া দৃষ্ট হয়।
সাইলিসিয়া বিশেষত : অস্তি, গ্রন্থি, চর্ম, শ্লৈম্মিক ঝিল্লী প্রভৃতির উপর কার্যকরী হয় বলিয়া ইহার অভাব হইলেই ঐ সকল স্থানে অবশ্যকরুপে পোষণ হয় না এবং স্ক্রুফলার ন্যায় পীড়া হয়। ইহার ক্রিয়া অনেক দিন স্থায়ী ও দৃঢ়। শীরীরস্থ অণ্ডলাল ও সৌত্রিক পদার্থ মধ্যে ইহার ক্রিয়া দৃষ্ট হয়। হস্ত, বিমেষত: পায়ের ঘর্ম বন্ধ বন্ধ হইয়া যে সকল পীড়া হয়, তাহাতে ইহা বিশেষ উপযোগী। সাইলিসিয়া প্রয়োগ করিলে প্রথমে রুদ্ধঘর্ম পুণ: প্রকাশিত হইয়া পীড়া আরোগ্য করে এবং পরে ঘর্মও আরোগ্য হইয়া যায়। ঘর্মরোধের ফলে বাত, পক্ষঘাত, ছানি, হিষ্টিরিয়া, এপিলেন্সি প্রভৃতি পীড়ার ইহা ভাল ঔষধ। যে সকল শিশুর মস্তক পৃষ্ঠে প্রচুর ঘর্ম হইয়া বালিশ ভিজিয়া যায়, তাহাদের যে কোন পীড়ায় ইহা উপযোগী।
যে সব পীড়ায় পূঁজ উৎপত্তি হয়, যে সকল স্থানেই ইহার উপকারিতা অধিক। শরীর হইতে পূঁজ বাহির করিতে এবং অতিরিক্ত পূঁজস্রাব হ্রাস করিতে ইহার অদ্ভুত ক্ষমতা দৃষ্ট হয়। পূঁজ উৎপত্তির সম্ভবনায় যেমন এই ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়, আবার বহুদিন ধরিয়া দুর্গন্ধজনক পূঁজ নি:সৃত হইতে থাকিলে ইহা প্রয়োগ করিতে হয়। নালীক্ষতে ইহার উপকারিতা খবই বেশী। প্রদাহের প্রথমাবস্থায় ফেরাম ফস প্রয়োগের পর যদি স্ফীতি বর্তমান থাকে, তবে কেলি মিউর ব্যবহারে সঞ্চিত রস শোষিত হইয়া যায়।
তাহা না ইহা যদি পাকিবার উপক্রম হয় তখনই সাইলিসিয়া প্রয়োগ বিধেয়। সাইলিসিয়ার ক্রিয়ার দ্বারা সঞ্চিত পূঁজ রস অতি শীগ্র শরীর হইতে বাহির করিয়া দেয়। ইহার অভ্যন্তরিক ও বাহ্যিক উভয় ভাবেই ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেহে সাইলিসিয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট ভাবে থাকিলে প্রদাহিত স্থানে শীঘ্রই পূঁজ সৃষ্টি হয়। আর ইহার অভাব হইলেই পূঁজোৎপত্তির ব্যঘাত হয়। সাইলিসিয়ার পরিমাণে স্বল্পতা যদি অধিক হয় তাবে প্রদাহিত স্থানে প্রদাহের পর স্ফীতি ও কাঠিন্য অনেকদিন পর্যন্ত বর্তমান থাকে। তখন আর তাহা শোষিত ও হইতে চায় না পাকিতেও চায় না, এবং ক্রমে যন্ত্রণা দায়ক হইয়া উঠে। কোন স্থান হইতে পূঁজ নি:সৃত হইতে থাকিলে যদি ঐ সমস্ত স্থানের স্ফীতি বর্তমান থাকে, তাহা হইলে সাইলিসিয়াই উপযুক্ত ঔষধ। এই অবস্থায় এই ঔষধ দিলে সঞ্চিত রসাদি হ্রাসপ্রাপ্ত হইয়া ক্ষতস্থান শুকাইয়া যায়। কিন্ত রসাদি হ্রাসপ্রাপ্ত হইয়াও যদি পূঁজ নি:সৃত হইতে থাকে, তাহা ইইলে আর সাইলিসিয়া উপকার হইবে না, তখন ক্যাক্লেরিয়া সালফই প্রকৃত ঔষধ। ক্যাক্লেরিয়া সালফ দ্বারা ক্ষতাদি শীঘ্রই শুকাইয়া যায়।
অবিশুদ্ধ জীজে টীকা দেওয়ার জন্য নানা প্রকার পীড়া ইহা অতি উৎকৃষ্ঠ ঔষধ। অস্থি আবরণের পীড়াদিতে সাইলিসিয়ার অবশ্যক। যখন খুব অভ্যন্তরে পুঁজ হয় ও সে জন্য স্নায়ু উত্তেজিত হয় তখনই সাইলিসিয়া দেওয়ার প্রয়োজন হয়। দেহের কোন স্থানের তরুণ পূঁজোৎপত্তির পর উহা আরোগ্য না ইহয়া পুরাতন আকার ধারণ করিলে নালীরুপে উহা পরিণত হয় এবং তাহার ফলে শরীর দুর্বল ও উত্তেজিত বা স্নায়ুমণ্ডল সহজেই উত্তেজিত হয়, তখন ইহাই একমাত্র ঔষধ। স্থানিক দুর্বলতার যখন পক্ষঘাতের ন্যায় লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন গুহ্যদ্বার বিস্তৃত, হৃৎপিণ্ডের উত্তেজনা ও গহ্বরের বিস্তৃতি, অতিশয় দূর্বলতা, মনে হয় যেন শরীরস্থ সকল বিধানই অকার্যকরী হইয়াছে, তখন ইহা ব্যবহার্য্য।
শরীর হইতে কোন জিনিষ বাহির করিয়া দিতে সাইলিসিয়া অতি উত্তম ঔষধ। শরীরের ভিতর কাঁটা, সূঁচ প্রভৃতি ফুটিলে সাইলিসিয়া সেবনে বাহির হইয়া যায়। সাইলিসিয়ার অভাবে নখগুলি ভাঙ্গিয়া যায় এবং উহার চারিদিকে পূঁজ জমে। ইহার অভাবে দেহস্থ চর্মে সামান্য আঁচর লাগিলেই তাহাতে ক্ষত ও পূঁজোৎপত্তি হয়। যদি কোন সংযোক তন্তুুতে ইহার অভাব হয় তাহা হইলে ঐ স্থান শুস্ক হইতে থাকে। সস্তিস্ক ঐরুপ হইলে ধারণা শক্তির ব্যাতিক্রম হয়। গেলমাল অসহ্য হয়।
বিশেষত্ব – সাইলিসিয়ার শিশু পেট মোটা, হাত পা সরু, মাথাসার, হাড় কোমল বা বক্র, মাথায় ও পায়ে দুর্গন্ধজনক ঘাম, মুখমণ্ডল বৃদ্ধেও ন্যায়, স্বাভাব খিটখিটে, বুদ্ধি স্থল। ইহার রোগ লক্ষণ পুর্ণিমা বা আমাবস্যায় রাত্রিতে, অনাবৃত থাকিলে বিশেষ করিয়া মাথা ও পায়ের ঘাম লুপ্ত হইলে বৃদ্ধি এবং উত্তাপে বিশেষত: মাথাটি কাপড় দ্বারা জড়াইয়া রাখিলে উপশ্রম হয়। সাইলিসিয়ার সকল স্রাব গাঢ় ও হরিদ্রা বর্ণ বা পাতলা যাহাই হোক না কেন তাহাতে দুর্গন্ধ অবশ্যই থাকিবে। অতিশয় দুর্বলতার সহিত যক্ষ্মা গ্রস্ত ব্যাক্তিদের রাত্রিকালীন ঘর্মে ইহা উপকারী।
নালীক্ষত, ভগন্দর, স্ফোটক, কার্ব্বংকল প্রভৃতিতে সাইলিসিয়ার উত্তম কার্যকরী ঔষধ। কোন ক্ষতস্থান হইতে অনেকদিন ধরিয়া পুঁজ নি:সৃত হইতে থাকিলে হইতে থাকিলে ইহা সেবনে পূঁজ নি:সরণ বন্ধ হইয়া যায়। আবার যদি কোন স্থান পাকিবার উপক্রম হয় তবে ইহা সেবনে সত্বও পাকাইয়া পূঁজ বাহির করিয়া দেয়। প্রদর দোষ দুর করার জন্যও ইহার ক্ষমতা অনেক।
সাইলিসিয়ার পরিচায়ক লক্ষণ :
১/ সাইলিয়িার শিশু স্ক্রোফলাস ও রিকেটিক ধাতুর (Scrofulous and rachitic constitution)। তাহার মস্তকটি প্রায় বৃহৎ ব্রহ্মরন্ধচয় ও মস্তকের অস্থি ও সংযোজক স্থান সমূহ বহুদিন পর্যন্ত অযৃক্তাবস্থায় থাকে এবং তাহার মাথায় প্রভুত পরিমাণে ঘর্ম হয়। মাথায় এত ঘর্ম হওয়া সত্বেও সে স্থল, পেট মোটা ও হাত পা সরু সরু।
২/পায়ের দুর্গন্ধজনক ঘর্ম এবং পায়ের ঘর্ম লুপ্ত হইয়া যে কোনও প্রকার পীড়ায় অব্যর্থ।
৩/ ঠাণ্ডায় অনাবৃত থাকিলে, বিশেষত: মস্তকটি এবং অমবস্যায়, পূর্ণিমায় ও রাত্রিকালে সকল পীড়ালক্ষণের বৃদ্ধি। ৪/ উত্তাপে, বিশেষত্ব : মস্তকটি আচ্ছাদিত করিয়া রাখিলে সকল পীড়া লক্ষণের হ্রাস।
৫/ রোগীর মেজাজ খিটখিটে, যেন সে রাগিয়াই আছে।
৬/ টিকা দেওয়ার কুফলবশত : যে সমস্ত পীড়া হয়, তাহাতে ইহা উপযোগী। প্রস্তরখোদকদিগের বিবিধ পীড়ায়, বিশেষত: ফুসফুস সংক্রান্ত পীড়ায় ইহা ফলপ্রদ।
৭/ শির:পীড়ায় উপর দিকে চাহিলে রোগী সম্মুখের দিকে হুমড়ি খাইয়া পড়িয়া যাইবে বলিয়া মনে হয়। যে শীর:পীড়া ঘাড় হইতে আরম্ভ করিয়া মাথার উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং ঐ বেদনা দক্ষিণ চক্ষর উপরে আসিয়া স্থিত হয়। যৌবনকালের কোন কঠিন পীড়ার বরবর্তী কষ্টদায়ক শির:পীড়া। হ্রাস বৃদ্ধির জন্য তয় এবং ৪র্থ লক্ষল দ্রষ্ঠব্য।
৮/ ইহা পূঁজোৎপত্তি কারণের জন্য, পূঁজোৎপত্তি হইলে উহা বিদীর্ণ করিবার জন্য এবং বিদীর্ণ হইবার পর ক্ষত করিবার একমাত্র ঔষধ বলিলেও অত্যুত্কি হয় না। ইহার সর্বপ্রকাস্রবগাঢ় হরিদ্রাবর্ণের, অথবা পাতলা জলবৎ কলতানির ন্যায়, কিন্ত অতিশয় দুগন্ধযুক্ত। ইহা অস্থিক্ষত, নালীক্ষত, ভগন্দর, কানপাকা ইত্যাদি মহৌষধ। ঠান্ডা এবং উন্মুক্ত বায়ু প্রবাহ সহ্য হয় না।
৯/ শিশুরা স্তনদুগ্ধ, গোদুগ্ধ অথবা অন্য যাহাই পান করুক না কেন বমন করিয়া ফেলে। বম অম্ল স্বাদযুক্ত অথবা
জমা জমা ছানার ন্যায়।
১০/ অতিশয় রাক্ষশে ক্ষধা অথবা ক্ষুধাহীনতা। আহারের পর পেটকামড়ানি ও মুখ দিয়া জল উঠা। গরম খাদ্য এবং রান্না করা কোন খাদ্যই রোগী খাইতে চাহে না, শীতল খাদ্য ও কাঁচা ফল মল খাইতে ভালবাসে। দুগ্ধ ও মাংস সহ্য হয় না।
১১/ উদরাময়ে অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা মল। টিকা দেওয়ার মন্দ ফলে উদরাময়। পরিবর্তনশীল পাতলা মল। শিশু উদর পুরিয়া ভাল ভাল খাদ্য আহার করিয়া শীর্ণ হইয়া পড়ে এবং অজীর্ণতাবশত: তাহার মলে খাদ্যকণা দৃষ্ট হয়।
১২/ অতিশয় কোষ্ঠবদ্ধ। মল কতকটা বহির হইয়া পুনরায় ভিতরে ঢুকিয়া যায়।
১৩/ অতিরিক্ত স্ত্রীসহবাস অথবা হস্তমৈথুনের কুফলস্বরুপ বিবিধ পীড়া।
১৪/ সর্বদা শীতল জলের মধ্যে কার্যকারিনীদিগের অতিরিক্ত রজ:স্রাব।
১৫/ দুগন্ধজনক, জ্বালাকারক, দুগ্ধের ন্যায় বর্ণবিশিষ্ঠ শ্বেত প্রদরস্রাব।
১৬/ সর্বপ্রকার কাশি অথবা শ্বাসযন্ত্রের পীড়ায় প্রচুর পরিমাণে দুগন্ধবিশিষ্ট গাঢ় হরিদ্রবর্ণ বা সবুজাভ হরিদ্রাবণের পূঁজের ন্যায় নিষ্ঠীবন শ্বাসকষ্ট। শয়নে, প্রাত:কালে ও শীতল জল পানে পীড়ার বৃদ্ধি। অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় হাঁপানির বৃদ্ধি।
১৭/ হাঁটা, ছুঁচ, অস্থিখণ্ড ইত্যাদি শরীর মধ্যে থাকিলে ইহা সেবনে উহা বাহির হইবার সাহায্য করে।
সাইলিসিয়ার দৈহিক আকৃতি : ইহা শিশুর মুখমণ্ডল বৃদ্ধের ন্যায়, সকল অঙ্গ প্রত্যাঙ্গর তেমন। মুখমণ্ডল মলিন, শুস্ক অথবা বানরের ন্য চিমড়ে দেখায়। শিশুর নীচের পেট বড়, হাঁটু সরু, পায়ের গোড়ালি দুর্বল ও অনেক দেরীতে হাঁটিতে শিখে। ভাল খাওয়া সত্বেও পরিপোষণের অভাবে শিশু শীর্ণ হইয়া যায় (ক্যাল্কেরিয়া ফস)। শিশুদের মাথাটি বড়, ব্রহ্মরন্ধ ও মস্তিস্কে অস্থির সংযোগস্থল সমুহ খোলা থাকে এবং হহুদিন পর্যন্তে জোড়া লাগে না। শিশু রিকেট ধাতুর এবং স্ক্রোফুলাস ধাতুগ্রস্ত। মাংসপেশী সহমূহ শিথিল থাকে। মস্তকে প্রচুর ঘর্ম হয়। (ক্যাল্কেরিয়া রোগীর ঘর্ম মস্তকের উপরে, আর সাইলিসিয়ার রোগী ঘর্ম নিচের দিকে)। রোগীর স্বভাব খিটখিটে উত্তেজনাশীল এবং একগুঁয়ে। পায়ে দুগন্ধজনক ঘর্ম হয় এবং ঐ ঘর্ম বন্ধ হইয়া নানা প্রকার পীড়া হয়। অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও ঠান্ডায় সকল প্রকার রোগের বৃদ্ধি ঘটে।
সাইলিসিয়ার মন :
কোন কার্য়েই মনোনিবেশ হয় না। স্মরণ শক্তি মোটেই থাকে না। কাজের প্রতি অনীহা। রোগীর কোন কাজ করিতে ইচ্ছা হয় না। বিবেচনা শক্তিও কম। যদিও অতি কষ্টে জোর করিয়া কোন কার্য আরম্ব করে কিন্ত সামান্যতেই ক্লান্ত হইয়া পড়ে। কাজ আরম্ভ করার পূর্বে ভয়, কিন্ত কার্যে লাগিয়া গেলে সে মোটামুটি উহা সম্পন্ন করিয়া ফেলে। মানসিক পরিশ্রম এবেবারেই করিতে পারে না। সামান্য লেখাপড়া কাজ করিলে অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়ে। স্কুলের বালক বালিকারা কোন বিষয় মুখস্থ বলিতে পারে না, কেবলই ভুল হয়। রোগী বাড়ী ছড়িয়া অন্য কোথাও যাইতে হইবে ভাবিয়া ভীত হয়। সামান্য শব্দ বা গোলমাল হইলেই বিরক্তি বোধ করে সে জন্য ভীত বা উদ্বিগ্ন হয়। সাইলিসিয়া সেবনে রোগীর অবসাদ গ্রস্ততা, ভীত চিত্ততা দূরীভুত হয় এবং দৈহিক ও মানসিক ক্লান্তি দূরীভুত হয়। রোগী সর্বদাই দু:খিত থাকে। কাহারও কথা শুনিতে ইচ্ছা হয় না। নিজে কিছু বলেও না। রোগী সব সময় রাগিয়াই থাকে। সামান্য কারণে মাথা গরম হইয়া যায়। কোন কোন রোগী কেবল কাঁদে। আত্নহত্যা করিতে ও ইচ্ছ হয়।
মস্তক ও মস্তিস্ক :
শির:পীড়া, মাথা দপদপ করে, যেন মাথার ভিতর আঘাত করিতেছে ও মাথা ফাটিয়া যাইতেছে বোধ হয়। মাথা শীতলবোধ, সব সময় মাথায় কাপড় জড়াইয়া রাখিতে চায় এবং কাপড় জড়াইয়া রাখিলেই আরাম বোধ করে। শির:পীড়া সহ শরীর কাঁপিতে থাকে এবং রোগী শয়ন করিতে বাধ্য হয়। সকল হইতে আরম্ভ হইয়া সমস্ত দিন শির:পীড়া থাকে। আবার সন্ধ্যা হইতে বৃদ্ধি হইয়া রাত্রিকালে অত্যান্ত কষ্ট দায়ক হইয়া পড়ে।
যে সকল শির:পীড়া ঘাড় হইতে আরম্ভ হইয়া মাথার উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং দেনা ডান চক্ষুর উপরে আসিয়া স্থির হয় তাহাতে এই ঔষধ অত্যান্ত সুফলপ্রদ। উর্দ্ধদিকে তাকাইলে রোগী সামনের দিকে পড়িয়া যাইবে মনে হয়। যৌবনকালে কোন কঠিন পীড়ার পরবর্তী শির:পীড়ায় ইহা অতিশয় উপকারী। এই ধরণের শির:পীড়ার সহিত প্রায়ই গা বমি বমি থাকে। মস্তকের ত্বকে অতিশয় স্পর্শদ্বেয়। শির:পীড়া সহ বমনোদ্বেগ। মানসিক পরিশ্রমে, গোলমালে, আলোকে, শীতল বাতাসে, নড়াচড়ায়, বসিলে বা হাঁটিলে শির:পীড়া বৃদ্ধি এবং বিশ্রামে, উত্তপ্ত গৃহে, মস্তক কষিয়া বাঁধিলে ও মস্তকে উত্তাপ দিলে শির:পীড়া উপশ্রম হয়। মস্তকে রক্তধিক্য সহ মুখ লাল বর্ণ, মাথার মধ্যে যেন কোন জীবিত জন্ত বা পোকা নড়িতেছে। প্রতি পদক্ষেপেই মনে হয় যেন মস্তক দুলিতেছে। দ্রুতপদে চলিলে মাথার মধ্যে যেন কি এক প্রকার শব্দ হয় এবং পায়ে হোঁচট লাগে। শির:পীড়া হইলে অন্ধকার দৃষ্টি, মাথায় জ¦ালা, রাত্রিতে মস্তকে ঘর্ম হয়। সন্ধ্যাকালে মস্তকে দুগন্ধযুক্ত ঘর্ম।
টুপি মাথায় দিলে তাহার চাপে মাথার পেছন দিকে বেদনাবোধ। সামন্য কারণেই মাথায় সর্দি লাগে। সেইজন্যই মস্তক অনাবৃত রাখিতে চায় না। মাথার চর্মে পূঁজযুক্ত ক্ষত, পূঁজ গাঢ় হরিদ্রাবর্ণ। মাথার উপর একজিমা, চুল উঠিয়া যায়। মাথা টাটায় ও ক্ষতবোধ করে এবং চুলকায়। মাথার খুস্কি ও দাদ শীতকালে বৃদ্ধি পায় এবং গ্রীস্মকালে কম হয়। মাথার উপর হইতে যেন নিন্মদিকে চাপিয়া ধরিয়াছে বোধ করে এবং সেই সাথে স্ত্রীলোকদের জননেন্দ্রিয় চুলকায়।
মানসিক পরিশ্রম করার মোটেই ক্ষমতা নাই। সামান্য চিন্তা বা লেখাপড়ার কাজ করিলেই অবসন্ন হইয়া পড়ে। নড়াচড়ায় , চক্ষু উপরের দিকে তাকাইলে এবং মাথা অবনত করিলে পীড়ার বৃদ্ধি।
মাথাঘোরে,সামনে বা বামদিকে পড়িয়া যাইবে মনে হয়, ডানদিকে চলিতে চায়। কোন বিষন্ন ভাবিতে গেলে বা কোন দুর্গম স্থানে গেলেই মাথা ঘুরিয়া পড়ে। মস্তিস্ক খালিবোধ সাইলিসিয়া (12X)। গাড়ী হলিলে, হেঁট হইলে মানসিক পরিশ্রম করিলে, উপরের দিকে তাকাইলে শির:ঘুর্ণন হয়। প্রাত:কালে উহা অধিক হয়, শির:ঘুর্ণন সহ বমনোদ্বেগ।
রাত্রিকালে, একাদশী, আমাবস্যা ও মূর্ণিমায় তিথিতে মৃগী হইলে এই ঔষধ বিশেষ উপকারী। তড়কা হইবার পূর্বে শরীর ঠাণ্ডা বোধ হয়।
চক্ষু : অশ্রুস্রাবী গ্রন্থির পীড়া সমূহের মধ্যে ইহাই প্রধান ঔষধ। অশ্রুস্রাবী গ্রন্থি ও থলির স্ফীতি। অশ্রুস্রাবী ফিশ্চুলা নেট্রাম মিউর এর পর)। শীতল ও খোলা বায়ুতে চক্ষে জল পড়ে। কর্ণিয়ার ক্ষত, ক্রমশ: শ্লাফ পড়িয়া ক্ষুদ্র ও গোল ক্ষত হইয়া ক্রমশধ: ছিদ্র হইয়া গেলে এবং এন্টিরিয়ার চেম্বারে পূঁজ জমিলে সাইলিসিয়া উপাকরী। চক্ষুতে আঁশের মত পদার্থ জমে। কর্ণিয়ার ক্ষত হইতে পঁচা গন্ধ নির্গত হয়। চক্ষু হইতে গাঢ় পীতবর্ণের স্রাব নি:সৃত হয়। কর্ণিয়া পুরু, খসখসে, আঁচিল হওয়া মত, ঠিক যেন তথাকার টিসু সকল বৃদ্ধি হইয়াছে, উহা উঠিয়া গেলে চক্ষু পরিস্কার হয়। পায়ের ঘর্ম বন্ধ হওয়া জন্য ছানি, পায়ের ঘর্ম বন্ধ বা কোন চুলকানি আদি বসিয়া যাওয়া জন্য চক্ষুর দৃষ্টি শক্তি হ্রাস। চক্ষু তারকায় বসন্ত হইয়া তাহাতে ক্ষতের দাগ বা সেজন্য তারকা অস্বচ্ছ হইলে ইহা উপকারী।
চক্ষুর মধ্যে যেন বালি পড়িয়াছে মনে হয় এবং চক্ষু শুস্ক হওয়া জন্য বেদনা। চক্ষু ও চক্ষপত্রে চাপবোধ ও কুটকুট করে। চক্ষুতে চুলকানি ও জ্বালা। চক্ষু অতিশয় দুর্বল, উত্তপ্ত। দৃষ্টি শক্তি দুর্বল, কোন বস্তু দেখিতে গেলে মনে হয় যেন মেঘের ভিতর দিয়া দেখিতেছে। কোন কিছু পড়িবার সময় মনে হয় যেন অক্ষর সকল জুড়িয়া গিয়াছে। অথবা দৃষ্ট বস্তু ফ্যাকাশে দেখায়। বহুদিন স্থায়ী আলোক অসহ্য। অঞ্জিনিতে অতিশয় বেদনা ও স্ফীতি থাকিলে প্রথমাবস্থা হইতে ফেরাম ফস সহ সাইলিসিয়া পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করিলে অন্য ঔষধের সাহায্য ছাড়াও আরোগ্য হইয়া যায়। চক্ষুর পাতায় জলপূর্ণ অর্বুদ বা চক্ষু পাতার ব্রনে সাইলিসিয়া উচ্চ শিক্ত প্রদান করা ভাল। চক্ষুর উপরের অস্থিতে বেদনা বোধ ও টাটায়।
কর্ণ : শির:পীড়া সহ কানের ভিতর শব্দ হয়। কানের ভিতর যেন জীবিত পোকা নড়িতেছে, ফড়ফড় করিতেছে। কানের ভিতর বাঁশী বাজাইতেছে বা ভোঁ ভোঁ করিতেছে। কানে শূল বেদনা, দপদপ বা কুরিয়া লওয়া মতা বেদনা। বেদনা যেন ভিতর দিক হইতে বাহিররের দিকে আসিতেছে। প্রাদাহিরক বেদনা থাকিলে ফেরাম ফস সহা পর্যায়ক্রমে ব্যবহার্য। কানের বাহ্যদিকে ছিদ্রের প্রাদাহিক স্ফীতি। কর্ণে সূলবেদনা, দপদপানি ও কর্তনবৎ বেদনা। প্যারটিড গ্রন্থির স্ফীতি ও তথায় শক্ত হয়। কর্ণের চতুস্পার্শ্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ফোটক।
কানের ভিতরস্থ টিস্পেনম ও ইউষ্টোকিয়ান ছিদ্রের সর্দি এবং স্ফীতি জন্য শ্রবণ শক্তির হ্রাস। মনে হয় কান বন্ধ হইয়া গিয়াছে এবং নাসিকা ঝড়িলে কান পরিস্কার হইয়া যাইবে। মধ্যকানের প্রদাহ, স্ফীতি ও পুরাতন ক্ষত। কানের বেদনা, প্রদাহ ও পূঁজ জন্য ইহা প্রযোজ্য। স্ক্রুফুলা জনিত কানের পূঁজ হইলে সাইলিসিয়া 3X আনেক সময় 30X ও ব্যবহার্য। পূঁজ গাঢ়, দধির ন্যায় চাপ ও রক্ত মিশ্রিত। শীতল বায়ুতে পূঁজ বৃদ্ধি। কর্ণ প্রদাহের প্রথমাবস্থায় ফেরাম ফস এর সহিত পর্য্যায়ক্রমে সেবন করিতে দিলে পূঁজ হওয়া বন্ধ হয় এবং যন্ত্রণাও নিবাহিরত হয়। ইহার পরের অবস্থায় যখন কর্ণ স্ফীত ও বেদনা যুক্ত হয, কিন্ত তখনও পূঁজ হয় নাই এইরুপ অবস্থায় কেলি মিউর এর সহিত পর্যায়ক্রমে এই ঔষধ সেবন করিরৈ সকাল কষ্টের লাঘব হয়। পূঁজ হইলে সাইলিসিয়া সর্বাপেক্ষা বেশী উপযোগী। কর্ণের স্নায়বিক শূলবেদনা হইলেও ম্যাগ ফস এর সহিত এই ঔষধ ব্যবহৃত হয়। পুর্ণিমার সময় শ্রবণশক্তির হীনতা বা আধ্যিক, স্নান কারার ফলে কর্ণ প্রদাহ। কান পাকাতে ইহা উল্লেখ যোগ্য ঔষধ। বিমেষত: পুরাতন কান পাকায়। কানের পূঁজ দুর্গন্ধযুক্ত, পীতবর্ণ, চাপ চাপ, বলবৎ তরল বা রক্ত মিশ্রিত। শীতল বায়ু প্রহাহে পূঁজ বৃদ্ধি পায়।
নাসিকা : পুরাতন সর্দিতে নাসিকা হইতে দুগন্ধযুক্ত হরিদ্রা বর্ণের পুঁজের ন্যায় এবং কখনও বা রক্ত মিশ্রিত স্রাব নি:সৃত হয়। নাসিকায় অভ্যন্তর অত্যান্ত শুস্ক এবং উহার চারিধারে ক্ষয় হয়। সাসিকা হইতে রক্তস্রাব। নাসিকার অভ্যন্তর ভাগে লালবর্ণ দৃষ্ট হয়। নাত্রিতে নাসিকার ভিতর শুস্ক ও ক্ষয়যুক্ত, নাসিকার অগ্রভাগে মামড়ি পড়ে। তথায় চুলাকায় ও ফুস্কুড়ি হয়। সন্ধ্যাকালে নাক সুড় সুড় করে। নাকের অগ্রভাগে চুলকায় ও হাঁচি হয়। সর্বদা সর্দি, নাসিকা বন্ধ, জল পড়িলে নাসিা খোলাসা হয়।
উপদংশ জনিত নাসিকার অস্থিতে ক্ষত ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব নি:সরণ। নাসিকা স্পর্শ করিলে বেদনাবোধ। স্পর্শে বা চাপে ক্ষতে আঘাতের ন্যায় অতিশয় বেদনা মস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া থাকে। স্ক্রোফুলাস শিশুদের নাসিকা ক্ষত। মস্তকে ও পদে বহুল পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত ঘর্ম। নাসিকার মধ্য অস্থির আবরণ আক্রান্ত হইয়া তথা হইতে দুর্গন্ধজনক স্রাব নি:সরণ। নাকের হাড়গুলি নষ্ট হইয়া পচিতে থাকে।
মুখমণ্ডল : মুখ উত্তপ্ত বোধ। মুখের অস্থিতে তীক্ষ্ম বেদনা, গোঁপে চুলকানি। ঠোঁট স্ফীত। মুখের কোন ফাটিয়া যায়, ঠোঁটে কণ্ডুয়ন ও তীক্ষন্ম বেদনা। নিচের ঠোঁট লালবর্ণ ও ক্ষতযুক্ত। মুখের চর্ম ফাটা ফাটা, গালে ব্রণ। মুখ ফ্যাকাশে ও শীর্ণ। সময়ে সময়ে গালে সাদা সাদা দাগ। মুখের নানা প্রকার চুলকানি ও ক্ষত হইতে গাঢ় পূঁজ নি:সরণ। গালে ও নাকে লালবর্ণ দাগ। উক্ত স্থান সকল জ্বালা করে, বিশেষত: আহারের পরই জ্বালা বেশী। মুখের যে কোন অস্থিতে অর্বুদ হওয়া ন্য তীব্র বেদনা। চোয়াল সন্ধিতে আক্ষেপ, দাঁতি লাগিয়া মুখবন্ধ।
মুখাভ্যন্তর : মুখের পচনশীল ক্ষত। না ধরেণের মুখক্ষত। প্রাত:কালে মুখে ভিতর শুস্ক ও দুর্গন্ধযুক্ত, মুখে সর্বদা জল জমে। লালা নি:সরক গ্রন্থিও পূঁজ।
দন্ত : দন্ত মাড়ীর প্রাদাহিক বেদনার ও স্ফোটকে ফেরাম ফস সহ পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করিতে হয়। যদি ফেরামের অবস্থা পার হইয়া গিয়া দন্তমাড়ী স্ফীত হয় তাহা হইলে শুধমাত্র কেলি মিউর অথাব সাইলিসিয়ার সহিত পর্য্যয় ক্রমে ব্যবহার্য। উহাতে উপকার না হইলে এবং যদি পূঁজ হইবার আশংকা থাকে পূঁজ জমিয়া থাকে তবে সাইলিসিয়া ব্যবহারে শীঘ্রই পূঁজোৎপত্তি হইয়া স্ফোটক বিদীর্ণ হইয়া পীড়া আরোগ্য হয়।
পদঘর্ম বিলুপ্ত হইয়া দন্থশূল। পায়ে ঠাণ্ডা লাগা জন্য প্রবল দন্তশূল রাত্রিতে বৃদ্ধি। কষ্টকার দন্তশূল, শীতলতা বা উত্তাপ প্রয়োগে কিছুতেই হ্রাসপ্রাপ্ত হয় না। রাত্রিকালে অধিক বেদনা হয় বলিয়া নিদ্রা যাইতে পারে না। দন্তশূলের বেদনা গর মবস্তু আহারে বা শীতল বায়ু স্পর্শে বৃদ্ধি। দন্তমাড়ি হইতে সহজেই রক্তস্রাব হয়। দন্ত লম্বা ও শিথিল বোধ হয়। খুব ভিতরে বেদনা বোধ। অন্য কোন ঔষধে যখন দন্তশূল নিবারিত হয় না, তখন ইহাই উপযুক্ত ঔষধ।
দন্তক্ষতের ইহা উত্তম ঔষধ। তবে অন্যান্য ঔষধের লক্ষণ থাকিলে এই ঔষধের সহিত পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা যাইতে পারে। দন্তের এনামেল উঠিয়া দন্ত খসখসে হয় এবং পরে ক্ষত হয়।
জিহ্বা : জিহ্বা কঠিন ও ক্ষতযুক্ত। মনে হয় যেন জিহ্বায় একগাছি চুল রহিয়াছে। জিহ্বা কটা বা বাদামী বর্ণের শ্লেম্মা দ্বারা আবৃত। জিহ্বায় ক্যান্সার। জিহ্বায় ক্ষয় হইয়া যায়।
গলভ্যন্তর : গলার ভিতরে যে কোন স্ফোটক বা ক্ষত হইতে গাঢ় হরিদ্রাবর্ণের পূঁজ নি:সরণ। টনসিল প্রদাহে পূঁজ সৃষ্টির সম্ভবানা থাকিলে সাইলিসিয়া প্রয়োগে শীঘ্র পূঁজ জমিয়া ফাটিয়া নি:সারিত হয়। পূঁজ নি:সারিত হইয়া গেলেও ক্ষত শুকাইবার জন্য ইহার প্রয়োজন হয়। শীঘ্র ক্ষত না শুকাইলে ক্যাল্করিয়া সালফ প্রয়োগ করিতে হয়। সোরথ্রোট পীড়া, গলার মধ্যে শ্লেম্মা জমে। টনসিলাইটিস পীড়ায় মনে হয় যেন গলার মধ্যে পিন ফুটিয়া রহিয়াছে। সেজন্য বেদনা ও ক্ষত বোধ। গিলিবার সময় বেদনা অধিক বোধ হয়।
পাকস্থলী : শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করিতে চায় না। পান করিলেই বমন হয়। ছোট ছেলেরা যেমন খায়, অমনিই বমন করে, বমন অম্মস্বাদ নহে। দুগ্ধ পানে উদরাময়। পাকস্থলীর অভ্যন্তর জ্বালা করে। পেট কামড়ানি সহ মুখ দিয়া জলা উঠা, হিক্কা। মনোদ্বেগ ও জলবৎ লালা বমন। পেটের মধ্যে গরম বোধ করে ও কসিয়া ধরিয়াছে মনে হয়। পুরাতন অজীর্ণ পীড়া সহ অম্লদগার, বুক জ্বালা ও শীতানুভব (ক্যাল্ককেরিয়া ফস, নেট্রাম ফস)। অতিশয় ক্ষধার উদ্রেক, কেবল খাই খাই করে, এমনকি আহারের পরই আবার খাইতে চায়। রাত্রে ক্ষুধার জন্য নিদ্রা পর্যন্ত হয় না। ক্ষুধার বৃদ্ধি হয়, আহারের পূর্বে বা পরে মুখ দিয়া জল উঠে।
সাইলিসিয়ায় অতিশয় ক্ষুধা যেমন আছে, ক্ষুধামান্দ্যও ইহাতে আছে। প্রাত:কালে মুখে তিক্তস্বাদ। গরম খাদ্য ও রান্না করা খাদ্য রোগী খাইতে চায় না। শীতল ও কাঁচা ফলমুল ভক্ষনে স্পৃহা। মাছ মাংস খাইতেও আগ্রহ নাই খাইলেও সহ্য হয় না। বিয়ার পানের ইচ্ছা। আহারের পর নিদ্রা যাইতে ইচ্ছা, পাকস্থলী ভারবোধ ও কামড়ানি মত বেদনাযুক্ত, মুখে অম্মস্বাদ ও অম্মবমন। পাকস্থলী হইতে গলা পর্যন্ত গরম জলের উদ্গার উঠে। রাত্রিতে বমনোদ্বেগ ও বমন। জল বিস্বাদ বোধ ও পানেই বমন। উত্তাপে বমনোদ্বেগ আরাম বোধ। আহারের পর পেট বেদনা ও কামড়ানি, উত্তাপ প্রয়োগে হ্রাস। পেট টান বোধ ও কঠিন, গরম বেদনাযুক্ত।
উদর ও মল : ছোট ছোট ছেলেদের উদরাময়, মলে অতিময় দুর্গন্ধ। বিশতে : টীকা দেওয়ার পর উদরাময়। মাথায় দুগন্ধজনক ঘাম। মলের গন্ধে যেন নাড়ী উঠিয়া যায়। উদর বড়, কঠিন ও স্ফীত এবং বেদনাযুক্ত। উদরে শূলবৎ বেদনা। খাদ্যদ্রব্য ভাল হজম হয় না। এমনকি যাহা খায় তাহাই অজীর্ণাবস্থায় মলের সহিত বাহির হইয়া যায়। মল লালবর্ণ রক্ত ও শ্লেম্মা মিশ্রিত। দুর্গন্ধ বা পচাগন্ধযুক্ত রস বাহির হয়। গুহ্যদ্বারে কাটিয়া ফেলামত বেদনা ও জ্বালা করে। উদরের স্থানে স্থানে বায়ূ জমিয়া পেট হড়হড় গড়গড় করে নেট্রাম সালফ)। মধ্যে মধ্যে দুর্গন্ধ পূর্ণ বায়ু নি:সরণ হয়। পরিবর্তনমীল পাতলা মল এক এক সময় এক এক প্রকার মলত্যাগ হয়। ঠাণ্ডা হাওয়ায় উদরাময়ের বৃদ্ধি। বালকেরা উদও পূর্ণ করিয়া আহার করা সত্বেও শরীর দুর্বল ও শীর্ণ হইয়া যায়। আহার্য বস্তু অজীর্ণাবস্থায়ই সব বাহির হইয়া যায়। কখনও ক্ষুধায় খাই খাই করে, আবার কখনও ক্ষুধাবোধ হয় না। কিন্ত খাইলেই বমি হইয়া যায়।
ইহাতে কোষ্ঠবদ্ধতাও আছে। সরলান্ত্রের দুর্বলতা হেতু সহজে মল নি:সৃত হইতে চায় না। অতি কষ্টে সামান্য বাহির হইয়া পুনরায় ভিতরে অনেকদিন পর্যন্ত সরলান্ত্রে মল জমিয়া থাকে। মল কঠিন ও গুলটে। কোষ্ঠবদ্ধ হস পায়ে দুর্গন্ধ ঘর্ম, কোষ্ঠবদ্ধ হেতু শূলবেদনা। দুর্গন্ধ অর্ধ:বায়ু নি:সরণ হয়। শুস্ক মল ত্যাগের পর জ্বালাবোধ। কুন্থন দিয়া মলত্যাগ করিতে গেলে অর্শ বাহির হইয়া পড়ে এবং অর্শে বেদনা হয়। অর্শের টাটানি ও অর্শ হইতে গাঢ় হরিদ্রা বর্ণের পূঁজ নি:সরণ হয়। স্ত্রীলোকদের ঋতুকালীণ কোষ্ঠবন্ধ। গুহ্যদ্বারের নালীক্ষত, ভগন্দর। বক্ষ: লক্ষণের বিদ্যমানতা হেতু ভগন্দর। ভ্রমণকালে গুহ্যদ্বারে তীব্র সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা এবং উত্তাপে তাহার উপশ্রম (60X, 200X)।
কৃমি জন্য শূলবেদনা (নেট্রাম ফস)। পেট বেদনা করে ও মুখে জল উঠে। পেটে বেদনা ও উত্তাপে তাহার উপশ্রম (ম্যাগনেসিয়া ফস)। শূল বেদনাকালে হাত হরিদ্রা ও নীলবর্ণ হয়। ফিতা কৃমি। শ্লেম্মা ও রক্ত মিশ্রিত মল, বার বার নির্গত হয়। আমাশয়ের মলে অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকিলে ও দৈহিক আকৃতি সাথে মিলিলে সাইলিসিয়া কার্যকরী ঔষধ।
যকৃত স্ফোটক, বেদনা টাটানি। নড়াচড়ায় বেদনা বৃদ্ধি। যকৃত প্রদেশে স্ফীত, দপদপে বেদনা। স্পর্শে ও নড়াচড়ায় বেদনা বৃদ্ধি।
মূত্রযন্ত্র : প্রস্রাব ত্যাগকালে প্রস্রাব নালী অথবা মূত্রস্থলীতে আক্ষেপ হয়। দিনরাত সব সময় প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা কিন্ত প্রস্রাবের পরিমাণ অত্যান্ত কম। প্রস্রাব করার পরও আপনা আপনি খানিক প্রস্রাব হয়। প্রস্রাবন্ধ, সংকোচন। ক্রিমি বা কোরিয়া পীড়ায় অনিচ্ছায় লালবর্ণ বালির ন্যায় তলানি জমে (ইরিক এসিড হাহির হয়)। পাথুরী পীড়ায় পুনরায় পাথুরী না হইবার জন্য (ক্যালকেরিয়া ফস) ইহার ব্যবহৃত হয়। মুত্রগ্রন্থিতে পুঁজ উৎপাদন, প্রস্রাবে পূঁজ ও শ্লেম্মা পরিপূর্ণ।
পুংজননেন্দ্রিয় : স্ত্রীলোকদের বিষয় আলোচনা করিলে, স্ত্রীলোক দর্শন করিলে বা সহবাসের কথা চিন্তা করিলে প্রষ্টেটিক রস নি:সৃত হয়। মলত্যাগ করিবার সময় কুন্থনেও ঐ প্রকার প্রষ্টেটিক রস নি:সৃত হয় সব সময় শুধু স্ত্রীলোক বিষয়ক চিন্তা হয় এবং রাত্রিকালে স্বপ্নদোষ হয়। স্ত্রী সহবাসের পর হাত পা অতিশয় ক্লান্ত ও শরীর দুর্বল হয়, মনে হয় যেন পক্ষঘাত হইয়াছে। জননেন্দ্রিয়ের দুর্বলতাবশত: সহবাস করার ইচ্ছা থাকে না। অতিরিক্ত উত্তেজনা বশত: দিনরাত্র স্ত্রীসহবাস চিন্তা যেমন হয়। অবার তার বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ সহবাসের ইচ্ছা রহিত লক্ষণও দৃষ্ট হয়।
অনেক দিন স্থায়ী প্রমেহ পীড়ায় গাঢ় দুর্গন্ধজনক পূঁজস্রাব। কুন্থনে প্রসাব দ্বার দয়িা পূঁজ রা রক্ত মিশ্রিত পূঁজ, কিম্বা সুতার ন্যায় পদার্থ নিস্ক্রান্ত হয়। রোগী সর্বদাহই শীতানুভাব করে, এমনকি ব্যারাম করিলেও শীত যায় না। সব সময় প্রস্রাব করিবার ইচ্ছা কিন্ত অল্প পরিমাণে প্রসাব হয়।
উপদংশ পীড়ায় ক্ষতের চতুর্দিকে উচ্চ প্রদাহিত স্থান বেদনাযুক্ত, উত্তেজিত বিবর্ণ, পাতলা রক্ত মিশ্রিত রস বা পূঁজ নি:সরণ হয়, পারদ দোষ দুর করিতে ইহার অদ্বিতীয় ক্ষমতা আছে। পুরাতন উপদংশ (ক্যাল সালফ) জন্য পূঁজ ক্ষরণ অথবা কোন স্থানিক কাঠিন্য।
লিঙ্গমুণ্ডে লালবর্ণ দাগ ও জলকানি। মুণ্ডাচ্ছাদক চর্মে চুলকানি ও ছাল উঠিয়া লালবর্ণ হয়। চুলকাইলে স্ফীত হয়। অণ্ডকোষ চুলাকয় ও ঘর্মযুক্ত হয়। অণ্ডকোষে জল সঞ্চয় (নেট্রাম সালফের পর), পুর্ণিমায় বা আমবস্যায় অণ্ডোকোষ প্রদাহ, কষ্টজনক হয়। অণ্ডকোষ প্রদাহিত হইবার পর উহাতে পূঁজ সঞ্চয়ের সম্ভবনা হইলে 6X শক্তি দ্বার শীঘ্র পূঁজোৎপত্তি হইয়া নির্গত হইয়া যায়। পরে উচ্চ শক্তি ব্যবহার্য্য।
স্ত্রীজননেন্দ্রিয় : ঋতুস্রাবের পূর্বে বা সময়ে কোষ্ঠবদ্ধতা, ঋতুস্রাবকালীন সর্বদেহে শীতলবোধ হয়। ঋতুকালীন পায়ে দুর্গন্ধজনক ঘর্ম। ঋতু শীঘ্র হয়, কিন্ত পরিমাণে অল্প, কদাচ অধিক হয়। যাহারা সর্বদা শীতল জলের মধ্যে থাকিয়া কার্য্য করে তাহাদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাব। উভয় ঋতুকালের মধ্যে রক্ত মিশ্রিত স্রাব নি:সরণ। ঋতুর পরিবর্তে সাদা বলবৎ স্রাবনি:সরণ। অনিয়মিত ঋতুস্রাব। ২/৩ মাস অন্তর ঋতু হয়, ঋতুস্রাব অধিক পরিমাণে হয় এবং ঐ স্রাব এত তীক্ষ্ম হয় যে, যে স্থানে লাগে সে স্থান হাজিয়া যায় ও জ্বালা করে। ঋতুস্রাবের পূর্বে উদরাময়, ঋতুকালে উদরে বেদনা, মুখ ফ্যাকাসে, যোনিতে জ্বালা ও তথাকার চুল উঠিয়া যায়। অতিরিক্ত পুরুষ সহবাসেচ্ছা জন্মে। সন্তানদের স্তন দাম কারাইবার সময়েও ঋতু হয়। জননেন্দ্রিয় মুখে চাপবোধ, স্তনের বেঁটাটি মনে হয় যেন ঢুকিয়া গিয়ায়াছে।
শ্বেত প্রদর, স্রাব তীব্র, যেখানে লাগে সেখানে জ্বালা করে ওক্ষত বোধ হয় এবং ছাল উঠিয়া যায়। পরিমাণে অধিক হয়। স্রাব দুগ্ধবৎ সাদা, থাকিয়া থাকিয়া নি:সৃত হয়। স্রাবের পূর্বে নাভিতে কামড়ানি। শ্বেত প্রদর উত্তাপে পর জ্বালাকর শ্বেত প্রদর স্রাব। জননেন্দ্রিয়ের মধ্যে জলপূর্ণ ¯্রাব। যোনী কপাটে স্ফোটক, নালী ক্ষত।
গর্ভাবস্থা : ডা: কেন্টের মতে যে স্থলে স্ত্রীলোকেরা এত দুর্বল যে গর্ভস্রাবের প্রবণতা থাকে, অথবা কিছুতেই গর্ভ হয় না, তাহাদের পক্ষে এই ঔষধটি প্রযোজ্য। মনে হয় যেন যন্ত্রাদি শ্রান্ত হইয়া গিয়াছে এবং কার্য করিতে সমর্থ নহে। অনেকের মতে যখন কিছুতেই সন্তান প্রসব হয় না, তখন সাইলিসিয়া উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করিলে অতি শীঘ্রই সন্তান ভুমিষ্ট হয়।
স্তন কঠিন, বেদনাযুক্ত ও ভারী হয়। স্তন প্রদাহ প্রথমাবস্থায় কেলি মিউর দিয়া উপকার না পাওয়া গেলে সাইলিসিয়া ব্যবহার করিলে পূঁজোৎপত্তি না হইয়া অনেক সময় আরোগ্য হইয়া যায়। স্তন প্রদাহে স্তন লালবর্ণ, স্ফীত ও বেদনা যুক্ত। স্তনের স্ফোটক বিদীর্ণ হইয়া পরে নালী হয়, তাহা হইতে হরিদ্রা বর্ণের গাঢ় পূঁজ নি:সৃত হয়। স্তনবৃন্ত ফাটা (ক্যালকেরিয়া ফ্লোর) ও সহজে ক্ষত হয়। গর্ভাবস্থায় পায়ের তলায় বেদনা, চলিতে কষ্টবোধ।
জরায়ুর অর্বুদ : ডিম্বকোষ হইতে জরায়ু ব্যাপী নলের মধ্যে পূঁজ সঞ্চয় ও জল সঞ্চয় এই ঔষধের দ্বারা আরোগ্য হয়। জরায়ুর এক পাশের্^ একটি অর্বুদ বা ডেলার ন্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত থাকে এবং জলের ন্যায় বা পূঁজের ন্যায় অথবা রক্তমত তরল ¯্রাব হঠাৎ ¯্রােতের বেগে প্রচুর পরিমাণে নির্গত হইতে থাকে। এইভাবে অর্বুদ ও ডেলাটি অদৃশ্য হইয়া যায়, কিন্ত কিছুদিন পরে পুনরায় পূর্বাবস্থা প্রাপ্ত হয়।
শ্বাসযন্ত্র : দিনরাত্র সকল সময়েই কাশি। কাশি হওয়ার জন্য দুর্বলতা। নড়িলে চড়িলে কাশি বৃদ্ধি ও সামান্য শ্লেম্মা নি:সৃত হয়। রাত্রিতে কাশি মনে হয় শ্বাসবদ্ধ হইবে ও আক্ষেপিক কাশি। শীতল জলপানে প্রাত:কালে ও রাত্রিতে শয়ন কালে কাশির বৃদ্ধি। গলনলীতে শুস্ক ভাবের জন্য গলা সুড়সুড় করিয়া কাশি, কাশির সহিত স্বরভঙ্গ। গলা ঘড়ঘড় করে এবং কাশিলে সহজেই শ্লেম্মা উঠে। কাশিবার সময় মনে হয় গলায় একগাছি চুল রহিয়াছে। কথা বলিলেও কাশি বৃদ্ধি পায়। কাশিবার সময় বক্ষে বেদনা। শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহে পুঁজ উৎপত্তি হইয়া গলা ঘড়ঘড় করে, সজজেই শ্লেম্মা উঠে। অধিক পরিমাণে কিংবা সবুজাভ হরিদ্রাবর্ণ পূঁজ নি:সৃত হয় ও টিসু সকল ধ্বংস হইতে থাকে এবং তৎসহ পূঁজ জ্বর হয়, অতিশয় দুর্বলতা ও নিশাঘর্ম হয় তখন ইহা ব্যবহার্য্য। প্রস্তুর খোদাই কারক দিগের কাশিতে উহা উৎকৃষ্ঠ। প্রথমে থ্রোটের সম্মুখে সুড়সুড় করিয়া শূন্যগর্ভ আক্ষেপিক ও শ্বাসবদ্ধ মত কাশি ও তৎসহ অধিক মাত্রায় হরিদ্রাভ সবুজ বর্ণ কিংবা কঠিন, চটচটে দুগ্ধের ন্যায় সাদা বর্ণ তীক্ষ্ম জ্বালাকর শ্লেম্মা নি:সৃত হয়। বুক যেন কসিয়া আছে, যেন দড়ি দিয়া টানিয়া বাঁধিয়া রাখিয়াছে। শয়ন করিলে হেঁট হইলে, দৌড়াইলে, সামান্য মানসিক পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হয়, হাঁচিলে ও কাশিতে চায়। ফুসফুসের স্ফোটক, ইহা দ্বারা সহজে স্ফোটক বিদীর্ণ ও পূঁজ বাহির হয় এবং শীঘ্রই ক্ষত শুস্ক হইয়া যায়। পূঁজোৎপত্তির পর শ্লেম্মা গাঢ় পূঁজবৎ ও অধিক মাত্রায় নি:সরণ।
যক্ষাকাশিতে জলপূর্ণ পাত্রে গয়ার ফেলিলে উহা ডুবিয়া যায়। ক্ষকাশির সহিত অতিশয় দুর্বলতা ও রাত্রিকালীন ঘর্ম (ক্যাল-ফস, নেট্রাম মিউর)। পায়ের তলায় ঘর্ম ও জ¦ালা কোষ্ঠবদ্ধ। ইহা পীড়ার শেষ অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। ক্ষয় কাশির প্রাথমিক অবস্থায় যখন ফসফুস ব্যাপক ভাবে আক্রান্ত হয় না তখনই এই ঔষধটি উপকারী। ধাতুগত ভাবে মিলিলে ঔষধটি পীড়ায় গভীরে প্রবেশ করে ও আরোগ্য প্রাপ্ত হয়।
সাইলিসিয়া একটি গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ। সাধারণ গ্রস্ত সমুহে ইহার ব্যবহার সম্পর্কে সাবধান করা হইয়াছে যে ক্ষয়রোগীর শেষাবস্থ ভিন্ন প্রথমাবস্থায় ইহা ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কিন্ত ডা: বিজয় কুমার বসু ইহার বিপরীত অবস্থার বর্ণনা দিয়াছেন। তিনি উধারণ স্বরুপ বলিয়াছেন যে দেহের ভিতরে যদি কাঁটা বা সূঁচ অথবা ঐ জাতীয় কিছু প্রবেশ করিয়া উহার চতুপার্শ্বে পূঁজ জন্মাইলে তাহা নির্গত করানোর ক্ষমতাও সাইলিসিয়ার আছে। যদি রোগীর মর্মস্থলে রক্ত শিরাসমাচ্ছন্ন স্থানে কোন কিছু হইয়া থাকে এবং সাইলিসিয়ার লক্ষণ দেখা যায়, তাহা হইলে অবশ্যই বাহ্য বস্তুটির চারিধারে পূঁজ উৎপাদন করিয়া উহাকে নি:সৃত করাইয়া দিবে। কিন্ত রোগী হয়ত তাহা সহ্য করিতে সমর্থ হইবে না। এই সকল কারণে যদি ক্ষয় রোগের গুটিকাগুলি ফুসফুসে ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হইয়া থাকে এবং সাইলিসিয়ার লক্ষণ থাকে তাহা হইলে খুব উচ্চক্রমে ও ঘনঘন ঔষধটি প্রয়োগ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হইবে। কেননা ঐরুপ অবস্থায় উচ্চ শক্তির ঔষধটি প্রয়োগ করিলে ফুসফুসের কোষগুলিতে স্ফোটক জন্মাইযা গুটিাগুলি বহির্গত হইবে বটে কিন্ত রোগীর বাঁচিবার আশা কম। সে জন্য লক্ষণ থাকিলেও ঐরুপ অবস্থায় নিন্মক্রমের ঔষধ দেওয়াই ভাল। কেননা যক্ষ্মার অগ্রবর্তী অবস্থায় রোগীটিকে রোগী হিসাবে আরোগ্য করিতে যাইতে নাই। কোন প্রকার জোড়াতালি দিয়া রোগীর মৃত্যুকে যন্ত্রণাশূন্য করিয়া যাইতে হয়। অতএব দেখা যাইতেছে যে, প্রথমাবস্থা অপেক্ষা শেষাবস্থায় ঔষধটি প্রয়োগ করা বিষয়ে সাবধান হইতে হইবে। কিন্ত ক্যালকেরিয়া ঔষধগুলিতে সে ভায় নাই। উহা ফসফুসের গুটিকাগুলির চতুপার্শ্বের পূঁজ সৃষ্টি করে না বরং গুটিকাগুলিকে সংকুচিত করিয়া কোষবদ্ধ করে এবং গুটিকা গুলিকে আরও কঠিনাবস্থায় পরিণত করে।
হাঁপানি পীড়ায় খুবই শ্বাসকষ্ট হয়। বিশেষত: শয়নে বৃদ্ধি (নেট্রাম সালফ)। রোগী শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য উন্মুক্ত বায়ুতে যাইতে চায়। সে জন্য জানালার ধারে মুখ দিয়া বসিয়া থাকে। আর্দ্র হাঁপানিতে ঘড়ঘড়ে মোটা শব্দ, সাঁই সাঁই শব্দ এবং সঞ্চলনে অক্ষমতা। পুরাতন প্রমেহ দোষ গরম আবহাওয়ায়, পরিশ্রমে ও লুপ্ত প্রমেহ হইতে পীড়ার সৃষ্টি। আমাবস্যায় ও পূর্ণিমায় পীড়ার বৃদ্ধি। শ্বাসকষ্টের জন্য কেলি ফস 3X পর্য্যায়ক্রমে ব্যবহার্য্য (সাইলিসিয়া 12X)।
সাইলিসিয়া ও নেট্রাম সালফের বক্ষ লক্ষণ :
সাইলিসিয়া ও নেট্রাম সালফ উভয় ঔষধেই পুরাতন মাষক দোষগ্রস্ত মাতাপিতার সন্তানদেও হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য খোলা বাতাসে যাওয়ার ইচ্ছা এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় পীড়ার বৃদ্ধি আছে। যদিও সাইলিসিয়ার কাশি শুস্ক, তবে নেট্রাম সালফের ন্যায় তরল কাশিও ইহাতে আছে। নেট্রাম সালফের কাশির সময় বক্ষে, বিশেষত: বাম বক্ষে এত বেদনা হয় যে, কাশির সঙ্গে উঠিয়া বসিতে বাধ্য হয়, কিন্ত সাইলিসয়া তেমন কিছু নাই।
আর্দ্র আবহাওয়ায় পীড়ার বৃদ্ধি হইলে নেট্রাম সালফ উপকারী। আর্দ্র আবহাওয়ায়, স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বা ভিজা গৃহে বাস হেতু পীড়ার বৃদ্ধি, জলজ উদ্ভিদ ভক্ষণ জনিত পীড়া, জলাশয়ের নিকট বাসজনিত পীড়া হইলে নেট্রাম সালফই উপযুক্ত ঔষধ। কিন্ত সাইলিসিয়ায় অন্য লক্ষণ না থাকিলে শুধুমাত্র ঐ লক্ষণে উহা ব্যববৃত হইতে পারে না। নেট্রাম সালফে সঞ্চালনে সমস্ত লক্ষণেরই উপশ্রম, আর সাইলিসিয়ায় নড়াচড়ায় কাশির বৃদ্ধি হয়। সাইলিসিয়ায় সুইলেই প্রবল কাশি হয় সে জন্য উঠিয়া বসে। নেট্রাম সালফের বিছানায় উঠিয়া বসে, কিন্ত সেটা কাশির চোট সামলানোর জন্য। কাশির সময় বক্ষ ধরিয়া রাখে, বিশেষ করিয়া বেদনাক্রান্ত পার্শ্বের বাম বক্ষে বেদনা বেশী হয়। সাইলিসিয়ার কাশি রাত্রে শুইবার পর, পূর্ণিমায় সময় ও কথা বলিলে বৃদ্ধি পায়। আর নেট্রাম সালফের কাশি অতি সকাল বেলা ও আর্দ্র সন্ধ্যা বায়ূতে বৃদ্ধি পায়। সাইলিসিয়ার কাশি প্রথমে শুস্ক, পরে সরল, নেট্রামের কাশি প্রথ সরল। সাইলিসিয়াতে কোষ্ঠবদ্ধ ভাব, নেট্রামে উদরাময় ভাব।
রক্তসঞ্চালন যন্ত্র : হৃদকম্পন, অধিক বেড়াইলে বা বসিয়া থাকাকালে, রাত্রে ধমনী সমুহ দপদপ করে এবং নাড়ীর স্পন্দন হয়। সামান্য নড়চড়া করিলে হৃদস্পন্দন ও নাড়ী লুপ্ত হয়। ঘড়, পৃষ্ঠ ও অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ : ঘাড়ের বগলের ও গলার গ্রন্থিতে পূঁজজোৎপত্তি হয় অথবা কঠিন হইয়া থাকে। ঔ সকল স্থানের বা অন্য স্থানের কার্বংকল পীড়া। পূঁজযুক্ত ক্ষত। মেরুদণ্ডের বক্রতা, রিকেট পীড়া (ক্যাল ফস)। অস্থির কোমলতা। ঘাড় বা পৃষ্ঠে শীতল বায়ু লাগিয়া পীড়ার উৎপত্তি। ঘাড় টানিয়া ধরাসহ শির:পীড়া, গ্রন্থিস্ফীতি। রাত্রিতে কাঁদুড়ীতে বেদনা, ফ্লানেল বা গরম কাপড় জড়াইয়া রাখিলে আরাম বোধ। আঙ্গুল হাড়া, আঙ্গুলে শীঘ্র পুঁজ হয়। ইহা দ্বারা সত্বও পূঁজ বন্ধ হয় ও ক্ষত শুস্ক এবং নতুন নখ উৎপন্ন হয়। প্রথমাবস্থায় যদি ফেরাম ফস সহ ব্যবহার করা হয় তবে আর পূঁজোৎপত্তি হয় না। আঙ্গলের ও হাতের চর্ম ফাটা ফাটা। আঙ্গলের অগ্রভাগ শুস্ক হয়, আঙ্গুলের কাঠিন্য। হাত খুব দুর্বল, কোন বস্তু ধরিয়া রাখা যায় না।
শব্দ ব্যবচ্ছেদ কালীন আঙ্গুলি কাটিয়া গিয়া তথায় পূঁজোৎপত্তি ও স্ফীতি। নখ খসখসে, মলিন, হরিদ্রবর্ণ ও ভঙ্গুর। নখে ক্ষত, নখে সাদা দাগ। হস্তপদে তীক্ষ্ম স্নায়বিক বেদনা, কোমর হইতে পা পর্যন্ত তীক্ষ্ম সায়েটিকা বেদনা। হাঁটু যেন টানিয়া বা বাঁধিয়া রাখিয়াছে মনে হয়। কোমরে আক্ষেপিক ও টানিয়া ধরামত বেদনা জন্য উঠিয়া বসিতে পারে না। শুইয়া থাকিতে বাধ্য হয়। বেদনা এত প্রবল হয় যেন হাত পা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে বা পক্ষাঘাত গ্রাস্ত হইয়াছে। হিপজয়েন্টে পীড়ার প্রথমবস্থায় প্রয়োগ করিলে আর পূঁজোৎপত্তি হয় না। ফেরাম ফস সহ পর্যয়ক্রমে ব্যবহার করিতে হয়। পূজোৎপত্তি হইলে ক্যাল্কেরিয়া সালফ সহ পর্যয়ক্রমে ব্যবহারে শীঘ্র শুস্ক হয়। দুগন্ধযুক্ত পদঘর্ম, হঠাৎ ঘর্ম বন্ধ হইয়া পীড়া, চক্ষুর ছানি। হাত পা সর্বদা ঘর্মযুক্ত। পায়ের বৃদ্ধঙ্গুলির ছাল উঠিয়া যায়। পদতলে কড়া, তাহাতে বেদনা। গোড়ালি হইতে পায়ের তলা পা ভারবোধ, উঠিতে পারে না। অনেক দুর রাস্তা হাঁটিলে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও পা খেঁচিয়া ধরে। বসিয়া থাকিলে পদদ্বয় অবশ বোধ। বসিবার সময় হাঁটুর বেদনা ও নড়িলে হ্রাস।
হাত পায়ে যে কোন প্রকার ক্ষত হইতে গাঢ় হরিদ্রাবর্ণের পূঁজ নি:সরণ। ক্ষত খুব অভ্যন্তরে। কেরিজ সহ ক্ষত, বেদনা ও জ্বালা করে। গোড়ালিতে ক্ষত, শরীর ফ্যাকাশে বর্ণ হইলে পায়ে ক্ষত। টিবিয়া অস্থির উপর লালবর্ণ দাগ দাগ ও ইহাতে চুলকানি। হাঁটুর পুরাতন সাইনেভিয়া প্রদাহ। হাঁটুতে জল সঞ্চয় (ক্যাল ফস)। গোদ,পা জ্বালা (ক্যাল সালফ, নেট্রম মিউর, নেট্রাম সালফ)। সবিরাম জ্বরে জ্বর কালীন হস্তপদের শীতলতা।
স্নায়ু : অতিশয় কষ্টকার স্নায়ুশূল। প্রায়শ: রাত্রিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ঠান্ডা বা উত্তাপে কিছুপে কিছুতেই উপশ্রম হয় না। অনেক প্রকারের ঔষধের যে সকর স্নায়ুশূল আরোগ্য হইতে চায় না। স্নায়ুশূল মুখের ডানদিকে আক্রামণ করে। মাঝে মাঝে এই ঔষধের সহিত ম্যাগ ফস প্রদান করিতে হয়।
নার্ভাসনেস (12X 28X)এ শরীরের না স্থানে বেদনা, বেদনা ক্ষতের ন্যায় বোধ হয়। মেরুদÐের উত্তেজনা জন্য বেদনা, অতিশয় উত্তাপে আরাম বোধ। বেদনা স্থান শীতলবোধ বা আর্দ্রতায় লক্ষণ সহ হস্তপদের কম্পন। স্ত্রী সম্ভোগের পর সর্বদেহ আড়ষ্ট ভাব। হঠাৎ ঠান্ডা লাগে, বিশেষত: মাথা ও পা অনাবৃত রাখিলেই ঠান্ডা লাগে। মেরুদণ্ডের কোন পীড়ার সাথে পক্ষাঘাত থাকিলে ইহা উপযোগী।
ত্বক : চর্ম পীড়ার সহিত পদঘর্ম, বা পদঘর্ম বন্ধ হইয়া চর্মপীড়া। যে কোন স্থান হইতেই হউক, গাঢ় হরিদ্রা বর্ণের দুর্গন্ধজনক পূঁজস্রাব হইলে এবং অনেক সময় পূঁজের সহিত রক্ত মিশ্রিত থাকিলেও ইহা উপকারী। ব্রণ, চিররেল পীড়া, শিশুদের মস্তকের ক্ষত (ক্যাল সালফ), কুষ্ঠ, সামান্য আঘাতেই পীড়া, সর্বদেহের চুলকানি, মনে হয় যেন শরীরে পোকা চলিতেছে। ত্বকে বেদনা ও টাটানি। ত্বকের উপর লালবর্ণ দাগ দাগ অথবা জল বসন্তের ন্যায় বড় বড় ফোস্কা হয়। কার্বংকল, ব্রণ, ক্ষত, আঙ্গুল হাড়া প্রভৃতি পীড়া যখন চর্মের গভীরে হয় এবং তাহা হইতে গাঢ় হরিদ্রা বর্ণের পূঁজস্রাব হয় তখন ইহা উপকারী। ব্রণ আরোগ্যর পরও তথায় একটু কঠিন হইয়া থাকে। শরীরের স্থানে ব্রণ উৎপন্ন হয়, বিশেষত: বসন্তকালে। সামান্য আঘাতে ক্ষত এবং ক্ষত হইতে বেশ দেরী হয় এবং বেশী মাত্রায় পূঁজ নি:সৃত হয়। কুষ্ঠ পীড়া, নাসিকায় ক্ষত ও শরীরের স্থানে গুটলি গুটলি স্ফীতি এবং অম্ল বর্ণ দাগ। শিশুদের মস্তকের ক্ষতে দুগন্ধ জনক পূঁজস্রাব। পচাক্ষত, নালীক্ষত, ক্ষত হইতে পচা বা দুর্গন্ধজনক পূঁজ স্রাব। পচাক্ষত, নালীক্ষত হইতে পচা বা দুর্গন্ধজনক রক্ত মিশ্রিত পূঁজস্রাব। জলপূর্ণ ফোস্কা হইয়া তাহাতে পূঁজ হওয়া তাহাতে পূঁজ হওয়া। স্ফোটক, কার্বংকল ও সে জন্য কঠিন স্ফীতি। যে সকল স্ফোতি সহজে না ফাটিয়া ত্বক নিন্মে বৃদ্ধি পাইতে থাকে। মুখে ও গালে পূঁজযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষদ্র যন্ত্রায়দায় ব্রণ। একজিমা হইতে আঁশের ন্যায় ছাল উঠে। ক্ষতের অঙ্কুল সকল বড় ও ক্ষতের চতুরদিকে কঠিন হয়। ক্ষতের কিনারা সকল উচ্চ নীলাভ। ক্ষত হইতে সজজেই রক্ত নির্গত হয় ও ক্ষত শীতলবোধ হয়। ক্ষতের পূঁজ যে স্থানে লাগে তথায় নতুন ক্ষত হয়। ক্ষত সহজে আরোগ্য হইতে চায় না। গ্রন্থি স্ফীতি, বসন্ত পীড়ায় পূঁজোৎপত্তিকালীন ব্যবহার্য। অবিশুদ্ধ বীজে টীকা দেওয়া জন্য পীড়ার ইহার উপকারী। নখের চতুর্দিকে ও গোড়ায় ক্ষত, অথচ চর্ম স্বাভাবিক বোধ হয়।
টিসু : ঘর্মোৎপাদক গ্রন্থিও পূঁজোৎপত্তি। পদঘর্ম বন্ধ জন্য পীড়া। আঘাতের পর তাহাতে কোন প্রতিকার না হওয়া জন্য পূঁজোৎপত্তি। গণ্ডমালা ধাতুগ্রাস্ত ব্যাক্তিদের গ্রন্থির বিবৃদ্ধি। গ্রন্থি স্ফীতিতে কেলি মিউর ব্যবহারে যদি স্ফীতি না কমে তবে শীঘ্র পূঁজোৎপত্তি জন্য দেওয়া উচিত। গ্রন্থির পূঁজোৎপাদনের পর যখন পূঁজ গাঢ়, হরিদ্রাবর্ণ ও দুর্গন্ধজনক হয়। লিল্ফ্যাটিক গ্রন্থি স্ফীতি বা স্ফোটক হইবার পর নালী ক্ষত। অতিশয় কঠিন, প্রস্তরের ন্যায় কঠিন গ্রন্থি স্ফীতি। স্ফোটকে পূঁজ সৃষ্টির পর সহজেই রক্তস্রাব। পূঁজোৎপত্তির জন্য ইহা প্রধান ঔষধ। পূঁজোৎপত্তির পূর্বে কেলি মিউর প্রধান ঔষধ। উপদংশ পীড়ায় অধিক মাত্রায় পারদ সেবন জন্য শরীরে দাগ দাগ হইলে অথবা দোষ দুর করার জন্য ইহা উত্তম ঔষধ। অস্থিক্ষত, অস্থিতে নালী ক্ষত, অস্থির পচন (জেরিজ), অস্থিতে টাটানি বেদনা, অস্থিক্ষত, অস্থির কোমলাতা, অস্থি বাঁকিয়া যায়। খাদ্যদ্রব্য ভালভাবে পরিপাক না হওয়ার জন্য শরীর শীর্ণ টিকেট পীড়া।
স্ফোটকে ব্যবহৃত ঔষধ : দেহের যে কোন গ্ল্যাণ্ডের এবং টিসুতে প্রদাহ, স্ফীতি ও পূঁজ জন্মায়, তাহাতে সাইলিসিয়া সফলতার সহিত ব্যবহৃত হয়। কোমল বা কঠিন টিসু, পেরিষ্টিয়াম, অস্থি, গ্ল্যাণ্ড, ফসফুস, অন্ত্রপথে যে কোন স্থনে স্ফোটক, নালী ক্ষত বা যে কোন প্রকার ক্ষতই হোক না কেন ইহা দ্বারা আশাতিরিক্ত উপকার পাওয়া যায়। স্ফোটকদিতে পুঁজ সঞ্চয় করার যেমন ইহার ক্ষমতা আছে তেমনি স্ফোটকদি হইতে নি:সৃত পূঁজের পরিমাণ হ্রাস করিয়া ক্ষত শুকানোর জন্যও ইহা ব্যবহৃত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে লক্ষনুসারে কি কি ঔষধ ব্যবহার করা যায় তাহা এখানে বলা হয়েছে।
স্ফোটক, ব্রণ, কার্বংকল প্রভতির প্রদাহবস্থায় প্রদাহ নিবারণের জন্য ফেরাম ফস ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় ফেরাম পীড়া আরোগ্য হইয়া যায়। কিন্ত প্রদাহ কারার পরও যদি স্ফীতি বর্তমান থাকে তখন কেলি মিউর প্রদান করিলে রস রক্তদি শোষিত হইয়া সমস্ত উপসর্গাদিরই উপশ্রম হয়। আর যদি তাহা না হয় তবে সাইলিসিয়াই প্রয়োগ করিতে হইবে। দেহে সাইলিসিয়ার অভাব হেতু স্ফোটকাদিতে পূঁজ সৃষ্টি হইতে পারে না এবং সহাজে আরেগ্যও হয় না এই সময় যদি সাইলিসিয়া ব্যবহার করা হয় তবে অতি শীঘ্র স্ফোটকে পূঁজ নি:সৃত হইয়া শীঘ্রই ক্ষত স্থান শুস্ক করিয়া ফেলে। যতক্ষণ পর্যন্ত স্ফোটকাদিও চতুস্পাশের্^ও কঠিনতা দূর না হয় ততদিন পর্যন্ত ইহা ব্যবহার করিতে হয়।
সাইলিসিয়া ব্যবহারের পর সঞ্চিত রসাদি নি:সৃত হইয়া যাওয়ার পরও ক্ষত না শুকাইলে ক্যাল্কেরিয়া সালফের দরকার হয়। এই অবস্থায় সাইলিসিয়া দিলে অযথা সময় অপচয় হয়। বহুদিন যাবত কোনস্থান হইতে যদি দুর্গন্ধজনক পূঁজ নি:সৃত হইতে থাকে এবং কিছুতেই বন্ধ না হয় তবে সাইলিসিয়া ব্যবহারে তাহা আরোগ্য হয়। মনে রাখিতে হইবে সাইলিসিয়া পীড়ার তৃতীয়াবস্থায় ঔষধ। ফেরাম ও কেলি মউির ব্যবহারের পর এবং ক্যাল্কেরিয়া সালফের পূর্বে ইহা ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রথমাবস্থাতেই ফেরম ফসের সহিত এই ঔষধ পর্য্যায়ক্রমে ব্যবহারে স্ফোটক না পাকিয়া প্রথমাবস্থাতেই পীড়া আরোগ্য হইয়া যায়। আঙ্গুল হাড়ায় অনেক সময় ঐ প্রকারে ঔষধ দিলে পর্য্যায়ক্রমে ব্যবহারে স্ফোটক না পাকিয়া প্রথাবস্থাতেই পীড়া আরোগ্য হইয়া যায়। আঙ্গুল হাড়ায় অনেক সময় ঐ প্রকারের ঔষধ দিলে শীঘ্রই রোগ আরোগ্য হয়।
হরিদ্রা বর্ণ পূঁজ পাতলা হোক বা গাঢ় হোক দুর্গন্ধ থাকিলে সাইলিসিয়া। যদিও ক্যাল্কেরিয়া সালফের পূঁজ রক্তের ছিট থাকে। গভীর স্থানের পূঁজোৎপত্তিতে ইহা ভাল ঔষধ।
পূঁজোৎপত্তির জন্য 6X শক্তি ব্যবহার্য। স্ফোটকদিও চারিদিকে রস রক্তাদি যতক্ষণ জমা হইতে থাকে ততক্ষণ তাহা বাহির করিয়া দেওয়ার জন্য নিন্মশক্তিই শ্রেয়। কিন্ত পূঁজ সৃষ্টি হইয়া গেলে এবং স্ফোটকাদি বিদীর্ণ হইবার পর 12x ও 30X প্রভৃতি উচ্চ শক্তি ব্যবহার করা উচিত। পুরাতন পীড়ায় উচ্চ শক্তি দৈনিক ১ বার দেওয়াই উচিত। বাহ্য প্রয়োগের জন্য ইহার ৩ঢ চুর্ণ উষ্ণ জলে সহিত ব্যবহার করিতে হয়।
অস্থি : অস্থি পীড়ায় সাইলিসিয়া রোগীর আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা সহ্য হয় না। আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা বাতাস ও ঠাণ্ডা জল সহ্য হয় না। স্ক্রোফিউলস ধাতুর শিশুদের অস্থি পীড়ায় সাইলিসিয়া খুবই ভাল ঔষধ। শিশুদের মেরুদণ্ডের অস্থির বক্রতায় ইহা সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়। ক্ষত খুব অভ্যন্তরে বোধ হয়, অস্থিক্ষত সহ উহাতে জ্বালা বোধ। পাতলা দুর্গন্ধযুক্ত পূঁজ বা গাঢ় হরিদ্রাবর্ণ পূঁজ ও নি:সৃত হয়। ক্ষতের চরিধার কঠিন ও তাহাতে রক্ত মিশ্রিত পূঁজও থাকে। ক্ষতের পূঁজ যে স্থানে লাগে সে স্থানে ক্ষত হয়। অস্থির পচন, উহাতে টাটানি বেদনা থাকে। টিবিয়া অস্থির পীড়া।
নিদ্রা : মস্তকে রক্তধিক্য ও গরম হওয়া জন্য অনিদ্রা। বৃদ্ধদের অনিদ্রা ও ক্ষয়কাশ। যক্ষ্মা ক্রান্ত ব্যাক্তিদের রাত্রিকালীন অনিদ্রা। নিদ্রাবস্থায় দেহে খুব ঘর্ম হয়। রোগী নিদ্রাবস্থায় ভ্রমণ করে, বিশেষত: পূর্ণিমায় নৌকা ভ্রমণের স্বপ্ন দেখে। ডাকাত, চোর, জলাশয় ও বহু ভীতিপ্রদ স্বপ্ন দেখে। ঘুমের মধ্যে রোগী কথা বলে, নাক ডাকদেয় হাত পা ছোঁড়ে এবং স্বপ্ন দেখিয়া চমকাইয়া উঠে। সন্ধ্যাসময় নিদ্রা হয় কিন্ত মাঝ রাত্রির পর আর নিদ্রা হয় না।
জ্বর : যে কোন পীড়ায় পূঁজ হওয়ার সময় জ¦রে ইহা উপযোগীতার সহিত ব্যবহারিত হয়। পূঁজ জ্বর সহ পদতলে জ্বালা, পায়ে দুর্গন্ধজনক ঘর্ম। হিপজয়েন্টে পীড়ার সহিত জ্বর। সাইলিসিয়ার জ্বরে বিশেষত্ব এই যে রোগীর সারাদিন ধরিয়া শীত শীত ভাব থাকে।
ইহার জ্বরের প্রধান করণ হিসাবে পদঘর্ম বন্ধ হওয়াকে দায়ী করা যায়। যে কোন সময় জ্বর আসিতে পারে। বিকাল হইতে সারারাত্র, নিদ্রা যাওয়ার পর জ্বর, কখন যে আসে তাহা রোগী বলিতে পারে না। বেলা ১০টা হইতে রাত্রি ৮ট পর্যন্ত , মাঝ রাত হইতে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত, বেলা ১২টা হইতে ১টার মধ্যে শীতশূন্য জ্বর। পূর্ণিমার সময় জ্বর হইয়া ২/১ দিন থাকে। পূর্ণিমা, আমবস্যায়, শয়নে, মাথা খোলা রাখিলে ও শীতলতায় জ্বর বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণতায়, মস্তক ঢাকিয়া রাখিলে পীড়ার হ্রাস হয়।
শীতাবস্থায় পিপাসা থাকে না। নড়াচড়া করিলেই শীতবোধ হয়। সারাদিন যাবত শীতবোধ। গরম ঘরেও শীত কামে না। রোগী কিছুতেই অনাবৃত থাকিতে পারে না। দেহের উত্তাপ কমিয়া যায় অনেক। ভিতরে ভিতওর শীত বোধ। বিছানা হইতে হাত পা বাহির করিলে শীত বোধ। এই সময় খুব ক্ষধা থাকে। হাঁটু হইতে পায়ের তলা পযন্ত শীতল। নাক ঠাণ্ডা সন্ধ্যাকালে কাঁপাইয়া শীত।
উত্তাপাবস্থায় খুব তৃষ্ণা থাকে। এই অবস্থা বিকাল বেলা, সাঁঝে ও রাত্রে থাকে। অনেকক্ষণ উত্তাপ থাকে, মাথা উত্তপ্ত বেশী। মুখ লাল বর্ণ হইয়া যায়। বিকাল বেলা ও রাত্রিকালে যে জ্বর আসে, তাহাতে অতিশয় পিপাসা ও শ্বাসকষ্ট থাকে। জ্বরে কম্প না হইয়া সমস্ত দিনই উত্তাপ ভোগ করে। ঘর্মাবস্থায় খুব ঘাম দেয়। একটু পরিশ্রমেই ঘর্ম। সারা রাত্র দেহে প্রচুর ঘাম হয়। মাথায়, মুখে ও বুকে ঘাম বেশী হয়। পদদ্বয়ে দুর্গন্ধজনক ঘর্ম এই ঔষধের বিশেষ লক্ষণ। ইহার ঘামে খুবই দুর্গন্ধ থাকে, আবার অম্লযুক্ত ও থাকে। যক্ষাপীড়ায় অতিশয় দুর্বলতার সহিত নিশাঘর্ম থাকিলে ইহা অত্যুৎকৃষ্ট। রোগী খুবই দুর্বলতা অনুভব করে। নাড়ী প্রথমটা দ্রæত ও অনিয়মিত কিন্ত পরে ধীর গতি বিশিষ্ট হয়।
বৃদ্ধি : পুূঁজ সৃষ্টি করিতে ক্যাল্কেরিয়া সালফের সহিত ইহার তলনা করা হয়। পার্থক্য এই যে, সাইলিসিয়া পূঁজ সৃষ্টি করায় বা পূর্ণ পরিণতিতে নিয়া আসে। কিন্ত ক্যাল্কেরিয়া সালফ পূঁজ নিবারণ করিয়া ইহাকে আরোগ্য করে। সাইলিসিয়ার পূঁজে দুর্গন্ধ আছে, ক্যাল্কেরিয়া সালফের দুর্গন্ধ নাই। অশ্রস্রাবী গ্রন্থির নালীতে নেট্রাম মিউরের সহিত তুলনীয়। ক্যাল্কেরিয়া ফস ও কেলি মিউরের পর সাইলিসিয়া ব্যবহারিত হয়। স্ফোটক ও আঙ্গুল হাড়ায় কোন কোন স্থানে ফেরাম ফসের সহিত পর্য্যায়ক্রমে ইহা ব্যহারিত হয়।
উপশম : শির:পীড়া আহারকালীন হ্রাস, ইলেকট্রিসিটি ও ব্যাটারী ব্যবহারে, উত্তাপে বিশেষত: মাথায় কাপড় জড়াইলে, শীতল খাদ্যে।
সম্বন্ধ : পূঁজ সৃষ্টি করিতে ক্যাক্লেরিয়া সালফের সহিত ইহার তুলনা করা যায়। পার্থক্য এই যে, সাইলিসিয়া পূঁজ সৃষ্টি করায় বা পূর্ণ পরিণতিতে নিয়া আসে। কিন্ত ক্যাক্লেরিয়া সালফ পূঁজ নিবারণ করিয়া ইহাকে আরোগ্য করে। সাইলিসিয়ার পূঁজে দুর্গন্ধ আছে, ক্যাক্লেরিয়া সালফে দুর্গন্ধ নাই। অশ্রস্রাবী গ্রন্থির নালীতে নেট্রাম মিউরের সহিত তুলনীয়। ক্যাক্লেরিয়া ফস ও কেলি মিউরের পর সাইলিসিয়া ব্যবহৃত হয়। স্ফোটক ও আঙ্গল হাড়ায় কোন কোন স্থানে ফেরাম ফসের সহিত পর্যায়ক্রমে ইহা ব্যবহারিত হয়।
শক্তি : ডা: শুসলার 12X ব্যবহারের পরামর্শ দেন। পূঁজোৎপত্তিতে অবশ্য 6X ভাল। পূঁজ হইলে উচ্চক্রম। পুরাতন পীড়া 30X, 6X, 200X ব্যহহৃত হয় চক্ষু পীড়ায় 12X, নার্ভাসনেসে 12X, 28X জলপূর্ণ অবুদে 200X ।
সাইলিসয়া যে সকল পীড়ায় ব্যবহৃত হয়। :
রিকেট, নালীক্ষত, স্ফোটক, ব্রণ, অস্থি, পচন, স্তনের নালীক্ষত, বৃদ্ধঙ্গুলীর অগ্রভাগের প্রদাহ ও পূঁজ, কার্বংকল, ক্যান্সার, দাড়িতে ব্রণ ও চুলকানি, পূঁজোৎপত্তি, পদঘর্মবোধ জনিত পীড়া, অÐকোষে জল সঞ্চয়, চোয়ালের অস্থিক্ষত, চক্ষুপ্রদাহ, কোষ্ঠবদ্ধতা, কাশি, দুর্বলতা, বহুমুত্র, কর্ণপীড়া, শোথ, অসাড়ে মূত্রত্যাগ, অর্বুদ, পা জ্বালা, বাহ্যবস্তু নির্গত হওয়া, গ্রন্থি স্ফীতি, শির:পীড়া, অন্ত্রবৃদ্ধি, হিপ জয়েণ্ট পীড়া, গৃহত্যাগ জনিত দু:খ, হাঁটু সন্ধিতে জল সঞ্চয়, দুর্গন্ধ ঘর্ম, নখ পীড়া, স্নায়ুশূল, নাসিকার অগ্রভাগ রক্তবর্ণ, নিঙ্গাগ্র মুখ আবরণের ইরাপসান, পুরাতন বিউম্যাটিজম, স্বপ্নদোষ, প্রস্রাব নালীর ষ্ট্রীকচার, মূত্রধারণ ক্ষমতার হ্রাস, স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের আক্ষেপ, পারদ দোষ, নিবারণ, রক্তাল্পতা, একনি, গোড়ালি দুর্বল, গুহ্যদ্বার বিদারণ ও নালীক্ষত, কোমর দুর্বল, মস্তিস্ক শূন্যতা, গোদ প্রভৃতি নানা প্রকার পীড়ায় ইহা ব্যবহৃত হয়।
তুলনাযোগ্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ :
পালসেটিলার পুরাতন ক্ষেত্রে সাইলিসিয়া ব্যবহৃত হয়। অস্থির কোন উপসর্গে মার্ক সলের সাথে তুলনীয়। কিন্ত মার্কের পরে ইহা ব্যবহৃত হয় না। শির:পীড়ায় জেলসিমিয়াম, স্যাঙ্গুনেরিয়া ও স্পাইজিলিয়ার সাথে তুলনীয়। আঙ্গুলহাড়া ও নখ কোণ বৃদ্ধিতে সাইলিসিয়া ব্যবহারে ফল না হইলে গ্রাফাইটিস ব্যহার্য। গো জীজে টীকা দেওয়ার কুফলে সাধারণত: সাইলিসিয়া থুজা, কেলি মিউর, সালফার ও ম্যালেণ্ড্রিম ব্যবহৃত হয়। সাইলিসিয়ার পরিপুরক ঔষধ পালস, থুজা, এসিড ফ্লোর ও স্যানিকিউলা।
সেবন বিধি : প্রাপ্ত বয়স্কারা ৫টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার। অপ্রাপ্ত বয়স্করা ৩টি করে ট্যাবলেট দিনে ৩ অথবা ৪ বার কুসুম কুসম গরম পানির সহিত সেবন করতে হবে অথবা রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শে সেনব করুন।
বিষঘ্ন : মার্কুরিসয়াস।
সমাপ্ত
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এ ওয়েব সাইটের মুল উদ্দেশ্যে হচ্ছে স্বাস্থ্য সম্পের্ক কিছু দান করা বা তুলে ধরা। সাধারণ মনুষের উপকার হবে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ও ছাত্ররা উপকৃত হবেন। এ ওয়েব সাইটে থাকছে পুরুষ স্বাস্থ্য বা যৌনস্বাস্থ্য, গাইনি স্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, মাদার টিংচার, সিরাপ, বম্বিনেশন ঔষধ, বাইকেমিক ঔষধ, হোমিওপ্যাথিক বই, ইউনানি, হামদর্দ, হারবাল, ভেজষ, স্বাস্থ্য কথা ইত্যাদি। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।