শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয়?

আরোগ্য হোমিও হল / ১৭৬ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১:২২ অপরাহ্ন
মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয়

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয়?
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো একজন মহিলার পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।

তলপেটে ব্যথা মহিলাদের মাসিক অথবা ঋতুস্রাবের সময় সবচেয়ে বেশি ভোগায়। খুব কম মহিলাই আছেন যাদের একবারও এই পেট ব্যথা হয়নি। কিন্তু পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয়, ইহার কারণই বা কি? আর এই ব্যথা কতটুকু পর্যন্ত হওয়া স্বাভাবিক? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা হয় জরায়ুতে সংকোচনের কারণে, পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঠিক আগে এই ব্যথা হয়। পিরিয়ডের সময় তলপেটে ব্যথা হওয়া তাই খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ব্যথা খুব তীব্র হতে পারে। এর পেছনের কারণগুলো চলুন জেনে যাক।
মাসিক বা পিরিয়ডের সময় জরায়ুর সংকোচন হয় প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক হরমোনের মাধ্যমে। যে সব নারীর শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা বেশি তাদের তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়। আবার কোনো কোনো মহিলার স্পষ্ট কারণ ছাড়াই এই তীব্র ব্যথা হয়। তবে অনেকের এই গুরুতর পিরিয়ডের ব্যথা অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।

যেসব কারণে তীব্র মাসিকের ব্যথা হয়, সেগুলো হলো :
(১) এন্ডোমেট্রিওসিস : এন্ডোমেট্রিওসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। যেখানে জরায়ুর কোষগুলো জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়। এটা সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো কোমর ও তলপেটে ব্যথা (পেলভিক পেইন)। এর সাথে হতে পারে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষয় বা রক্ত¯্রাব, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড হয়, দুটো মাসিকের মাঝে রক্তপাতসহ পেটে ব্যথা, সহবাসের সময় ব্যথা, এবং গর্ভধারণেরও সমস্যা।

(২) পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) : সন্তানধারণে সক্ষম মহিলাদেও প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন (PCOS) নামক হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে রোগীর শরীরে এন্ড্রোজেনের (পুরুষদের হরমোন) উচ্চ মাত্রা ও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে দেখা যায়। মাসিকে খুব ভারী রক্তক্ষয়, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড হয়, মুখ এবং শরীরের অতিরিক্ত চুল, ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমানোর সমস্যা, ব্রণ, চুল পাতলা হওয়া অথবা চুল পড়া, ত্বকের কালো দাগ, বিশেষ করে ঘাড় ও কুঁচকির অংশে কালো দাগ হলো (PCOS) -এর লক্ষণ।

(৩) ফাইব্রয়েড : রোগীনির জরায়ুর ভিতরের মায়োমেট্রিয়াম নামক জায়গায় বীজের মতো ছোটো থেকে শুরু করে বৃহদাকার ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। লক্ষণ ছাড়াই এক বা একাধিক ফাইব্রয়েড হতে পারে। তবে উপসর্গ দেখা দিলে, সে গুলোর ধরণ ও তীব্রতা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের সংখ্যা উপর, তাদের আকার এবং অবস্থানের ওপর। তলপেটে তীব্র ব্যথা ছাড়াও ফাইব্রয়েডের কারণে সাধারণত কোমরে ব্যথা, পিঠ ব্যথা, পা ব্যথা, মাসিকে ভারী রক্ত¯্রাব বা রক্তক্ষয়, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড স্থায়ী হতে পারে।

(৪) পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) : পিআইডি হলো মহিলার প্রজনন অঙ্গে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। এটি সাধারণত যৌনমিলনের কারণে এটি একটি সংক্রমিত রোগ যেমন -ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এই রোগ। কোমর ব্যথা হওয়া এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। যৌনমিলনে সময় ব্যথা, যৌনমিলনের সময় বা পরে রক্তপাত হয়, দুর্গন্ধযুক্ত যোনি সাদাস্রাব, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা পোড়া করে, জ্বর, মাসিক হওয়ার আগে অথবা পরে ছোপ ছোপ রক্ত পড়া–এসবই পিআইডির আরও কিছু লক্ষণ।

(৫) সার্ভাইকাল স্টেনোসিস : সারভাইকাল স্টেনোসিস, যাহার অর্থ যোনিপথ বন্ধ। এতে আপনার সার্ভিক্স বা যোনিপথ সরু অথবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। কোন কোন নারী সারভাইকাল স্টেনোসিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। আবার কারো কারো বয়সের সাথেও এই অবস্থা তৈরি হতে পারে। এই সব রোগীদের শরীর থেকে ঋতুস্রাবের রক্ত বের হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যাহার কারণে মাসিক খুব হালকা অথবা অনিয়মিত হয়। সারভাইকাল স্টেনোসিসের কারণে প্রজনন সমস্যাও দেখা দেয় ।

(৬) অ্যাডেনোমায়োসিস: অ্যাডেনোমায়োসিসের করণে জরায়ু ফুলে ওঠে। এই ক্ষেত্রে সব সময় উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। তবে এই সমস্যার কারণে আপনার তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন যা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং সেই সাথে মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত বা বেশি দিন মাসিক হতে পারে।

(৭) জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি (IUD : ওটউ হলো একটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যা আপনার জরায়ুতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ওটউ পাওয়া যায়, কতোগুলো ওটউটে হরমোন থাকে আবার কিছু ওটউ হরমোন-মুক্ত পাওয়া যায়। তবে ওটউ সম্পূর্ণ নিরাপদ, কিন্তু মাঝে মাঝে এটি আবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে তীব্র মাসিকের ব্যথা, অনিয়মিত মাসিক অথবা মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত। আইইউডি প্রবেশ করানোর সময় আপনার জরায়ুতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার ঝুঁকিও রয়েছে, যাহার ফলে পিআইডি হতে পারে আবার কখনো কখনো আইইউডি আবার সরে যেতে পারে। এসব কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে “মাসিকের সাথে ব্যথা হবেই, তীব্র হলেও তা সহ্য করে নিতে হবে” তবে এই মন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসাটা খুব জরুরি। মহিলার প্রজনন স্বাস্থ্য তার নিজের জন্য, তার সন্তান এবং সর্বোপরি তার পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাসিক বা পিরিয়ডের সময় ব্যথা যদি প্রচন্ড বেশি হয় এবং তা যদি নিয়মিত হতে থাকে তবে অবশ্যই আমি বলবো দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যতœবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev