মাসিকের পূর্বে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো মাসিকের পূর্বে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি কেন তা নিয়ে আজকে জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
প্রশ্ন: মাসিক চক্রের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়? এ বিষয়টা আমি খেয়াল করে দেখেছি, পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঠিক আগে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রণিধানযোগ্য কোনও গবেষণা এখন পর্যন্ত নেই, এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে মাসিকের আগে নারী অসুস্থ হতে পারে। তবে কিছু কিছু ইংগিতও মিলেছে, যা থেকে বলা যায়, এমনটা হতে পারে।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা যায়, পিরিয়ডের আগে অথবা মাঝের কোনো এক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ওঠা-নামা করে। আবার দীর্ঘ মেয়াদী কোনো পুরনো রোগ থাকলে সেটা হয়ত মাসিকের সময়ই বাড়তে পারে। এতে মনে হতে পারে নতুন কোনো অসুখ শরীরে বাসা বেঁধেছে।
মাসিক শুরু হওয়ার ঠিক আগে অনেক নারী এমন কিছু উপসর্গ অনুভব করার কথা বলেছেন, বলা যেতে পারে এ গুলো অনেকটা ফ্লুর মত। শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, গা-ব্যথা, বিষণ্নতা দেখা যায়।
এনওয়াইইউ ল্যানগোন হেলথের গাইনোকলজিস্ট তারানেহ শিরাজিয়ান বলেন, পিরিয়ড বাসিকের সময় ওই ফ্লুর মত উপসর্গ কোনো জীবাণু সংক্রমণের কারণে হয় না। আপনার এ সময় জরায়ু সংকুচিত হয়ে কোষের মৃত্যু ঘটে। মাসিকের সময় আপনার শরীরে যে স্বাভাবিক প্রদাহ হয়, তারই বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তার প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটিই ফ্লুর উপসর্গের মত মনে হয়। অবশ্য হরমোনের ওঠানামার কারণে এ ধরনের উপসর্গ হতে পারে বলে জানালেন এই চিকিৎসক। আপনার শরীরে ডিম্বাণু নিঃসৃত হওয়ার ঠিক আগে লিউটিনাইজিং হরমোন অথবা এলএইচ বেড়ে যায় এবং পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হলে দ্রুত নেমে যায়। এলএইচের এই পরিবর্তনের কারণে ক্লান্তি, ঢেকুর ওঠা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাবও হতে পারে।
ডাক্তার শিরাজিয়ান বলেন, “কোনো কোনো নারীর বেলায় প্রতি পিরিয়ড বা মাসিক, প্রতি মাসে এসব উপসর্গ প্রবল ভাবে দেখা দিতে পারে।” পিরিয়ড বা মাসিক ট্র্যাকিং অ্যাপ ক্লু এবং গবেষকদের এক যৌথ জরিপে আরও কিছু জটিলতার তথ্য জানা গেছে। যেমন- অন্ত্রের প্রদাহ, মৃগীরোগ বা অটোইমিউন ডিজঅর্ডারে ভুগছেন- এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে এসব রোগের উপসর্গ ডিম্বাণু নিঃসৃত হওয়ার সময় বৃদ্ধি পেতে পারে। সপ্তাহ খানেক পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মাসিক বা পিরিয়ডের সময় আবার বেড়ে যেতে পারে।
জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথেরমাইক্রো বায়োলজিস্ট সাবরা ক্লেইন বলেন, “এসব আসলে পিরিয়ড বা মাসিকের দিন গুলোতে হরমোনের মাত্রায় তারতম্য আর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পরিবর্তনেরই ফল।” আরেক গবেষণা বলছে, হাঁপানি রোগে ভোগা নারীদের ১৯ থেকে ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে পিরিয়ড বা মাসিক ঠিক আগে আগে বা ওই দিন গুলোতে ঘন ঘন বা তুলনামূলক প্রবল ভাবে অ্যাজমার অ্যাটাক হতে দেখা গেছে। চিকিৎসকরা একে বলেন পেরিমেন্সট্রুয়াল অ্যাজমা। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নামের স্নায়ু রোগে ভুগছেন- এমন মহিলাদেরও মাসিকের সময় অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ছোট কিছু গবেষণায় দেখা গেছে। অটোইমিউন রোগী লুপুসে ভোগা রোগীরা মাসিক বা পিরিয়ডের দিনে প্রচণ্ড গায়ে ব্যথা অনুভব করার পাশাপাশি ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
প্রত্যেক নারী সন্তান ধারণের জন্য মহিলার শরীরে প্রতি মাসে ডিম্বাণু তৈরি হয় এবং মাসিক বা পিরিয়ডের সময় তা ডিম্বাধার থেকে বেরিয়ে আসে।
বস্টনের ব্রিগহ্যাম অ্যান্ড উইমেনস হসপিটালের গাইনোকোলজিস্ট কিম্বার্লি কিইফি স্মিথ বলেন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রবণতা হলো, শরীরে অস্বাভাবিক কিছু পেলে সেটাকে মেরে ফেলতে অথবা বের করে দিতে চায়। ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে ভ্রুণ যেন আক্রান্ত না হয়, সেজন্য মাসিক বা পিরিয়োডের সময়টায় স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কিছু অংশ নিষ্ক্রিয় থাকে।
মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালে ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করে। তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়টায় প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়তে পারে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখতে পারে।
ডা. কিইফি স্মিথ বলছেন, মাসিক বা পিরিয়ডের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি শুধু ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। যেসব নারীরা হরমোনের ওষুধ নিচ্ছেন অথবা জন্মনিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুব কম।
নারী তার মাসিক বা পিরিয়ডের সময় কতটুকু অসুস্থ বোধ করতে পারেন তা নিয়ে কোনো উপযুক্ত তথ্য ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বিশেষ কোনো দিক নির্দেশনা দিতে অপারগ।
ক্লেইন বলেন, “আপনার সর্দি লাগবে, নাকি অন্য কোনো সংক্রমণ হবে তা আগে থেকে বলা সত্যিই মুশকিল। কারণ এত বিষদ গবেষণা এখনও হাতে নেই।”
তবে নারী যদি দীর্ঘদিন ধরে বারবার অসুস্থবোধ করেন মাসিক বা পিরিয়ডের দিনে, তবে আমি বলবো এটা নিয়ে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই।
ক্লেইন বলেন, “পিরিয়ড বা মাসিকের সময় অসুস্থবোধ করলে তা নিরাময় করে শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে।”
“অবশ্যই আপনাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং ২০ মিনিট ধরে পানিতে হাত ধুতে হবে। নিশ্চয় প্রত্যেক নারী নিজেই তার শরীরকে সবচেয়ে ভালো ভাবে জানেন।”
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন।