হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এ হোমিওপ্যাথি ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এ হোমিওপ্যাথি ঔষধ কি তা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
হেপাটাইটিস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ভাইরাল হেপাটাইটিসের মধ্যে হেপাটাইটিস বি সবচেয়ে অন্যতম। কারো কারো ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে যকৃতের কার্যক্ষমতা হ্রাস,যকৃতের ক্যান্সার অথবা সিরোসিসও হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি কি?
হেপাটাইটিস বি একটি সংক্রামক রোগ। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যমে দেখা দেয় যা যকৃতে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। রক্ত, বীর্য অথবা শরীরের অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমেই এই রোগ ছড়ায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে যদিও এর সংক্রমণ ভালো হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। বর্তমান বিশ্বে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক ভাইরাস হচ্ছে “হেপাটাইটিস” এটি যত দ্রুত সংক্রমণ ঘটছে তার ভয়াবহতা এইডসের চেয়েও ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ নিয়ে গোটা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেপাটাইটিস অথবা লিভারের একিউট এবং ক্রনিক সংক্রমণের জন্য দায়ী লিভার ভাইরাস। এ গুলো হচ্ছে হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-ডি ও হেপাটাইটিস-ই।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে লিভারে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। সময়মতো এর চিকিৎসা না নিলে এই রোগ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস- বি মানেই কি মৃত্যু? না, তা কিন্তু একেবারেই নয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষ হেপাটাইটিস-বি-তে ভুগলে তাঁর লিভারে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা প্রবল মাত্রায় থাকে। তখন কিন্তু ক্যানসার থেকে বাঁচার সম্ভাবনা কম থাকে। সেই হিসাবে একদিক থেকে দেখতে গেলে হেপাটাইটিস-বি কোনো অবস্থাতেই ক্যানসার বা এইডস-এর চেয়ে কম ক্ষতিকারক নয়। তা ছাড়া আছে রোগীর শারীরিক ও মানসিক চাপ। সেই সঙ্গে অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক।
হেপাটাইটিস-বি ব্যপকতা সংক্রামণ :
বাংলাদেশে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের বাহক। তাদের বিভিন্ন সময়ে নানান জটিলতার নানান করণে লিভারের রোগ হয়ে থাকে। দেশের প্রায় ৩.৫% গর্ভবর্তী মায়েরা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এই ভাইরাস তাদের নবজাতকের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সাধারণত এইডস রোগের চেয়ে ১০০ ভাগ বেশী সংক্রাম করে থাকে। প্রতিদিন হেপাটাইটিস-বি আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হেপাটাইটিস-বি রোগের বিস্তার কি ভাবে ঘটে?
অনিরাপদ যৌন মিলন বা অবাধ যৌনতা, একই সিরিঞ্জ, সুঁই বারবার ব্যবহার করা, শরীরে উল্কি আঁকা, স্যালুনে ব্যবহারিত ক্ষুর, রেজার, ব্লেড, কাঁচি, হাসপাতালে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের পরিচর্যা, ডেন্টিষ্টের ব্যবহারিত যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত (অনিরাপদ) যন্ত্রপাতি, সিরিঞ্জ এ মাদক নেয়া, হেপাটাইটিস ‘বি’ বাহকের সিগারেট, লালা, আক্রান্তের রক্ত নেয়া, যদি মা হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমিত থাকেন তবে সে মায়ের বুকের বুকের দুধ পানে নবজাতকের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার বাবা-মা যেকোনো একজন আক্রান্ত থাকলে তাদের নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে।
মূলত দুইভাবে হেপাটাইটিস-বি মানব মানবদেহে বিস্তার ঘটে :
(ক) উলম্ব ভাবে বিস্তার।
(খ) আনুভূমিক ভাবে।
হেপাটাইটিস-বি কি ভাবে বিস্তার করে :
(১) রোগাক্রান্ত মা এর কাছে থেকে শিশু সংক্রমণ হয়।
(২) প্লাসেন্টা জরায়ু থেকে পৃথক হওয়ার সময়।
(৩) অ্যামনিওসেনটেসিস করা হলে।
(৪) জন্মের পরে ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের সাথে শিশুর ঘনিষ্ঠতায় বিস্তার ঘটে।
(৫) পরীক্ষাবিহীন রক্তের শরীরে নিলে।
(৬) ইনজেকশনের মাধ্যমে ও নেশার দ্রব্যাদি গ্রহণের সময়।
(৭) মেডিকেল ও ডেন্টাল চিকিৎসায় দূষিত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে।
(৮) ব্যক্তিগত জিনিস একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার করলে, যেমন- টুথ ব্রাশ, রেজার।
(৯) সমকামী ও উভয়কামী।
(১০) মানব শরীরের অন্যান্য তরল যেমন- লালা রস এবং ভ্যাজাইন্যাল তরল পদার্থ যখন রক্তের সংস্পর্শে আসলে।
(১১) হেপাটাইটিস-সি রোগীর সাথে যৌন মিলনে এই রোগ ছড়াতে পারে।
(১২) সামাজিক মেলামেশায় (হ্যান্ড শেক, কোলাকুলি) এই রোগ ছড়ায় না। এমনকি রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদি যেমন- গ্লাস, চামচ, জামা কাপড়ের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায় না।।
(১৩) শুধুমাত্র যে সমস্ত দ্রব্য রোগীর রক্তের সংস্পর্শে আসে যেমন- ক্ষুর, ব্লেড, রেজার, টুথব্রাশ, সূচ) এইগুলোর মাধ্যমেই এই রোগ ছড়াতে পারে।
হেপাটাইটিস-বি’ প্রকাশ কাল :
আক্রান্ত রোগীর কোন উপসর্গ বা লক্ষণ নাও থাকতে পারে। এই রোগের সুপ্তবস্থা (ভাইরাস সংক্রমন থেকে রোগের লক্ষণ পর্যন্ত) প্রায় ৪ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত প্রাকাশ পেতে সময় লাগে। এক্ষেত্রে ফ্লু-এর মত জ্বর, ক্লান্তিবোধ, শরীর টনটন করা, ব্যাথা, বমি ভাব এবং ক্ষুধামন্দা-এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
হেপাটাইটিস-বি’ এর লক্ষণ :
(১) দীর্ঘদিন যাবৎ শরীরের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
(২) যকৃৎ বড়ো হয়ে যাওয়া।
(৩) শরীরে যকৃতের স্থানে ব্যথা।
(৪) ক্ষুধামান্দ্য ও অজীর্ণ।
(৫) ওজন হ্রাস হয়ে যাওয়া।
(৬) মাথার চুল উঠে যাওয়া।
(৭) অবসাদ।
হেপাটাইটিস-বি’ রোগের ঝুঁকিতে কারা :
(ক) রোগাক্রান্ত মায়ের নবজাতকেরা।
(খ) ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণ।
(গ) আক্রান্তের পরিবারের ঘনিষ্ঠ জনেরা অথবা তার সঙ্গী বা সঙ্গীনী।
(ঘ) স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মী, যারা রক্তের সংস্পর্শে প্রায় আসেন, যেমন- শল্য চিকিৎসক, ডায়ালাইসিস ইউনিট ও রক্ত সঞ্চালন বিভাগের কর্মীরা, ডেন্টাল চিকিৎসক, সেবিকা এবং ধাত্রীগণ।
হেপাটাইটিস-বি’ রোগের প্রতিরোধ :
(১) যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করুন।
(২) খবার তালিকায় কাচা সালাদ, ফল-মূল বেশি রাখা ।
(৩) তেল-চর্বি যুক্ত খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
(৪) লাল মাংস খাবেন না।
(৬) লবণ বা সোডিয়াম সল্ট একেবারেই খাওয়া নিষিদ্ধ।
(৭) ভিটামিন বি, এন্টি-অক্সিডেন্ট যথা – বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার খবার তালিকায় রাখা।
(৮) প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটবেন বা ব্যায়াম করবেন।
(৯) দিনে একবেলার বেশি ভাত খাবেন না।
(১০) দুই বেলা রুটি খাবেন।
(১১) ধূমপান, মদ্যপান নিষিদ্ধ।
(১২) প্রচুর বিশ্রাম নিন।
(১৩) শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করুন।
মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, লক্ষণে উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়। লক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে ঔষধ ব্যবহার করবেন। হেপাটাইটিস-বি রোগে ওষুধ নিন্মে দেওয়া হলো।
(১) মার্ক-সল (Mercurius Sol)।
(২) নেট্রাম সালফ (Natrum Sulph)।
(৩) হাইড্রাসটিস ক্যানাডেনসিস (Hydrastis Canadensis)।
(৪) চেলিডোনিয়াম মেজাস (Chelidonium Majus)
(৫) কার্ডুয়াস-মেরিনাস (Carduus Marianus)
(৬) চিয়োন্যানথাস ভার্জিনিকা (Chionanthus virginica)।
(৭) কার্বো-ভেজ (Carbo_Veg)।
(৮) ডলিকস প্রুর (Dolichos Pruriens)।
(৯) চায়না অফ (China off)।
(১০) লাইকোপোডিয়াম (Lycopordium)।
(১১) নাক্সভমিকা (Nux Vomica)।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন।এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।