সাদাস্রাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
আরোগ্য হোমিও হল এ আপনাকে স্বাগতম, এখানে আজকে লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব কি, সাদাস্রাবের কারণ ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নাম ও তাদের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা কররো। চলেন কথা না বাড়িয়ে মুল আলোচনায় যায়। তবে বলে রাখি লিউকোরিয়া (Leucorrhoea) বা সাদাস্রাব হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যন্ত কার্যকর ঔষধ রয়েছে।
সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া কেন হয়?
নারীদের যোনিদ্বার হলুদ বা দুধের মত যে স্রাব বের হয়, বা জরায়ুর শ্লৈষ্মিক আবরণীর অভ্যন্তর অথবা জরায়ু মুখ থেকে একপ্রকার অনিয়মিত শ্লেষ্মা, রস, পূঁজ প্রভৃতি যে স্রাব নির্গত হয়, সেই স্রাবকে লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব বলে। এটা একটা মেয়েদের যৌন উপসর্গ বলা হয়। সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়া প্রথম নিঃসরণের সময় সাদা থাকে, তাই একে শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাব, ইংরেজিতে Leucorrhoea (লিউকোরিয়া) বলা হয়। পরে এটা হরিদ্রাভ, সবুজাভ বা মিশ্রিত রংয়ের হয়ে থাকে। প্রযাপ্ত পরিমাণে শ্বেত কণিকা থাকে বলে একে সাদা দেখায়। এটি অনুত্তেজক হতে পারে আবার বিদাহী উত্তেজকও হতে পারে। এছাড়াও অনিয়মিত ঋতু, জরায়ূর স্থানচ্যুতি, হস্তমৈথুন, অতিরিক্ত পরিশ্রম, আলস্যতা, স্বাস্হ্য ভঙ্গ, ছোট ছোট ক্রিমি ইত্যাদি কারনে শ্বেত প্রদর রোগ হয়ে থাকে।
সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়ার কারণ :
ক) স্ক্রফুলা বা গণ্ডমালা ধাতু নারী শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুকে এর পূর্ববর্তী কারণ হিসেবে গণ্য হয়।
খ) গণোরিয়া বা প্রমেহ রোগ, গণোরিয়া জীবাণু দ্বারা সার্ভিক্স বা ভ্যাজাইনা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
গ) ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস নামের জীবাণু দ্বারা ভ্যাজাইনা আক্রান্ত হয়ে থাকে। জননযন্ত্রে নানা জীবাণু দূষণের কারণেও এটা হতে পারে।
ঘ) সাধারণত গর্ভস্রাব বা প্রসবের পর জরায়ু দূষিত হয়ে থাকে।
ঙ) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব বা উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এর প্রধান কারন।
চ) শরীরের বা জরায়ুর অসুস্থতা যথা রক্তহীনতা, যক্ষা, ক্রণিক নেফ্রাইটিস, ক্রণিক প্যাসিভ কনজেশসন প্রভৃতি কারণে হয়।
ছ) ঋতুকালে তলপেটে ঠাণ্ডা লাগা বা অন্য কোন কারণে জননেন্দ্রিয়ের প্রদাহ হতে পারে।
জ) জরায়ু মুখে অথবা প্রসব পথে ক্যান্সার, গর্মির ঘা, টিউমার বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়া।
ঝ) অজীর্ণ, আমাশয়, পুরাতন ম্যালেরিয়া জ্বর, কালাজ্বর, যক্ষা প্রভৃতি রোগে স্বাস্থ্যভঙ্গ।।
ঞ) যোনি পথে ক্ষুদ্র কৃমির উপদ্রব।
ট) হস্তমৈথুন, অতিরিক্ত রতিক্রিয়া, পুনঃ পুনঃ গর্ভধারণ অথবা পুনঃ পুনঃ গর্ভস্রাব হয়।
সাদাস্রাব বা লিউকোরিয়ার লক্ষণ :
নারীর যৌনিদ্বর দিয়ে বেশি পরিমাণ নিঃসরণ কারণে পরনের কাপড়, পেটিকোট, পাজামা বা প্যান্টি বেশি ভিজে যায়। স্রাব নিঃসরণের সাথে যোনিপথ ও আশেপাশের অংশ চুলকায়। নিঃসরণের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়। নিঃসরণ স্বচ্ছ সাদা, তরল ও পিচ্ছিলের পরিবর্তে বাদামী, সবুজ, হলুদ বা ঘন সাদা থকথকে হয়। ফেনাযুক্তসাদা বা চাল ধোয়া পানির মতো তরল পদার্থ বের হতে থাকে। নিন্নে আরও বিস্তারিত দেওয়া হলো।
১/ জরায়ু থেকে অনিয়মিত ভাবে সাদা স্রাব হয় বা ডিমের শ্বেতাংশের মতো স্রাব বের হতে থাকে।
২/ মাঝে মাঝে লালচে স্রাব বা দুই এক ফোঁটা রক্ত বের হয়।
৩/ সাধারণত ইনফেকশন থাকলে যোনির চুলকানি হয়।
৪/ প্রস্রাব খুব ঘন ঘন হয় ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থাকে। মূত্রনালীর প্রদাহ।
৫/ সাদা স্রাব সাধারণত ঋতুর পূর্বে বা পরে দেখা দেয়।
৬/ কোমরে বেদনা, তলপেট ভারী, রোগি ক্রমে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে।
৭/ রোগীর ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্ল, হৃদস্পন্দন প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়।
৮/ মাথাধরা ও মাথাব্যথা থাকে।
৯। যোনি থেকে নির্গত সাদান্রাব ঝাঁঝালো ও হাজাকর হয়। স্রাববগুলি যেখানে লাগে সে স্থানটি হেজে যায়।
১০/ স্রাব অস্বচ্ছ, যন্ত্রণাদায়ক হয়। যোনি মধ্যে উষ্ণতা এবং সংকোচন বোধ করে।
সাদাস্রাবে কারণে রোগীর জটিলতা :
অতিরিক্ত সাদাস্রাব বের হবার কারণে রোগীর শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও আমিষ বের করে দেয়। এ সময়ে পুষ্টি, বিশ্রাম ও সচেতনতার অভাবে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক সময় ক্ষয় হতে শুরু করে। এ ধরনের উপসর্গ শুধু অস্বস্তি তৈরি করে না বরং বিভিন্ন রোগেরও লক্ষণ বা উপসর্গ, বিশেষ করে জীবাণু সংক্রমণ। এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচ্য।
সাদাস্রাব প্রতিকার :
রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিশেষ করে নিরাপদ পানি ব্যবহার, মাসিকের সময় পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় ও প্যাড ব্যবহার করতে হবে, প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর অবশ্যই তা পরিবর্তন ও জীবাণুমক্ত করতে হবে। মাসিকের পর ব্যবহার্য কাপড় পুনরায় ব্যবহার না করা ভালো তবে করতে হলে তা গরম পানিতে জীবাণুমুক্ত করে ভালো করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করুণ।
সাদাস্রাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
Alumina, Asoka, Borax, Calcaria Carb,Calcarea Phos, Caulophyllum, Kreosote, Kali Mur, Merc Sol, Medo, Pulsatilla, Sepia, Syphilinum।
রোগীর লক্ষনের সাথে ঔষধের লক্ষন মিলিয়ে একটি ঔষধ সেবন করলে এ রোগ সম্পূর্ন আরোগ্য করা সম্ভব। তবে ঔষধের মাত্রা ও শক্তি জেনেই ঔষধ ব্যবহার করা উচিৎ।
রোগী প্রতি পরামর্শ :
মেয়েদের পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন আমিষ জাতীয় খাবার খান যেমন – মাছ, মাংস, ডিম, খিচুড়ি, ডাল ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খান, এছাড়াও শাকসব্জি, ফলমূল বিশেষ করে টকফল এবং প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার মানে দামি খাবার নয় বরং সহজ প্রাপ্য ও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ খাবার। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা সুঁই বা এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনকালে একটু বেশি পুষ্টিকর খাবার যেমন- দুধ, দৈ, ছানা, পায়েস, সেমাই ও খিচুড়ি খেতে পারেন।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।