জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ, করনীয় ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো জরায়ু ইনফেকশনের কী? জরায়ুর রোগসমূহ , জরায়ু জ্বালাপোড়া করাণ, জরায়ু ব্যথার কারণ কী, রোগীনির করণীয় কী, লক্ষণ, করনীয় ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের জরায়ু অনেক সময় বিভিন্ন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকে। ভেজা ও সিন্থেটিক পোশাক অনেকক্ষণ পরে থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে এসব সংক্রমণ ঘটে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, নারীদের যৌনাঙ্গের সঠিক পরিচর্যা না করার ফলে সেখানে প্রদাহজনিত ব্যথা, যোনি থেকে রক্তপাত ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ভাইরাস যদি জরায়ুতে দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে সংক্রমিত কোষগুলো অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়ে ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই, নারীদের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
জরায়ু ইনফেকশন কী?
জরায়ু ইনফেকশন বা পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) সাধারণত ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণকে বোঝায়। এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। যৌনবাহিত রোগের মধ্যে chlamydia and gonorrhoea কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সংক্রমণ হয়ে থাকে। আবার কপার টি, ডি অ্যান্ড সি, অ্যান্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি, হিস্টারোসাল-ফিঙ্গোগ্রাফি ইত্যাদি পরীক্ষার কারণেও জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে নারীর প্রজনন অঙ্গগুলোর জটিলতা ও গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।
জরায়ুর রোগসমূহ :
নারীদের জরায়ুর মুখ যেখানে যোনির সাথে মিলিত হয়, তাকে সার্ভিক্স বলে। যখন আপনার সার্ভিক্স উদ্দীপ্ত হয়, তখন তাকে সারভিসাইটিস বলা। সারভিসাইটিস সংক্রামক অথবা অসংক্রামক হতে পারে। সাধারণত যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণেই সারভিক্স উদ্দীপ্ত হয়।
এই যৌনবাহিত রোগগুলি হলো
(ক) ক্লামিডিয়া।
(খ) গনোরিয়া
(গ) হার্পিস
লেটেক্স অ্যালার্জি এবং ডিউসিং এর কারণেও জ্বালাভাব ও প্রদাহ সৃষ্টি হয়। যে সব নারী ক্যানসারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন তাদেরও সার্ভিক্সের মধ্যে জ্বালাভাব হতে পারে। এতে যদি আপনার মূত্রনালী সংক্রমিত হয় তবে আক্রান্ত নারীর মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করতে পারে। যোনিতে চুলকানি ও যোনি থেকে রক্তপাতও হতে পারে। বিশেষ করে যৌন মিলনের পরে অথবা পিরিয়ড বা মাসিক চক্রের মধ্যখানে অনেক সময় পেটের যন্ত্রণাও দেখা দিতে পারে। এইচপিভি ও জরায়ু রোগের মধ্যে অন্যতম। এর ফলে শরীরে আঁচিল, গুটি অথবা ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা যৌনাঙ্গ থেকে শুরু করে মুখে, হাত-পা এমনকি মুখের ভেতরেও হতে পারে। এ ভাইরাসটি খুবই ছোঁয়াচে। সাধারণত নারী-পুরুষ যখন প্রথম যৌন-সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই এ সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকে।
জরায়ু জ্বালাপোড়া :
গর্ভাবস্থায় আপনার জরায়ুর ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে ব্লাডারে চাপ পড়ে। এর ফলে প্রস্রাব ঠিক মতো বেরোতে পারে না। এক্ষেত্রে আপনি সাবধান না হলে কিডনির উপর এর মারাত্মক প্রভাব পগে। এমনকি সময়ের আগেই গর্ভযন্ত্রণা দেখা দিতে পারে। আপনার গর্ভের শিশু অস্বাভাবিক কম ওজনের হলে শিশুটি জন্মানোরও ঝুঁকি থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় কেটে গেলেও ইউরিনারি ট্রাক্ট বা ব্লাডার ইনফেকশনের ঝুঁকি থেকেই যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালা করে, তলপেটে চাপ এবং ঘনঘন প্রস্রাব ত্যাগের সমস্যা দেখা দেয়।
কি কি কারণে জরায়ুমুখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয় :
(১) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিপান না করার কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে। মূলত পানি আমাদের মানবদেহের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। এজন্য আমাদের প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ।
(২) মহিলার ক্ষেত্রে এই উপর্সগটি বেশ কষ্টদায়ক। নারীদের পায়ুপথের খুব কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। ইহার ফলে পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করলেই জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
(৩) মাসিক কারণেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে। অনেকে নারী সে সময় অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন অথবা কাপড় ব্যবহার করে। এসব ন্যাপকিন অথবা কাপড়ের সাথেও জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে প্রবেশ করে সংক্রমণের সৃষ্টি করে।
জরায়ু ব্যথার কারণ কী?
অনেকে মহিলার তলপেটে ব্যথা এবং নিতম্বের ব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে মাসিক হওয়ার পূর্বে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। মাসিক হওয়ার সময় এ ব্যথা আরও বেড়ে যায়। মাসিক জনিত দীর্ঘমেয়াদি এই ব্যথা মূলত জরায়ু প্রাচীরের চারদিকে প্রদাহের কারণেই হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায়ও যোনিতে ব্যথার সৃষ্টির কারণ :
(ক) জরায়ুর বৃদ্ধি: গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যথা এটি একটি সাধারণ কারণ। জরায়ু ভ্রূণের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে আকারে কিছুটা বেড়ে যায়। ফলে এটি যোনি ও আশেপাশের পেশীগুলির উপর চাপ পড়ে ।
(খ) হরমোনের পরিবর্তন : গর্ভাবস্থা নারীদেহে হরমোনের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন যোনিকে অযাচিতভাবে শুষ্ক করে তোলার ফলে যৌন মিলনের সময় যোনিতে ব্যথা করে।
(গ) ভ্রূণের বৃদ্ধি : জরায়ুতে ভ্রূণের আকার বাড়ার সাথে সাথে নিতম্বের লিগামেন্ট গুলিও প্রসারিত হতে থাকে। যোনিকে ঘিরে থাকা লিগামেন্টের পেশীর অত্যধিক প্রসারণের ফলে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা করে। শিশুর ওজন পেলভিকের মেঝেতে চাপ তৈরি ফলেও যোনিতে ব্যথা সৃষ্টি হয়।
(ঘ) সংক্রমণ : সংক্রমণের কারণেও বাহ্যিক যৌনাঙ্গে এবং যোনিতে ব্যথা হতে পারে। আপনার যদি এসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে অবিলম্বে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ করুন। গর্ভাধারণকালে রোগীনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বিধায় এসময় মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে।
জরায়ুর বিভাজন : জরায়ুর প্রসারণের ফলে যোনিতে তীক্ষ্ণ এবং শ্যুটিংয়ের ন্যায় ব্যথা হতে পারে, তবে ব্যথা যদি তলপেটে হয় সে ব্যথা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে আপনাকে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।
পেলভিক অরগান প্রোল্যাপস (পিওপি) পিওপি হলো গর্ভাবস্থাকালীন এমন একটি অবস্থা যেখানে শ্রোণী অথবা তার আশেপাশের অঙ্গগুলি কখনও কখনও যোনিতে অথবা মলদ্বারে প্রবেশ করে। আপনি যদি তীব্র চাপ অনুভব করেন, আপনার অন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা বোধ করেন, তবে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। পিওপি চিকিৎসায় ভাল হয় তবে এটির চিকিৎসা না হলে মারাত্মক ব্যথা ও জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
জরায়ু ইনফেকশনে রোগীনির করণীয় :
(১) রোগীনিকে ডান পাশে কাত ঘুমানো উচিত এতে আপনার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং যোনি চাপমুক্ত থাকবে।
(২) একইভাবে আপনার পা উঁচু জায়গায় রেখে বসবেন। গর্ভাবস্থায় যোনিপথের চাপ অনেকাংশে হ্রাস করতে এটি সহায়ক। ফলে যোনিতে ব্যথাও কমে যায়।
(৩) সাঁতার এবং যোগ ব্যায়ামের মতো সাধারণ অনুশীলনগুলো শরীরে রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেশী শক্তিশালী করে। এভাবে যোনির ব্যথা উপশম করা সম্ভব।
(৪) নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ করলে যোনির চাপ ও ব্যথা থেকে উপশম পেতে পারেন।
(৫) যদি আপনার পেট বিশাল বড় হয়, তবে বুঝে তবে বুঝতে হবে মাথা যোনিতে চাপ দেয়ার ফলে এট হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার করলে সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
(৬) গর্ভাবস্থায় যোনির ব্যথা অস্বস্তিকর হতে পারে যদিও এটি মহিলাদের একটি সাধারণ সমস্যা। জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনে যোনির ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। তবে যদি রোগীনি মনে করেন, ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়েও খারাপ, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ :
জরায়ু ইনফেকশরের অন্যান্য কারণের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের জন্যও জরায়ু ইনফেকশন হতে পারে। জরায়ু ইনফেকশনের ফলে তলপেটে এবং কোমরের নিচে ব্যথা করে এবং সে ব্যথা লাগাতার চলতে থাকে। জরায়ু ইনফেকশনের কিছু পরিচিত লক্ষণ হলো : এবনরমাল স্রাব, জ্বর, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
জরায়ু ইনফেকশনের আরও কিছু লক্ষণ :
(ক) অনিয়মিত মাসিক এবং জ্বর জ্বর লাগে।
(খ) মাসিকের সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা করে।
(গ) সহবাসে ব্যথা অনুভূত হয়।
(ঘ) মল-মূত্র ত্যাগকালে যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হয় ও ব্যথা করে।
(ঙ) হাত, পা, শরীর আগুনে পোড়ার মত জ্বালা করে।
(চ) প্রস্রাবের সময় ও পরে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক বেদনা করে।
(ছ) জরায়ুর গ্রীক ফোলা ও শক্ত শক্ত লাগে।
(জ) কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অত্যন্ত ক্লান্তিকর অনুভূতি মনে হয়।
উপরের এই লক্ষণগুলোর তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। এছাড়াও কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও আপনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ এ রোগের জীবাণুগুলো জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
কিভাবে জরায়তে সংক্রমণ ঘটে?
জরায়ু সাধারণত ক্ল্যামাইডিয়া, ব্যাকটেরয়েডস, ই. কলাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, গনোরিয়া জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। জীবাণুগুলো যৌন মিলনের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু ও ট্রাইকোমোনাড (যা পুরুষের যৌনাঙ্গে থাকে) মিলনের মাধ্যমে বাহিত হয়ে যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে। পরে জরায়ু, নালী হয়ে ডিম্বাশয়েও এই ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
মহিলাদের যৌনাঙ্গে অবস্থিত সার্ভিক্স ব্যাকটেরিয়াকে ইউরেটাসে প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। সন্তান জন্মদান অথবা সার্জারির সময় কার্ভিক্স খোলা থাকায় এসময়ও ব্যাকটেরিয়া সহজে জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে।
জরায়ু ইনফেকশনের ডায়াগনোসিস :
জরায়ু ইনফেকশনের নির্ণয়ের জন্য ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন পড়ে। জরায়ুর মুখ অথবা মূত্রনালী থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণুর উপস্থিতি নিরূপণ করা হয়। এছাড়া সংক্রমণ আছে কিনা তার জন্য রক্ত, ইউরিন পরীক্ষা ও অ্যাবডমিনাল আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কপি পরীক্ষার মাধ্যমেও জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।
জরায়ু ইনফেকশনের ঝুঁকি বেশি কোন নারীরা :
প্রতিবছর সারাদেশে প্রায় ৯ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করা নারীদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। গ্রামীণ মহিলারা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। প্রথমে তাদের জরায়ু-তে ইনফেকশন, এবং পরে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে ক্যান্সারে রূপ নেয়। অনেকে নারী লজ্জার কারণে চিকিৎসাও নিতে চায় না। তারা শরীরে রোগ পুষে রাখে। অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনের ফলে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এছাড়াও অপরিণত বয়সে বিয়ে এবং ঘন ঘন প্রেগন্যান্সি অথবা ডেলিভারির কারণে জরায়ু ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। যেসব মহিলার বহুগামী কিংবা স্বামীরা অনেকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক আছে। এমন ক্ষেত্রেও নারীদের এইচপি (Human Papilloma Virus) ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা//পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজের (পিআইডি) হোমিওপ্যাথিক ওষুধ :
(১) ক্রিয়োজোটাম (Kreositum) : সহবাসের সময় ব্যথা সহ পেলভিক প্রদাহ ও পিআইডি, যৌন মিলনের সময় ব্যথা হয় (ডিসপারেউনিয়া)। ব্যথার সাথে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া করে শ্রোণী প্রদাহ। এছাড়াও যৌন মিলনের পরে রক্তপাত হয়। উপরোক্ত উপসর্গের পাশাপাশি আপত্তিকর, চুলকানি, ক্ষয়কারী লিউকোরিয়া হতে পারে। মাসিকের মধ্যেও লিউকোরিয়া আরও খারাপ হয়ে যায় এবং প্রায়ই কাপড়ে হলুদ দাগ লাগে এ ক্ষেত্রে ক্রিয়োজোটাম উপকারী।
(২) সিপিয়া সাকাস (Sepia succus) : তলপেটে পেলভিক এরিয়াতে ব্যথা সহ পিআইডি-র জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ সিপিয়া সাকাস হলো তলপেটে অথবা পেলভিক এলাকায় চিহ্নিত ব্যথার সাথে পিআইডির চিকিৎসার জন্য এটিচমৎকার হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। পেলভিক ব্যথার পাশাপাশি, শ্রোণীতে একটি বিশিষ্ট ভারবহন ও সংবেদন সহায়তা করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিপিয়া সাকাস প্রয়োজন, জরায়ুতে জ্বালাপোড়া অথবা গ্রিপিং থাকে। হলুদ বা সবুজাভ যোনি স্রাবও হতে পারে যা অত্যান্ত আপত্তিকর হতে পারে।
(৩) মার্ক সল (Merc Sol) : যোনি স্রাব সহ পিআইডি এর জন্য কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। মার্ক সল হলো অত্যধিক যোনি স্রাবের পিআইডি এর জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। মার্ক সল এর লক্ষণ গুলির মধ্যে রয়েছে – তীব্র, উত্তেজনাপূর্ণ, এবং চুলকানি স্রাব যা যোনিতে জ্বলন্ত সংবেদন সৃষ্টি করে। স্রাব পুষ্প, হলুদ বা সবুজ হতে পারে। প্রস্রাবের সময় স্রাব আরও খারাপ হতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরায়ুতে সেলাই ব্যথা হতে পারে। উপরন্তু, একটি স্টিংিং ডিম্বাশয় ব্যথা করে ।
(৪) ফসফরাস (Phos Phorus) : পিরিয়ড বা মাসিকের মধ্যে জরায়ু থেকে রক্তপাতের সাথে পিআইডির প্রাকৃতিক প্রতিকার হলো ফসফরাস ঔষধ। যেখানে পিরিয়ডের মধ্যে জরায়ু থেকে রক্তপাত হয়। জরায়ু থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। দুর্বলতাসহ সাধারণত মাসিক রক্তপাত অনুসরণ করে। এছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ডিম্বাশয়ের ব্যথা (বিশেষত বাম-পার্শ্বযুক্ত)। মাসিক বা পিরিয়ডের সময় ডিম্বাশয়ের ব্যথা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। সাদা অথবা জলযুক্ত শ্লেষ্মার লিউকোরিয়া উপস্থিত হতে পারে। লিউকোরিয়া সহ পেটে একটি দুর্বল সংবেদন থাকতে পারে।
(৫) সাবিনা অফিশনালিস (Sabina Off) : ভারী পিরিয়ড সহ পিআইডি ভারী পিরিয়ড সহ পেলভিক প্রদাহজনিত রোগের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সাবিনা অফিশনালিস ওষুধ। পিরিয়ডগুলি প্রচুর এবং প্রস্ফুটিত প্রকৃতির হয়। রক্তপাত উজ্জ্বল লাল রঙের এবং গাঢ় জমাট বাঁধা। রক্তে আপত্তিকর দুরগন্ধ থাকতে পারে। রক্ত প্রবাহের গতি খারাপ হতে থাকে। স্যাক্রাল পিঠে ব্যাথা পিউব পর্যন্ত প্রসারিত হয়। জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের প্রদাহের সাবিনা অফিশনালিস করা হয় যা প্রসব বা গর্ভপাতের পরে ঘটতে পারে।
(৬) মেডোরিনাম (Medorrhinum) : বেদনাদায়ক পিরিয়ড সহ পিআইডি- যেখানে মহিলার তীব্র বেদনাদায়ক সময়কাল অনুভব করে। ওভারিয়ান ব্যাথার সাথে পেলভিক এরিয়াতে যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথা আছে যা চাপ দিলে ভালো হয়ে যায়। মাসিকের সময় রক্তপাত প্রচুর, অন্ধকার এবং আপত্তিকর। যোনিপথে তীব্র প্রকৃতির স্রাব এবং মাছের মতো গন্ধও থাকে এ ক্ষেত্রে মেডোরিনাম কার্যকরী।
সময়মতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা :
যথাসময়ে আপনি যদি জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা না করান তবে দীর্ঘমেয়াদী হলে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে আপনি দীর্ঘদিন ধরে তলপেট ব্যথা, কোমর ব্যথা করে সে ক্ষেত্রে ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে বা জরায়ু অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারণে অক্ষমতা হারিয়ে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সিও (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) হওয়ারও আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়াও প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে অসমেয় গর্ভপাত, সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব ও কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানেরও ঝুঁকি থাকে। আর গর্ভবতী নয় এমন মেয়েদের ক্ষেত্রে পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ এর আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এটি (sexually transmitted disease) যেমন- ক্লামাইডিয়া, গনোরিয়া, HIV ইত্যাদি-এ সংক্রমিত হওয়ার পথকে সুগম করে। তবে মনে রাখবেন এটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। শুধু আপনি যদি একটু সচেতনতা থাকলে মারাত্মক জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।