বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

বাধক বেদনায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

আরোগ্য হোমিও হল / ১৫৪ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৫:৪৭ অপরাহ্ন
অতিরিক্ত ঋতুস্রাবে অবহেলা করলে ফল হতে পারে মারাত্মক

বাধক বেদনায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মহিলাদের বাধক বেদনার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কি তা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।

বাধক বেদনা কি ?

এটি একটি স্ত্রী ব্যাধি। মহিলাদের অনিয়মিত, ঋতুবন্ধ বা স্বল্পঋতুস্রাব। ঋতুকালে মহিলার ইন্দ্রিয়ের যান্ত্রিক বা ক্রিয়া বিকৃতির এবং স্নায়ুবিক কারণে যদি অল্প রক্তস্রাবসহ তলপেটে ও কোমরে কষ্টকর ব্যাথা থাকে তবে তাকে কষ্টরজ, ঋতুশূল অথবা সাধারন কথায় বাধক বেদনা বলা হয়। দেহ রোগ তত্বের উপর ভিক্তি করে বাধককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

(ক) প্রাথমিক বাধক বেদনা- কৈশোরে রজঃচক্র শুরুতেই দেখা দেয় এর সাথে তলপেটের কোনো রোগের সাথে সম্পর্ক থাকে না। এটি সাধারণত অতিরিক্ত প্রোষ্টাগ্লান্ডিন এর কারণে হয়।

(খ) দ্বিতীয় বাধক বেদনা – সাধারণত খুবই বিরক্তিকর, এ বাধক বেদনার সাথে অবশ্যই মহিলাদের তলপেটের বিভিন্ন সমস্যা সম্পৃক্ত থাকে যা সাধারনত কৈশোরকালে হয় না। এটি জরায়ু, ডিম্বাশয় নালী এবং ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন রোগ ও বিকৃতির কারনে হয়ে থাকে।

 ঔষধ সম্পকে আরও পড়ুন –   বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট হোমিওপ্যাথি ঔষধর্

বাধক বেদনাকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা-

(১) রক্তাধিক্য জনিত বাধক।

(২) সংকোচন জনিত বাধক।

(৩) ঝিল্লীযুক্ত বাধক।

বাধক বেদনার লক্ষণভিত্তিক আলোচনা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ :

একোনাইট নেপিলাস (Aconite Nap) : শীতকালে নারীকে ঠান্ডা বাতাস লাগিয়া হঠাৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হইয়া দারুন যন্ত্রনায় রোগীনি একেবারে অস্থির হইয়া পড়ে এবং মৃত্যুর ভয়ে কাতর হইয়া পড়ে।

এমোন-কার্ব (Ammonium Carbonicum) : রোগীনি ঋতুকালে ভেদবমি ও রক্তস্রাব এত ক্ষতকর যে উরু হাজিয়া যায়। রক্তস্রাবের সহিত দন্ডশুল বা পেটব্যাথা, টনসিল প্রদাহ, প্রাতে মুখ ধুইবার সময় নাক দিয়া রক্ত পড়ে।

বেলেডোনা (Belladona) : বাধক যন্ত্রনায় মাথা একেবারে গরম হইয়া উঠে, মুখ-চোখ লাল হইয়া উঠে, স্রাব থাকিয়া থাকিয়া দেখা দেয়। রক্তস্রাব অত্যান্ত উত্তপ্ত। পর্যায়ক্রমে রক্তস্রাব ও মাথা ব্যাথা। ব্যাথা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়।

ক্যামোমিলা (Chamomilla) : কোন নারী ঝগরা বিবাদের পর ঋতুকষ্ট। যন্ত্রনায় বাড়ির লোক জনকে গালি দিতে থাকে। যন্ত্রনা উত্তাপ প্রয়োগে উপশম হয়। সময় সময় আবার ঋতুকষ্টের সহিত দাতের যন্ত্রনাও দেখা দেয়। তবে এই রোগীর জন্য ক্যামোমিলা উপযোগী।

কলোসিন্থ (Colocynthis) : কোন নারী ক্রদ্ধ হইবার পর ঋতুকষ্ট। যন্ত্রনা চাপিয়া ধরিলে আবার কমিয়া যায়। উত্তাপে উপশম বোধ হয় (ম্যাগ-ফস)। ব্যাথার চোটে রোগীনি সোজা হইয়া দাড়াইতে পারে না।

 ঔষধ সম্পকে আরও পড়ুন –  এইচ আর – ২১ (মাসিক সমস্যায় কার্যকর)

নাক্স ভূমিকা (Nux Vom) : কুদ্ধ হইবার পর অথবা রাত্রি জাগোরণ এর পর ঋতুকষ্ট। যন্ত্রণার সহিত ক্রমাগত মল ত্যাগের ইচ্ছা বা ঘন ঘন মুত্র ত্যাগের ইচ্ছা।

গ্রাফাইটিস (Graphites) :  রোগীনি স্হুলকায়, সঙ্গমে অনিচ্ছা, কোষ্ঠকাঠিন্য। রক্তস্রাব অল্প ও অত্যান্ত যন্ত্রনা দায়ক। পায়ে ঠান্ডা লাগিয়া ঋতু রোধ।

জ্যাবোরান্ডি (Jaborandi) : রোগীনির ঋতুকষ্টের সহিত মাথা ব্যাথা, কর্নমুল প্রদাহ, ছানি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, গর্ভবস্হায় শোথ, প্রসবকালিন আক্ষেপ, স্তন্যের অভাব, মুত্রকষ্ট।

জ্যান্হজাইলাম (Janhxylam) : ঋতুকষ্ট অত্যান্ত প্রবল। উদাস ভীরু দক্ষিণ ডিম্বকোষে ব্যথা কোমর হইতে উরুদেশ পর্যন্ত ব্যথা, শ্বাস-রুদ্বকর, টিউমার.ক্যান্সার।

গসিপিয়াম হেরবেকাম (Gossypium Herbaceum) : রোগীনির থাকিয়া থাকিয়া ব্যাথা, গর্ভবস্হায় গা বমি, কিন্তু নিম্নশক্তি গর্ভস্রাব ঘটায় ও বন্ধাত্ব দোষেরও মহৌষধ।

সেনিসিও অরিয়াস (Senecio aureus) : কোন নারীর ঋতুস্রাব বাধাপ্রাপ্ত হইয়া কাশি, যক্ষা, কাশি রাত্রে বৃদ্ধি পায়। ঋতুস্রাব বাধা প্রাপ্ত হইয়া প্রস্রাবদ্বার অথবা অন্য কোন দ্বার দিয়ে রক্ত স্রাবজনিত শোথ।

ল্যাকেসিস (Lachesis) : ঋতু বেশ অনিয়মিত, কিন্তু স্রাবের পূর্বে অথবা পরে যন্ত্রনা।

ম্যাগ-ফস (Magnesia Phosphoricum) : ব্যাথা চাপিয়া ধরিলে ও উত্তাপ প্রয়োগ উপশম হয়।

 ঔষধ সম্পকে আরও পড়ুন –  কেন্ট ০২ (শূলবেদনা রোগে কার্যকর)

ম্যাগনেশিয়া কার্বনিকা (Magnesia Carbonica) : ঋতুকালে গলা ব্যাথা বা গলার মধ্যে ঘা, রক্ত স্রাব অত্যান্ত কালো, ধুইলে পরিস্কার হয় না। কেবল মাত্র রাত্রে নিদ্রাকালে রক্তস্রাব।

পালসেটিলা (Pulsatilla) : ঋতুকালীন পা ফুলিয়া ওঠে,স্তনে দুধ দেখা দেয়। রক্তস্রাব কেবল মাত্র দিনের বেলায় হয়। নম্র স্বভাব, ক্রন্দনশীলা, কোমর হইতে জরাযুর মুখ পর্যন্ত বেদনা করে। স্রাবের সহিত বড় বড় রক্তের চাপ। থাকিয়া থাকিয়া রক্তস্রাব, স্রাবের সহিত যন্ত্রনা ও শীত লাগে।

ভাইবার্নাম ওপিউলাস (Viburnum Opulus) : ঋতু প্রকাশ পাইবার পূর্বে পেটে প্রচন্ড যন্ত্রনা। ঋতুকষ্টের রোগীনি মনে করে থাকে শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া য়াবে, পায়ে খিলধরা। প্রসব বেদনার ন্যায় কোমর হইতে জরায়ুর মুখ পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাথা চাপে উপশম হয়, রোগী উঠিয়া বসিতে গেলেমাথা ঘুরে। রক্তস্রাব কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকিয়া পুনরায় আবার নির্গত হইতে থাকে, স্রাবের দাগ সহজে উঠিতে চায় না । গর্ভাবস্হায় পেটে কিম্বা পায়ে খিল ধরা। লিউকরিয়া। গর্ভপাত বন্ধ করে (স্যাবাইনা)।

 ঔষধ সম্পকে আরও পড়ুন –  গাইনো কার্ড ট্যাবলেট (শ্বেত প্রদর ও মাসিকের সম্যাসায় টনিক)

মোডোরিনাম (Medorrhinum) : রোগীনির সাইকোসিসের দোষবশত দারুণ ঋতুকষ্ট। রোগীনি বরফ ও বাতাস খাইতে পছন্দ করে, স্রাব কাল বর্ণের। ধুলেও দাগ উঠে না।

আষ্টিলেগো Astilgo / এক্টিয়া রেসিমোসা (Actaea Recemosa) : রোগীনির জরায়ুর দোষবশত প্রচুর ঋতুস্রাব, স্রাব বন্ধ হইলে বাম স্তনে ব্যথা করে। গর্ভবর্তী স্ত্রীলোককে আষ্টিলেগো প্রয়োগ করা উচিত নয়।

সিমিসিফুগা (Cimicifuga) : রোগীনি অত্যান্ত বাচাল, মুর্ছাবায়ুগ্রস্হ ও বাত রোগ গ্রস্হ স্ত্রী লোকদের ফলপ্রদ। রোগীনির রক্তস্রাব বৃদ্ধিপেলে বেদনা ততই বৃদ্ধি পায়, ব্যাথা কোমরের প্রান্ত হইতে অপর প্রান্তে ছুটিতে থাকে। এই রোগীনি যে পার্শে চাপিয়া শুইতে চাই সেই পার্শে মাংশপেশী অত্যন্ত স্পন্দিত হইতে থাকে।

প্রতিকার বা কিছু পরামর্শ :

গরম সেক দিলে যদি রোগীনি আরাম বোধ করে তাহলে মাসিকের সময় বিশ থেকে পচিশ মিনিট করে দিনে দুই অথবা তিন বার গরম সেক দিতে পারেন। খাদ্য তালিকায় আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।


আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন  : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev