ক্ল্যামিডিয়া STD এর রোগ লক্ষণ, কারণ ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ
আরোগ্য হোমিও হল এ সবাইকে স্বাগতম। আশা করছি, সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো ক্ল্যামিডিয়া রোগের লক্ষণ,কারণ ও চিকিৎসা
STD এর কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে তা নিয়ে আজকের জনবো, এটা সবার জানা জরুরী! তো আর কথা নয় – সরাসরি মূল আলোচনায়।
ক্ল্যামিডিয়া একটি যৌন সংক্রামক ব্যাধি। এতে পুরুষ ও নারী উভয়েই আক্রান্ত হয়। ক্ল্যামিডিয়া রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
পৃথিবীতে এমন অনেক রোগ জীবাণু আছে যা থেকে আমরা নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি। আমরা জানতেও পারিনা যে কখন আমাদের মানবদেহে বাসা বাঁধেছে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া। মানুষের সংস্পর্শে আসার ফলে যেভাবে জ্বর সর্দিকাশি সহ নানান সমস্যা দেখা দেয়, তেমনই সংক্রামক হলো যৌনতা বাহিত একটি রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই যৌন বাহিত রোগ গুলিকে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ STD বলে।
আমরা বুঝতেও পারিনা কিভাবে সম্পূর্ণ অজান্তে শারীরিক মিলনের ফলে আমরা সংক্রামিত হয়ে পড়ি। বর্তমানে এই ধরনের যৌন সংক্রামক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বহু ভুল ধারণা বা কুসংস্কার রয়েছে ৷ যৌনরোগ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব রয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো শারীরিক অন্যান্য সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিলেও যৌনসংক্রমণ কিংবা এ জাতীয় রোগ নিয়ে লজ্জা আর দ্বিধা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি একটি বিরাট সংখ্যক মানুষ৷ তেমনই একটি যৌন বাহিত রোগ অথবা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ হলো ক্ল্যামিডিয়া ৷ অনেক মানুষই হয়তো জানেন না ক্ল্যামিডিয়া আসলে কি।
মারাত্মক একটি যৌনরোগ হচ্ছে ক্ল্যামিডিয়া। যা মূলত এক ধরনের রোগ জীবাণু বা ভাইরাস। যৌন মিলনের মাধ্যমে এটি একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের তুলনায় পাশ্চাত্য দেশ দেশ গুলিতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর হার সবচেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান সুত্র বলছে সেখানে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত হন। গবেষণায় দেখা গেছে ২৫ বছরের নীচে থাকা ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন বেশি। তবে যৌন রোগ ক্ল্যামিডিয়াতেও পুরুষদের তুলনায় নারীরা আক্রান্ত হন বেশি। তবে ৭০-৯৫ শতাংশ নারীর এই রোগের সেভাবে কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায় না। একই সমস্যা পুরুষদের ক্ষেত্রেও ঘটে৷
ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণের কারণ কী কী?
ক্ল্যামিডিয়া হলো একটি যৌন সংক্রামক রোগ, যাতে পুরুষ ও নারী উভয়েই আক্রান্ত হন। ক্ল্যামিডিয়া ট্র্যাকোমাটিস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। যে ব্যক্তি একবার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি আবারও আক্রান্ত হতে পারেন, তার শরীরে ক্ল্যামিডিয়ার ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে।
(ক) সাধারণত যৌন মিলনের মাধ্যমেই কোনো ব্যক্তি ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত হন।
(খ) সংক্রামিত সঙ্গী বা সঙ্গীনির সঙ্গে যৌন মিলন করলে।
(গ) পায়ু অথবা মৌখিক যৌন সঙ্গমের করণে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
(ঘ) মা সংক্রামিত হলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তাঁর সন্তানের দেহে এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত করতে পারে।
(ঙ) অসুরক্ষিত যৌন মিলন বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, ক্ল্যামিডিয়ার মতো যৌনতা বাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে।
ক্ল্যামিডিয়া রোগের লক্ষণ কী কী?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখ গেছে মহিলারাই ক্ল্যামিডিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত৭০-৯৫ শতাংশের মহিলাদের মধ্যে ক্ল্যামিডিয়ার কোনও উপসর্গই লক্ষ্য করা যায় না। পুরুষদের ক্ষেত্রেও ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্তদের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। সাধারণত সংক্রমণের ৫-১০ দিন পর দেখা দিতে পারে কিছু লক্ষণ।
নারীদের ক্ষেত্রে ক্ল্যামিডিয়ার লক্ষণ :
(১) তলপেটে ব্যথা করে।
(২) যৌনাঙ্গ থেকে সবুজ বা হলদেটে তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়।
(৩) হালকা জ্বও থাকে।
(৪) মলদ্বার ফোলা ফেলা ভাব।
(৫) যৌনাঙ্গের ভিতর ফুলে যায়।
(৬) যৌন মিলনের সময় রক্তপাত হয়।
(৭) ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। প্রয়োজনীয় রক্তও বেরিয়ে আসে৷
(৮) বারবার মূত্র ত্যাগ ইচ্ছ এবং সেই সময় যৌনাঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা করে।
এছাড়াও পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ক্ল্যামিডিয়ার কিছু উপসর্গ আছে। যেমন-
(১) গলা ব্যথা করে।
(২) মলদ্বার ফুলে চুলকুনি অথবা রক্তপাত হতে পারে। আবার কখনও কখনও ডায়ারিয়ার সমস্যাও দেখা দেয়।
(৩) ক্ল্যামিডিয়ার ফলে চোখও আক্রান্ত হয়। সেক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যায় ও চুলকানি হতে পারে। চোখ থেকে জল পড়ে।
কিভাবে নির্ণয় করা হয় আপনার ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত :
(ক) আক্রান্ত ব্যক্তির যদি কোনও উপসর্গ না থাকলেও সঙ্গীর সংক্রমণ সম্বন্ধে অবগত থাকেন, সেক্ষেত্রে যৌন জীবন সম্পর্কে চিকিৎসককে জানানো উচিত।
(খ) মহিলাদের ক্ষেত্রে যোনিরসের নমুনা সংগ্রহ করে সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয়৷
(গ) পুরুষদের ক্ষেত্রেও মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
(ঘ) ওরাল সেক্সের ক্ষেত্রে গলাতেও সংক্রমণ হয়ে থাকে এই জন্য সোয়াব টেস্টের মাধ্যমেও নির্ণয় করা হয়৷
ক্ল্যামিডিয়া থেকে মুক্তি পেতে হোমিওপ্যাথি ঔষধ :
হোমিওপ্যাথি ঔষধ শুধুমাত্র এসটিডি অবস্থা থেকে মুক্তি দেয় না বরং ওষুধের ক্রমাগত ব্যবহার অথবা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সেগুলি নিরাময় করে। ক্ল্যামিডিয়া (ঝঞউ) থেকে মুক্তি পেতে কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার রয়েছে তা নিন্মে দেওয়া হলো।
(১) এলিয়াম স্যাটাইভাম (Allium Sativum)।
(২) হেপার সালফ (Hepar Sulph)।
(৩) মেডোরিনাম (Medorrhinum)।
(৪) মার্ক-সল (Mercurius Sol)
(৫) সেম্পারভিভাম টেক্টোরাম (Sempervivum Tectorum)।
(৬) সিফিলিনাম (Syphilinum)।
(৭) থুজা অক্সিডেন্টালিস (Thuja Occidentalis)|
STD এর কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে :
STD-এর কিছু সম্ভাব্য পরিণতি। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে সাধারণত নিরাময়যোগ্য রোগ যেমন- ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া ও ব্যাকটেরিয়া ভ্যাজিনোসিস মহিলাদের মধ্যে পেলভিক প্রদাহজনিত রোগ এবং মহিলা ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
কিছু পরামর্শ :
(১)ওষুধের প্রয়োগ এবং সুরক্ষিত জীবনযাপনের মাধ্যমে ক্ল্যামিডিয়া সহজেই নির্মুল করা যায়। নিয়ম মাফিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে সম্পূর্ণ সুস্থ না হয় ততো দিন চিকিৎসা নিতে হবে।
(২) উপসর্গ চলে যাওয়ার পরেও শরীরে থেকে যেতে পারে রোগের জীবাণু বা ভাইরাস। ফলে যতদিন না ইনফেকশন সম্পূর্ণ ভালো না হয়েছে ততো দিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।
(৩) সঙ্গীর সঙ্গে যৌন মিলন করার আগে আরেকবার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন সংক্রমণ পুরোপুরি চলে গেছে কিনা। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে সঙ্গীর সাথে ওষুধ ভাগ করবেন না।
(৪) যদি আপনার একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে প্রতি ৩ মাস অন্তর পরীক্ষা করাতে হবে। ক্ল্যামিডিয়া আপাতদৃষ্টিতে একটি সাধারণ যৌনরোগ হলেও, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মহিলাদের ক্ষেত্রে ইউটেরাস অথবা জরায়ু ও সার্ভিক্সে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে বন্ধ্যাত্বের মতো জটিলতার সৃষ্টি করে এবং আরও মারাত্মক আকার হতে পারে। অপরদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে, মূত্রনালীতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কিছু সতর্কতা :
যৌন সঙ্গী যদি ক্ল্যামিডিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তিনি পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত যৌনমিলন করা যাবেনা। না হলে তার শরীর থেকে ক্ল্যামিডিয়ার জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাবে৷ প্রতিবার যৌন মিলনের সময় অভশ্যই কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে। মহিলাদের জন্যেও বিশেষ ধরনের একটি কন্ডোম পাওয়া যায়, সেটি ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব কম থাকবে। একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা উচিত।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করলাম। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। নতুন কোনো স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে হাজির হবো অন্য দিন। সবাই সুস্থ্য, সুন্দর ও ভালো থাকুন। নিজের প্রতি যত্নবান হউন এবং সাবধানে থাকুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে এবং প্রয়োজনীয় মনে হয় তবে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন।
আরোগ্য হোমিও হল এডমিন : এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। অনুগ্রহ করে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রয়োজনে, আমাদের সহযোগিতা নিন। এই ওয়েব সাইটটি কে কোন জেলা বা দেশ থেকে দেখছেন “লাইক – কমেন্ট” করে জানিয়ে দিন। যদি ভালো লাগে তবে “শেয়ার” করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।