অতিরিক্ত ঋতুস্রাবে অবহেলা করলে ফল হতে পারে মারাত্মক
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মেয়েদের সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া পদ্ধতি কি তা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
কোভিডের ভয়ে অন্যান্য অসুখ বিসুখের চিকিৎসা প্রায় বন্ধের মুখে। অথচ কোনও রোগই কিন্তু থেমে নেই। মেয়েদের অনেকেই ঘর আর অফিস সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে নিজের শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভাবার অবকাশ পাচ্ছেন না। মেয়েদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হচ্ছে তা অবহেলা করলে ফল হতে পারে মারাত্মক। যে সব নারী অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা যদি সঠিক চিকিৎসা না করান, তাহলে ঔই সব নারীর অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, অন্য দিকে সমস্যাটা আরও জটিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, আমাদের দেশের ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সের মেয়েরা ১০০ জনের মধ্যে ১৬ জন মেনোরেজিয়া অর্থাৎ অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভোগেন।
প্রশ্ন থেকে যায, মেনোরেজিয়া বা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব কখন বলা হয়? অভিনিবেশ জানালেন, সাধারণত প্রতিটি নারীর ঋতুচক্রে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ মিলিলিটার রক্ত বেরোয়। কিন্তু যখন ৮০ মিলিলিটার অথবা তার থেকে বেশি রক্তপাত হয় তখনই ভারী রক্তক্ষরণ-সহ অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা ‘হেভি মেনস্ট্রুয়াল ব্লিডিং’ বলে। তবে মিলিলিটার দিয়ে মাপ বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। যখন প্রতি ২-২.৫ ঘণ্টা পর পর ন্যাপকিন পরিবর্তন করা হয় তখন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-সহ ভারী ঋতুস্রাব ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে ঋতু¯্রাবকালীন অবস্থা ৪ দিনের বেশি, আবার কখনও ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋতু¯্রাব হয় ২৮ দিন পর এবং ৩-৫ দিন চলে। ৪৫ বছর বয়সের পর ঋতুস্রাবের মাত্রা অনেক কমে যায়। যদি ৫০ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যদি অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়, তা কিন্তু মারাত্মক অসুখের লক্ষণ হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করা ঠিক নয়।
স্ত্রী রোগ চিকিৎসক পলি চট্টোপাধ্যায় জানান, মহিলাদের মধ্যে ঋতু¯্রাবজনিত সমস্যা নিয়ে আগের থেকে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। একই সঙ্গে রোগ নির্ণয় পদ্ধতি আগের থেকে অনেক উন্নত হওয়ার ফলে চট করে সমস্যা বোঝা যাচ্ছে। তাই আপাতভাবে মনে হতে পারে মেনোরেজিয়ার সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার পেটে ব্যথা হলে অনেকেই নিজের থেকে অতিরিক্ত ওষুধ কিনে খান। এর ফলে সমস্যা জটিল থেকে আরও জটিল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা করলে সতর্ক হন আজই।
মেনোরেজিয়া অথবা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হলে বা লাগাতার চলতে থাকলে রোগী ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন, এতে অ্যানিমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, অল্প পরিশ্রম করলে হাঁপিয়ে ওঠেন, শ্বাসকষ্ট হয়। তাই মেনার্কি শুরুর পর ঋতুস্রাব স্থায়ী হওয়ার পর যদি লাগাতার অতিরিক্ত ঋতুস্রাব চলতে থাকে বিশেষ করে মেনোপজের পরেও যদি আচমকা ঋতুস্রাব শুরু হয় তা হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারী ঋতুস্রাবের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। পলি চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ঋতুস্রাব শুরুর সময় এবং মেনোপজের সময় ভারী ঋতুস্রাবের প্রবণতা বেড়ে থাকে। এ ছাড়া ইস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরন ও থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণেও ভারী ঋতুস্রাব বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।
কিছু অসুখ যেমন – ইউটেরাসের ফাইব্রয়েড, অ্যাডিনোমায়োসিস, এন্ডোমেট্রিওসিস, পলিপ , টিউমার এবং বিরল হলেও কিছু কিছু ক্যানসারের কারণেও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব ও তলপেটেও ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় ক্যানসারের কারণ অথবা রক্তের অসুখের জন্যেও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়। তাই সেলফ মেডিকেশন না করে অবশ্যই একজন স্ত্রী রোগ বিশেশজ্ঞকে দেখানো উচিত। ভারী ঋতুস্রাবের সঙ্গে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার একটা সম্পর্ক আছে। এখন এই সমস্যা তাই আরো বেড়েছে। যাঁরা চাকরি করেন অথবা নিজেদের পেশা নিয়ে ব্যস্ত, তাঁদের শরীর ও মনের চাপ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশি থাকে। আসলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, কথায় কথায় ওষুধ খাওয়া সর্বোপরি রোজকার জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে মেয়েদের শরীরের নানা হরমোনের ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে যায়। এরই নিট ফল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-সহ ঋতুস্রাব ও তলপেটের ব্যথা হওয়ার কারণ।পেটে ব্যথা ও রক্তক্ষরণের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে রোগী এলে শুরুতে পেলভিক এক্সামিনেশন করা হয়। এরপর তাকে আলট্রাসনোগ্রাফি, টিভিএস অর্থাৎ ট্র্যান্স-ভ্যাজাইনাল, সনোগ্রাফি, রক্তের বিভিন্ন রুটিন পরীক্ষা, হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে ল্যাপারোস্কোপ দিয়ে দেখে নিতে হয়, বলে জানালেন পলি।
অনেকেই অস্ত্রোপচারের ভয়ে চিকিৎসকের কাছে আসতে চান না। ফল ভুগতে হয় নিজেদেরই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ-সহ ঋতুস্রাবের সমস্যা শুরুতেই চিকিৎসা নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। হরমোনের সমস্যা থাকলে হরমোন ওষুধ দেওয়া হয়। অন্য সমস্যা থাকলে সেই মতো চিকিৎসা করা হয়। পলিপ বা ফাইব্রয়েড অথাব এন্ডোমেট্রিয়োসিস থাকলে ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন সুস্থ থাকুন।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।