নারী যৌনাঙ্গের ভ্যাজিনাল ট্রাইকোমোনিয়াসিস হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো নারীদের নারী যৌনাঙ্গের ভ্যাজিনাল ট্রাইকোমোনিয়াসিস, কারণ কি, লক্ষণ এবং উপসর্গ কি কি, প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
(ক) যৌনাঙ্গের ভ্যাজিনাল ট্রাইকোমোনিয়াসিস :
ট্রাইকোমনিয়াসিস নারীদের যৌনাঙ্গে প্রদাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ব্যাপকভাবে সংক্রমিত রোগসমূহের মধ্যে এটি একটি। নারীর যৌনাঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া ও (ছত্রাক) মতো অসংখ্য অণুজীব উপস্থিত থাকে। শরীরের ত্বকের মতো, এইসব অণুজীব ও ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট সমন্বয় নারীর যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ১৫-৪৯ বছর বয়সের মহিলাদের যারা যোনিপথের সাদা স্রাবের অভিযোগ করেন তাদের ভিতর অধিকাংশই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ট্রাইকোমনিয়াসিস ‘ট্রাইকোমনিয়াসিস’ নামক এক ধরনের পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। অনুজীবগুলি, যৌনাঙ্গে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিহত করে এবং যৌনাঙ্গে পিএইচ (অ¤¬ত্ব ও ক্ষারত্বের স্থিতাবস্থা) নিয়ন্ত্রণ করে। এবং এই অণুজীবগুলোর মধ্যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে, তখন তা সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস অথবা ট্রাইকোমোনিয়াসিস (যোনিপথে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ) প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি করে থাকে। সেই সাথে, মহিলারা তাদের সঙ্গীদের মাধ্যমেও বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে মহিলার যৌনাঙ্গের নিবিড় যত্ননেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
(খ) ট্রাইকোমনিয়াসিস এর কারণসমূহ :
(১) মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করলে।
(২) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যৌনমিলন করলে।
(৩) এই জীবাণু পুরুষের মূত্রতন্ত্রে ও যোনাঙ্গে থাকে তবে পুরুষের দেহের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু যখন যৌনমিলনের মাধ্যমে যোনিপথে এই জীবাণু ছড়ায়, তখন এই জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং থীরে ধীরে নারীর শরীরে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় ।
(ঘ) ট্রাইকোমনিয়াসিস এর লক্ষণ এবং উপসর্গ :
ট্রাইকোমোনিয়াসিস পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট একটি যন্ত্রনাদায়ক এটি একটি যৌন সংক্রামক রোগ। এই সংক্রমণে আক্রান্ত প্রায় ৭০% রোগীর লক্ষন প্রকাশ পায় না। সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রেও তেমন কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে সময়ের সাথে সাথে কিছু লক্ষন গুলো প্রকাশ পায়। তবে উপসর্গ গুলো মহিলা ও পুরুষ অনুযায়ী ভিন্ন দেখা যায়।
(১) যৌনি থেকে প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ যুক্ত স্রাব বাহির হয় বা ফেনিল হলুদ রং ও স্রাবে দুর্গন্ধ থাকতে পারে।
(২) যৌনিতে লালভাব ও জ্বালা করে।
(৩) যৌনি চুলকায়।
(৪) তলপেট ব্যাথা করে।
(৫) সাধারণত যৌনাঙ্গের আশে পাশে চুলকানি দেখ যায়।
(৬) মূত্র ত্যাগকালে ও যৌনমিলনে ব্যথা বা জ্বালা এবং যোনির আশপাশে প্রদাহ হতে পারে।
(৭) এটি কোন প্রকার উপসর্গ ছাড়াই হতে পারে।
(ঙ) পুরুষদের মধ্যে যে সমস্ত লক্ষন দেখা যায় তা হলো:
(১) লিঙ্গের ভিতরে জ্বালাপোড়া ও চুলকায় ।
(২) প্রস্রাবের সময় বা বীর্যপাত এর সময় লিঙ্গ জ্বালাপোড়া করে ও
লিঙ্গ থেকে স্রাব ইত্যাদি।
(চ) ট্রাইকোমনিয়াসিস প্রতিরোধের উপায় :
(১) ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিতে হবে।
(২) ঋতুস্রাবের সময় পরিস্কার কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
(৩) ঋতুস্রাবের কাপড়গুলো ভালো করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে।
(৪) রোগ সম্পূর্ণভাবে ভাল না পর্যন্ত স্বামীর সাথে যৌন মিলন হতে হবে এবং স্বামীকে কনডম ব্যবহার করতে বলতে হবে।
(৫) মহিলাদের আইইউডি পরানোর সময় অবশ্যই বিশেষ প্রতিরোধক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে।
(ছ) গর্ভ অবস্থায় ট্রাইকোমোনিয়াসিস :
গর্ভ অবস্থায় ট্রাইকোমোনিয়াসিস ভ্যাজিনোসিস যদি জীবাণুর দ্বারা আক্রান্তহয় তবে উক্ত গর্ভবতি মায়ের (PROM) জীবাণুগুলো জরায়ুর মুখ কে ছিদ্র করে ফেলে বিধায়, ৫/৬ মাসে ভিতর গর্ভপাত হওয়ার সম্বাভনা ৮০% সম্ভবনা থাকে (যদি এর সঠিক চিকিৎসা করা না হয়) আর যদি গভপাত না হয়, তাহলে আক্রান্ত জন্মজাত শিশুটির শারীরিক আকৃতি ছোট হয়ে থাকে (ক্ষিন জন্ম), সেই সাথে যদি সিজারিয়ান ডেলিভারি ছাড়া নরমাল ডেলিভারি করা হয় তবে নবজাতক শিশুটি জন্মের সাথে সাথে নিউমোনিয়া অথবা কঠিন ব্রংকাইটিস সহ অন্যান্য নবজাতক শিশুটি বিভিন্ন অসুখে ভোগবেই। অর্থাৎ কোন মা ই সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার আশা করা ঠিক হবে না।
(জ) ট্রাইকোমনিয়াসিস এর চিকিৎসা :
ট্রাইকোমনিয়াসিস –এর লক্ষণসমূহ দেখা দিলে কোনো প্রকার দ্বিধা বা সংকোচ এবং দেরি না করে সময়মত চিকিৎসা করালে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়।
হোমিওপ্যাথিতে ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর লক্ষণ সাদৃশ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে কিছু কার্যকরী হোমিওপ্যথি ঔষধের নিন্মে উল্লেখ করা হলো:
(১) মার্ক সল (Merc sol)।
(২) নাইট্রিক এসিড (Nitric acid)।
(৩) পালসেটিলা (pulsatilla)।
(৪) সিপিয়া (sepia)|
(৫) ক্যান্ডিডা আলবা (Candida Albicans)।
(৬) ক্রিয়োজেটাম (Kreosotum)।
(৭) থুজা অক্সি (Thuja Occi)।
(৮) মনিলিয়া আলবা (monilia alba)।
(৯) সালফার (sulphur)|
(১০) আর্সেনিক এ্যালবাম (Arsenic album)।
(১১) ক্যালকেলিয়া কার্ব (calcarea carb)।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্ববান হউন এবং সাবধানে থাকুন। এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।