প্রসবকালীন বিভিন্ন উপসর্গ
মানুসিক রোগ ও যৌন চিকিৎসা
ডা: জে. এন. পাত্র
ডি. এম. এস (কলকাতা ) ও
ডা: আর. এন. চন্দ্র
এম, ডি হোমিও প্রাপ্তন চিকিৎসক, কলকাতা।
প্রসবকালীন বিভিন্ন উপসর্গ সম্পের্কে কিছু জেনে রাখা দরকার, তাতে ঔষধ প্রয়োগে সুবিধা হবে। প্রসবের পর বিভিন্ন কারণে জরায়ু দুষণ ঘটে থাকে। জরায়ু মধ্যে যে-সব জিনিস থেকে যায় সে গুলি ভেতেরে পচে ও এই পীড়ার সৃষ্টি করে। এই পীড়ায় অনেক সময় জ্বরও হয়। ১০৬ ডিগ্রী পর্যন্ত গাত্রতাপ উঠতে পারে। পীড়াটির চিকিৎসায় যথেষ্ট অভিজ্ঞাতা না থাকলে হাত দেওয়া উচিত নয়।
(১) সমস্যা : কষ্টকর প্রসবের আশঙ্কা করে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ক্যালকেরিয়া-ফ্লোর ৬। সকালে- দুপুরে ও রাতে (প্রতিদিন ৩ বার) সেব্য।
(২) সমস্যা : অনিয়মিত ও মৃদু বেদনা, জলের মতো স্রাব, বমি-বমি ভাব থাকে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন পালসেটিলা ৬। সকালে- দুপুরে ও রাতে (প্রতিদিন ৩ বার) সেব্য।
(৩) সমস্যা : প্রসবের ২ মাস আগে থেকে কোনো সমস্যা দেখা দেয় ৷
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন সিমিসিফিউগা ২০০। দিনে ১ বার সেব্য।
(৪) সমস্যা : জরায়ু সংকুচিত হওয়ার জন্য প্রসাব কষ্ট।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন জেলসিমিয়াম ৬। ২ ঘন্টার পর পর সেব্য ।
(৫) সমস্যা : প্রস্রাবকালে ঊরু খিল ধরে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন সিকেলি-কর ৬। ২ ঘন্টা পর পর সেব্য।
(৬) সমস্যা : প্রসবের শেষ দিকে কোষ্ঠকাঠিন্য।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন কলিনসোনিয়া ৩০। সাকালে ও বাতে ( ২ বার) সেব্য।
(৭) সমস্যা : প্রসবকালে শরীর বরফের মতো ঠান্ডা, নাড়ী ক্ষীণ, মূর্ছা হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ক্যাম্ফর ৬। ১ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(৮) সমস্যা : প্রসবকালে অসহ্য বেদনা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ক্যামোমিলা ৬। ১ ঘন্টা পর পর সেব্য।
(৯) সমস্যা : কষ্টকর প্রসব বেদনা, নাভির চারপাশে কাটাছেঁড়ার মতো বেদনা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ইপিকাক ৬। ১ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(১০) সমস্যা : ভয়ানক ধরণের প্রসব বেদনা, চোখ-মুখ লাল হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ওপিয়াম ৬। ১ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(১১) সমস্যা : দুর্বল প্রসূতির প্রসবে কষ্ট, জরায়ুমুখ শক্ত হয়ে থাকে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন কলোফাইলম ৬। ১ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(১২) সমস্যা : প্রসব বেদনা, অত্যন্ত কষ্টবোধ।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন আর্ণিকা ৬। ১ ঘন্টা অন্তর সেব্য। •
(১৩) সমস্যা : প্রসূতির মাথা ব্যথা, চোখ-মুখ লাল, প্রলাপ বকে, হাত-পা ছোড়ে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন বেলেডোনা ৪। ৩০ মিনিট অন্তর সেব্য।
(১৪) সমস্যা : প্রসূতির ভয়ানক খেঁচুনি, চিৎকার করে কাঁদে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন হায়োসিয়ামস ৬। ১ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
প্রসূতির স্তনে প্রদাহ (ঠুনকো)
[ প্রসূতির স্তনে বা স্তনের বোঁটায় প্রদাহ হলে শিশুকে স্তন্যদানে অসুবিধা হয়। সেজন্য চিকিৎসার প্রয়োজন ]
(১) সমস্যা : ঠুনকো জ্বর, শুরুতে প্রবল জ্বর ওঠে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন একোনাইট ৬ ও ব্রায়োনিয়া ৬। ৩ ঘন্টা অন্তর পর্যায়ক্রমে সেব্য।(২)
(২) সমস্যা : স্তন খুব শক্ত হয়ে থাকে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ফাইটোলক্কা ৩০। দিনে ৩ বার সেব্য।
(৩) সমস্যা : স্তন লাল বর্ণের হয়, প্রদাহ থাকে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ব্রায়োনিয়া ৬ বা ৩০। দিনে ৩ বার সেব্য ।
(৪) সমস্যা : ঠুনকো জ্বরের প্রাথমিক অবস্থা ৷
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ব্রায়োনিয়া ৬ ও বেলেডোনা ৬। দিনে ৩ ঘন্টা অন্তর পর্যায়ক্রমে সেব্য।
(৫) সমস্যা : স্তনে পুঁজ জন্মেছে এমন অবস্থা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন হিপার সালফার ২০০। দিনে ২ বার সেব্য।
(৬) সমস্যা : স্তনে পুঁজ জন্মাবার আশঙ্কা, স্তন স্ফীত হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন হিপার সালফার ৬। দিনে ৩ বার সেব্য।
স্তনে দুধ কম
[ স্তনে দুধ কম এলে শিশুর খাওয়া হয় না সেজন্য চিকিৎসার প্রয়োজন। ] •
(১) সমস্যা : ক্রোধের কারণে স্তনে দুধ কম।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ক্যামোমিলা ৩০। দিনে ২ বার সেব্য।
(২) সমস্যা : শোকের কারণে স্তনে দুধ কম।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ইগ্নেসিয়া ৩০। ৬। দিনে ২ বার সেব্য।
(৩) সমস্যা : ভয়ের কারণে স্তনে দুধ কম।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন একোনাইট ৩০। দিনে ২ বার সেব্য।
(৪) সমস্যা : ঈর্ষার কারণে স্তনে দুধ কম।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন হায়োসিয়ামস ৩০। দিনে ২ বার সেব্য।
(৫) সমস্যা : স্তনে দুধ আস্তে আস্তে হঠাৎ কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেল।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন এসাফিটিডা ৩০। দিনে ২ বার সেব্য।
(৬) সমস্যা : প্রসবের পরে ২০ ঘন্টার মধ্যে স্তনে দুধ এলো না।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন অগ্নাস-ক্যাক্টাস ৬। ২ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
স্তনে বেদনা
[ বেদনা সমগ্র স্তনে হতে পারে আবার কেবলমাত্র স্তনের বোঁটায় হতে পারে। শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পরে এমন সমস্যা দেখা দিলে শিশুকে স্তন্য দান করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেজন্য সত্বর চিকিৎসা প্রয়োজন। ]
(১) সমস্যা : স্তন পান করাবার সময় বা তার পরে বেদনা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ফেলাড্রিনাম ৬। দিনে ৩ বার সেব্য।
(২) সমস্যা : স্তনের বোঁটায় শূলবেদনার মতো বেদনা-কাঁধ পর্যন্ত যায়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ক্রোটন-টিগ ৬। দিনে ৩ বার সেব্য।
(৩) সমস্যা : শিশুকে স্তন পান করাবার পর বেদনা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন বোরাক্স ৬। দিনে ৩ বার সেব্য।
প্রসূতির দুধ-জ্বর
[ প্রসবের পরে স্তনে দুধের সঞ্চার ঘটে, স্তনে বেদনা হয়—এই বেদনা কাঁটা ফোটার মতো। ২।১ দিন পরে স্তন শক্ত হয়ে ওঠে ও জ্বর হয়। একে বলে ‘দুধ-জ্বর’। সামান্য জ্বরে ক্ষতি হয় না। আপনা-আপনিই সেরে যায়। কিন্তু প্রবল জ্বর হলে চিকিৎসার প্রয়োজন । ]
(১) সমস্যা : সামান্য জ্বর।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন বেলেডোনা ৬। দিনে ৩ বার সেব্য। •
(২) সমস্যা : প্রবল জ্বর।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ব্রায়োনিয়া ৩০। দিনে ৩ বার সেব্য।
স্তনে দুধ বৃদ্ধি
[ স্তনে দুধ কম হলে যেমনি সমস্যা দেখা দেয় তেমনি আবার দুধ বেশী পরিমাণে এলে সমস্যা দেখা দেয়। স্তনে অধিক দুধ এলে প্রসূতি অবসাদগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে কোনো কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়া অসম্ভব নয়। সেজন্য পীড়াটির চিকিৎসা প্রয়োজন। ]
(১) সমস্যা : স্তনে অধিক দুধ।
সমাধানঃ এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ন্যাট্রাম-সালফ ৩০। দিনে ৩ বার সেব্য ।
মূচ্ছা
(প্রসবকালে বা প্রসবের পরে মূচ্ছা হতে পারে। পীড়াটি সহজ নয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা এই পীড়ার চিকিৎসার করোনো দরকার। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখে ঔষধ প্রয়োগ করা চলে।)
(১) সমস্যা : রক্তস্রাবের কারণে মুচ্ছা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন চায়না ৬ বা কার্বো ভেজ ৬। দিনে ৩ বার অথবা প্রয়োগ ক্ষেত্র অনুযায়ী সেব্য।
(২) সমস্যা : মূচ্ছা সেই সঙ্গে কপালে ঠান্ডা ঘাম।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ভিরেট্রাম-অ্যালবাম ৬ বা ৩০। দিনে ৩/৪ বার অথবা প্রয়োগের ক্ষেত্র অনুযায়ী সেব্য।
(৩) সমস্যা : আঘাত বা পতনের কারণে মূর্ছা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন আর্ণিকা ৬ বা ৩০। দিনে ৩ বার অথবা ক্ষেত্র অনুযায়ী সেব্য।
(৪) সমস্যা : মূর্ছা, সারা শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন রুবিনীর ক্যাম্ফর ৪। দিনে ৩/৪ বার অথবা ক্ষেত্র অনুযায়ী সেব্য।
(৫) সমস্যা : বার বার মূর্ছা হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন স্ট্র্যামোনিয়ম ৬ বা ৩০। দিনে বার অথবা ক্ষেত্র অনুযায়ী সেব্য।
(৬) সমস্যা : ভয়ের কারণে মূর্ছা।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন কফিয়া ৬। দিনে ৩ বার অথবা ক্ষেত্র অনুযায়ী সেব্য।
প্রসবান্তিক অতিরিক্ত রক্তস্রাব
(১) সমস্যা : স্বাভাবিক রক্তস্রাব ।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন আর্ণিকা ৬ বা হ্যানামেলিস ৬। ৩ ঘন্টা অন্তর সেব্য ।
(২) সমস্যা : অত্যধিক রক্তস্রাব।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ট্রিলিয়াম ৬। ৩ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(৩) সমস্যা : রক্তস্রাব, পোয়াতী কাহিল হয়ে পড়ে।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন চায়না ৬। ২ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(৪) সমস্যা : রক্তস্রাব, মাথার যন্ত্রণা হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ফেরম-মেট ৬। ২ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
আক্ষেপ বা খেঁচুনি
[ প্রসবকালে অথবা প্রসবের আগে বা পরে খেঁচুনি দেখা দিতে পারে। এর ফলে রোগিণী অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। আবার অনেক সময় জ্ঞান ফিরে আসে ও পুনরায় অজ্ঞান হয়। পীড়াটিকে সহজ ও স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। এর ফলে অন্য পীড়ার জন্ম হতে পারে, তখন তা রীতিমতো জটিল ও কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং পীড়াটিকে সুচিকিৎসা দ্বারা নির্মূল করা দরকার। ]
(১) সমস্যা : রোগিণীর আক্ষেপ বা খেঁচুনি শুরু হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন বেলেডোনা ৬। ২ ঘন্টা পর পর সেব্য।
(২) সমস্যা : আক্ষেপের আগে জ্বর ও প্রবল পিপাসা ।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন একোনাইট ৬। ২ ঘন্টা পর পর সেব্য।
(৩) খেঁচুনি সেই সঙ্গে চটচটে ঠন্ডা ঘাম।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ভিরেট্রাম-ভিরিডি ৬। দুই ঘন্টা পর পর সেব্য।
(৪) আক্ষেপের পূর্ববতী লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন হায়োসিয়ামস ৬। ৩ ঘন্টা অন্তর সেব্য।
(৫) সমস্যা : আক্ষেপ বন্ধ হবার পর মাথার গোলযোগ।
সমাধান : এই উপসর্গে সেবন করতে দিন ওপিয়াম ৬। দিনে ৩ বার সেব্য।
বি.দ্র. : আক্ষেপের বিভিন্ন উপসর্গ : মাথা ধরা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, তন্দ্রাভাব, হাতে-পায়ে খিল ধরা, উৎকণ্ঠা, দৃষ্টিক্ষীতা, ভয় পাবার মতো চিৎকার করে উঠা প্রভৃতি।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।