বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন

ব্রায়োনিয়া-Bryonia

আরোগ্য হোমিও হল / ২৬ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশ কালঃ সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ৮:৫৭ অপরাহ্ন
ব্যাসিলাস বোটুলিনাম (Becillus Botulinum)
হোমিও বই

ব্রায়োনিয়া (Bryonia)

চলতি নাম – ওয়াইন্ড হপস (Wild Hops)

ডা: উইলিয়াম বরিক।

 

ব্রায়োনিয়া দেহের প্রতিটি সৌত্রিক ঝিল্পী এবং প্রতিটি সৌত্রিক ঝিল্লী পরিবেষ্টিত দ্বারের উপর ক্রিয়া করে। ইহার চরিত্রগত লক্ষণ খোঁচা-মারা ও ছিড়িয়া ফেলার ন্যায় বেদনা। ঐ বেদনা সঞ্চালনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এবং বিশ্রমে উপশমিত হয়। এই বিশেষ প্রকার খোঁচা মারা বেদনা, সামান্যমাত্রনড়াচড়াতেই বাড়িয়া উঠে এবং দেহের সর্বত্র প্রকাশ পায়, বিশেষতঃ বক্ষ প্রদেশে। ঐ বেদনা চাপ দিলেও বাড়িয়া উঠে। শ্লৈষ্মিক ঝিল্পীসমূহ সর্বত্র শুস্কতাপ্রাপ্ত হয়। ব্রায়োনিয়ার রোগী কোপনস্বভাব, বিছানা হইতে উঠিতে গেলেই তাহার মাথা  ঘোরে। অপ্রবল শিরঃপীড়া, ওষ্ঠদ্বয় ও মুখগহর শুস্ক ও পোড়া পোড়া, অত্যধিক পিপাসা, মুখে তিক্তস্বাদ। উদরোর্ধ্বপ্রদেশে স্পর্শকাতরতা, মনে হয় পাকস্থলীর মধ্যে পাথর চাপান আছে। মল বৃহদাকার, শুস্ক ও কঠিন। শুষ্ক কাশি। বাতের বেদনা এবং ফুলা। রৈহিক ও শ্লেম্মিক ঝিল্পীসমূহে রসঃপ্রষেক।।

বায়ো কম্বিনেশন ২৫

ব্রায়োনিয়া বলিষ্ঠ দেহ, দৃঢ়তম্ভ, কৃষ্ণবর্ণ ব্যক্তিগণের উপর উৎকৃষ্ট কার্য করে। ঐ সব ব্যক্তিগণ ক্রমশঃ দুর্বল ও বদমেজাজি হইয়া উঠে। রায়োনিয় বিশেষভাবে দেহের দক্ষিণ পার্শ্ব আক্রমণ করে। রোগ সন্ধ্যাকালে ও খোলা বাতাসে বাড়ে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পরে গ্রীষ্ম দেখা দিলে রোগাক্রমণ হয়। শিশু কোলে উঠিতে অথবা শয্যা ছাড়িতে চায় না। দৈহিক দুর্বলতা এবং সব বিষয়েই বিতৃষ্ণা। ব্রায়োনিয়ার রোগ লক্ষণ ধীরে ধীরে বাড়ে।

মন —— রোগী অতিশয় কোপনস্বভাব; সব কিছুতেই সে বিরক্ত হয়। বিকারে বাড়ী যাইবার কথা বলে, ব্যবসায় সম্বন্ধে কথা বলে

মস্তক — শিরঃঘূর্ণন, বমি বমি ভাব। বিছানা হইতে উঠিতে গেলেই মূর্ছার মত হয়। বুদ্ধির জড়তা। ফাটিয়া যাওয়ার মত, চূর্ণ-বিচুর্ণ  হওয়ার মত প্রবল শিরঃপীড়া, মনে হয়  সব কিছু ফাটিয়া বাহির হইয়া আসিবে। যেন ভিতর হইতে কেহ হাতুড়ি দিয়া আঘাত করিতেছে। নড়াচড়া  করিলে অবনত হইলে, চোখ খুলিলে বৃদ্ধি। মাথার পিছন দিকে শিরঃপীডাটি চাপিয়া বসে। যেন হাড়গুলিকে গণ্ডাস্থির দিকে টানিতে থাকে। এমন কি চোখের তারাটি ঘুরাইলেও মাথাধরা বাড়িয়া উঠে। মাথার সম্মুখ দিকের শিরঃপীড়া, কপালের হাড়গুলি পর্যন্ত ব্যথিত হয়।

আরও পড়ুন  – মস্তক, মস্তিষ্ক এবং শিরত্বক (Head, Sensorium and Scalp)

নাসিকা — ঋতুস্রাবের সময় উপস্থিত হইলে নাসাপথে রক্তপাত হয়। সকালবেলা নাসাপথে রক্তপাত হইয়া শিরঃপীড়ার অবসান ঘটে। সর্দির সহিত কপালে তীব্র খোঁচা-মারা ব্যথা অনুভূত হয়। নাসিকার অগ্রভাগ স্ফীত,  মনে হয় যেন স্পর্শ করিলেই ক্ষত জন্মিবে।

কর্ণ — কর্ণকুহরে বেদনা (অরম, নেট্রাম সালফ, সাইলি, চায়না), উহাতে মাথা ঘোরে । কানে গর্জন করার মত অথবা গুনগুন করার মত শব্দ শুনে।

চক্ষু — চক্ষুতে চাপ দেওয়ার মত, ভাঙ্গিয়া ফেলার মত কামড়ান বেদনা। গ্লুকোমা। চক্ষু স্পর্শ করা যায় না; চক্ষুতারকা ঘুরাইতে গেলেও বেদনা।

মুখগহ —- ওষ্ঠদ্বয় শুষ্ক, পোড়া পোড়া, ফাটা। মুখগহ্বর, জিহ্বা গলকোষ শুষ্ক ; তৎসহ যথেষ্ট পিপাসা। জিহায় হরিদ্রাভ বাদামি বর্ণ লেপ, অথবা পাকাশয়িক গোলযোগ থাকিলে সাদা লেপ। তিক্ত স্বাদ (নাক্স, কলো)। পুরাতন ধূমপায়ীদের নিম্ন ওষ্ঠে জ্বালা। ওষ্ঠ ফুলা, শুষ্ক, কালবর্ণ এবং ফাটা ফাটা।

গলদেশ —- শুষ্ক, কিছু চিবাইতে গেলে আঠা আঠা, চাঁচিয়া ফেলার মত, এবং সঙ্কুচিত (বেল)। গলকোষ ও স্বরযন্ত্রে দুশ্ছেদ্য শ্লেষ্মা জন্মে, অনেকক্ষণ কাশিবার পর উহা সরল হয় ; উষ্ণ গৃহে প্রবেশ করিলে বৃদ্ধি ৷

পাকস্থলী — বিছানা হইতে উঠিতে গেলে বমনভাব, এবং মুহিতের মত হইয়া পড়ে । অস্বাভাবিক ক্ষুধা ; খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ পায় না। পিপাসা, একবারে অনেক খানি জল পান করে। আহারের পরক্ষণেই পিত্ত ও জল বমি করে। উষ্ণ পানীয়ে বৃদ্ধি, উহা সাথে সাথেই বমি হইয়া যায়। উদরে স্পর্শদ্বেষ। আহারের পর পাকস্থলীতে চাপ বোধ, যেন পাথর চাপান হইতেছে। কাশিতে গেলে পেটে লাগে। গ্রীষ্মকালের উত্তাপে উদরাময় জন্মে। উদরের ঊর্ধ্বাংশে স্পর্শকাতরতা ।

উদরগহ্বার — যকৃৎস্থান স্ফীত, বেদনার্ত, টানিয়া ধরার মত। জ্বালাকর, খোঁচা-মারা বেদনা; চাপ দিলে, কাশিলে, শ্বাস লইলে বৃদ্ধি। তলপেটের পেশীসমূহ ব্যথিত।

আরও পড়ুন –  আরক পুদিনা –Arq Poodina পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক ও বায়ুনাশক

মল — কোষ্ঠবদ্ধতা,  মল শক্ত, শুষ্ক, পোড়া পোড়া এবং বৃহদাকার। গ্রীষ্মকালে, উত্তপ্ত হাওয়ার পর, ঠাণ্ডা পানীয় গ্রহণে, প্রতিবার গরম পড়িবার পর বাদামি বর্ণ ঘন, রক্তাক্ত মল; প্রাতে চলাফেরার পর বৃদ্ধি

মূত্র —  বিয়ার মদ্যের মত, লাল, বাদামি বর্ণ : পরিমাণে অল্প এবং গরম।

স্ত্রী জননেন্দ্রিয়– ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের পূর্বে, প্রচুর পরিমাণে চলা ফেরায় বৃদ্ধি। ঋতুর সহিত পদদ্বয়ে ছিঁড়িয়া ফেলার মত ব্যথা। অথবা, দ্রুতলোপ এবং তৎসহ অনুকল্প রজঃস্রাব অথবা ভাঙ্গিয়া ফেলার মত শিরঃপীড়া। দীর্ঘশ্বাস লওয়ার সময় ডিম্বকোষদ্বয়ে খোঁচা-মারার মত ব্যথা, ঐ স্থানে স্পর্শকাতরতা। দক্ষিণ ডিম্বকোষে ছিঁড়িয়া ফেলার ন্যায় বেদনা, ঐ বেদনা উরু পর্যন্ত ধাবিত হয় (লিলিয়াম, ক্রোকাস)। দুগ্ধ জ্বর। ঋতুকালে স্তনদয়ে ব্যথা। স্তনদ্বয় উষ্ণ, বেদনার্ত এবং শক্ত। স্তনের ফোঁড়া। ঋতুর আগমনে নাসাপথে পুনঃপুনঃ রক্তস্রাব । পাকাশয়ের গোলযোগের সহিত ঋতুস্রাবের অনিয়মতা। ঋতুদ্বয়ের মধ্যবর্তীকালে বেদনা, তৎসঙ্গে তলপেট ও বস্তিগহরে টাটানি বোধ (হেমামেলিস ) ।

শ্বাসযন্ত্র  — স্বরযন্ত্র ও শ্বাসপথে ক্ষতবৎ বেদনা । স্বরভঙ্গ খোলা বাতাসে বৃদ্ধি। শ্বাসনলীর উপরাংশের উত্তেজনাহেতু শুষ্ক , হক্হক্ করা কাশি। রাত্রিকালীন কাশি শুষ্ক, কাশিতে কাশিতে উঠিয়া বসেআহার অথবা পানের পর কাশির বৃদ্ধি। কাশির দমকে বমি হয়, কাশিতে বুকে লাগে; লোহার মরিচার বর্ণময় শ্লেষ্মা। পুনঃপুনঃ দীর্ঘশ্বাস লইয়া ফুসফুসটি প্রসারিত করিতে চায়। কষ্টকর ও দ্রুত শ্বাসক্রিয়া, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি; বুকের মধ্যে খোঁচা লাগে। কাশির সময় মনে হয় বক্ষদেশ ভাঙ্গিয়া খণ্ড খণ্ড হইয়া যাইবে; হাত দিয়া বুক চাপিয়া ধরে। গ্রুপ কাশি। প্লুরো-নিউমোনিয়া। শ্লেমা ইটের বর্ণ, চটচটে এবং থোকা থোকা জেলির মত নির্গত হয়। শ্বাসনলীতে দুশ্ছেদ্য শ্লেষ্মা জমে, অনেকক্ষণ কাশিতে কাশিতে উহা সরল হয়। ফ ঘরে প্রবেশ করিলে, কাশির উদ্রেক হয় (নেট্রাম কার্ব)। বক্ষাস্থির নীচে ভারবোধ, দক্ষিণ স্কন্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। গরম ঘরে প্রবেশ করিলে কাশি বাড়ে। হাৎপ্রদেশে খোঁচা-মারা ব্যথা। হাৎশূল (মূল অরিষ্ট ব্যবহার করিবে)।

আরও পড়ুন – অ্যাডাল-১২ (চর্ম রোগ) হোমিওপ্যাথিক কম্বিনেশন পটেন্সি ড্রপ

পৃষ্ঠদেশ — ঘাড় আড়ষ্ট ও বেদনান্বিত পৃষ্ঠের নিম্নাংশে আড়ষ্টতা ও খোঁচা মারা ব্যথা। দূষিত জল অথবা আবহাওয়ার পরিবর্তনে ঐরূপ ব্যথা। দেখা দেয়।

হস্ত-পদাদি — জানুদ্বয় শক্ত ও ব্যথাযুক্ত। পদদ্বয়ে উত্তাপযুক্ত স্ফীতি।  সন্ধিগুলি লাল, স্ফীত এবং উষ্ণ; উহাতে খোঁচা-মারা, ছিঁড়িয়া ফেলার ন্যায়। বেদনা, সামান্য নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। প্রত্যেকটি পীড়িত অংশেই চাপ অসহ্য। রোগী অবিরত বাম বাহু ও বাম পা নাড়িতে থাকে (হেলিবো)।

চর্ম –– পীতবর্ণ, বিবর্ণ, ফোলা, ফোলা, যেন শোথযুক্ত, উত্তপ্ত এবং ব্যথাযুক্ত। মেদময় গ্রন্থির অতিস্রাব জন্য চুলগুলি তৈলাক্তবৎ দেখায়।

নিদ্রা –– ঘুম ঘুম ভাব, ঘুমের মধ্যে চমকিয়া উঠে।  প্রলাপ , প্রলাপে বিষয়-আশয়ের কথা এবং যাহা সে পড়িয়াছে তাহা বলে।

জ্বর — নাড়ী পর্ণ, কঠিন, শক্ত ও দ্রুত। বাহ্যিক শীতলতা, শুষ্ক কাশি ও খোঁচা মারা ব্যথার সহিত শীতভাব। আভ্যন্তরিক উত্তাপ।  সামান্য সঞ্চালনেই অম্লগন্ধ ঘর্ম। সহজেই প্রচুর ঘামিতে থাকে।  বাত-জ্বর টাইফয়েড হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যকৃৎ ও পাকস্থলী সম্বন্ধীয় লক্ষণ বর্তমান থাকে।

উপচয়, উপশম–বৃদ্ধি – উত্তাপে, নড়াচড়ায়, প্রাতে, আহারে, উষ্ণ জল বায়ুতে, পরিশ্রমে, স্পর্শে । উঠিয়া বসিতে পারে না। উঠিতে গেলে মূর্ছার মত হয়।

উপশম — বেদনান্বিত পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে, চাপ দিলে, বিশ্রামে এবং ঠাণ্ডা দ্রব্যে।

সম্বন্ধ- ব্রায়োনিয়া বিফলে উপাস ( Upas)।

অনুপূরক — রাস-টক্স,  এলুমিনা, ইলিসিরাম ইলিসিয়া (ইহা একটি মেক্সিকো দেশীয় ঔষধ। জ্বরের সহিত সর্দি, পাকাশয়ের উত্তেজনা এবং টাইফয়েড লক্ষণ )।

দোসর ––  একোন, ক্যামো, নাক্স।

তুলনীয় –– এসক্লেপি, ক্যালি মিউর, টিলিয়া।

মাত্রা — ১ম হইতে ১২শ শক্তি।

2454

আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন লাইককমেন্ট করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


এ জাতীয় আরো খবর.......
Design & Developed BY FlameDev