সিপিয়া (Sepia)
ডা: ইইলিয়াম বরিক।
পরিচয়- কাটলফিস নামক মাছের দেহ হইতে নিঃসৃত কাল বর্ণ পদার্থ বিশেষ।
শিরায় রক্তধিকাসহ যকৃৎবিধানের উপর বিশেষরুপে ক্রিয়া করে। রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়ার বাধাহেতু কোষ্ঠের পক্ষাঘাত এবং ক্লান্তিভাব ও বিষাদ। দুর্বলতা, হরিদ্রাবর্ণ চর্ম, জরায়ু প্রভৃতি ঠেলিয়া বাহির হওয়ার ন্যায় অনুভুতি বিশেষথঃ নারীদের পক্ষে, কারণ তাহাদের উপরেই ইহার ক্রিয়া বিশেষভাবে পরিলক্ষিথ হয়। বেদনা পিঠ হইতে নীচের প্রসারিত হয় এবং সে সহজেই শীতার্ত হইয়া উঠে। গর্ভস্রাবের প্রবণতা। রজঃনিবৃত্তিকালে উত্তাপের আবেশ ও ধর্ম নিঃসরণ। লক্ষণগুলির উপরদিকে উঠার প্রবণতা। সহজে মূর্ছা যায়। মনে হয় আভান্তরিক যন্ত্রে কি-যেন গোলার মত পদার্থ রহিয়াছে। সিপিয়া শ্যামবর্গা নারীদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। যাবতীয় বেদনা নীচ হইতে উপরদিকে উঠে। জরায়ু সংক্রান্ত একটি বিশেষ মূল্যবান ঔষধ। পুরাতন মরুৎ-পীড়া এবং জরায়ু রোগগ্রস্তা যক্ষ্মাসম্ভবা নারী। গরম ঘরে থাকিলে শীত বোধ করে। মস্তকের উপরে দপদপকর শিরঃপীড়া।
মন : অতি ভালবাসার জনের উপরেও উদাসীনতা। কাজকর্মে অনিচ্ছা। পরিবারস্থ লোকজনের উপরে বিরক্তি। কোপন স্বভাব, অতি সহজে অপমানিত বোধ করে। একাকী থাকিতে ভয়। অত্যন্ত বিমর্ষ। রোগলক্ষণগুলি বলিবার সময় কাঁদিয়া ফেলে। কৃপণ স্বভাব। সন্ধ্যাকালে উদ্বিগ্ন হইয়া উঠে। অলস প্রকৃতি ।
মস্তক : শিরঃ ঘূর্ণন, মনে হয় মাথার মধ্যে কিছু গড়াইতেছে। সন্ন্যাস রোগের প্রারম্ভিক লক্ষণাবলী। হলবিদ্ধবৎ বেদনা,—ভিতর হইতে বাহির- দিকে এবং ঊর্ধ্বগামী,– প্রায়শঃ বাম পার্শ্বে বা কপালে, তৎসহ বমনেচ্ছা ও বমন: ঘরের ভিতরে অথবা আক্রান্ত | পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে বৃদ্ধি। সম্মুখ ও পশ্চাদ্দিকে প্রবল ধাক্কায় প্রবল শিরঃপীড়া। চুল পড়িয়া যায়। ব্রহ্মরন্ধু খোলা থাকে। চুলের গোড়া স্পর্শকাতর। কপালে চুলের গোড়ায় ফুসকুড়ি।
নাসিকা : ঘন সবুজাভ স্রাব। ঘন সর্দি জমিয়া থাকে, মামড়ি পড়ে। নাসিকার গোড়ায় ঘোড়ার জিনের মত হরিদ্রাবর্ণ দাগ। ক্ষয়কর সর্দি, নাকের পশ্চাৎ হইতে সবুজাভ মামড়ি বাহির হয়, নাকের গোড়ায় বেদনা। পুরাতন নাসিকার সর্দি, বিশেষতঃ নাসিকার পশ্চাদ্ভাগের, ভারি, দলা দলা শ্লেষ্মা বাহির হয়, গলা খেঁকারি দিয়া উহা মুখের ভিতর দিয়া বাহির করিতে হয়।
চক্ষু : পেশী সংক্রান্ত ক্ষীণ দৃষ্টি। দৃষ্টিপথে কাল কাল দাগ দেখে। দুর্বলকর প্রদাহ, তৎসহ জরায়ু সংক্রান্ত উপদ্রব। সকাল ও সন্ধায় চক্ষুর উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। চক্ষুপাতায় অর্বুদ, ভ্রূপতন, চক্ষুপাতার উপদাহ, অধঃদেশে শৈরিক রক্তসঞ্চয়।
কর্ণ : ঘাড়ের উপর ও কর্ণের পশ্চাতে দশ্রু। বেদনা, যেন উপচর্মে ক্ষত দেখা দিয়াছে। বাহ্য কর্ণের স্ফীতি ও পীড়কা।
মুখমণ্ডল : স্থানে স্থানে হলুদবর্ণ দাগ। মখশ্রী বিবর্ণ ও রক্তশূনা। মুখগহবরের চারিদিকে হরিদ্রাবর্ণ গোলাপীবর্ণ বয়ঃব্রণ। নাকের গোড়ায় ও গণ্ডস্থলে ঘোড়ার জিনের মত পিঙ্গলবর্ণ দাগ।
মুখগহ্বর : জিহা সাদা। স্বাদ লবণাক্ত : দুর্গন্ধযুক্ত। জিহা অপরিষ্কার, কিন্তু ঋতুকালে পরিষ্কার হইয়া যায়। নিম্ন ওষ্ঠের স্ফীতি ও ফাটা ফাটা । সন্ধ্যা ৬টা হইতে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত দন্তশূল ; শয়নে বৃদ্ধি।
পাকস্থলী : খালি খালিবোধ, উহা আহারেও কমে না (কার্বো এনি)। খাদ্যবস্তুর গন্ধ ও দর্শনে বমি বমিভাব । এক পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে বমি বমিভাবের বৃদ্ধি। ধূমপানজনিত অগ্নিমান্দ্য। সবকিছুই লবণে পোড়া বোধ হয় (কার্বো ভেজ, চায়না)। কুক্ষিদেশের উপর দিয়া চারি ইঞ্চি প্রশস্ত একটি বেদনার বন্ধনী রহিয়াছে–এরূপ অনুভূতি। প্রাতঃকালে আহারের পূর্বে বমি বমিভাব। আহারের পরে বমন করিবার প্রবৃত্তি। পাকস্থলীগহবরে জ্বালা। ভিনিগার, অম্ল দ্রব্য, চাটনি প্রভৃতি খাইবার ইচ্ছা। দুধ খাওয়ার পর বৃদ্ধি, বিশেষতঃ জ্বাল দেওয়া দুধ। অম্ল লক্ষণযুক্ত অগ্নিমান্দ্য, তৎসহ পেটফাঁপ ও অম্ল উদ্গার। চবিযুক্ত খাদ্যে ঘৃণা।
উদরগহ্বর : শিরঃপীড়াসহ পেটফাঁপা ৷ যকৃতে বেদনা ও টাটানি, দক্ষিণ পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে উপশম। তলপেটের উপর বহু পিঙ্গলবর্ণ দাগ। তলপেট ঝুলিয়া পড়িয়াছে মনে হয়, এবং সবকিছু ঠেলিয়া বাহির হইতেছে–এরূপ অনুভূতি।
সরলান্ত্র :গুহ্যদেশে পূর্ণতা বোধ এবং মলত্যাগকালে রক্তস্রাব। কোষ্ঠবদ্ধতা, বৃহৎ, কঠিন মল। মনে হয় গুহ্যদ্বারে একটি বল রহিয়াছে। জোরে কোঁথ দিতে পারে না। অত্যন্ত কোঁথানি এবং বেদনা উপরদিকে ছুটিয়া যায়। কাল, বাদামীবর্ণ, গোল গোল বলের মত মল আম জড়াইয়া একত্র গ্রথিত থাকে। নরম মলও কষ্টে নিঃসারিত হয়। গুহ্যদ্বার নির্গমন (পড়ো)। গুহ্যদ্বার হইতে প্রায় সব সময়েই রস চোয়ায়। শিশুদের উদরাময়, জ্বাল দেওয়া দুধ খাওয়াইলে বৃদ্ধি এবং দ্রুত অবসাদ আসে । গুহ্যদ্বার ও যোনিদ্বার হইতে বেদনা উর্ধ্বদিকে ছুটিয়া যায়।
মন্ত্রযন্ত্র : মূত্রে লাল বালুকণা, তাহা পাত্রে লাগিয়া যায়। প্রথম ঘুমের মধ্যে অসারে মুত্রপাত। পুরাতন মন্ত্রাশয়-প্রদাহ। ধীরে ধীরে প্রস্রাব হয়, তৎসহ যোনিপিঠে নীচের দিকে ঠেলামারা বেদনা।
পুং-জননেন্দ্রিয় : লিঙ্গ শিথিল। দুর্গন্ধযুক্ত ঘর্ম। লালামেহ। মূত্ৰনলীপথে স্রাব; বেদনা থাকে না। রাত্রিতে মুত্রনলী পথে স্রাব, বেদনা থাকে না। লিঙ্গুমুণ্ডে ক্ষুত্র ক্ষুদ্র গুটিকা সঙ্গমে যন্ত্রনা।
স্ত্রী-জননেন্দ্রিয় : বস্তিপ্রদেশস্থ যন্ত্রসমূহ শিথিল। নিম্নদিকে ঠেলামারা বেদনা, যেন সবকিছুই যোনিপথে বাহির হইয়া পড়িবে ( বেল, ক্রিয়ো, ল্যাক ক্যানি, লিলিয়াম, নেট্রাম কার্ব, পড়ো ); জরায়ু নির্গমন দমন করিবার জন্য পারের উপর পা দিয়া বসিতে হয় অথবা, যোনিকপার্ট চাপিয়া ধরিতে হয়। প্রদরস্রাব– হরিদ্রাবর্ণ, সবুজাভ, তৎসহ অত্যান্ত চুলকানিযুক্ত। ঋতুস্রাব অতি বিলম্বে প্রকাশিত, স্বল্প পরিমাণ এবং অনিয়মিত, অথবা ঋতুস্রাব অগ্রবর্তী এবং প্রচুর, তৎসহ তীব্র চাপিয়া ধরার ন্যায় বেদনা। যোনিপথের উর্ধ্বদিকে জরায়ু ও নাভিদেশ পর্যন্ত তীব্র খোঁচামারা বেদনা। জরায়ু ও যোনিপথের স্থানচ্যুতি। প্রাতঃকালীন বিবমিষা। যোনিপথ বেদানান্বিত, বিশেষতঃ সঙ্গমকালে ।
শ্বাসযন্ত্র : শুষ্ক ক্লান্তিকর কাশি, মনে হয় যেন, পাকস্থলী হইতে উঙ্খিত হইতেছে। কাশিতে পচা ডিমের গন্ধ। সকাল ও সন্ধ্যায় বক্ষে চাপ বোধ। শ্বাসকৃচ্ছতা, নিদ্রার পর বৃদ্ধি, দ্রুত সঞ্চালনে উপশম। প্রাতঃকালে কাঁশি, তাহাতে প্রচুর শ্লেষ্মা উঠে, স্বাদ লবণাক্ত (ফস, এম্ব্রা)। ফুসফুস আবরকে রসসঞ্চয়, তাহার তলানি ফুসফুস আবরকের মধ্যে জনিরা থাকে। হুপিং কাশি কিছুতেই সারিতে চাহে না। স্বরযন্ত্র অথবা সুড় সুড় করিয়া কাশির উদ্রেক হয়।
হৃৎপিণ্ড : প্রবল, সবিরাম বুক ধড়ফড়ানি। সমস্ত ধমনীতে স্পন্দন। উত্তাপের ঝলকার সহিত কম্পানুভূতি।
পৃষ্ঠদেশ –পৃষ্ঠের নিম্নাংশে দুর্বলতা। বেদনা পিঠের ভিতরে প্রসারিত হয়। স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যে শীতলতা ।
হস্ত-পদাদি : নিম্নাঙ্গ খঞ্জবৎ এবং শক্ত, টানভাব যেন ঐগুলি ছোট হইয়া গিয়াছে। ভার বোধ ও থেঁৎলানবৎ। সকল অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ অস্থির, দিবা-রাত্রি স্পন্দন ও ঝাঁকুনি। গোড়ালিতে বেদনা। জানু ও বদদ্বয় ঠাণ্ডা।
জ্বর : পুনঃপুনঃ উত্তাপের ঝলকা, সামান্য সঞ্চালনে ঘর্ম সাধারণ ভাবে দেহে উত্তাপের অভাব। পদদ্বয় ভিজা ভিজা ও ঠাণ্ডা। পিপাসার সহিত কম্পন। সন্ধ্যাকালে বৃদ্ধি।
চর্ম : বিভিন্ন স্থানে চক্রাকার দদ্রু রোগ। চুলকানি, চুলকাইলে কমে না। জানু ও কনুইয়ের ভাঁজে বেশী। বুসিকা। ওষ্ঠের উপর, নাসিকা ও মুখের চারিদিকে দশ্রুবৎ পীড়কা। প্রতি বৎসর বসন্তকালে দশ্রুবৎ পীড়কা জন্মে।। শীত-পিত্ত, খোলা বাতাসে গেলে প্রকাশ পায়, গরম ঘরে উপশমিত হয়। অতি ঘর্ম ও দুর্গন্ধযুক্ত ধর্ম। পদ-ধর্ম, পদাঙ্গুলিতে অধিক, অসহ্য দুর্গন্ধ। যুবতীগণের মাস্তে রোগ (Lentigo) মীনবক্কিকা, তৎসহ চর্মে দুর্গন্ধ।
উপচয়, উপশম : বৃদ্ধি– দুপুরের পূর্বে ও সন্ধ্যাকালে, ধৌত করিলে, কাপড় কাঁচিলে, ভিজা স্থানে, বাম পার্শ্বে, ঘর্মের পরে, ঠাণ্ডা বাতাসে, ঝড় বৃষ্টির পূর্বে।
উপশম : ব্যায়ামে, চাপে, শয্যার উত্তাপে, উষ্ণ কিছু লাগাইলে, পা গুটাইয়া বসিলে, ঠাণ্ডা জলে স্নানে, নিষ্প্রান্তে।
সম্বন্ধ : অনুপূরক– নেট্রাম মিউর, ফস, নাক্স — সিপিয়ার ক্রিয়া বৃদ্ধি করে। অনেক ক্ষেত্রে সিপিয়ার পরে গুয়াইকাম উপযোগী। পূর্বে বা পরে খাটে না—ল্যাকে, পালস।
তুলনীয় : লিলিয়াম, মিউরেক্স, সাইলি, সালফ, এপেরুলা–ন্যাসেন্ট অক্সিজেন–পরিস্রুত জলে অক্সিজেন গ্যাস চালাইয়া প্রস্তুত করা হয় (যুবতীদিগের প্রদরস্রাব এবং জরায়ুর সর্দি); ওজোনাম (ত্রিকাস্থির বেদনা, বস্তি ও মূলাধারের ভিতর দিয়া ক্লান্তি অনুভব); ডিক্টেনাস —বার্নিং বুস (প্রসববেদনা শান্ত করে ; অতিস্রাব, প্রদরস্রাব, কোষ্ঠবদ্ধতা এবং স্বপ্ন-সঞ্চরণ); লেগেথাম (প্রদরস্রাব, তৎসহ সঙ্কোচন, জরায়ুতে ঠেলামারা বেদনা ও মূত্রগ্রন্থিতে যাতনা)।
মাত্রা : ১২শ, ৩০শ, এবং ২০০তম শক্তি। অতি নিম্নশক্তি অথবা পুনঃপুনঃ প্রয়োগ করিবে না। পক্ষান্তরে ডাঃ জোসেট তাঁহার অভিজ্ঞতা হইতে বলেন যে, অধিক মাত্রায় কিছুকাল যাবৎ ব্যবহার করা উচিত; দিনে ১X শক্তি ২ বার।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।