শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মেয়েদের শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা তা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
(ক) মহিলাদের শ্বেতপ্রদর বা সাদা স্রাব কি ?
শ্বেতপ্রদর বা সাদা স্রাব অর্থ হলেঅ যোনির স্বাভাবিক স্রাব। তাতে রক্ত থাকেনা, সংক্রমন জনিত কারণে কোন কটু গন্ধ থাকেনা, যোনিপথে বা প্রজনন অঙ্গেঁ কোনো চুলকানি বা অস্বস্তি থাকেনা। এই স্রাবে অন্তর্বাস ভিজে যায় এবং তা শুকালে দাগ লেগে থাকে। এই স্রাব স্বাভাবিক এবং এটা কোন রোগজনিত কারণে নয়- তাই এর জন্য কোনও চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই।
(খ) সাদাস্রাব বা শ্বেতপ্রদর :
শ্বেতস্রাব বা সাদাস্রাব কোন রোগ নয় এবং এটি শরীরের কোন ক্ষতিও করে না। সাধারণত ইহার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলেই একে রোগের পর্যায়ে ধরা হয়। সাধারণত যে সবা নারী স্থলতা (মোটা), অলস স্বভাব, অন্যকোন যৌনরোগ, শারীরিক ত্রুটি, নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন স্বভাব, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের রোগ যে সব মহিলার স্বামী দূর দেশে থাকেন, এসব মহিলাদের মধ্যে সাদাস্রাবের সমস্যা বেশী হয়ে থাকে। এই সাদাস্রাবের রঙ সাদা, হলদে বা সবুজও হতে পারে। হতে পারে পাতলা অথবা আঠালো ও গাড়ো। আবার কারো কারো স্রাব এতো ঝাঝালো হয় যে, যোনীমুখে ঘা হয়ে যায়। জরায়ু নাড়ি ডিম্বাশয় ওভারি ইত্যাদির রোগের কারণে স্বেতপ্রদর জটিল আকার ধারণ করে। যোনির এই অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাবের ব্যাপারটা এক এক মহিলার এক এক রকম হতে পারে। আবার কোনও মহিলা অল্প স্রাবেই মনে করেন এরকম কেন হচ্ছে, এটা তো স্বাভাবিক নয়। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত স্রাবেও নির্বিকার হয়ে যান। অনেকে মনে করেন সাদা¯্রাবের জন্যই তার স্বাস্থ্যখারাপ হচ্ছে। সাধারণত কোন মহিলার স্বাস্থ্য খারাপ হলে তার স্রাব বেশি হতে পারে। কোন কোন মহিলা ভাবেন এটি কি ঠিক কোনও যৌন রোগ না ক্যানসার? মনে আশঙ্কা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন।
(গ) শ্বেতপ্রদর বা সাদা স্রাবের কারণ :
নারীর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন না কোন সময়ে অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাব হতে পারে। বয়ঃসন্ধির পর নারীর চাইন্ড বেয়ারিং এজ এ অর্থাৎ বাচ্চা হতে পারে এমন বয়সে ১৫ থেকে ৪৪ যোনির দেওয়াল পুরু হয়ে থাকে। এখানে কোষের স্তর তার শরীরে স্ত্রী হরমোনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। যোনিতে এক ধরনের ব্যাসিলাই অথবা জীবানু স্বাভাবিক ভাবে বসবাস করে। এরা যোনির দেওয়াল থেকে ঝরে পড়া কোষের মধ্যকার গ্লাইকোজনকে ল্যাকটিক অ্যাসিড যৌনীর পি.এইচ ঠিক রাখে এবং এই কারণে মেয়েদের যোনির এক স্বাভাবিক সংরক্ষণ নিরোধক ক্ষমতা থাকে। কোন কোন কন্যা শিশুর জন্মের প্রথম দশদিনে সাদা স্রাব দেখা দেয়। কারণ মায়ের শরীরে অতিরিক্ত স্ত্রী হরমোন থাকে, তার প্রভাবেই এমন হতে পারে। বয়ঃসন্ধিতে প্রজনন অঙ্গেঁ অর্থাৎ ইউটেরাস, ওভারি ও ভ্যাজাইনায় অতিরিক্ত রক্ত চলাচলের জন্য সাদাস্রাব শ্বেতপ্রদর হয়। মাসিক শুরু হওয়ার দু’তিন দিন আগে শে^দপ্রদর বা সাদাস্রাব হতে পারে। তাছাড়া ভিউলেশন বা ডিম্বানু বের হওয়ার সময় সাধারণত মাসিকের ১৪ দিনের মাথায় সাদা স্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক। যৌন উত্তেজনা বা অতিরিক্ত আবেগের করণেও সাদা স্রাব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেনের আধিক্যের জন্য লিউকেরিয়া হয়ে থাকে। ডেলিভারির পর দেড় মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত সাদা স্রাব হওয়াটা স্বাভাবিক। বয়ঃসন্ধির আগে অথবা মেনোপজের পর যোনির সংক্রমন রোধের স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়। তখন সংক্রমণ হওয়া সহজ। যোনির এই ক্ষরণ-স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনের অশান্তি ও মানসিক কারণে এ সাদাস্রাব বাড়তে পারে। কেচোকৃমির কারণ এ স্রাব বাড়তে পারে। এছাড়া শরীরে স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে পোশাক ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে না নিলে। পারিপাশ্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকলে সংক্রমণ হয়ে বেশি স্রাব হওয়া আশ্চর্য নয়। হস্তমৈথুন বা ম্যাস্টারবেশনও এর আর একটি কারণ হতে পারে। এছাড়াও যোনিতে-ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমণ হতে পারে। সংক্রমণ হলে যৌনাঙ্গে চুলকানি থাকে । ডায়াবেটিস রোগ থাকলে, দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবনের কারণে এই সংক্রমনের সম্ভাবনা বাড়ে। সাদা স্রাব বা শ্বেতপ্রদরের আরও কারণ হিসাবে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, টিউবারফিউলোসিস ইত্যাদির জন্য প্রজনন অঙ্গেঁর ইনফেকশন, তলপেটের প্রদাহ, জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয় ।
(১) প্রধান কারন হল ইনফেকশন : মহিলাদের জরায়ু “ওপেন অরগ্যান” উন্মুক্ত অংগ গুলোর মধ্যে এটি একটি। যেহেতু আপনার জরায়ু উন্মুক্ত থাকে, তাই যে কোন ভাবে এইখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
(২) মলদ্বার থেকে জীবানু আসিয়া খুব সহজেই জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে।
(৩) যৌন মিলনের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। ট্রাইকোমানো এবং মোনালিয়া এই দু’টি ইনফেকশন যৌন রোগের জীবানু বহনকারী পুরুষের মাধ্যমে স্ত্রীলোকদের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
(৪) মোনালিয়া জীবানু দ্বারা আক্রান্ত জরায়ুতে চুলকানি হয় ও ব্যথা করে। ঘন হলুদের মত স্রাব হয়ে থাকে।
(৫) ট্রাইকোমানো জীবানু দ্বরা আক্রান্ত জরায়ুতে জ্বালাভাব থাকে ও চুলকানি হয়, জরায়ু একটু ফুলিয়া যায়, লালচে হয়ে যায়। ফেনাটে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হয়।
(৬) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবের কারনে এ রোগ হতে পারে।
(৭) জম্ম নিরোধক বড়ি খাওয়ার ফলে এই রোগ হতে পারে।
(৮) ঋতুস্রাবের পরবর্তী প্রযায়ে গর্ভপাত করালে, ইত্যাদি কারনে হতে পারে।
(৯) মহিলাদের মাসিক বা ঋতুচক্র আরম্ভ হলে অনেকে ময়লা অপরিষ্কার নেকরা বা কাপড় কিংবা অপরিষ্কার পেন্টি ব্যবহার করে থাকেন। যার কারনে জরায়ুতে ইনফেকশান হয়ে এই রোগ হতে পারে।
(১০) মানসিক রোগ হতেও লিকোরিয়া বা সাদা স্রাব রোগ হতে পারে।
(১০) শরীরের রক্তহীনতা, ভিটামিনের অভাবে এই রোগ হতে পারে
(১১) বৃদ্ধ বয়সে শরীরের চামড়া শুকাইয়া যায়, কুচকাইয়া যায়। সে সময় জরায়ু শুকাইয়া গেলেও এই রোগ হতে পারে।
(ঘ) শ্বেতপ্রদর বা সাদাস্রাবের লক্ষণ :
বেশি পরিমাণ স্রাব নিঃসরণে পরনের কাপড়, পেটিকোট, পাজামা বা প্যান্টি বেশি ভিজে যায়। নিঃসরণের সাথে যোনিপথের আশেপাশের অংশ চুলকায়। স্রাব নিঃসরণের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়। নিঃসরণ স্রাব সাদা স্বচ্ছ তরল ও পিচ্ছিলের পরিবর্তে বাদামী, সবুজ, হলুদ বা ঘন সাদা থকথকে স্রাব হয়। ফেনাযুক্তসাদা বা চাল ধোয়া পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়।
(ঙ) শ্বেতপ্রদর বা সাদা স্রাবের জটিলতা :
সাদাস্রাব শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও আমিষ বের করে দেয়। এ সময়ে রোগীর পুষ্টি, বিশ্রাম ও সচেতনতার অভাবে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক সময় ক্ষয় হতে শুরু করে। এ ধরনের রোগে শুধু অস্বস্তি তৈরি করে না বরং বিভিন্ন রোগেরও উপসর্গ। বিশেষ করে জীবাণু সংক্রমণ এর জন্য দায়ী। এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
(চ) সাদাস্রাব বা শ্বেতপ্রদর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ :
(১) পালসেটিলা (Pulsatilla)|
(২) সিপিয়া (Sepia)|
(৩) বোরাক্স (Borax)|
(৪) ক্যালকেরিয়া কার্ব (Calcaria Carb)|
(৫) কলোফাইলাম (Caulophyllum)।
(৬) এলুমিনা (Alumina)।
(৭) ক্রিয়োজোট (Kreosote)।
(৮) জোনোসিয়া অশোকা (Jonosia Asoka)।
(৯) ক্যালি মিউর (Kali Mur)|
(১০) ক্যালকেরিয়া ফস (Calcarea Phos)।
(১১) সিফিলিনাম (Syphilinum)।
(১২) মার্ক সল (Merc Sol)।
(১৩) মোডোরিনাম (Medorrhinum)|
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবহৃত ঔষধের লক্ষণ ভিত্তিক আলোচনা : রাগীর লক্ষনের সাথে ঔষধের লক্ষন মিলিয়ে তবেই একটি ঔষধ সেবন করলে এ রোগ সম্পূর্ন আরোগ্য হয়। তবে ঔষধের মাত্রা ও শক্তি জেনে ব্যবহার করবেন।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।