নারীদের অতি:রজ – এপিমেনোরিয়ার কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো নারীদের অতি:রজ – এপিমেনোরিয়ার কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
অতিরজ, অতিরজ – এপিমেনোরিয়ার কারণ, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, ঋতু স্রাব, মাসিক, মাসিক ঋতু স্রাব, রক্তস্রাব, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
যদি কোন নারীর মাসিক বা ঋতু আরম্ভ হবার পর অনেক দিন সময় ধরে রক্তস্রাব চলতে থাকে তাকেই এপিমেনোরিয়া (অতিরজ) বলা হয়। কোন কোন সময় চিকিৎসরা মেনোরেজিয়ার সঙ্গে একে ভুল করে বসেন। কেননা মেনোরেজিয়ার ক্ষেত্রে রক্তস্রাব খুব বেশি হয় কিন্তু এপিমেনোরিয়ার ক্ষেত্রে রক্তস্রাব বেশি না হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে রক্ত¯্রাব হতে থাকে। চিকিৎসকগণ উভয়টাকেই অতিরজ হিসেবে অভিহিত করে। তবে মূল পার্থক্যটুকু মাথায় রেখে চিকিৎসা দেয়া উচিত। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে রক্তস্রাব দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা না করালে রোগীর জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে।
এপিমেনোরিয়ার কারণ :
যে সকল কারণে এপিমেনোরিয়া (অতিরজ) হতে পারে নিন্মে উল্লেখ করা হলো :
(১) ডিম্বশয় হতে নিঃসৃত হরমোন দুটি চক্রবৎভাবে সময়মত যদি কাজ না করে। যদি নিঃসরণে পরিমাণ কম হয় অথবা কম সময় ধরে চলে সে ক্ষেত্রে কাজ খুব ধীরে ধীরে হয়। এই জন্য তখন Destructive Phase এর সময় বৃদ্ধি পায়। তখনই ৮/১০/১২ দিন পর্যন্ত ধাতুস্রাব বা রক্তপাত হতে থাকে। অতি ধীরে ধীরে ফোঁটা ফোঁটা করে ঋতুস্রাব বা রক্তপাত হয় আবার ধীরে ধীরে বন্ধও হয়ে যায়।
(২) কখনও কখনও জরায়ুর Destructive Phase ৫ থেকে ৬ দিন দীর্ঘ হয়ে থাকে বলে ঐ সময় রক্তপাত হয়। কিন্তু হরমোনের অনিয়মিত ক্রিয়ায় ঐ সময় বৃদ্ধি লাভ করলে ৮/১০/১২ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ রক্তপাত হতে পারে। এমন কি ঔই নারীর অধিক সময় ধরেও রক্তপাত চলতে পারে।
(৩) অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুর অত্যধিক দুর্বলতার জন্য জরায়ুর নির্দিষ্ট কার্যক্রম যথাযথ ভাবে সম্পন্ন না করতে পারলে তখন এই রোগ হতে পারে।
(৪) ডিম্বাশয়ে Hypertroply এর কারণেও এই রোগ হতে পারে।
(৫) কখনও কখনও আবার মেনোরেজিয়ার মত এতেও রক্ত চাপ বৃদ্ধি হতে দেখা যাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে জরায়ুর চাপ তথা রক্তচাপ কমে গিয়ে ঋতুসাব ব দীর্ঘ চলতে থাকে।
(৬) কোন কোন সময় জরায়ুতে ক্ষত হলে অথবা কোন প্রকার Infection হলে দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব হতে থাকে। প্রথমে অবশ্য রক্তস্রাব ধীরে ধীরে শুরু হয় কিন্তু পরে বেশি দিন সময় ধরে চলতে থাকে। এই সকল ক্ষেত্রে সিফিলিস বা গনোরিয়ার Infection থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্তমানে নারীনির ক্ষেত্রে এই কারনটাই বেশি দেখা যায়। তাই এই সকল সমস্যাগুলি সমূলে নির্মূল করেতে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া উচিত।
এপিমেনোরিয়ার লক্ষণ :
নারীনির এপিমেনোরিয়ার সমস্যার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ:
ক) ঋতুস্রাব ঠিকসময় শুরু হয় তবে তা ফোঁটা ফোঁটা করে দীর্ঘ দিন ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব চলার জন্য রোগীনির ঋতুস্রাব বন্ধ খুব স্বল্প সময় মাত্র থাকে ।
(খ) অনেক দিন ধরে রক্তস্রাব হওয়ার ফলে অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে রোগীর রক্তহীনতা ও দুর্বলতা লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগীনির চেহারার বণ ফেকাশে হয়ে যায়, হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। নাড়ীর গতি অস্বাভাবিক চলতে থাকে, শ্বাস-প্রোশ্বাসের লক্ষণ অনিয়ম দেখা যায়। রোগীনি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পরিশ্রমের কোন কাজ করতে পারে না।
(গ) রোগীনি অত্যন্ত খিট খিটে মেজাজের, অসহনশীল, কাজে প্রতি অনিহা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
(ঘ) কোন কোন সময় রোগীনির শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ দেখা যায়। আবার কখনও কখনও হজম শক্তির গোলমাল দেখা দেয়, বদহজম থেকে অম্ল হয়।
(ঙ) রোগীনির হজম শক্তি কমে যাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য, উদরাময়, অম্ল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। যার দরুন এই সকল রোগীনি দুর্বল থাকে, মাথা যন্ত্রণা করে, মাথা ঘোরে, হাটাচলা করার শক্তি লোপ পায়, মনমরা থাকে।
এপিমেনোরিয়ার প্রতিকার : নারীনির এপিমেনোরিয়া ক্ষেত্রে কোন কোন সময় বেশ কয়েকটি লক্ষণ একবারেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে রোগ যে পর্যায়েই থাকুক না কেন কোন প্রকার সংকোচবোধ না করে যথা সময়ে চিকিৎসা নিলে দ্রুতই রোগী সুস্থ হয়ে উঠে।
এপিমেনোরিয়ার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা :
(১) কার্বো ভেজিটেবিলিস(Carbo Vegetabilis) : নিয়মিত সময়ের আগে ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং পরিমানে প্রচুর পরিমাণে হয়, ঋতুস্রাব কালে হস্ত এবং পদতল জ্বলনে কার্বো ভেজিটেবিলিস ওষুধ খুবই কার্যকরী।
(২) লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium) : ঋতুস্রাব ব অতি বিলম্বে শুরু হয় যা প্রচুর পরিমানে রক্তস্রাব হয় এবং দীর্ঘস্খায়ী।
(৩) ক্যাল্কেরিয়া কার্বোনিকা-অষ্ট্রিয়েরাম (Calcaria Carbonica -Ostrearum) : ঋতুস্রাবের পূর্বে মাথা ব্যথা, শূল বেদনা, শীতবোধ এবং ঋতুকালীন জরায়ুর মধ্যে করতনবৎ যন্ত্রণা। ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র সংঘটন, প্রচুর পরিমাণে হয় ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
(৪) ক্রিয়োজোটাম (Kreosotum) : ঋতুকালীন রোগীনির শ্রবণ কষ্টসাধ্য, কানের মধ্যে ঝাঁই ঝাঁই শব্দ ও গজন করে, যন্ত্রণা হয়। ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র সংঘটন ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
(৫) ইস্কিওলাস হিপ (Aesculus Hip) : অবিরত বেদনা, রোগীনির বস্তিপ্রদেশ বেদনা। হাঁটাচলা করলে অথবা পিঠ নুয়ালে বেদনা অতিশয় বৃদ্ধি পায়। জরায়ুর স্থানচ্যুতি, প্রদাহ, প্রদর স্রাব।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।