বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধ কি তা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধ। ঋতুকালে স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ে রক্তস্রাবসহ তলপেটে ও কোমরে কষ্টকর ব্যথা থাকলে তাকে কষ্টরজ বা ঋতুশূল অথবা বাধক বলে।
বাধক বেদনা অথবা রজঃকষ্ট (Dysmenorrhoea) : ঋতুকালে স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের যান্ত্রিক বা ক্রিয়া বিকৃতির বা স্নায়ুবিক কারণে যদি আপনার অল্প রক্তস্রাবসহ তলপেটে ও কোমরে কষ্টকর ব্যথা করে তাকে কষ্টরজ বা ঋতুশূল এক কথায় বাধক বেদনা বলে। দেহ-রোগতত্বের উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা য়েছে। একটি হলো প্রাথমিক বাধক বেদনা কৈশোরে রজঃচক্র শুরুতেই দেখা দেয়। এর সাথে তলপেটের কোনো রোগের সাথে সম্পর্ক থাকে না। এটি অতিরিক্ত প্রোষ্টাগ্লান্ডিন এর কারণেই য়ে থাকে। দ্বিতীয় বাধক বেদনা খুব বিরক্তিকর, এটির সাথে অবশ্যই নারীর তলপেটের বিভিন্ন সমস্যা সম্পৃক্ত থাকে যা কৈশোরে হয় না। এটি জরায়ু, ডিম্বাশয় নালী এবং ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন রোগ ও বিকৃতির কারণেই হয়।
বাধক বেদনা প্রকারভেদঃ
রোগীর ধাতু প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বাধক বেদনাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন –
(ক) রক্তাধিক্য জনিত বাধক (Congestive dysmenorrhoea)|
(খ) সংকোচন জনিত বাধক (Spasmodic dysmenorrhoea)|
(গ) ঝিল্লীযুক্ত জনিত বাধক (Membranous dysmenorrhoea)
(১) রক্তাধিক্য জনিত বাধক (Congestive dysmenorrhoea) : এ ধরনের বাধক রক্ত প্রধান ধাতু বিশিষ্ট মহিলাদের বেশি হয়। অবিবাহিত এবং বিবাহিত উভয় প্রকার মহিলাদের এ ধরণের বাধক হয়ে থাকে। মহিলাদের তলপেটে ব্যথা ও পিঠের ব্যথা, মাসিক বা ঋতু¯্রাব হওয়ার ৩ থেকে ৪ দিন আগে শুরু হয়ে নিচে বা পায়ের দিকে ব্যথা নেমে যায়। আবার কখনও কখনও এর সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা থাকতে পারে।
(২) সংকোচন জনিত ৰাধক (Spasmodic dysmenorrhoea) : এ ধরনের বাধক সাধারণত স্নায়বীয় ধাতু প্রকৃতির স্ত্রীলোকদের বেশি দেখা দেয়। এ অবস্থায় মহিলার তলপেটে অসহনীয় প্রচন্ড ব্যথা থাকে যা মাসিক বা ঋতুস্রাব শুরুতেই দেখা দেয়। এর প্রথম এক অথবা দুই ঘন্টা তীব্র ব্যথা থাকে, পরে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা জন্য হাল্কা ব্যথা থাকে, যা মাসিক প্রবাহ বৃদ্ধির সাথে কমতে কমতে এক সময়ে আর ব্যথা থাকে না। তবে এক্ষেত্রে সাধারণত তলপেটের কোনো অঙ্গের অস্বাভাবিকতাও থাকে না, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা প্রদাহ বা ব্যথা থাকতে পারে।
(৩) ঝিল্লীযুক্ত জনিত ৰাধক (Membranous dysmenorrhoea) : স্নায়ুশূল জাতীয় অথবা রক্তাধিক্য জনিত বাধকের সাথে উপস্থিত হতে পারে। এতে ঋতুস্রাবের সাথে জরায়ু থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্দা বা থলির (Sac) মত পদার্থ নির্গত হয়। অপেক্ষাকৃত বড় থলি বা পর্দা গুলি দেখতে অনেকটা গর্ভপাতে নির্গত পদার্থের মত। এক্ষেত্রে জরায়ুর অন্তত্বক পুরু থাকে।
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্টের কারণ :
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্টের কারণের অধিকাংশই আলোচনা করা হয়েছে তবে নিম্নে ঝুঁকি সমূহ আলোচনা করা হলো যেমন –
(১) শ্রোণী বা তলপেটে সংক্রমণ।
(২) যৌন মিলনের রোগ।
(৩) জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য জরায়ুতে ব্যবহৃত ডিভাইস।
(৪)এন্ড্রোমেট্রিওসিস (Endometriosis): জরায়ুর ভেতর থেকে পর্দা মত বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রজনন বয়সের মেয়েদের ৩ থেকে ১০% এর মধ্যে ঘটে। বন্ধ্যাত্বে নারীদের ২৫-৩৫% এ এন্ড্রোমেট্রিওসিস (Endometritis) ঘটে থাকে।
(৫) এন্ড্রোমেট্রাইটিস (Endometriosis) : জরায়ুর অন্তঃত্বকের প্রদাহ।
(৬) লিওমাইওমাস (Leiomyomas) ৪০ বছর বয়সী নারীদের এটি বেশি হয়, এটি লক্ষণহীন (Asymptomatic) থাকে। সাধারণত কালো মহিলাদের জরায়ুতে টিউমার (Fibroid) বেশি দেখা দেয়।
(৭) এডেনোমাইয়োসিস A T ( Adenomyosis) – জরায়ুর অন্তঃত্বক (Endometrium) সাধারণত মধ্যত্বকের (Myometrium) দিকে প্রসারিত হয় যা ১৫% নারীদের এডেনোমাইয়োসিস এর সাথে এন্ড্রোমেট্রিওসিস হয়ে থাকে।
(৮) ডিম্বাশয়ের সিস্ট।
(৯) জন্মগত জরায়ুর বা যোনির অস্বাভাবিকতা।
(১০) ধূমপান করা।
(১১) অ্যালকোহল সেবন করা।
(১২) পরিবারে বাধক ইতিহাস।
(১৩) স্থূলতা।
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্টে পরীক্ষা :
বাধক বেদনা নির্ণয়ে প্রধানত মাসিক ইতিহাস, শ্রোণী পরীক্ষা (Pelvic) এবং শারীরিক পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও প্রধানত রক্তপরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্রস্রাব পরীক্ষাও এর অন্তর্ভুক্ত।
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধ :
সারা দেশে হোমিওপ্যাথি সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ লক্ষলণে উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। হোমওপ্যাথি লক্ষণ ও জটিলতা মুছে ফেলে রোগীর সম্পূর্ণ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট চিকিৎসা নয়, তার অন্তর্নিহিত কিছু কারণ এবং স্বতন্ত্র প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। চিকিৎসার জন্য, রোগীকে একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সম্পন্ন লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা লক্ষণ মিলিলে তবেই ঔষধ ব্যবহার করিবনে।
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট ঋতু¯্রবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সহায়ক ঔষধ গুলো নিম্নরুপ :
(১) ম্যাগ্নেসিয়া ফসফরিকাম (Magnesia Phosphoricum)|
(২) ক্যামোমিলা (Chamomilla)|
(৩) কলোসিন্থিস (Colocynthis)|
(৪) ক্যালকেরিয়া কার্ব (Calcarea Carb)|
(৫) নাক্স ভূমিকা (Nux Vomica)|
(৬) জেলসিমিয়াম (Gelsemium)|
(৭) হেমামেলিস ভার্জিনিকা (Hemamelis Verginica)|
(৮) বেলেডোনা (Belladonna)|
(৯) একোনাইট ন্যাপ (Aconite Nap)|
(১০) ক্যাকটাস গ্র্যান্ডিফ্লোরাস (Cactus Grandiflorus)
(১১) কলোফাইলাম (Caulophylum)|
(১২) সিমিসিফিউগা/একটিয়া রেসি (Cimicifuga/Actaea Race)
(১৩) ককুলাস ইন্ডিকা (Coculus Indica)|
(১৪) প্লাটিনা (Platina)|
(১৫) পালসেটিলা (Pulsatilla)|
(১৬) সিকেলিকর (Secale cor)|
(১৭) গ্রাফাইটিস (Graphites)|
(১৮) টিউবারকুলিনাম (Tuberculinum)|
(১৯) সিপিয়া (Sepia)|
(২০) ইগ্নেশিয়া (Ignatia)|
(২১) ক্যালি আয়োড (Kalium Iodatum)|
(২২) ল্যাকেসিস (Lachesis)|
(২৩) কোনিয়াম ম্যাকুলেটাম (Conium Maculatum)|
(২৪) কফিয়া ক্সুডা (Coffea Cruda)|
(২৫) কস্টিকাম (Causticum)|
(২৬) কলিনসোনিয়া ক্যানাডেন্সিস (Collinsonia Canadensis)|
(২৭) বোরাক্স (Borax)|
(২৮) অনোসমোডিয়াম (Onosmodium)|
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।