সিফিলিস রোগে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো সিফিলিস রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
সিফিলিস রোগ কি?
সিফিলিস হল এক ধরনের যৌণ-বাহিত সংক্রমনের মুল কারণ হলো একধরনের ব্যাক্টেরিয়া যার নাম হল Treponema pallidum। সিফিলিস এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের সংক্রমন হয় সেক্স যৌন মিলনের সময়। যদি কারও সিফিলিস ফুশকুড়ি থাকে তবে তার সাথে শারিরিক ভাবে যৌন মিলন হলেও সিফিলিস হতে পারে। আবার রক্ত আদান-প্রদান এর মাধ্যমেও সিফিলিস হতে পারে। এছড়াও একজন গর্ভবতী মহিলার সন্তানও সিফিলিস এ আংক্রান্ত হতে পারে। এ সমস্যাটিকে বলা হয় জন্মগত সিফিলিস।
সিফিলিস রোগ যেভাবে ছড়ায় : সিফিলিসে আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনিরাপদ যৌনমিলন, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তির রক্ত শরীরে গ্রহন, আক্রান্ত মা যে শিশুর জন্ম দেয় যেই শিশু আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে শারীরিক মিলনে থাকলে আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে অনেকক্ষণ চুমু খেলে, আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে, মনে রাখবেন এই রোগ কখনই খাবার পাত্র, চামচ, গামছা অথবা টাওয়েল, ন্যাপকিন, সুইমিং পুল, বাথটাব, কিংবা ব্যবহৃত জামাকাপড় দিয়ে ছড়ায় না।
সিফিলিস রোগের সুপ্তিকাল : সিফিলিসে আক্রান্ত হলে নয় থেকে নব্বই দিন পর্যন্ত কোন রোগ লক্ষণ প্রকাশ নাও হতে পারে। অর্থাৎ জীবাণু দেহে প্রবেশে পর রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে উপরেল্লিখিত সময় লাগতে পারে। তবে সাধারণত আক্রান্তর ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই বেশির ভাগ প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়।
সিফিলিসের শ্রেণীবিভাগ ও লক্ষণ : সিফিলিসকে মূলত দুভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- জন্মগত সিফিলিস অর্থাৎ আক্রান্ত মায়ের থেকে গর্ভাবস্থায় শিশুটি সিফিলি নিয়ে জন্ম হয় তবে যদি এ রোগে আক্রান্ত হয় জন্মগত সিফিলিস বলা হয়। আর অন্যটি হলো অর্জিত অর্থাৎ জন্মের সময় সে সিফিলিস রোগে আক্রান্ত ছিল না কিন্তু পরবর্তী সময় সে কোনোভাবে যদি এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে সেটাই হলো অর্জিত সিফিলিস। অর্জিত সিফিলিসকে আবার চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে সে গুলো হলো :
(ক) প্রাথমিক সিফিলিস।
(খ) সুপ্ত সিফিলিস।
(গ) তৃতীয় স্তর।
(ঘ) প্রান্তিক সিফিলিস।
প্রাথমিক সিফিলিস : প্রাথমিক সিফিলিসে যে ক্ষত পাওয়া যায় তাকে হান্টারের ক্ষত বলা হয়। কালজয়ী চিকিৎসক হান্টার এ ভয়াবহ জীবাণু স্বেচ্ছায় নিজ দেহে উপ্ত করে এই রোগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ইহার ফলে তার নামকরণেই এ ক্ষতের নাম করা হয় ইন্টারের ক্ষত, এই রোগ প্রাথমিক স্তরে ছোট গুটিকা বা কুড়ি আকারের সৃষ্টি হয়। ক্ষতটি সাধারণত যৌনাঙ্গের মুখে এবং পায়ুপথে দেখা যায়। ক্ষতটি সংখ্যায় সাধারণত একটি এবং বেদনামুক্ত হয়। যা থেকে প্রথম অবস্থায় রস নির্গত হতে থাকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ক্ষত শুকিয়ে যেতে পারে তবে তা আবার পুনরায় দেখা দিতে পারে। ক্ষত শুকিয়ে যাওয়া মানেই জীবাণুমুক্ত হওয়া নয়। নারীদের ক্ষেত্রে এই ক্ষত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞাত থেকে যায় কারণ বেশির ভাগ এ ক্ষত ব্যথামুক্ত হওয়ার কারণে যৌনের ক্ষত অনেক নারীর অজানা থেকে যায়।
দ্বিতীয় স্তর অথবা মাধ্যমিক সিফিলিস : প্রাথমিক ক্ষত শুরু হওয়ার ৬ থেকে ১.২ সপ্তাহ পরে সিফিলিসের দ্বিতীয় স্তর শুরু হয়। এই সময় ত্বকের ফুসকুড়ি যা তিলকার দাগ আকারে প্রাকাশ পায়। যা হাত ও পায়ের তালুতে নির্দিষ্টভাবে দেখা যায় তবে তাতে কোন চুলকানি থাকে না। পায়ু পার্শ্বস্থ এলাকায় ক্ষত দেখা যায় এই ক্ষত অত্যন্ত সংক্রামক। এই স্তরে শরীরের বিভিন্ন লথিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে উঠে কিন্তু তা বেদনায়দক থাকে না। শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে মেরুসজ্জা রসে পরিবর্তন ও মস্তিস্ক আবরণীতে প্রদান দেখা দিতে পারে।
সুপ্ত সিফিলিস : সুপ্ত অবস্থায় সিফিলিস সাধারণত ২ থেকে শুরু করে ৩০ বছর পর্যন্ত এমনকি সারাজীবন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। আর এ অবস্থা সৃষ্টি তখনই যখন এ রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা না হয়। তবে এ অবস্থায় কোন লক্ষণ থাকে না কাজেই রক্ত পরীক্ষা ছাড়া তা বোঝার কোন উপায় নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আকস্মিক রক্তে পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে।
তৃতীয় স্তর অথবা প্রাম্ভিক সিফিলিস : ৫ থেকে ১৫ বছর পর অচিকিৎসিত সিফলিসের মধ্যে থেকে চল্লিশ শতাংশ প্রাম্ভিক সিফলিস হিসেবে দেখা দেয়।
সিফিলিস রোগের জটিলতার কারণ কি কি : সিফিলিস আক্রমণের প্রাথমিক স্তরে এটি সংক্রমণের স্থানে আলসার তৈরি করে। ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে সময়ের সঙ্গে দেহের অনেক গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। আবার আনেক সময়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করণে ৩০ শতাংশ মেয়াদি সিফিলিস প্রাকৃতি ভাবেই ভালো হয়ে যায়। তবে মেয়াদি সুপ্ত অবস্থায় জীবনব্যাপী শরীরে থাকতে পারে যার সংখ্যাও ৩০ শতাংশে রকম নয়। এর বাইরেও ১৫ শতাংশ গামা হিসেবে দেখা দেয়। এক্ষত্রে রক্তনালী তথা ধমনীতে প্রদান এবং বদ্ধতা সর্বোপরি কোষ মৃত্যু মৃত্যু হয় যার ফলে স্থানটি ফুলে ওঠে সেটাই হলো গামা। এর বাইরও অত্যন্ত গুরুত্ববপূর্ণ জটিলতা হলো যেমন- হৃদযন্ত্রের সিফিলিস (১২.৫%) যার থেকে হৃদযন্ত্রের ও মস্তিস্কের নানান সমস্যা দেখা দেয় এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকতে পারে।
সিফিলিস রোগ প্রতিরোধ :
(১) যৌন সঙ্গীর সিফিলিস আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে।
(২) যদি সিফিলিস থাকলে অবশ্যই, জোর করে হলেও চিকিৎসা করান।
(৩) সিফিলিস আক্রান্তদের সাথে কোন ধরনের যৌন মিলন করা যাবেন না। প্রয়োজনে কনডম ব্যাবহার করেও না।
(৪) যৌন কর্মীদের কাছে যাওয়া যাবে না।
(৫) সিফিলিস রোগীকে ঘৃণা করবেন না, রোগকে ঘৃণা করুন।
(৬) সিফিলিস কোনক্রমেই পুষে রাখবেন না।
(৭) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না।
সিফিলিসের সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা :
VDRL (ভেনেরাল ডিজিজ রিসার্স ল্যাবরেটরি) পরীক্ষা।
TPHA (ট্রেপোনেমা প্যালিডাম হেমাগ্লুটিনেশন ।
সিফিলিস চিসিায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ : হোমিওপ্যাথি ওষুধ রোগ নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়। এটি লক্ষণ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র লক্ষ্য। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু সিফিলিস চিকিৎসা নয়, রোগের অন্তর্নিহিত কারণ ও স্বতন্ত্র প্রবণতা মোকাবেলায় সাহায্য করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিৎসার জন্য, রোগীকে একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
সিফিলিস চিকিৎসার সহায়ক ঔষধগুলো নিন্মে দেওয়া হলো :
(১) মার্ক সল (Merc Sol) : সিফিলিস রোগীর চিকিৎসায় প্রথম ওষুধ হচ্ছে মার্ক সল। সিফিলিসের দ্বিতীয় পর্যায়ে অধিকাংশ লক্ষণ মার্ক সলের অনুরূপ দেখা যায়। নরম ক্ষত (পযধহপৎবং) ও ব্যথা সহ জ্বর থাকে যা রাতে বৃদ্ধি পায়। এর সব ধরনের স্রাব দুর্গন্ধ যুক্ত এবং বেশি হয়। রাতে হাড়ের মধ্যে বিরক্তিকর ব্যথা করে।
(২) মার্ক কর্ক (Merc Cor) : ক্ষতস্থানের প্রান্ত অমসৃন থাকে, ক্ষতস্থান থেকে খুব পাতলা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসরিত হতে থাকে।
(৩) আর্সেনিক এ্যালব (Arsenic Album) : গঠনগত সিফিলিসের জন্য একটি প্রয়োজনীয় ওষুধ। এর ক্ষতের সঙ্গে তীব্র জ্বালা-যন্ত্রনা থাকে। অস্থিরতা সহ সকল সমস্যা মধ্য রাতের পর বৃদ্ধি পায়।
(৪) হিপার সালফার (Hepar Sulph) : ক্ষতস্থান খুবই স্পর্শকাতর। এতে জ্বালাসহ প্রান্তে হুলফুটানো ব্যথা করে। ক্ষত স্রাবে গন্ধ থাকবে এবং ক্ষতের চারপাশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুস্কুড়ি থাকে।
(৫) অরাম মিউর (Aurum Mur) : সিফিলিটিক গনোরিয়া, লিঙ্গের অগ্রভাগে এবং অন্ডকোষে ক্ষত (chancres), বাম কুঁচকিতে ক্ষত (bubo), এখানেও দ্বিতীয় পর্যায়ের সিফিলিস দেখা যায়। এটি আবার বংশগত কারণে শিশুদের সিফিলিস আক্রান্ত হয় ইত্যাদিতে অরাম মিউর ব্যবহার হয়।
(৬) অরাম মেটোলিকাম (Aurum Met) : দ্বিতীয় পর্যায়ের সিফিলিস, শিশুদের সিফিলিস, বিশেষ করে পারদ অপব্যবহার, চোখের চারপাশে অনেক ব্যথাসহ প্রদাহ. মনে হয় হাড়ে ব্যথা, নাকের হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি লক্ষণে অরাম মেটোলিকাম কার্যকরী।
(৭) কার্বো ভোজ (Carbo Veg) : ক্ষতস্থান অমসৃন, ধারালো, প্রান্তভাগ গর্ত, , অত্যন্ত ঝাঁঝালো দুরগন্ধযুক্ত, পাতলা স্রাব, প্রচÐ বেদনাদায়ক এবং ক্ষত হতে সহজে রক্ত ঝরে ইত্যাদি লক্ষণে কার্বো ভোজ কার্যকর।
(৮) ব্যাডাগা (Badiaga) : শিশুদের সিফিলিস, গ্রন্থিগুলি ফুলে শক্ত হয়ে যায়, বাম কুঁচকিতে শক্ত, অসমতল গুটি ও ক্ষত (নঁনড়), যাতে রাত্রে সেলাই করার মত অত্যন্ত ব্যথা করে ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
(৯) কার্বো এ্যানিমেল (Carbo Animalis) : গঠনগত অথবা তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিস, চামড়ায় তামাটে লাল বর্ণের ঘাঁ, বিশেষ করে মুখের গ্রন্থিগুলি শক্ত হয়, নাকে ক্ষত ইত্যাদিতে কার্যকরী।
(১০) ক্রিয়োজোটাম (Kreosote) : তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিস, হাড়ের গুরুতর ব্যাথা, রাতে বৃদ্ধি পায়, মাথায় চুল পড়ে যায় (ধষড়ঢ়বপরধ) সাথে তালুতে প্রচন্ড ব্যথা। সিফিলিস আক্রান্ত শিশুদের দাঁত অসমান খাঁজকাটা এবং সরু ও অনিয়মিত প্রান্ত থাকে ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।