অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ ও করণীয় কী?
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ ও করণীয় কী? অনিয়মিত মাসিক হলে করণীয়, কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন ও জীবনযাপনে পরিবর্তন করতে হবে তা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
একজন নারীর শরীরে অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি প্রচলিত সমস্যা। সাধারণত একজন নারীর জীবনে ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে সেটি নিয়মিত ঋতুস্রাব। আর যদি ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয় তবে সেটিকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বলা হয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব সাধারণত একজন মহিলার যৌবনের প্রারম্ভে এবং যৌবন শেষে হতে পারে। মহিলাদের যৌবনের প্রারম্ভে সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বয়সে আবার কারো শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন যদি অপরিপক্ব (প্রিমেচিউর) থাকে তবে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিক হয়। আবার অনেক সময়ে নারী শরীরে মেনোপজ শুরু হওয়ার আগে এ ধরনের সমস্যা হয়। এ ছাড়া শারীরিক জটিলতার বিভিন্ন ধরনের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিকের কারণ :
(১) শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে এই সমস্যা হতে হয়।
(২) বিবাহিত নারীরা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করে দিলে হতে পারে।
(৩) বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের ফলে এ সমস্যা হতে পারে।
(৪) শরীরের রক্ত কমে গেলে অথবা এনিমিয়া হলে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
(৫) অনেকের ক্ষেত্রে ওজন বেড়ে গেলে এই ধরণের সমস্যা হয়।
(৬) জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতার কারণেও হতে পারে।
(৭) যৌন মিলনের সময় পুরুষের শরীর থেকে আসা অসুখের কারণে হতে পারে। যেমন – গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি।
(৮) শরীরে টিউমার ও ক্যানসার ইত্যাদি অসুখ থাকলে হতে পারে।
(৯) প্রি মেনোপজের সময় হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে।
(১০) যেসব নারীরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান সেসব নারীর অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিকের সমস্যা হতে পারে।
(১১) প্রতিমাসে নিয়মিত ঋতুস্রাব বা মাসিক হয় না। এক মাসে মাসিক হলে হয়তো আরেক মাসে হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে দুই-তিন মাস পরপর আবার হয়ে থাকে।
(১১) ঋতুস্রাব বেশি সময় ধরে হয় আবার কখনো অল্প রক্ত¯্রাব হয় আবার কখনোও বেশি পরিমাণে হয়।
(১২) এ সমস্যা হলে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
(১৩) অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হতে পারে।
(১৪) এ ছাড়া মেজাজ খিটখিটে থাকা এবং অস্বস্তিবোধ বোধ করে ।
অনিয়মিত মাসিক হলে করণীয় :
রোগী যদি চিকিৎসকের কাছে যায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত হরমোনাল থেরাপি দেওয়া হয়। আবার কারো ক্ষেত্রে যদি বেশি ওজনের জন্য এই সমস্যা হয়ে থাকে তবে ডায়েট ও ব্যয়াম করতে বলা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে মেয়েদের পাশাপাশি মাকেও পরামর্শ (কাউন্সিলিং)পরমর্শ দেওয়া হয়। আর সন্তান ধারণক্ষম বয়সে সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। যদি তার বেশি রক্তপাত তা হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। তবে মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
(ক) যদি আপনার বছরে তিন বারের বেশি ঋতুস্রাব না হয়।
(খ) যদি ঋতুস্রাব বা মাসিক ২১ দিনের আগে এবং ৩৫ দিনের পরে হয়।
(গ) ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় বেশি রক্তপাত হয়।
(ঙ) ঋতুস্রাবের সময় প্রচন্ড ব্যথা হলে।
জীবনযাপনে পরিবর্তন করুণ
(১) শরীরের ওজন সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
(২) মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুণ ।
(৩) পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় রাখুন ।
(৪) বেশি করে আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে যাতে শরীরে পরিমিত পরিমাণে রক্ত থাকে।
ডা. সামছাদ জাহান শেলী -: সহযোগী অধ্যাপক, বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।